কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-‘সমস্যার শহরে’ আজ ভোট by আনোয়ার হোসেন ও গাজীউল হক
মাদকের ব্যাপক ব্যবহার, মাদক ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সন্ত্রাসী লালন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা, যানজট—কুমিল্লায় যেকোনো সচেতন নাগরিকের সঙ্গে কথা বললে এই সমস্যাগুলোর কথা একনিঃশ্বাসে বলে ফেলবেন। সমস্যার এই শহরেই আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, গত এক মাসের প্রচার-প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, বিশেষ করে, মেয়র পদের প্রার্থীরা নিরাশ নগরবাসীর মনে
কোনো আশা জাগাতে পারেননি। তাই ‘মন্দের ভালো’ প্রার্থীকে বেছে নিতে আজ তাঁরা ভোট দেবেন। শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী সমর্থন ভোটারদের হতাশ করেছে। নিজ উদ্যোগে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও নতুন সিটি করপোরেশনকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রাজ্ঞ কেউ নেই। তারপর হলফনামায় প্রার্থীরা নিজেদের যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতেও নিরাশ হতে হয়েছে ভোটারদের। সর্বশেষ নতুন এই সিটি করপোরেশনকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন নগরবাসীর সামনে তুলে ধরে তাঁদের আশান্বিত করার যোগ্যতাও দেখাতে পারেননি প্রার্থীরা। ‘নালা পরিষ্কার’ আর ‘ডিজিটাল শহর’ গড়ার প্রতিশ্রুতি ভোটারদের ‘যেমন আছে তেমন রবে’ শঙ্কাকেই শুধু জোরালো করেছে।
ভোটার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আজ তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে যে ধরনের সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে দেখার স্বপ্ন ছিল, সে ধরনের প্রার্থী নেই।
মেয়র পদপ্রার্থীদের কেউ নালা পরিষ্কার ও জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেউ বলছেন, যানজট নিরসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করবেন। কেউ বলছেন, উপাসনালয় ও বিনোদনকেন্দ্র করবেন। মাদক ও সন্ত্রাস দূর করার কথাও বলছেন প্রার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অতীতের রেকর্ড বিবেচনায় নিলে সন্দেহ থেকেই যায় ভোটারদের মনে।
নতুন এক নগরকে সাজানোর যে সুযোগ প্রার্থীদের সামনে এসেছে, তার জন্য ১০ বা ২০ বছরের পরিকল্পনা তাঁরা ভোটারদের কাছে হাজির করতে পারেননি।
বিএনপি থেকে ‘রাজনৈতিক অব্যাহতি’ নিয়ে প্রার্থী হওয়া মনিরুল হক সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় একাধিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে শোনা যায় না। ২০১০ সালে যুবদলের সম্মেলনে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনাও তাঁর ক্যাডাররাই করেছে বলে দলের অন্য পক্ষ অভিযোগ তুলেছে। এসব অস্বচ্ছতার মধ্যে পৌরসভার নালা পরিষ্কার ও কিছু সড়কে ফুলের বাগান করে তিনি কিছু মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন।
জানতে চাইলে আইনজীবী নাজমুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট দেওয়া এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে যাওয়া এক নয়। কুমিল্লার মেয়র পদপ্রার্থীদের অবস্থা দেখে মনে হয়, সচেতন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি মমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন কোনো প্রার্থী নেই। সমাজ ও রাজনীতির অবক্ষয়ের কারণে ভালো লোক প্রার্থী হতে পারেননি। আট প্রার্থীর মধ্যে যাঁর বদনাম অপেক্ষাকৃত কম, তাঁকেই ভোটারদের বেছে নিতে হবে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পেইজ কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লোকমান হাকিম বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কোনো ক্লিন মানুষ নেই। এটা কুমিল্লাবাসীর জন্য দুর্ভাগ্য। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের কোনো ভিশন নেই। এঁদের কেউ জিতলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সিটি করপোরেশন চালাবেন না। নিজেদের লোক নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যই তাঁদের কাছে প্রধান হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।’
গতকাল বুধবার নগরের বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে হতাশার কথা জানান। পশ্চিম বাগিচাগাঁয়ের নূরুল হক বলেন, ‘মেয়র প্রার্থী পছন্দ হয়নি। তাই ওই পদে ভোট দেব না। তবে আমাদের ওয়ার্ডের চার কাউন্সিলর প্রার্থীর কারও বদনাম নেই। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলররা বেশির ভাগই স্নাতক উত্তীর্ণ। ওদের ভোট দেব।’
রেসকোর্স এলাকার খায়রুন্নাহার বলেন, ‘মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে ভোট দেব। তিনি নিশ্চয়ই কুমিল্লাকে নিয়ে নতুন কিছু ভাববেন।’
উত্তর চর্থা এলাকার ভোটার ফেরদৌস মিয়া ও আলী হোসেন জানান, কাকে ভোট দেবেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
