জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাঃ সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিরোধীরা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, দেশ পরিচালনায় গত তিন বছরে তাঁরা বিরোধীদলের কোনো ধরণের সহায়তা পাননি। বরং সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক সময় দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিরোধীরা। বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ ভাষণে মহাজোট সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। বিরোধী দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই তারা মাসের পর মাস সংসদ বর্জন করছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী মাত্র ৬ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। বাধাহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরেও কেন এই সংসদ বর্জন?’
সরকারের তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিচে প্রকাশ করা হল।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আপনাদের দেয়া বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে তিন বছর আগে ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠন করেছিলাম।
এই দিনে আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেইসব ভোটারদের বিশেষ করে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ সকল ভোটারদের যাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাদের বিজয়কে নিশ্চিত করেছিল।
অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে আপনাদের কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। সর্বক্ষেত্রে শতভাগ সফলতার দাবী আমরা করব না। তবে একথা বলতে পারি যে, আপনাদের সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনই গাফিলতি করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না, ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁর নেতৃত্বে চল্লিশ বছর আগে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল।
গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করছি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল শহীদকে।
স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
স্মরণ করছি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ সকল জাতীয় নেতাকে।
৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও দু লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। তাদের আত্মত্যাগকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।
স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বর গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনে নিহত ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও নিরীহ মানুষকে ।
জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সচেতন দেশবাসী,
এক অন্ধকারময় সময়ে আমরা দায়িত্ব নিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির চরম সঙ্কট, বিশ্বমন্দা, সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের অতিক্রম করতে হচ্ছে পূর্ববর্তী দুটি সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যার পর্বতপ্রমাণ বোঝা।
সাহস, সততা ও আন্তরিকতার সাথে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জনগণ ভোট দিয়ে পছন্দ মত সরকার গঠন করবে। যারা দায়িত্ব নিবে তারা পূর্বের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা বিরোধী দলে থাকবেন তারা সরকারকে এ কাজে সহায়তা করবেন। আমাদের দল ও আদর্শ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দেশ ও মানুষের স্বার্থকে সকল দল-মতের উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, দেশ পরিচালনায় গত তিন বছরে আমরা বিরোধীদলের কোন ধরণের সহায়তা পাইনি। বরং তারা সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক সময় দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
কোন কারণ ছাড়াই তারা মাসের পর মাস সংসদ বর্জন করছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী মাত্র ৬ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। বাধাহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরেও কেন এই সংসদ বর্জন?
আমরা জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে আমি জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।
সচেতন দেশবাসী,
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, মানুষ হত্যা করেছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন করেছিল তাদের বিচার হবে - এটা ছিল আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণরায় দিয়েছে। আমরা যখন মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ শুরু করেছি, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল ও মানুষ হত্যার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন।
তার প্রতি অনুরোধ, জ্বালাও-পোড়াও করে এই মানবতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের রক্ষার চেষ্টা করবেন না।
আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, যত বাধাই আসুক না কেন বাংলার মাটিতে এদের বিচার আমরা করবই। বঙ্গবন্ধুুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করতে অনেকেই চেষ্টা করেছিল, পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও কেউ বন্ধ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণকে প্রধান্য দিয়েছিলাম। সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভিতরে নিয়ে আসা ছিল আমাদের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা যেদিন সরকার গঠন করি সেদিন চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও আমরা তা কমিয়ে এনেছি। পাশাপাশি জনগণের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ৬৬০ ডলার থেকে ৮২৮ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়িয়েছি। চাকুরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন ১৬০০ থেকে তিন হাজার টাকায় উন্নীত করেছি। গ্রামের ক্ষেতমজুররা যেখানে ১০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেত তা আজ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাল কিনতে পারতো আড়াই থেকে তিন কেজি। এখন কিনতে পারে ১০ থেকে ১২ কেজি। দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা অর্থনীতিকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। উত্পাদন বেড়েছে। রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার। জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। আমরা সরকার গঠনের সময়ে রেমিটেন্স আয় ছিল ৯.২ বিলিয়ন ডলার যা বৃদ্ধি পেয়ে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু সরকারি খাতেই সাড়ে চার লক্ষাধিক নারী-পুরুষ চাকুরি পেয়েছেন। গত অর্থবছরে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবছর ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন, আমরা যেদিন সরকার গঠন করি সেদিন বিদ্যুত্ পরিস্থিতি কি ভয়াবহ পর্যায়ে ছিল। বিএনপি-জামাত সরকারের ৫ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে এক মেগাওয়াট উত্পাদন তারা বাড়াতে পারেনি। ২০০১ সালে আমাদের সরকার ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন রেখে এসেছিলাম সাত বছরে তা কমে দাঁড়ায় ৩২৬৮ মেগাওয়াটে।
৩ বছরে আমরা অতিরিক্ত ২৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছি।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ৪৯টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করি। এরমধ্যে ২৪টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র উত্পাদন শুরু করেছে। বাকী কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে এবং বিদ্যুত চলে আসবে। এছাড়া আরও ৫ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান প্রক্রিয়াধীন আছে।
গ্যাস ও কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুত্ নির্মাণকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান থেকে বিদ্যুত্ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে চার লক্ষ নতুন গ্রাহক সংযোগ পেয়েছেন।
