বুনো হাতির সন্ধানে by আ ন ম আমিনুর রহমান
৯ মার্চ কাপ্তাইয়ে গিয়েছিলাম ভাইপো মেজর খায়রুলের ওখানে। কথা প্রসঙ্গে বলল, কয়েক দিন আগে কাপ্তাইমুখে সে বুনো হাতি দেখেছে। তখন বিকেল চারটা। ‘এখন গেলে কি দেখা যাবে?’ আমি বললাম। সে বলল, ‘এটা ভাগ্যের ব্যাপার, তবে চেষ্টা করতে দোষ কী?’ আগে কয়েকবার চেষ্টা করেও বুনো হাতির দেখা পাইনি, তাই কিছুটা উত্তেজিত হলাম।
ফোর হুইল জিপে যাচ্ছি। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছন দিয়ে পথ। সরু উঁচু-নিচু রাস্তা সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে। লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই। চোখজুড়ানো দুই পাশে প্রকৃতি। পথে রেসাস বানর, মোহনচূড়া, বড় পানকৌড়ি, ফটিকজল ও খয়েরি মাথা সুঁইচোরার দেখা মিলল।
আমাদের দেখে বিটের ফরেস্টার ও গার্ডরা এগিয়ে এলেন। তবে উদ্দেশ্য শুনে কিছুটা হতাশ হলেন। কারণ, সপ্তাহ খানেক আগে এক রাতে ‘মামা’রা তাঁদের ডেরায় আক্রমণ করেছিল। সুন্দরবনে বাঘ যেমন ‘মামা’, এখানে হাতিও তেমনি। তবে এ যাত্রায় দরজায় শুঁড় দিয়ে আঘাত ও একটি গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া ‘মামা’রা তেমন কোনো ক্ষতি করেনি।
হাতির ছবি তুলতে চাই শুনে ফরেস্টার সুলতান মাহমুদ বললেন, ‘একটু রিস্ক নিতে হবে।’ কারণ একটা দলছুট খ্যাপাটে পুরুষ-হাতি আছে। ওটাকেই যত ভয়।
সঙ্গে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী জীবন ও সুলতান মাহমুদের সঙ্গে সিকি কিলোমিটার দূরে হাতির সন্ধানে গেলাম। ১৮৭৮ সালের পুরোনো সেগুন বাগানের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু মোটাসোটা পুরোনো গাছ আছে। যাত্রাপথে হাতির মল ও কিছু দোমড়ানো-মোচড়ানো গাছ দেখলাম। আচমকা একটি বনমোরগ ও তিনটি বনমুরগি ‘কক্ক-কক্ক-কক্ক’ শব্দে দৌড়ে পালাল। দূর থেকে ধনেশের ডাক শুনলাম। বেশ সাবধানে হাঁটছি। বেশ কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকেও হাতির দেখা পেলাম না। দুর্ভাগ্য! অগ্যতা সাহস করে হাতির বিশ্রামের জায়গায় গেলাম। নতুন-পুরোনো প্রচুর মল। জায়গাটা বনের অন্যান্য স্থান থেকে ঠান্ডা, সে কারণেই হয়তো মামাদের পছন্দ। সুলতান মাহমুদের মতে, কাপ্তাইমুখে ৩০-৪০টি ছোট-বড় হাতি আছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ফিরতে হবে। একটি ভিমরাজ লম্বা লেজের ঝালর ঝুলিয়ে সুন্দর ভঙ্গিমায় উড়ে সেগুনের মগডালে বসল।
কাপ্তাইমুখ বিট ছেড়ে অর্ধেক পথ আসার পর ভাইপোর মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, হাতির পাল বাঁধের কাছে। দ্রুত যেতে হবে।
পাহাড়ের ওপর থেকে মাত্র ৫০-৬০ গজ নিচে ছড়ার পাশে একটা হাতি। আকার অনেকটা ডুলাহাজারার সেই হাতিটির মতো, বুনো পরিবেশে যার ছবি তুলছিলাম। তবে কাপ্তাইয়ের ‘মামা’ ছবি তোলার সুযোগ না দিয়ে মুহূর্তেই জঙ্গলে উধাও হলো।
দ্রুত গাড়িতে উঠলাম। অন্ধকার হয়ে এসেছে। ছবি তোলার আশা নেই; একনজর দেখতে পেলেই খুশি। বাঁধের কাছাকাছি এসে দেখি শ-খানেক মানুষ পাহাড়ের ওপর থেকে ছড়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় ১০০ গজ দূর থেকে হাতির পাল দেখলাম। বিভিন্ন বয়সের অনেকগুলো হাতি, গুনতে পারলাম না। মানুষের কোলাহলে দ্রুত ডাকতে ডাকতে জঙ্গলে তারা হারিয়ে গেল। অন্ধকারেই দু-চারটা ক্লিক করলাম।