কান্দিরপাড় এলাকার একটি স্টেশনারি দোকানে কাজ করেন শাহজাহান মিয়া। তিনি বললেন, কুমিল্লায় এত সমস্যা। অথচ মেয়র পদপ্রার্থীরা নালা পরিষ্কার আর স্কুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই খালাস। মেয়র পদপ্রার্থীদের শহরের মূল সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা আছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তার পরও নাগরিক হিসেবে ভোট দিতে হবে।
ভোটার ও নাগরিক সমাজের এই হতাশার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল দুপুরে তাঁর ঠাকুরপাড়ার বাসায় আফজল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক সমাজ সব পক্ষপাতদুষ্ট। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আমি নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করি। অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ মিলে জনগণ আমাকেই বেছে নেবে।’ নতুন সিটি করপোরেশন, নতুন মেয়র। সবাই চান অন্তত ২০ বছর সামনের চিন্তা করতে পারে এমন একজন মেয়র দরকার। এই বিষয়ে আপনার মতামত কী? জবাবে আফজল খান বলেন, ‘আমি ৫০ বছরের চিন্তা করে নেমেছি। আমিই পারব পরিকল্পিত নগর গড়তে। আমি যখন রাজনীতি শুরু করি অন্য প্রার্থীদের জন্মই হয়নি।’
একই প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা দরকার, সেই যোগ্যতা নিয়েই প্রার্থী হয়েছি। ভোট দেওয়ার মালিক জনগণ। ভোট দিলে জয়ী হব। না দিলে জয়ী হব না। নগরবাসী অতীতেও আমাকে বেছে নিয়েছিল। এবারও আমাকে বেছে নেবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা পৌরসভা নগরে প্রায় এক হাজার ৭৪২টি বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। অভিযোগ আছে, প্রয়োজনীয় রাস্তার ব্যবস্থা না রেখেই এসব ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যানজট ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এসব নকশা অনুমোদন দিয়েছে।
এই বিষয়ে সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক দাবি করেন, নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেননি। কাউন্সিলরদের একটি কমিটি সব অনুমোদন দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, অর্থের লেনদেনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। বরং নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএনপি-আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন।
জানা গেছে, নকশা অনুমোদনের কমিটিতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আফজল খানের মেয়ে আনজুম সুলতানাও ছিলেন। তিনিও এবার সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। আলোচনা আছে, আফজল খান মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে আনজুম সুলতানাই সিটি করপোরেশন চালাবেন—এমন চিন্তা থেকেই বাবা ও মেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আফজল খানের ছোট ভাই আমানউল্লাহ খান।
জাতীয় পার্টি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূর-উর-রহমান মাহমুদ এবং আনিসুর রহমানও দাবি করেন তাঁরা যোগ্য প্রার্থী। মাদক, সন্ত্রাস ও নগরের সমস্যা সমাধানে তাঁরাই জনগণের প্রথম পছন্দ হবেন।
ভোটার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আজ তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে যে ধরনের সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে দেখার স্বপ্ন ছিল, সে ধরনের প্রার্থী নেই।
মেয়র পদপ্রার্থীদের কেউ নালা পরিষ্কার ও জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেউ বলছেন, যানজট নিরসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করবেন। কেউ বলছেন, উপাসনালয় ও বিনোদনকেন্দ্র করবেন। মাদক ও সন্ত্রাস দূর করার কথাও বলছেন প্রার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অতীতের রেকর্ড বিবেচনায় নিলে সন্দেহ থেকেই যায় ভোটারদের মনে।
নতুন এক নগরকে সাজানোর যে সুযোগ প্রার্থীদের সামনে এসেছে, তার জন্য ১০ বা ২০ বছরের পরিকল্পনা তাঁরা ভোটারদের কাছে হাজির করতে পারেননি।
বিএনপি থেকে ‘রাজনৈতিক অব্যাহতি’ নিয়ে প্রার্থী হওয়া মনিরুল হক সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় একাধিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে শোনা যায় না। ২০১০ সালে যুবদলের সম্মেলনে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনাও তাঁর ক্যাডাররাই করেছে বলে দলের অন্য পক্ষ অভিযোগ তুলেছে। এসব অস্বচ্ছতার মধ্যে পৌরসভার নালা পরিষ্কার ও কিছু সড়কে ফুলের বাগান করে তিনি কিছু মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন।