গ্যাস উত্পাদন ও বিতরণ খাতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে, দৈনিক ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুন্দলপুর, সেমুতাং, সালদানদী ও ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্পাদন শুরু হবে।
বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ প্রণীত হয়েছে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হয়েছে। নতুন আধুনিক ড্রিলিং রিগ ও একটি ওয়ার্কওভার রিগ ক্রয় করে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম ভিত্তিক কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করতে সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছি।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি করা। সরকার তিনবছরে এই অঙ্গীকার পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে।
খাদ্য গুদামগুলোতে রেকর্ড ১৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ১১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ১ লক্ষ ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ১৪০টি খাদ্য গুদামসহ সারা দেশে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে।
ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ইত্যাদি কর্মসূচীর পরিধি ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি ১৭ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
স্বল্প ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১২ লক্ষ ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গার জনপদ উত্তরবঙ্গে আজ মানুষ দু’বেলা পেটভরে খেতে পাচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত হবে।
আমি বিশ্বাস করি, কৃষি ও কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সে বিশ্বাস থেকে সরকার কৃষি উন্নয়নে সর্বাত্নক পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশে প্রথমবারের মত ১ কোটি ৪০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ৯৩ লাখ ৫০ হাজার কৃষক তাদের একাউন্ট খুলেছেন। আমরাই প্রথম বর্গাচাষীদের বিনা জামানতে কৃষি ঋণ বিতরণ শুরু করেছি।
সার্কভুক্ত দেশগুলোতে মানসম্মত বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য ‘সার্ক সীড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তি করা হয়েছে।
নন ইউরিয়া সারের দাম তিন দফা কমানো হয়েছে। ৮০ টাকা কেজি টিএসপি’র বর্তমান মূল্য ২২ টাকা। এমওপি’র দাম ছিল ৭০ টাকা, এখন ১৫ টাকা। ডিএপি’র কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে।
কৃষকের কাছে সময় মত সুলভ মূল্যে সারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৪ লক্ষ কৃষককে বিনামূল্যে সার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরে সার, বিদ্যুত্ ও ডিজেলে ১৬ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সুফল কৃষক পেয়েছে। যে কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরে চাল উত্পাদন ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। সেচ মওসুমে বিদ্যুত্ সরবরাহ বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মওসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি তথ্যকেন্দ্র, ভিডিও কনফারেন্স ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষক তার সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। জৈবপ্রযুক্তি প্রয়োগ করে পাটের জীবন রহস্য আবিস্কার করায় উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবনে অগ্রগতি হয়েছে।
মত্স উত্পাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ। জাটকা নিধন বন্ধ করায় ইলিশ উত্পাদন বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পোলট্রি, হ্যাচারি ও গো-খামার স্থাপনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের আমিষ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সরকার নিঃস্ব ও হতদরিদ্র মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। উন্নত দেশগুলো যখন সামাজিক নিরাপত্তা সংকুচিত করছে তখন সীমিত সম্পদ নিয়েও আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি করছি।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরাই প্রথম বয়স্কভাতা, দুঃস্থ নারী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতাসহ সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করি। এবার সরকার গঠনের পর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানো হয়েছে।
অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে।
মাতৃকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬০ হাজার থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ লক্ষ ১২০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে।
বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ২২ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় সাড়ে সাত লক্ষ নারীকে মাসিক ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা ৭০ লক্ষ ৬৭ হাজার থেকে থেকে ১ কোটি ৭৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গৃহীত ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি বিএনপি-জামাত জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। আবারো এই কর্মসূচি চালু করেছি।
একটি বাড়ী একটি খামার কর্মসূচির আওতায় ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার পরিবার সরাসরি সুফলভোগী হয়েছে।
১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে দুই দফায় মোট ১ লক্ষ ৯ হাজার পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে গৃহহীন মানুষের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করে প্রায় ৯ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা। শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তোলা।
ইতোমধ্যে ৯৯.৬৪ শতাংশ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। ৩১ হাজার ২০৮টি সরকারি, রেজিস্টার্ড ও কম্যুনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বছরে ৭৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে ২২ কোটি ১৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৮৩ টি পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়েছে।
রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতা স্কেলের প্রারম্ভিক ১০০ শতাংশ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রায় সাড়ে চার হাজার সরকারি ও রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
৫০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়াসহ ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে জাতির পিতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় বীরদের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করা হয়েছে।
ভর্তি সংকট সমাধানে ঢাকায় ১১টি মাধ্যমিক স্কুল ও ৬টি কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে।
১০০টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা কোর্স ও ৩১টি মাদ্রাসায় ৪টি করে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে।
ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।
উপজেলা সেবাকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিদ্যালয় পর্যায়ে ৩,০৪৭টি আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শিক্ষা সহায়তা দিতে ১ হাজার কোটি টাকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করা হয়েছে যা বিএনপি-জামাত জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল।
১৩৬টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। ২০০টি নির্মাণের কাজ চলছে।
৩০১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১০৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় এবং তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে।
নতুন ১২টি উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলোকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।