হাতি (Asian Elephant) স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী। ২০০ বছর আগেও সারা দেশের বনজুড়ে ছিল। বর্তমানে এদের বিচরণক্ষেত্র এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় স্থানীয় হাতি দেখা যায়। শেরপুর, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজারে সেসব হাতি দেখা যায়, তারা মূলত অনাবাসিক ভারতীয় অতিথি। বর্তমানে এরা অতি বিপন্ন (critically endangered)। সূত্রমতে, এ দেশে বুনো স্থানীয় হাতির সংখ্যা ১৯৬-২২৭টি, অনাবাসিক ৮৩-১০০টি ও পোষা প্রায় ১০০টি। হাতির বৈজ্ঞানিক নাম Elephus maximus. এরা ৬০-৯০ বছর বাঁচে, আবদ্ধ অবস্থায় ১০০ বছরও বাঁচতে পারে।
আমাদের দেখে বিটের ফরেস্টার ও গার্ডরা এগিয়ে এলেন। তবে উদ্দেশ্য শুনে কিছুটা হতাশ হলেন। কারণ, সপ্তাহ খানেক আগে এক রাতে ‘মামা’রা তাঁদের ডেরায় আক্রমণ করেছিল। সুন্দরবনে বাঘ যেমন ‘মামা’, এখানে হাতিও তেমনি। তবে এ যাত্রায় দরজায় শুঁড় দিয়ে আঘাত ও একটি গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া ‘মামা’রা তেমন কোনো ক্ষতি করেনি।
হাতির ছবি তুলতে চাই শুনে ফরেস্টার সুলতান মাহমুদ বললেন, ‘একটু রিস্ক নিতে হবে।’ কারণ একটা দলছুট খ্যাপাটে পুরুষ-হাতি আছে। ওটাকেই যত ভয়।
সঙ্গে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী জীবন ও সুলতান মাহমুদের সঙ্গে সিকি কিলোমিটার দূরে হাতির সন্ধানে গেলাম। ১৮৭৮ সালের পুরোনো সেগুন বাগানের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু মোটাসোটা পুরোনো গাছ আছে। যাত্রাপথে হাতির মল ও কিছু দোমড়ানো-মোচড়ানো গাছ দেখলাম। আচমকা একটি বনমোরগ ও তিনটি বনমুরগি ‘কক্ক-কক্ক-কক্ক’ শব্দে দৌড়ে পালাল। দূর থেকে ধনেশের ডাক শুনলাম। বেশ সাবধানে হাঁটছি। বেশ কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকেও হাতির দেখা পেলাম না। দুর্ভাগ্য! অগ্যতা সাহস করে হাতির বিশ্রামের জায়গায় গেলাম। নতুন-পুরোনো প্রচুর মল। জায়গাটা বনের অন্যান্য স্থান থেকে ঠান্ডা, সে কারণেই হয়তো মামাদের পছন্দ। সুলতান মাহমুদের মতে, কাপ্তাইমুখে ৩০-৪০টি ছোট-বড় হাতি আছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ফিরতে হবে। একটি ভিমরাজ লম্বা লেজের ঝালর ঝুলিয়ে সুন্দর ভঙ্গিমায় উড়ে সেগুনের মগডালে বসল।
কাপ্তাইমুখ বিট ছেড়ে অর্ধেক পথ আসার পর ভাইপোর মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, হাতির পাল বাঁধের কাছে। দ্রুত যেতে হবে।
পাহাড়ের ওপর থেকে মাত্র ৫০-৬০ গজ নিচে ছড়ার পাশে একটা হাতি। আকার অনেকটা ডুলাহাজারার সেই হাতিটির মতো, বুনো পরিবেশে যার ছবি তুলছিলাম। তবে কাপ্তাইয়ের ‘মামা’ ছবি তোলার সুযোগ না দিয়ে মুহূর্তেই জঙ্গলে উধাও হলো।
দ্রুত গাড়িতে উঠলাম। অন্ধকার হয়ে এসেছে। ছবি তোলার আশা নেই; একনজর দেখতে পেলেই খুশি। বাঁধের কাছাকাছি এসে দেখি শ-খানেক মানুষ পাহাড়ের ওপর থেকে ছড়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় ১০০ গজ দূর থেকে হাতির পাল দেখলাম। বিভিন্ন বয়সের অনেকগুলো হাতি, গুনতে পারলাম না। মানুষের কোলাহলে দ্রুত ডাকতে ডাকতে জঙ্গলে তারা হারিয়ে গেল। অন্ধকারেই দু-চারটা ক্লিক করলাম।
হাতি (Asian Elephant) স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী। ২০০ বছর আগেও সারা দেশের বনজুড়ে ছিল। বর্তমানে এদের বিচরণক্ষেত্র এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় স্থানীয় হাতি দেখা যায়। শেরপুর, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজারে সেসব হাতি দেখা যায়, তারা মূলত অনাবাসিক ভারতীয় অতিথি। বর্তমানে এরা অতি বিপন্ন (critically endangered)। সূত্রমতে, এ দেশে বুনো স্থানীয় হাতির সংখ্যা ১৯৬-২২৭টি, অনাবাসিক ৮৩-১০০টি ও পোষা প্রায় ১০০টি। হাতির বৈজ্ঞানিক নাম Elephus maximus. এরা ৬০-৯০ বছর বাঁচে, আবদ্ধ অবস্থায় ১০০ বছরও বাঁচতে পারে।
No comments