জানতে চাইলে আইনজীবী নাজমুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট দেওয়া এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে যাওয়া এক নয়। কুমিল্লার মেয়র পদপ্রার্থীদের অবস্থা দেখে মনে হয়, সচেতন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি মমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন কোনো প্রার্থী নেই। সমাজ ও রাজনীতির অবক্ষয়ের কারণে ভালো লোক প্রার্থী হতে পারেননি। আট প্রার্থীর মধ্যে যাঁর বদনাম অপেক্ষাকৃত কম, তাঁকেই ভোটারদের বেছে নিতে হবে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পেইজ কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লোকমান হাকিম বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কোনো ক্লিন মানুষ নেই। এটা কুমিল্লাবাসীর জন্য দুর্ভাগ্য। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের কোনো ভিশন নেই। এঁদের কেউ জিতলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সিটি করপোরেশন চালাবেন না। নিজেদের লোক নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যই তাঁদের কাছে প্রধান হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।’
গতকাল বুধবার নগরের বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে হতাশার কথা জানান। পশ্চিম বাগিচাগাঁয়ের নূরুল হক বলেন, ‘মেয়র প্রার্থী পছন্দ হয়নি। তাই ওই পদে ভোট দেব না। তবে আমাদের ওয়ার্ডের চার কাউন্সিলর প্রার্থীর কারও বদনাম নেই। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলররা বেশির ভাগই স্নাতক উত্তীর্ণ। ওদের ভোট দেব।’
রেসকোর্স এলাকার খায়রুন্নাহার বলেন, ‘মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে ভোট দেব। তিনি নিশ্চয়ই কুমিল্লাকে নিয়ে নতুন কিছু ভাববেন।’
উত্তর চর্থা এলাকার ভোটার ফেরদৌস মিয়া ও আলী হোসেন জানান, কাকে ভোট দেবেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
কান্দিরপাড় এলাকার একটি স্টেশনারি দোকানে কাজ করেন শাহজাহান মিয়া। তিনি বললেন, কুমিল্লায় এত সমস্যা। অথচ মেয়র পদপ্রার্থীরা নালা পরিষ্কার আর স্কুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই খালাস। মেয়র পদপ্রার্থীদের শহরের মূল সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা আছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তার পরও নাগরিক হিসেবে ভোট দিতে হবে।
ভোটার ও নাগরিক সমাজের এই হতাশার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল দুপুরে তাঁর ঠাকুরপাড়ার বাসায় আফজল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক সমাজ সব পক্ষপাতদুষ্ট। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আমি নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করি। অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ মিলে জনগণ আমাকেই বেছে নেবে।’ নতুন সিটি করপোরেশন, নতুন মেয়র। সবাই চান অন্তত ২০ বছর সামনের চিন্তা করতে পারে এমন একজন মেয়র দরকার। এই বিষয়ে আপনার মতামত কী? জবাবে আফজল খান বলেন, ‘আমি ৫০ বছরের চিন্তা করে নেমেছি। আমিই পারব পরিকল্পিত নগর গড়তে। আমি যখন রাজনীতি শুরু করি অন্য প্রার্থীদের জন্মই হয়নি।’
একই প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা দরকার, সেই যোগ্যতা নিয়েই প্রার্থী হয়েছি। ভোট দেওয়ার মালিক জনগণ। ভোট দিলে জয়ী হব। না দিলে জয়ী হব না। নগরবাসী অতীতেও আমাকে বেছে নিয়েছিল। এবারও আমাকে বেছে নেবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা পৌরসভা নগরে প্রায় এক হাজার ৭৪২টি বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। অভিযোগ আছে, প্রয়োজনীয় রাস্তার ব্যবস্থা না রেখেই এসব ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যানজট ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এসব নকশা অনুমোদন দিয়েছে।
এই বিষয়ে সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক দাবি করেন, নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেননি। কাউন্সিলরদের একটি কমিটি সব অনুমোদন দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, অর্থের লেনদেনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। বরং নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএনপি-আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন।
জানা গেছে, নকশা অনুমোদনের কমিটিতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আফজল খানের মেয়ে আনজুম সুলতানাও ছিলেন। তিনিও এবার সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। আলোচনা আছে, আফজল খান মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে আনজুম সুলতানাই সিটি করপোরেশন চালাবেন—এমন চিন্তা থেকেই বাবা ও মেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আফজল খানের ছোট ভাই আমানউল্লাহ খান।
জাতীয় পার্টি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূর-উর-রহমান মাহমুদ এবং আনিসুর রহমানও দাবি করেন তাঁরা যোগ্য প্রার্থী। মাদক, সন্ত্রাস ও নগরের সমস্যা সমাধানে তাঁরাই জনগণের প্রথম পছন্দ হবেন।
No comments