জেলা পর্যায়ের তিনটি হাসপাতাল ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১৮টি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়ন ও বার্ন ইউনিটে আইসিইউ চালু করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটি এবং হেড-নেক ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স এ পরিণত করছি।
গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল করেজ ও হাসপাতাল এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে।
খুলনায় বিএনপি-জামাত আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করেছি।
নবজাতক মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়ে এখন প্রতি হাজারে ৩৭ জন। পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু মৃত্যুর হার কমে এখন প্রতি হাজারে ৬৫ জন।
গড় আয়ু বেড়ে ৬৭ বছর হয়েছে। নারীর ক্ষেত্রে তা ৬৮.৩ শতাংশ।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও কুষ্ঠ উচ্ছেদ কর্মসূচিতে আমাদের সাফল্য প্রায় শতভাগ।
৫টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ১০টি ইনস্টিটিউট নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
চট্টগ্রামে নাসিং কলেজ স্থাপিত হয়েছে। মানিকগঞ্জে একটি নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণাধীন। আরও ৬টি নতুন নাসির্ং কলেজ ও ১৫টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
এপর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার চিকিত্সক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০১০ এ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে জাতীয় পর্যায়ে শিশু মৃত্যুর হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার লাভ করেছে।
স্বাস্থ্যখাতের গুণগত উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বীকৃতি হিসাবে আমাকে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, সাউথ-সাউথ নিউজ ও জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন ‘সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড ২০১১’ প্রদান করে।
প্রিয় দেশবাসী,
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিন বছরে এগারটি বৃহত্ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে । এর মধ্যে আছে, দপদপিয়ায় আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, ঢাকার বসিলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যার ওপর সুলতানা কামাল সেতু, কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু, হালুয়াঘাটে ভোগাই সেতু, মাদারীপুরে শেখপাড়া সেতু, পিরোজপুরে নাজিরপুর সেতু, গৌরনদীতে পয়সারহাট সেতু, জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র সেতু ও পাইকগাছা-কয়রা সড়কে কয়রা সেতু।
রংপুর-কুড়িগ্রাম তিস্তা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে।
মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ৭ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু, নদীশাসন, সেতুর উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়ক এবং বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ২য় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত রাজধানীর যানজট মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সে কারণেই যানজট নিরসনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ।
রাজধানীর যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে।
মিরপুর, বনানী, কুড়িলসহ বিভিন্ন ফ্লাইওভারের কাজ এগিয়ে চলেছে।
এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় বাংলাদেশের তিনটি রুট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগীয় সড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক চার-লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিযে চলছে।
যানজট নিরসনে ৫৩০টি নতুন বাস আমদানি করা হয়েছে। রাজধানীতে ১৪টি স্কুল বাস ও মহিলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১৮ হাজার পেশাদার গাড়ী চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়েকে আধুনিকায়ন করার উপর আমরা বিশেষভাবে জোর দিয়েছি।
85 কিলোমিটার রেলপথ মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৫০টি রেল ব্রিজ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। ৩৬টি রেলওয়ে স্টেশন পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ৯টি লোকোমেটিভ ও ৫৫টি ওয়াগন সংগ্রহ এবং ৪৫টি লোকোমোটিভ ও ২২০টি ওয়াগন সংস্কার করা হয়েছে।
ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন লাইনে ৮ জোড়া নতুন ট্রেন চালু করেছি।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
ফেরি, পন্টুন, ওয়াটার বাস ও জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
নৌ-পথের নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৩ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।
৪টি অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর স্থাপন ও ২টি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ২টি কন্টেইনার নৌ-বন্দর স্থাপিত হয়েছে। কাঁচপুর, সন্দ্বীপ ও কুমিরায় নৌ-যানের ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শহরের চারিদিকে ৭০ কিলোমিটার নৌ-পথ সৃজন ও ঢাকার আশপাশের নদী-তীরের অবৈধ দখল রোধে ২১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ চালানোর জন্য সদরঘাট-গাবতলী রুটে ২টি ওয়াটার বাস সংযোজিত হয়েছে।
ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-দিল্লী ও চট্টগ্রাম-ব্যাংকক রুট এবং সিলেট-লন্ডন রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
বিমানের জন্য দুইটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ সংযোজন এবং একটি ৩১০-৩০০ ও দুইটি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও ২টি উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবন, জাফলংসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী,
শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে আমাদের সরকার সবধরণের সহায়তা করে যাচ্ছে। বিশ্বমন্দার প্রভাব মোকাবেলার জন্য ৩,৪২৪ কোটি টাকার প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন অব্যাহত আছে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের শিল্প স্থাপনকে উত্সাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে ৫৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টন ইউরিয়া সার উত্পাদন ক্ষমতা সম্পন্ন শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে চীনের সাথে চুক্তি সই করেছি। আরও ৩টি ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিসিকের উদ্যোগে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ৭ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল উত্পাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে।
সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও মিরেশ্বরাই এ নতুন শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
বিএনপি-জামাত আমলে বন্ধ করে দেওয়া খুলনার পিপলস জুট মিলস এবং সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিলস চালু করেছি। বিজেএমসি’র ২৭টি পাটকলের মধ্যে ২৩টি চালু হয়েছে। অচিরেই আরও তিনটি চালু হবে।
বিটিএমসি’র ১৮টি বন্ধ মিলের মধ্যে ৮টি চালু করেছি।
বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
তিন বছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ২৬৬ কোটি ডলার। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ৫ বছরে ছিল ২৬০ কোটি ডলার।
প্রিয় দেশবাসী,
তথপ্রাপ্তি জনগণের অধিকার। আমরাই প্রথম তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করেছি।
রেডিও-টেলিভিশন ও সংবাদপত্র যেকোন সময়ের তুলনায় পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
আমরা স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি।
ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে দক্ষ ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশেষ কার্যক্রম চলছে।
জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে।
আরো চারটি পৌরসভা গঠন করা হয়েছে।
