জনপ্রশাসন-‘দলীয় মিছিলে সরকারি কর্মকর্তা’—‘এটা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ by আলী ইমাম মজুমদার
শিরোনামটির দুটি অংশের কোনোটিই আমার নয়। প্রথমটি খবরের কাগজের। দ্বিতীয়টিও তা-ই, তবে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর একটি মন্তব্যকে উদ্ধৃত করে। কয়েক দিন আগের ব্যাপার। ৭ মার্চ উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিলে সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করেই এ সংবাদ শিরোনাম।
৭ মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি দিন। এর তাৎপর্য, স্মরণে রাখার যৌক্তিকতা এবং তারই কারণে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল হতেই পারে। শুধু তাই নয়, আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের পটভূমিকায় দিনটি এতটাই গুরুত্ব বহন করে যে এ দিনে সরকারি অনুষ্ঠানমালা থাকাই যৌক্তিক। এমনকি এটাকে সরকারি ছুটির দিন করা হলেও যথাযথ হবে বলেই মনে হয়। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বড় রকমের কর্মসূচি নিয়ে দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেছে। স্বাধীনতাসংগ্রামের মূল নেতৃত্বেও ছিল এ দলটিই। তাই তারা এ দিনে এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়ায় কোনো অসংগতি হয়েছে এমনটাও বলা যাবে না। যথার্থই ছিল এ কর্মসূচি।
কিন্তু অসংগতি দেখা যায় শিরোনামটির প্রথম অংশে। আর অসংগতিটি বাড়িয়ে দেয় এর দ্বিতীয় অংশ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের সব মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারেন না। তাঁরা যেমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না, তেমনি পারেন না কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে, কিংবা তার কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে। সামপ্রতিক কালে বিষয়টিকে আরও কঠিন করে সরকারি কর্মচারীকে অবসর গ্রহণের পর তিন বছর নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিধান হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা এ বিধানটির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদ করেনি। বরং বর্তমান সংসদ আইনে রূপ দিয়ে এটাকে স্থায়িত্ব দিয়েছে। এটা যথার্থ ও যৌক্তিক। তাহলে প্রশ্ন আসে, সে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী করে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন? তাঁদের যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে অতি দায়িত্বশীল ও স্পর্শকাতর পদে আসীন একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সচিবালয়ে একটি সভা করেন। এখানে কি সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি অচল হয়ে গেল? আইন নিজ গতিতে এখানে চলবে না কেন? যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সরকারপ্রধান এতে যোগ দিয়েছেন—তাই এটা সরকারি কর্মসূচি। কিন্তু এতে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই যে সরকারপ্রধান আর সরকারি রাজনৈতিক দলটির প্রধান একই ব্যক্তি হলেও সম্পূর্ণ পৃথক সত্তা। সরকারি রাজনৈতিক দলটির প্রধান কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাঁর নিরাপত্তা, প্রটোকল ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ব্যতীত অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর সে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ারই কথা। এ বিষয়ে কোনো বিতর্কই অবান্তর হবে। বরং এতে করে জনপ্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতার ওপর আরেকটি আঘাত এল।
শিরোনামটির দ্বিতীয় অংশ বিপর্যয়কর এ কারণে যে মন্ত্রিসভার একজন প্রবীণতম সদস্য একে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী। বিতর্কহীন তাঁর পাণ্ডিত্য ও মনীষা। আরও বিতর্কহীন যে তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি ও রাখঢাক করে কথা বলেন না। সমালোচনাও তিনি নেন মাধুর্যের সঙ্গেই। সরকারের এ পর্যায়ের একজন সদস্য যে বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলেছেন তা নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেছেন—এমনটা পত্রিকান্তরে দেখা যায়নি। তাহলে কৌতূহল হয়, যিনি এ বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলেছেন, তিনি কি এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? তেমন কোনো উদ্যোগের কথা এখনো জানা যায়নি। তাহলে প্রশ্ন আসে, তাঁর সীমাবদ্ধতাই বা কোথায়? এ ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ দূর করতে উদ্যোগটি কে নেবে? দেরি অনেক হয়ে গেছে। ক্ষতিও হয়েছে অনেক। তবে সঠিক পথে চলার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
