অপহরণকারীর সঙ্গে পরাগের বাবার কথোপকথন

পরাগের বাবা: ভাই, আমার পোলাডারে মাইরেন না। অপহরণকারী: আপনার পোলারে বাঁচানোর জন্যই তো এক কোটি থ্যাইকা ৫০ লাখে আইলাম। আপনার পোলারে কিছুই করা হয়নি। — আমি কি একা আমু? — বুঝেন না, একা আইবেন কি না। পারলে জামাকাপড় রাইখ্যা আয়েন।


— কোন দিকে যামু?
-দেখবেন, ডান দিকে একটা রাস্তা গ্যাছে। হেই রাস্তায়। গাড়ির লাইট বন্ধ কইরা দুই-তিনডা হর্ন দিবেন।
ছয় বছরের শিশু পরাগকে অপহরণের পর তার বাবা বিমল মণ্ডলের সঙ্গে এভাবেই ফোনে কথা বলেন অপহরণকারী চক্রের প্রধান আমির আলী। র‌্যাব-গোয়েন্দাদের হাতে এই কথোপকথনের রেকর্ড আছে। এর একটি কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তবে অপহরণকারী দলের নেতা আমিরকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এই আমির রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে এত দিন পুলিশের কাছে পরিচিত ছিল। পরাগ অপহরণের পর এই নামটি এখন আতঙ্ক। তবে আমির সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য আছে খুব কমই।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আমির আলীর বাবার নাম আব্বাস আলী। আদি বাস মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপাল কাঠপট্টিতে। তবে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে নানির বাড়িতে বড় হয়েছেন তিনি। বর্তমানে জুরাইন এলাকায় বসবাস করেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, আমির আলীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। একটি হত্যা মামলা। একটি মামলায় তাঁর ১০ বছরের সাজাও হয়েছে। আমিরের বিরুদ্ধে আরও যেসব মামলা আছে সেগুলো হলো অস্ত্র, চুরি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা। তিনি বলেন, ’৯৩ সালে তাঁর সাজা হয়। এর আগে ২০০০ সালে আমির পুলিশের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। ওই সময় গুলিসহ পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আমির আলীর ভগ্নিপতি আবুল কাশেম র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৬ সালে আমিরের বোনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখন থেকে দেখছেন, আমির আলী জেলেই থাকছেন। সর্বশেষ এক বছর আগে জেল থেকে তিনি ছাড়া পান। কাশেম বলেন, আমির মাঝে মাঝে তাঁর বাসায় যাতায়াত করতেন। আমির প্রথমে ইকুরিয়া এলাকায় ইতি নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। ওই ঘরে একটি ছেলে আছে। ইতির ভাই মামুনের সঙ্গে চীন থেকে জিনিসপত্র এনে ব্যবসার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ইতি ও মামুনকে ডিবি পুলিশ দুই দিন আগে আটক করে বলে তিনি জানান। কাশেম আরও বলেন, আমির যে ভালো না, তাঁরা সবাই সেটা জানেন। তবে শিশু অপহরণের বিষয়ে কিছুই তিনি জানতেন না। কিছু না জেনেই আমিরের তিন সহযোগীকে বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি।

No comments

Powered by Blogger.