৭৪২ টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৭৭১টি গ্রোথ সেন্টার, প্রায় ৬৯ কিলোমিটার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ এবং ১১,৬৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ১৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক এবং ৫১ কিলোমিটার ব্রিজ ও কালভার্ট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
৮৭ হাজার ৩৪৬টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৪১ হাজার একর কৃষি খাস জমি প্রদান করা হয়েছে।
প্রায় ৬ লক্ষ বেকার যুবককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ন্যাশন্যাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রাম, বরগুনা ও গোপালগঞ্জ জেলার ৫৫ হাজার ২৫৪ জন যুবকের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ১ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা যুবকদের দেওয়া হচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী,
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশী নারী যারা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনার শিকার।
গত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক নারী ভোটার আমাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিলনে।
আমরা সরকার গঠনের পর নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার এজেন্ডা হিসাবে গ্রহণ করেছি।
একটি যুগোপযোগী নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা, শ্রমবাজারে ব্যাপক অংশগ্রহণ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করেছি।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে।
প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদেতিনজন করে নারী সদস্য নির্বাচিত।
ইভটিজিংসহ নারীর প্রতি সামাজিক অপরাধ রোধে পদক্ষেপ নিয়েছি।
জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। নিজস্ব ফান্ড থেকে প্রতিবছর ৭০০ কোটি টাকা করে তিন বছরে ২১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ও ৬২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলারের বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সক্ষমতা তহবিল গঠিত হয়েছে। ট্রাস্ট ফান্ড আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের হেফাজত করা। আমরা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশে এখন একই সময়ে ৫০০ স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে না। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট আমলের মত বিরোধীদলের এমপিদের নিহত হওয়ার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত পৈশাচিক ঘটনার সৃষ্টি হয় না।
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ চলছে। এজন্য নতুন আইন তৈরি করা হয়েছে।
পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিল্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।।
পুলিশের ৫২টি মডেল থানা, ১০টি নতুন তদন্ত কেন্দ্র ও ৩টি নতুন থানা স্থাপন করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, মেরিন পুলিশ, পৃথক তদন্ত, ইউনিট, জঙ্গীদমনে ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজমসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ২০ হাজার ৭২৩ জন সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন। ফলে, বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধসরঞ্জাম কেনার কাজ অব্যাহত আছে।
বিমানবাহিনীর জন্য বেশকিছু যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে। বিমানবাহিনীতে ‘ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র’ অন্ত্মর্ভুক্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।
নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে তৈরির কাজ চলছে।
দক্ষ সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ভাটিয়ারীতে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।
ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ২ হাজার ৯১৫ ইউনিট আবাসন নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা সত্মম্ভ নির্মাণকাজ বিএনপি-জামাত বন্ধ করে দিয়েছিল। তা আবার শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ভূমি কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন বিভাগ জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
সম্মানিত দেশবাসী,
নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিলাম, সরকার গঠনের সুযোগ দিলে আমরা তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করব যা হবে তরুণ প্রজন্মের জন্য আমাদের উপহার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০ লক্ষ মানুষ এসব সেবাকেন্দ্র থেকে সেবা পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় গড়ে দুই কোটি টাকা।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সরকারী উদ্যোগে দোয়েল ল্যাপটপ উত্পাদন শুরু হয়েছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিতে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু হয়েছে।
ডাক বিভাগ কর্তৃক ইলেকট্রনিক মানিঅর্ডার চালু হয়েছে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও জমাদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছি।
উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে অনলাইন ও মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে।
এখন বিদ্যুত্, পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবার বিল অনলাইন ও মোবাইল ফোনে দেওয়া যায়।
সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতি বৃদ্ধির জন্য ই-টেন্ডার চালু করেছি।
মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক অফিসের ভিডিও কনফারেন্সিং ও ই-সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
সকল জেলায় জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বই ই-বুকে রূপান্তর করা হচ্ছে।
পরীক্ষার ফল ও নিয়োগ পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইট, এসএমএস ও ই-মেইলে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে সম্পাদন হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে আইসিটি আইন ও আইসিটি নীতি প্রণয়ন করেছি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণ ও ৯৫ শতাংশ এলাকা টেলিকম সার্ভিস ও নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
আইপি ফোনের জন্য ৩৯টি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।
তরুন প্রজন্মের ক্রীড়ানৈপূণ্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আন্ত্মঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন স্টেডিয়ামগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের ক্রীড়া অবকাঠামোগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, জিমনাষ্টিকস, এ্যাথলেটিক, টেনিস, কাবাডিসহ বিভিন্ন ক্রীড়ায় আমাদের খেলোয়াড়রা দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসছেন।
আমাদের মেয়েরা ক্রিকেটে ওয়ান-ডে স্ট্যাটাস অর্জন করেছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমাদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা এথেন্সে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্পেশাল অলিম্পিকস ২০১১ এ অংশ নিয়ে ২৯টি স্বর্ণ, ১২টি রৌপ্য ও ৩টি ব্রোঞ্জসহ ৪৪টি পদক জয় করেছে। তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের খেলোয়াড়রা আরো সাফল্য নিয়ে আসবে।
ভাই ও বোনেরা আমার,
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্রই হচ্ছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়’।
এই নীতির আলোকে সকল রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বে শান্তি ও সমপ্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা জাতিসংঘ সহ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।
জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দেশ হিসেবে, মানবাধিকার রক্ষাকারী দেশ হিসবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। নেতিবাচক পরিচয় ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ অগ্রসরমান, গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক ও মানবাধিকার রক্ষাকারী দেশ হিসেবে পরিচিত।
