উন্নয়ন-সহযোগী-কেমন করে নির্মিত হবে পদ্মা সেতু by অ্যালেন গোল্ডস্টেইন
বাংলাদেশের যেখানেই যাই, জনগণ আমাকে বলে, পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে তারা কী ভীষণ রকম খুশি! তাদের এই আনন্দ-অনুভূতির কারণ সহজেই অনুমেয়। এই আনন্দ-অনুভূতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত দুটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—সেতুর নির্মাণকাজ কখন শুরু হবে? এবং কবেই বা সমাপ্ত হবে এ কাজ? তৃতীয় আরেকটি প্রশ্ন যোগ করা বাঞ্ছনীয়।
তা হচ্ছে, এই সেতুর নির্মাণকাজকে কীভাবে দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখা হবে? বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের বৈদেশিক অর্থ জোগানদাতাদের সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। তাই আমি বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওপরের প্রশ্নগুলোর জবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, মূল সেতুসহ আশপাশের স্থাপনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭৬ হাজার পরিবারকে অন্যত্র স্থানান্তর করার উদ্যোগের পাশাপাশি ১২ কিলোমিটার নদীশাসন এবং সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচটি পুনর্বাসন এলাকা তৈরি করতে নদীর মাটি খনন করে ভূমি পাঁচ মিটারেরও বেশি উঁচু করতে হবে। এখানে বসতবাড়ি ছাড়াও নির্মাণ করা হবে স্কুল, ক্লিনিক ও বাজার; থাকবে পৌর বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। সেতুর নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য ভূমি থেকে উঁচু করে ইয়ার্ড তৈরির জন্যও বড় ধরনের মাটির কাজ করা প্রয়োজন। সাত মাস ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এগিয়ে চলছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নির্মাণের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে।
সেতুর নির্মাণকাজ কখন শেষ হবে—এর উত্তর নির্ভর করছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা ও স্বচ্ছতার ওপর। সেতু নির্মাণে অদক্ষতা এবং যেকোনো ধরনের দুর্নীতি এর বাস্তবায়নের কাজকে প্রলম্বিত করতে পারে। বিশ্বব্যাপী এখন বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণসংশ্লিষ্ট প্রকল্প দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র। বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টায় নিয়োজিত অনেক ব্যক্তিমানুষের উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের যুদ্ধে নিয়োজিত। আমাদের সব কাজে এবং প্রতিটি প্রকল্পে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং দুর্নীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনা।
সেতু নির্মাণে কীভাবে দুর্নীতি রোধ করা যাবে? বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে দুর্নীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে অসাধারণ কিছু পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকার ও অর্থ জোগানদাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। এসব পদক্ষেপ এই প্রকল্পের অধীনে সরকারের বড় ধরনের দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ-পদ্ধতিকে স্বচ্ছ করবে। যার মধ্যে রয়েছে দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা, তাদের যোগ্যতা ও সততা পরীক্ষার জন্য দুই স্তরে দরপত্র আহ্বান, সংগ্রহ-প্রক্রিয়ার যাবতীয় তথ্যপ্রাপ্তিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির পরিপূর্ণ ছক তৈরি, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক ও স্বার্থসম্পর্কিত বিরোধ থাকতে পারে এমন বিষয় প্রকাশ করা, ঠিকাদার-সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ, পুনঃদরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন, তথ্য অধিকার আইনের কঠোর প্রয়োগ, অভিযোগ আনার বিস্তৃত সুযোগ থাকা, স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাহায্যে তদারকি এবং প্রকল্প-সম্পর্কিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানানোর জন্য একজন পরামর্শক (প্রজেক্ট ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজার) নিয়োগ। এই প্রকল্পে দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য বিশ্বব্যাংক একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হলো সব দরপত্র নিরীক্ষণ এবং প্রদানকারীদের হিসাব ও রেকর্ডসমূহ যাচাই করে দেখার আইনি অধিকার গ্রহণ।
এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এখনো পদ্মা সেতু প্রকল্প পুরোপুরি দুর্নীতির ঝুঁকিমুক্ত বলা যায় না। আমাদের সবার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতির ঝুঁকি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এই উচ্চমানসম্পন্ন সেতুর নির্মাণে যেকোনো ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন সব জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে এবং প্রাপ্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-ইয়োলা গত মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করবে না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। এটি আপনাদেরই সেতু, যা তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে আপনারা একটি সর্বোত্তম সেতু চাইতেই পারেন, যা দেখতেও সুন্দর ও কর্মোপযোগী হবে এবং আপনাদের সামনে উন্মোচিত করবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং আগামী প্রজন্মের জীবনযাত্রার নব রূপান্তরের মাইলফলক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তিনি দুর্নীতির ঝুঁকি হ্রাসে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপগুলোর প্রয়োজনীয়তা সমর্থন করেছেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ও নীতিবোধসম্পন্ন অবস্থান নিয়েছেন। আমরা এই রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য অংশীদারদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। যদি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের সংগ্রহ এবং ঠিকাদার নিয়োগ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পাদিত হয়, তাহলে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আর যদি সংগ্রহকাজে স্বচ্ছতার ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে নির্মাণকাজ থেমে যাবে। তখন এসব সমস্যা সমাধান করে বাড়তি নজরদারির মাধ্যমে কাজ আবার শুরু করা হলেও তা সেতু নির্মাণের সময়কে পিছিয়ে দেবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান এই সেতুর গুণাগুণ নিয়ে আপস করা চলবে না। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং অর্থের সহজোগানদাতারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মোটামুটি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। নিঃসন্দেহে এ রকম একটি বৃহদাকার ও জটিল প্রকল্পের কাজ অদ্যাবধি খুব ভালোভাবে এগিয়েছে।
কিছু লোকের বিশ্বাস, বিশ্বব্যাংকের আরোপিত কিছু শর্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নকে কঠিন করে তোলে। এটি বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে একটি পুরোনো ধারণা, যা সত্য নয়। বাংলাদেশ সরকার দাতাদের যেকোনো ধরনের শর্তের ব্যাপারে পুরোপুরি ভারমুক্ত। আমরা যা বলতে চাই তা হচ্ছে, সরকার দেশের ভালোর জন্য এই প্রকল্প দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করুক। বাংলাদেশের জনগণও তা-ই চায়। তারা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেতু চায়। আমাদের যৌথ উদ্যোগে আমরা এটা অর্জন করতে পারি।
অ্যালেন গোল্ডস্টেইন: বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, মূল সেতুসহ আশপাশের স্থাপনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭৬ হাজার পরিবারকে অন্যত্র স্থানান্তর করার উদ্যোগের পাশাপাশি ১২ কিলোমিটার নদীশাসন এবং সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচটি পুনর্বাসন এলাকা তৈরি করতে নদীর মাটি খনন করে ভূমি পাঁচ মিটারেরও বেশি উঁচু করতে হবে। এখানে বসতবাড়ি ছাড়াও নির্মাণ করা হবে স্কুল, ক্লিনিক ও বাজার; থাকবে পৌর বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। সেতুর নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য ভূমি থেকে উঁচু করে ইয়ার্ড তৈরির জন্যও বড় ধরনের মাটির কাজ করা প্রয়োজন। সাত মাস ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এগিয়ে চলছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নির্মাণের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে।
সেতুর নির্মাণকাজ কখন শেষ হবে—এর উত্তর নির্ভর করছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা ও স্বচ্ছতার ওপর। সেতু নির্মাণে অদক্ষতা এবং যেকোনো ধরনের দুর্নীতি এর বাস্তবায়নের কাজকে প্রলম্বিত করতে পারে। বিশ্বব্যাপী এখন বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণসংশ্লিষ্ট প্রকল্প দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র। বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টায় নিয়োজিত অনেক ব্যক্তিমানুষের উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের যুদ্ধে নিয়োজিত। আমাদের সব কাজে এবং প্রতিটি প্রকল্পে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং দুর্নীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনা।
