উপজেলা পরিষদ-বাড়তি কর্তৃত্বের প্রতিশ্রুতি

শির দশকে এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনের জমানায় উপজেলা পরিষদের সৃষ্টি। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর হিসেবে অভিহিত হলেও উপজেলা পরিষদ তখন প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে সামরিক জান্তার শাসন দীর্ঘস্থায়ী করার কৌশল হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু সময় বদলে গেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সব দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। জনসাধারণও নির্বাচিত এ পরিষদকে


'জনপ্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠায়' অপরিহার্য স্তর হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, নির্বাচনের পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও উপজেলা পরিষদ স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেনি। 'কর্মহীন-মর্যাদাহীন' উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা যে গণপদত্যাগের মতো পদক্ষেপের কথা ভাবতে শুরু করেছেন তার কারণ বোধগম্য। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের বৈঠকে ১০টি মন্ত্রণালয়ের ১৩টি বিভাগের কার্যক্রম উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করার কথা জানানো হয়েছে। এসব বিভাগের সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিবর্তে উপজেলা চেয়ারম্যান। কার্যকর উপজেলা পরিষদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত। স্থানীয় সরকারের ঐতিহ্যবাহী সংস্থা ইউনিয়ন পরিষদ। তাদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ সমন্বয় রেখে কাজ করলে গ্রামীণ জনপদে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির সঙ্গে তাদের যুক্ত হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। এ কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা পর্যায়ে নিযুক্ত সরকারি অফিসগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর পূর্ণ সহযোগিতা থাকা চাই। সংসদ সদস্যদের তরফেও একই মনোভাব প্রত্যাশিত। তাদের সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষোভের মাত্রা ব্যাপক এবং তা একেবারে অমূলক নয়। উপজেলাগুলোতে কর্তৃত্ব নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এ কারণে উপজেলা পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রমই একরূপ অচল। এর অবসান ঘটাতেই হবে। সংসদ সদস্যদের কর্মপরিধি সংবিধানে নির্দিষ্ট করা আছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকসহ যেসব কাজ উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিতদের জন্য নির্দিষ্ট তাতে সংসদ সদস্যদের কোনোরূপ হস্তক্ষেপ কাঙ্ক্ষিত নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও বুঝতে হবে যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির বিকল্প তারা হতে পারেন না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিধিবিধান রয়েছে এবং সংশ্লিষ্টরা কঠোরভাবে তা অনুসরণ অবশ্যই করবেন। কিন্তু এ জন্য তাদের কর্মহীন করে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়। আমাদের সংবিধানে শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের কথা বলা হয়েছে। তাদের হাতে ক্ষমতা ক্রমে বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এ ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে তার বাস্তবায়ন হলে সেটা হবে এ লক্ষ্য অর্জনের পথে ইতিবাচক সূচনা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, অধিকার দায়িত্বশীলতাও নিয়ে আসে। স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত নারী-পুরুষরা যেন তাদের ওপর দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারেন সে জন্য দক্ষতা-যোগ্যতা বাড়িয়ে চলারও প্রশ্ন রয়েছে। সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত থেকে কাজ সম্পাদন করা। এ বিষয়ে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে জনগণের তরফে অভিযোগ কিন্তু যথেষ্টই এবং তা উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.