সেপ্টেম্বর ২০১১ এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে আমি বিশ্বের জন্য একটি ‘শান্ত্মির মডেল’ উপস্থাপন করি যার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন”। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন এই মডেলকে রেজুলুশন হিসাবে গ্রহণ করেছে।
আমরা প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছি।
তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। ভারতের সাথে সীমানা চিহ্নিতকরণ, বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ অমীমাংসিত সমস্যাসমূহের সমাধান করেছি।
চীনের সাথে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর, কাজিরটেক সেতু নির্মাণে পত্র বিনিময় এবং তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
আমার মিয়ানমার সফরকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত অনথিভুক্ত শরণার্থীদের তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে।
সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতে স্থায়ী সালিস ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা দাখিল করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ৩২টি সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
তিন বছরে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ১৪ লক্ষ ৩৩ হাজার জন।
বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও তিন বছরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পাঁচ বছরের থেকে বেশী জনশক্তি রফতানি ও বেশি রেমিটেন্স অর্জন হয়েছে।
নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে পোল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, এ্যাঙ্গোলা ও কঙ্গোয় জনশক্তি প্রেরণ শুরু হয়েছে।
বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে অগ্রগতি হয়েছে। সেদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত প্রায় ৩ লক্ষ বাংলাদেশীকে বৈধকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পথে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন, অনলাইনে আবেদনের সুযোগ ও যুগোপযোগী হজ্জ নীতির কারণে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫ হাজার ৬১৭ জন হজ্জ পালন করেছেন। আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ায় হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গণতন্ত্রকামী দেশবাসী,
জাতীয় সংসদকে আমরা দেশ পরিচালনার মূলকেন্দ্র হিসাবে গ্রহণ করেছি।
নবম জাতীয় সংসদে ১৫৩ টি আইন পাশ হয়েছে।
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সবগুলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারী দলের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল থেকে দুই জন এবং মহাজোটের শরীকসহ অন্যান্য দলের ৫ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ চালু করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতা পর আমরা চল্লিশ বছর অতিক্রম করেছি। বিজয়ের সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা হারিয়েছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তারপর একুশ বছর চলেছে স্বৈরশাসন। জনসেবা নয় দুর্নীতিই ছিল ক্ষমতাসীনদের একমাত্র নীতি। তারপর ১৯৯৬ সালে দেশে আবার ফিরে আসে শান্তি, গণতন্ত্র উন্নয়নের সুবাতাস।
২০০১ সালে দেশ আবারও চলে যায় এক অন্ধকার সময়ে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, দমন-পীড়ন, নির্যাতন, জঙ্গীবাদের উত্থান, বোমা-গ্রেনেড হামলা আর লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে তার মর্যাদা হারায়।
বাংলাদেশকে আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি শান্তি, উন্নয়ন আর প্রগতির ধারায়। দারিদ্র বিমোচন, পল্লী উন্নয়ন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে একটি অনুকরণীয় মডেল যা জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্ব নেতারা স্বীকার করেছেন।
২০২১ সাল-আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই যে দেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলা। যে দেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ - ডিজিটাল বাংলাদেশ।
বিরোধীদলের প্রতি আমার অনুরোধ, সংঘাতের রাজনীতির পথ পরিহার করুন। আসুন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
আমি বিশ্বাস করি, যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনতে পারে, সে জাতির উন্নয়ন কেউ রুখতে পারবে না।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমাদের বিজয় হবেই, ইনশাআল্লাহ। সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং দেশবাসী আপনাদের কাছে আমি দোওয়া চাচ্ছি, আপনারা সবাই ভাল থাকুন।
খোদা হাফেজ।
জয়বাংলা। জয়বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
সরকারের তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিচে প্রকাশ করা হল।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আপনাদের দেয়া বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে তিন বছর আগে ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠন করেছিলাম।
এই দিনে আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেইসব ভোটারদের বিশেষ করে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ সকল ভোটারদের যাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাদের বিজয়কে নিশ্চিত করেছিল।
অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে আপনাদের কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। সর্বক্ষেত্রে শতভাগ সফলতার দাবী আমরা করব না। তবে একথা বলতে পারি যে, আপনাদের সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনই গাফিলতি করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না, ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁর নেতৃত্বে চল্লিশ বছর আগে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল।
গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করছি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল শহীদকে।
স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
স্মরণ করছি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ সকল জাতীয় নেতাকে।
৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও দু লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। তাদের আত্মত্যাগকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।
স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বর গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনে নিহত ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও নিরীহ মানুষকে ।
জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সচেতন দেশবাসী,
এক অন্ধকারময় সময়ে আমরা দায়িত্ব নিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির চরম সঙ্কট, বিশ্বমন্দা, সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের অতিক্রম করতে হচ্ছে পূর্ববর্তী দুটি সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যার পর্বতপ্রমাণ বোঝা।
সাহস, সততা ও আন্তরিকতার সাথে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জনগণ ভোট দিয়ে পছন্দ মত সরকার গঠন করবে। যারা দায়িত্ব নিবে তারা পূর্বের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা বিরোধী দলে থাকবেন তারা সরকারকে এ কাজে সহায়তা করবেন। আমাদের দল ও আদর্শ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দেশ ও মানুষের স্বার্থকে সকল দল-মতের উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, দেশ পরিচালনায় গত তিন বছরে আমরা বিরোধীদলের কোন ধরণের সহায়তা পাইনি। বরং তারা সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক সময় দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
কোন কারণ ছাড়াই তারা মাসের পর মাস সংসদ বর্জন করছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী মাত্র ৬ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। বাধাহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরেও কেন এই সংসদ বর্জন?