সেতু নির্মাণে কীভাবে দুর্নীতি রোধ করা যাবে? বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে দুর্নীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে অসাধারণ কিছু পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকার ও অর্থ জোগানদাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। এসব পদক্ষেপ এই প্রকল্পের অধীনে সরকারের বড় ধরনের দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ-পদ্ধতিকে স্বচ্ছ করবে। যার মধ্যে রয়েছে দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা, তাদের যোগ্যতা ও সততা পরীক্ষার জন্য দুই স্তরে দরপত্র আহ্বান, সংগ্রহ-প্রক্রিয়ার যাবতীয় তথ্যপ্রাপ্তিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির পরিপূর্ণ ছক তৈরি, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক ও স্বার্থসম্পর্কিত বিরোধ থাকতে পারে এমন বিষয় প্রকাশ করা, ঠিকাদার-সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ, পুনঃদরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন, তথ্য অধিকার আইনের কঠোর প্রয়োগ, অভিযোগ আনার বিস্তৃত সুযোগ থাকা, স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাহায্যে তদারকি এবং প্রকল্প-সম্পর্কিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানানোর জন্য একজন পরামর্শক (প্রজেক্ট ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজার) নিয়োগ। এই প্রকল্পে দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য বিশ্বব্যাংক একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হলো সব দরপত্র নিরীক্ষণ এবং প্রদানকারীদের হিসাব ও রেকর্ডসমূহ যাচাই করে দেখার আইনি অধিকার গ্রহণ।
এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এখনো পদ্মা সেতু প্রকল্প পুরোপুরি দুর্নীতির ঝুঁকিমুক্ত বলা যায় না। আমাদের সবার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতির ঝুঁকি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এই উচ্চমানসম্পন্ন সেতুর নির্মাণে যেকোনো ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন সব জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে এবং প্রাপ্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-ইয়োলা গত মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করবে না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। এটি আপনাদেরই সেতু, যা তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে আপনারা একটি সর্বোত্তম সেতু চাইতেই পারেন, যা দেখতেও সুন্দর ও কর্মোপযোগী হবে এবং আপনাদের সামনে উন্মোচিত করবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং আগামী প্রজন্মের জীবনযাত্রার নব রূপান্তরের মাইলফলক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তিনি দুর্নীতির ঝুঁকি হ্রাসে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপগুলোর প্রয়োজনীয়তা সমর্থন করেছেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ও নীতিবোধসম্পন্ন অবস্থান নিয়েছেন। আমরা এই রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য অংশীদারদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। যদি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের সংগ্রহ এবং ঠিকাদার নিয়োগ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পাদিত হয়, তাহলে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আর যদি সংগ্রহকাজে স্বচ্ছতার ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে নির্মাণকাজ থেমে যাবে। তখন এসব সমস্যা সমাধান করে বাড়তি নজরদারির মাধ্যমে কাজ আবার শুরু করা হলেও তা সেতু নির্মাণের সময়কে পিছিয়ে দেবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান এই সেতুর গুণাগুণ নিয়ে আপস করা চলবে না। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং অর্থের সহজোগানদাতারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মোটামুটি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। নিঃসন্দেহে এ রকম একটি বৃহদাকার ও জটিল প্রকল্পের কাজ অদ্যাবধি খুব ভালোভাবে এগিয়েছে।
কিছু লোকের বিশ্বাস, বিশ্বব্যাংকের আরোপিত কিছু শর্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নকে কঠিন করে তোলে। এটি বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে একটি পুরোনো ধারণা, যা সত্য নয়। বাংলাদেশ সরকার দাতাদের যেকোনো ধরনের শর্তের ব্যাপারে পুরোপুরি ভারমুক্ত। আমরা যা বলতে চাই তা হচ্ছে, সরকার দেশের ভালোর জন্য এই প্রকল্প দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করুক। বাংলাদেশের জনগণও তা-ই চায়। তারা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেতু চায়। আমাদের যৌথ উদ্যোগে আমরা এটা অর্জন করতে পারি।
অ্যালেন গোল্ডস্টেইন: বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ।
No comments