সিডরের পাঁচ বছর-ক্ষত কি স্থায়ী হয়ে থাকবে?
সিডরের ক্ষত এখনও শুকায়নি। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সিডর। সে ঝড়ের আক্রমণে বিস্তীর্ণ জনবসতি লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল,
আহত ও নিহত হয়েছিল শত শত মানুষ। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণের বাঁধগুলো বিধ্বস্ত হয়েছিল। গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত উপকূলীয় জেলাগুলোর বহু মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে। কার্যত তাদের ঘরহীন-অন্নহীন শরণার্থীতে পরিণত করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ পাঁচ বছরেও সিডর আক্রান্ত জনপদগুলোর মানুষের জন্য সন্তোষজনক উদ্যোগ আসেনি। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর স্বাভাবিকভাবেই পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্ব পায়। দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এগুলো জরুরিও। কিন্তু সিডরের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সহায়তা সন্তোষজনক হলেও পরবর্তী পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম হতাশাব্যঞ্জক। অথচ জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্তদের প্রাণরক্ষার পরই এ পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত। আক্রান্ত এলাকাগুলোর মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে হলে তাদের আবাসন, জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ জরুরি। শুধু স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমই নয়, পরবর্তী যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি হিসেবেও এগুলো করা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই। কিন্তু উপযুক্ত প্রস্তুতি দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। পুরনো দুর্যোগের ক্ষত নিরাময় না করে এমন প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে পারে না। বরং পুরনো ক্ষত থাকতে থাকতেই যদি নতুন কোনো দুর্যোগ এসে আঘাত হানে, তবে দুর্যোগের ভয়াবহতা অনেকগুণে বেড়ে যেতে বাধ্য। সিডর আক্রান্ত এলাকাগুলো যেভাবে গত ৫ বছর উপেক্ষিত হয়েছে, তা কখনও কাম্য নয়। এ কথা সত্য, নানা দাতা সংস্থা ও বন্ধুরাষ্ট্র সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে তা রক্ষা করেনি। কেন করেনি সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু প্রশ্ন উত্থাপনই যথেষ্ট নয়, তাদের বুঝিয়ে সহায়তা আনার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগ দরকার। আর সহায়তা যদি একান্তই না আসে, তবে নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কাজে নামতে হবে। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকাগুলো এভাবে বছরের পর বছর নাজুক অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে না। আমরা মনে করি, এযাবৎ সিডর দুর্গতদের পুনর্বাসনে যে অমনোযোগিতা দেখা গিয়েছে তা দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত নয়। আক্রান্ত জনপদের ক্ষত নিরাময় করে মানুষকে নতুন শক্তিতে দাঁড়াবার প্রেরণা দিতে হবে। ওই অঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আর এ জন্য এলাকার কৃষি ভূমিগুলো জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করা জরুরি। সিডর আক্রান্ত এলাকায় ৩৯১ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এক হাজার ৯৫০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ফসলি মাঠ ও জনপদে পানি ঢুকে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ জন্য অতিদ্রুত বাঁধ নির্মাণ ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ দরকার। কিন্তু অগ্রাধিকারের এসব কাজ করার ক্ষেত্রে নানা গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশ্রয়হীন মানুষের বাসস্থান সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানও হতে হবে। নতুন উদ্যমে মানুষ উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার শক্তি তার মধ্যে জাগবেই। কিন্তু পুরনো ক্ষত নিয়ে নতুন দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি তারা পাবে কোথায়?
No comments