আমরা জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে আমি জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।
সচেতন দেশবাসী,
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, মানুষ হত্যা করেছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন করেছিল তাদের বিচার হবে - এটা ছিল আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণরায় দিয়েছে। আমরা যখন মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ শুরু করেছি, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল ও মানুষ হত্যার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন।
তার প্রতি অনুরোধ, জ্বালাও-পোড়াও করে এই মানবতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের রক্ষার চেষ্টা করবেন না।
আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, যত বাধাই আসুক না কেন বাংলার মাটিতে এদের বিচার আমরা করবই। বঙ্গবন্ধুুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করতে অনেকেই চেষ্টা করেছিল, পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও কেউ বন্ধ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণকে প্রধান্য দিয়েছিলাম। সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভিতরে নিয়ে আসা ছিল আমাদের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা যেদিন সরকার গঠন করি সেদিন চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও আমরা তা কমিয়ে এনেছি। পাশাপাশি জনগণের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ৬৬০ ডলার থেকে ৮২৮ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়িয়েছি। চাকুরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন ১৬০০ থেকে তিন হাজার টাকায় উন্নীত করেছি। গ্রামের ক্ষেতমজুররা যেখানে ১০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেত তা আজ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাল কিনতে পারতো আড়াই থেকে তিন কেজি। এখন কিনতে পারে ১০ থেকে ১২ কেজি। দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা অর্থনীতিকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। উত্পাদন বেড়েছে। রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার। জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। আমরা সরকার গঠনের সময়ে রেমিটেন্স আয় ছিল ৯.২ বিলিয়ন ডলার যা বৃদ্ধি পেয়ে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু সরকারি খাতেই সাড়ে চার লক্ষাধিক নারী-পুরুষ চাকুরি পেয়েছেন। গত অর্থবছরে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবছর ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন, আমরা যেদিন সরকার গঠন করি সেদিন বিদ্যুত্ পরিস্থিতি কি ভয়াবহ পর্যায়ে ছিল। বিএনপি-জামাত সরকারের ৫ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে এক মেগাওয়াট উত্পাদন তারা বাড়াতে পারেনি। ২০০১ সালে আমাদের সরকার ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন রেখে এসেছিলাম সাত বছরে তা কমে দাঁড়ায় ৩২৬৮ মেগাওয়াটে।
৩ বছরে আমরা অতিরিক্ত ২৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছি।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ৪৯টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করি। এরমধ্যে ২৪টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র উত্পাদন শুরু করেছে। বাকী কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে এবং বিদ্যুত চলে আসবে। এছাড়া আরও ৫ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান প্রক্রিয়াধীন আছে।
গ্যাস ও কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুত্ নির্মাণকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান থেকে বিদ্যুত্ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে চার লক্ষ নতুন গ্রাহক সংযোগ পেয়েছেন।
গ্যাস উত্পাদন ও বিতরণ খাতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে, দৈনিক ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুন্দলপুর, সেমুতাং, সালদানদী ও ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্পাদন শুরু হবে।
বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ প্রণীত হয়েছে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হয়েছে। নতুন আধুনিক ড্রিলিং রিগ ও একটি ওয়ার্কওভার রিগ ক্রয় করে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম ভিত্তিক কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করতে সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছি।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি করা। সরকার তিনবছরে এই অঙ্গীকার পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে।
খাদ্য গুদামগুলোতে রেকর্ড ১৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ১১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ১ লক্ষ ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ১৪০টি খাদ্য গুদামসহ সারা দেশে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে।
ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ইত্যাদি কর্মসূচীর পরিধি ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি ১৭ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
স্বল্প ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১২ লক্ষ ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গার জনপদ উত্তরবঙ্গে আজ মানুষ দু’বেলা পেটভরে খেতে পাচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত হবে।
আমি বিশ্বাস করি, কৃষি ও কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সে বিশ্বাস থেকে সরকার কৃষি উন্নয়নে সর্বাত্নক পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশে প্রথমবারের মত ১ কোটি ৪০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ৯৩ লাখ ৫০ হাজার কৃষক তাদের একাউন্ট খুলেছেন। আমরাই প্রথম বর্গাচাষীদের বিনা জামানতে কৃষি ঋণ বিতরণ শুরু করেছি।
সার্কভুক্ত দেশগুলোতে মানসম্মত বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য ‘সার্ক সীড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তি করা হয়েছে।
নন ইউরিয়া সারের দাম তিন দফা কমানো হয়েছে। ৮০ টাকা কেজি টিএসপি’র বর্তমান মূল্য ২২ টাকা। এমওপি’র দাম ছিল ৭০ টাকা, এখন ১৫ টাকা। ডিএপি’র কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে।
কৃষকের কাছে সময় মত সুলভ মূল্যে সারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৪ লক্ষ কৃষককে বিনামূল্যে সার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরে সার, বিদ্যুত্ ও ডিজেলে ১৬ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সুফল কৃষক পেয়েছে। যে কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরে চাল উত্পাদন ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। সেচ মওসুমে বিদ্যুত্ সরবরাহ বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মওসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি তথ্যকেন্দ্র, ভিডিও কনফারেন্স ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষক তার সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। জৈবপ্রযুক্তি প্রয়োগ করে পাটের জীবন রহস্য আবিস্কার করায় উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবনে অগ্রগতি হয়েছে।
মত্স উত্পাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ। জাটকা নিধন বন্ধ করায় ইলিশ উত্পাদন বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পোলট্রি, হ্যাচারি ও গো-খামার স্থাপনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের আমিষ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সরকার নিঃস্ব ও হতদরিদ্র মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। উন্নত দেশগুলো যখন সামাজিক নিরাপত্তা সংকুচিত করছে তখন সীমিত সম্পদ নিয়েও আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি করছি।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরাই প্রথম বয়স্কভাতা, দুঃস্থ নারী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতাসহ সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করি। এবার সরকার গঠনের পর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানো হয়েছে।
অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে।
মাতৃকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬০ হাজার থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ লক্ষ ১২০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে।
বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ২২ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় সাড়ে সাত লক্ষ নারীকে মাসিক ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা ৭০ লক্ষ ৬৭ হাজার থেকে থেকে ১ কোটি ৭৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গৃহীত ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি বিএনপি-জামাত জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। আবারো এই কর্মসূচি চালু করেছি।
একটি বাড়ী একটি খামার কর্মসূচির আওতায় ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার পরিবার সরাসরি সুফলভোগী হয়েছে।
১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে দুই দফায় মোট ১ লক্ষ ৯ হাজার পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে গৃহহীন মানুষের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করে প্রায় ৯ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা। শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তোলা।
ইতোমধ্যে ৯৯.৬৪ শতাংশ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। ৩১ হাজার ২০৮টি সরকারি, রেজিস্টার্ড ও কম্যুনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বছরে ৭৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে ২২ কোটি ১৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৮৩ টি পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়েছে।
রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতা স্কেলের প্রারম্ভিক ১০০ শতাংশ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রায় সাড়ে চার হাজার সরকারি ও রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
৫০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়াসহ ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে জাতির পিতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় বীরদের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করা হয়েছে।
ভর্তি সংকট সমাধানে ঢাকায় ১১টি মাধ্যমিক স্কুল ও ৬টি কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে।
১০০টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা কোর্স ও ৩১টি মাদ্রাসায় ৪টি করে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে।
ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।
উপজেলা সেবাকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিদ্যালয় পর্যায়ে ৩,০৪৭টি আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শিক্ষা সহায়তা দিতে ১ হাজার কোটি টাকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করা হয়েছে যা বিএনপি-জামাত জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল।
১৩৬টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। ২০০টি নির্মাণের কাজ চলছে।
৩০১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১০৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় এবং তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে।
নতুন ১২টি উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলোকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।
জেলা পর্যায়ের তিনটি হাসপাতাল ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১৮টি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়ন ও বার্ন ইউনিটে আইসিইউ চালু করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটি এবং হেড-নেক ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স এ পরিণত করছি।
গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল করেজ ও হাসপাতাল এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে।
খুলনায় বিএনপি-জামাত আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করেছি।
নবজাতক মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়ে এখন প্রতি হাজারে ৩৭ জন। পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু মৃত্যুর হার কমে এখন প্রতি হাজারে ৬৫ জন।
গড় আয়ু বেড়ে ৬৭ বছর হয়েছে। নারীর ক্ষেত্রে তা ৬৮.৩ শতাংশ।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও কুষ্ঠ উচ্ছেদ কর্মসূচিতে আমাদের সাফল্য প্রায় শতভাগ।
৫টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ১০টি ইনস্টিটিউট নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
চট্টগ্রামে নাসিং কলেজ স্থাপিত হয়েছে। মানিকগঞ্জে একটি নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণাধীন। আরও ৬টি নতুন নাসির্ং কলেজ ও ১৫টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
এপর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার চিকিত্সক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০১০ এ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে জাতীয় পর্যায়ে শিশু মৃত্যুর হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার লাভ করেছে।
স্বাস্থ্যখাতের গুণগত উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বীকৃতি হিসাবে আমাকে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, সাউথ-সাউথ নিউজ ও জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন ‘সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড ২০১১’ প্রদান করে।
প্রিয় দেশবাসী,
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিন বছরে এগারটি বৃহত্ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে । এর মধ্যে আছে, দপদপিয়ায় আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, ঢাকার বসিলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যার ওপর সুলতানা কামাল সেতু, কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু, হালুয়াঘাটে ভোগাই সেতু, মাদারীপুরে শেখপাড়া সেতু, পিরোজপুরে নাজিরপুর সেতু, গৌরনদীতে পয়সারহাট সেতু, জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র সেতু ও পাইকগাছা-কয়রা সড়কে কয়রা সেতু।
রংপুর-কুড়িগ্রাম তিস্তা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে।
মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ৭ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু, নদীশাসন, সেতুর উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়ক এবং বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ২য় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত রাজধানীর যানজট মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সে কারণেই যানজট নিরসনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ।
রাজধানীর যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে।
মিরপুর, বনানী, কুড়িলসহ বিভিন্ন ফ্লাইওভারের কাজ এগিয়ে চলেছে।
এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় বাংলাদেশের তিনটি রুট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগীয় সড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক চার-লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিযে চলছে।
যানজট নিরসনে ৫৩০টি নতুন বাস আমদানি করা হয়েছে। রাজধানীতে ১৪টি স্কুল বাস ও মহিলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১৮ হাজার পেশাদার গাড়ী চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়েকে আধুনিকায়ন করার উপর আমরা বিশেষভাবে জোর দিয়েছি।
85 কিলোমিটার রেলপথ মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৫০টি রেল ব্রিজ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। ৩৬টি রেলওয়ে স্টেশন পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ৯টি লোকোমেটিভ ও ৫৫টি ওয়াগন সংগ্রহ এবং ৪৫টি লোকোমোটিভ ও ২২০টি ওয়াগন সংস্কার করা হয়েছে।
ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন লাইনে ৮ জোড়া নতুন ট্রেন চালু করেছি।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
ফেরি, পন্টুন, ওয়াটার বাস ও জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
নৌ-পথের নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৩ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।
