বেহাল সড়ক ব্যবস্থা-চাই গতিশীল ও টেকসই উদ্যোগ
সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রতিশ্রুত অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আন্তরিকতা ছিল সন্দেহ নেই, অনেক প্রকল্প উচ্চাকাঙ্ক্ষীও ছিল। কিন্তু উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা এ খাতকে শোচনীয়ভাবে পিছিয়ে দিয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে এ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে পরিবর্তনও আনা হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু এসব পরিবর্তনের পরও প্রত্যাশিত মাত্রায় ফল মিলছে না। সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে রোববারের সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে সড়ক ব্যবস্থা সম্পর্কে যে চিত্র মিলেছে তা হতাশাজনক। পরিস্থিতিকে শুধু হতাশাজনক বললেই যথেষ্ট বলা হয় না। অনেকেই মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়ও সুদূরপরাহত। সঙ্গত কারণেই এ অবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার আশু প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। কেননা সরকারের ভালো কাজের খতিয়ানে সড়ক খাতের উন্নয়ন যেমন বিশেষ সাফল্য হিসেবে গণ্য হয়, তেমনি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার মাশুলও সরকারকেই গুনতে হয়। সড়ক খাতে বর্তমান সরকারের আমলে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী যে কেউ স্বীকার করবেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প হলেও এগুলোর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, উড়ালপথ ও মহাসড়ক চার লেনের মতো বড় উদ্যোগগুলোকে নাগরিকরা স্বাগত জানিয়েছে। এগুলোর সাফল্য কামনা করেছে সবাই। কিন্তু এ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সামান্য। ঋণ নিয়ে উদ্ভূত জটিলতায় পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প আঁতুড়ঘরেই হুমকির মুখে পড়েছে। অন্য প্রকল্পগুলো নিয়েও নানা জটিলতা কাজের গতিকে স্লথ করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, এ সরকারের সময়ে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিশ্চিত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেন, বড় ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পগুলোর দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করার কারণে ছোট ও বিদ্যমান কাজগুলো সরকারের যথেষ্ট মনোযোগ পায়নি। উদাহরণ হিসেবে বিদ্যমান সড়কগুলোর সংস্কারের প্রসঙ্গ এসে যায়। বিদ্যমান সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা নিয়ে এর আগের যোগাযোগমন্ত্রীকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত বিভিন্ন সড়কের চলাচল-অযোগ্য পরিস্থিতির সচিত্র খবরও প্রকাশিত হয়। এ কথা সত্য যে, সড়কের এই বেহাল পরিস্থিতি রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। তা সত্ত্বেও সবার আশা ছিল, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে সড়কগুলোর পরিস্থিতি চলনসই হবে। সড়ক সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চাপান-উতোর চলাকালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সর্বসাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, বরাদ্দকৃত অর্থ দেশের সড়কের পরিস্থিতি ফেরানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তার চেয়েও উদ্বেগের কথা হলো, অর্থ ব্যয়ে নানা অনিয়ম হচ্ছে। ফলে বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রত্যাশিত সড়ক উন্নয়ন ঘটবে কি-না সে সন্দেহ এখন বড় হয়ে উঠছে। স্পষ্ট যে, অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নের যে ধারা বহুকাল ধরে চলে আসছে তা যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা দূর করতে পারবে না। সরকারের আন্তরিকতা সত্ত্বেও পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতিও তাতে নিশ্চিত হবে না। এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা দরকার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিপ্রয়োজনীয় সড়কপথগুলোর আশু উন্নয়ন দরকার। কাজগুলো সঠিকভাবে ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য টেকসই পরিকল্পনাও দরকার। সরকারি বরাদ্দ যত্রতত্র যেনতেনভাবে খরচ করলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে না, সরকারও প্রশংসিত হবে না। আমরা মনে করি, বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থাপনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা উভয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখনই মনোযোগী হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নতুনভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সহকারে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
No comments