দুর্ভাবনার কথা, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। বরং সে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ভিন্ন কেউ। আইন ভঙ্গের জন্য যাঁঁদের তিরস্কৃত বা শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার কথা; মনে হচ্ছে তাঁরা পুরস্কৃতই হবেন। দেখতে হবে, তাঁরা কারা আর মূল কর্মসূচিতে তাঁদের অবদানই বা কতটুকু? ৭ মার্চ যে বিশাল জনসমাগম গণমিছিলটিতে হয়েছে তাতে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি সংখ্যার বিচারে পর্বতের মূষিক প্রসবের ন্যায়। এতে তারা না গেলেও কর্মসূচির কলেবর কিছুমাত্র খাটো হতো না। তাহলে এদের অংশগ্রহণের আবশ্যকতা কে বা কারা উপলব্ধি করলেন? তাঁরা যে বিভ্রান্ত এবং সরকারের রাজনৈতিক দিকটি অকারণে ক্রমান্বয়ে খাটো করছেন তাও কেউ বুঝতে পারছেন না। কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণের আয়োজনের দাবিদার কিছু ব্যক্তি কিছু সুবিধা নেবেন—আর দায় নিতে হবে সরকারকে। দায় নিতে হবে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর। এটা যেকোনো বিবেচনায় অনভিপ্রেত।
আজ দেশের সুশীল সমাজ প্রশাসন দলীয়করণের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাদের সঙ্গে একমত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটি বিশাল অংশ (অবশ্য নীরবে)। এখন হঠাৎ করে এ ব্যাপারটি একটি বিপরীতমুখী মাত্রা সংযোজন করল। ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হয়। তাই ভিন্ন দলের কর্মসূচিতেও (হয়তো বা পরিস্থিতির কারণে পরিচয়হীনভাবে) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অংশ নিতে পারেন। এতে বিপর্যস্ত জনপ্রশাসনের দশা আরও বেহাল হবে। দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলোতে ‘দলীয় মিছিলে সরকারি কর্মকর্তা’ খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। খবরের সঙ্গে উল্লেখ ছিল এটা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এর সমর্থনে প্রশাসন বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তাদের মতামতও সংযোজন করা হয়েছিল।
সচিবালয়ে বা সচিবালয়ের বাইরে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন থাকে। এগুলো সরকারের যথাযথ নিয়মনীতির আলোকেই নিবন্ধিত হয়। তাঁরা মূলত তাঁদের পেশাগত সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করে সমস্যাদি বা দাবিদাওয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। যথাযথ সুফলও অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। তা ছাড়া সমবায়ের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের দোকান ও ক্যানটিন পরিচালনায়ও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন। এগুলো সবই অরাজনৈতিক এবং তেমন কোনো বিতর্কও নেই এসব নিয়ে। তবে অতীতেও তাঁরা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে কয়েকবারই অংশ নিয়েছিলেন। সব ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো সমালোচিত হয়েছে; সুফল আসেনি বৃহত্তর কলেবরে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের।
দেশের জনপ্রশাসনকে অরাজনৈতিক ভূমিকায় দেখতে চান সমাজের বৃহত্তর অংশ। এর বিপরীত চিত্রটি দীর্ঘদিন দেখে সবাই বীতশ্রদ্ধ। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সিংহভাগই এ জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। জেনেশুনে ভেবেচিন্তে এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিপন্ন করে ফেলা হচ্ছে। অবশ্য অভিযোগ রয়েছে, সে অবক্ষয় শুরু হয়েছে দেশের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আইনের আওতায় স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে তো সমাজের গতিই শ্লথ হয়ে যাবে। এর মাশুল দিতে থাকবে জনগণ।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কিন্তু অসংগতি দেখা যায় শিরোনামটির প্রথম অংশে। আর অসংগতিটি বাড়িয়ে দেয় এর দ্বিতীয় অংশ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের সব মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারেন না। তাঁরা যেমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না, তেমনি পারেন না কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে, কিংবা তার কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে। সামপ্রতিক কালে বিষয়টিকে আরও কঠিন করে সরকারি কর্মচারীকে অবসর গ্রহণের পর তিন বছর নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিধান হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা এ বিধানটির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদ করেনি। বরং বর্তমান সংসদ আইনে রূপ দিয়ে এটাকে স্থায়িত্ব দিয়েছে। এটা যথার্থ ও যৌক্তিক। তাহলে প্রশ্ন আসে, সে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী করে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন? তাঁদের যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে অতি দায়িত্বশীল ও স্পর্শকাতর পদে আসীন একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সচিবালয়ে একটি সভা করেন। এখানে কি সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি অচল হয়ে গেল? আইন নিজ গতিতে এখানে চলবে না কেন? যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সরকারপ্রধান এতে যোগ দিয়েছেন—তাই এটা সরকারি কর্মসূচি। কিন্তু এতে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই যে সরকারপ্রধান আর সরকারি রাজনৈতিক দলটির প্রধান একই ব্যক্তি হলেও সম্পূর্ণ পৃথক সত্তা। সরকারি রাজনৈতিক দলটির প্রধান কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাঁর নিরাপত্তা, প্রটোকল ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ব্যতীত অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর সে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ারই কথা। এ বিষয়ে কোনো বিতর্কই অবান্তর হবে। বরং এতে করে জনপ্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতার ওপর আরেকটি আঘাত এল।
শিরোনামটির দ্বিতীয় অংশ বিপর্যয়কর এ কারণে যে মন্ত্রিসভার একজন প্রবীণতম সদস্য একে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী। বিতর্কহীন তাঁর পাণ্ডিত্য ও মনীষা। আরও বিতর্কহীন যে তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি ও রাখঢাক করে কথা বলেন না। সমালোচনাও তিনি নেন মাধুর্যের সঙ্গেই। সরকারের এ পর্যায়ের একজন সদস্য যে বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলেছেন তা নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেছেন—এমনটা পত্রিকান্তরে দেখা যায়নি। তাহলে কৌতূহল হয়, যিনি এ বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ বলেছেন, তিনি কি এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? তেমন কোনো উদ্যোগের কথা এখনো জানা যায়নি। তাহলে প্রশ্ন আসে, তাঁর সীমাবদ্ধতাই বা কোথায়? এ ‘রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা’ দূর করতে উদ্যোগটি কে নেবে? দেরি অনেক হয়ে গেছে। ক্ষতিও হয়েছে অনেক। তবে সঠিক পথে চলার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
দুর্ভাবনার কথা, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। বরং সে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ভিন্ন কেউ। আইন ভঙ্গের জন্য যাঁঁদের তিরস্কৃত বা শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার কথা; মনে হচ্ছে তাঁরা পুরস্কৃতই হবেন। দেখতে হবে, তাঁরা কারা আর মূল কর্মসূচিতে তাঁদের অবদানই বা কতটুকু? ৭ মার্চ যে বিশাল জনসমাগম গণমিছিলটিতে হয়েছে তাতে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি সংখ্যার বিচারে পর্বতের মূষিক প্রসবের ন্যায়। এতে তারা না গেলেও কর্মসূচির কলেবর কিছুমাত্র খাটো হতো না। তাহলে এদের অংশগ্রহণের আবশ্যকতা কে বা কারা উপলব্ধি করলেন? তাঁরা যে বিভ্রান্ত এবং সরকারের রাজনৈতিক দিকটি অকারণে ক্রমান্বয়ে খাটো করছেন তাও কেউ বুঝতে পারছেন না। কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণের আয়োজনের দাবিদার কিছু ব্যক্তি কিছু সুবিধা নেবেন—আর দায় নিতে হবে সরকারকে। দায় নিতে হবে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর। এটা যেকোনো বিবেচনায় অনভিপ্রেত।
আজ দেশের সুশীল সমাজ প্রশাসন দলীয়করণের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাদের সঙ্গে একমত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটি বিশাল অংশ (অবশ্য নীরবে)। এখন হঠাৎ করে এ ব্যাপারটি একটি বিপরীতমুখী মাত্রা সংযোজন করল। ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হয়। তাই ভিন্ন দলের কর্মসূচিতেও (হয়তো বা পরিস্থিতির কারণে পরিচয়হীনভাবে) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অংশ নিতে পারেন। এতে বিপর্যস্ত জনপ্রশাসনের দশা আরও বেহাল হবে। দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলোতে ‘দলীয় মিছিলে সরকারি কর্মকর্তা’ খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। খবরের সঙ্গে উল্লেখ ছিল এটা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এর সমর্থনে প্রশাসন বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তাদের মতামতও সংযোজন করা হয়েছিল।
সচিবালয়ে বা সচিবালয়ের বাইরে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন থাকে। এগুলো সরকারের যথাযথ নিয়মনীতির আলোকেই নিবন্ধিত হয়। তাঁরা মূলত তাঁদের পেশাগত সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করে সমস্যাদি বা দাবিদাওয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। যথাযথ সুফলও অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। তা ছাড়া সমবায়ের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের দোকান ও ক্যানটিন পরিচালনায়ও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন। এগুলো সবই অরাজনৈতিক এবং তেমন কোনো বিতর্কও নেই এসব নিয়ে। তবে অতীতেও তাঁরা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে কয়েকবারই অংশ নিয়েছিলেন। সব ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো সমালোচিত হয়েছে; সুফল আসেনি বৃহত্তর কলেবরে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের।
দেশের জনপ্রশাসনকে অরাজনৈতিক ভূমিকায় দেখতে চান সমাজের বৃহত্তর অংশ। এর বিপরীত চিত্রটি দীর্ঘদিন দেখে সবাই বীতশ্রদ্ধ। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সিংহভাগই এ জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। জেনেশুনে ভেবেচিন্তে এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিপন্ন করে ফেলা হচ্ছে। অবশ্য অভিযোগ রয়েছে, সে অবক্ষয় শুরু হয়েছে দেশের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আইনের আওতায় স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে তো সমাজের গতিই শ্লথ হয়ে যাবে। এর মাশুল দিতে থাকবে জনগণ।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
No comments