৪টি অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর স্থাপন ও ২টি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ২টি কন্টেইনার নৌ-বন্দর স্থাপিত হয়েছে। কাঁচপুর, সন্দ্বীপ ও কুমিরায় নৌ-যানের ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শহরের চারিদিকে ৭০ কিলোমিটার নৌ-পথ সৃজন ও ঢাকার আশপাশের নদী-তীরের অবৈধ দখল রোধে ২১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ চালানোর জন্য সদরঘাট-গাবতলী রুটে ২টি ওয়াটার বাস সংযোজিত হয়েছে।
ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-দিল্লী ও চট্টগ্রাম-ব্যাংকক রুট এবং সিলেট-লন্ডন রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
বিমানের জন্য দুইটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ সংযোজন এবং একটি ৩১০-৩০০ ও দুইটি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও ২টি উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবন, জাফলংসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী,
শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে আমাদের সরকার সবধরণের সহায়তা করে যাচ্ছে। বিশ্বমন্দার প্রভাব মোকাবেলার জন্য ৩,৪২৪ কোটি টাকার প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন অব্যাহত আছে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের শিল্প স্থাপনকে উত্সাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে ৫৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টন ইউরিয়া সার উত্পাদন ক্ষমতা সম্পন্ন শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে চীনের সাথে চুক্তি সই করেছি। আরও ৩টি ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিসিকের উদ্যোগে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ৭ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল উত্পাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে।
সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও মিরেশ্বরাই এ নতুন শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
বিএনপি-জামাত আমলে বন্ধ করে দেওয়া খুলনার পিপলস জুট মিলস এবং সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিলস চালু করেছি। বিজেএমসি’র ২৭টি পাটকলের মধ্যে ২৩টি চালু হয়েছে। অচিরেই আরও তিনটি চালু হবে।
বিটিএমসি’র ১৮টি বন্ধ মিলের মধ্যে ৮টি চালু করেছি।
বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
তিন বছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ২৬৬ কোটি ডলার। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ৫ বছরে ছিল ২৬০ কোটি ডলার।
প্রিয় দেশবাসী,
তথপ্রাপ্তি জনগণের অধিকার। আমরাই প্রথম তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করেছি।
রেডিও-টেলিভিশন ও সংবাদপত্র যেকোন সময়ের তুলনায় পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
আমরা স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি।
ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে দক্ষ ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশেষ কার্যক্রম চলছে।
জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে।
আরো চারটি পৌরসভা গঠন করা হয়েছে।
৭৪২ টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৭৭১টি গ্রোথ সেন্টার, প্রায় ৬৯ কিলোমিটার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ এবং ১১,৬৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ১৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক এবং ৫১ কিলোমিটার ব্রিজ ও কালভার্ট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
৮৭ হাজার ৩৪৬টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৪১ হাজার একর কৃষি খাস জমি প্রদান করা হয়েছে।
প্রায় ৬ লক্ষ বেকার যুবককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ন্যাশন্যাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রাম, বরগুনা ও গোপালগঞ্জ জেলার ৫৫ হাজার ২৫৪ জন যুবকের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ১ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা যুবকদের দেওয়া হচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী,
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশী নারী যারা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনার শিকার।
গত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক নারী ভোটার আমাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিলনে।
আমরা সরকার গঠনের পর নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার এজেন্ডা হিসাবে গ্রহণ করেছি।
একটি যুগোপযোগী নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা, শ্রমবাজারে ব্যাপক অংশগ্রহণ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করেছি।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে।
প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদেতিনজন করে নারী সদস্য নির্বাচিত।
ইভটিজিংসহ নারীর প্রতি সামাজিক অপরাধ রোধে পদক্ষেপ নিয়েছি।
জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। নিজস্ব ফান্ড থেকে প্রতিবছর ৭০০ কোটি টাকা করে তিন বছরে ২১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ও ৬২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলারের বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সক্ষমতা তহবিল গঠিত হয়েছে। ট্রাস্ট ফান্ড আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের হেফাজত করা। আমরা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশে এখন একই সময়ে ৫০০ স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে না। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট আমলের মত বিরোধীদলের এমপিদের নিহত হওয়ার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত পৈশাচিক ঘটনার সৃষ্টি হয় না।
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ চলছে। এজন্য নতুন আইন তৈরি করা হয়েছে।
পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিল্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।।
পুলিশের ৫২টি মডেল থানা, ১০টি নতুন তদন্ত কেন্দ্র ও ৩টি নতুন থানা স্থাপন করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, মেরিন পুলিশ, পৃথক তদন্ত, ইউনিট, জঙ্গীদমনে ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজমসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ২০ হাজার ৭২৩ জন সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন। ফলে, বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধসরঞ্জাম কেনার কাজ অব্যাহত আছে।
বিমানবাহিনীর জন্য বেশকিছু যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে। বিমানবাহিনীতে ‘ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র’ অন্ত্মর্ভুক্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।
নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে তৈরির কাজ চলছে।
দক্ষ সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ভাটিয়ারীতে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।
ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ২ হাজার ৯১৫ ইউনিট আবাসন নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা সত্মম্ভ নির্মাণকাজ বিএনপি-জামাত বন্ধ করে দিয়েছিল। তা আবার শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ভূমি কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন বিভাগ জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
সম্মানিত দেশবাসী,
নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিলাম, সরকার গঠনের সুযোগ দিলে আমরা তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করব যা হবে তরুণ প্রজন্মের জন্য আমাদের উপহার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০ লক্ষ মানুষ এসব সেবাকেন্দ্র থেকে সেবা পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় গড়ে দুই কোটি টাকা।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সরকারী উদ্যোগে দোয়েল ল্যাপটপ উত্পাদন শুরু হয়েছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিতে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু হয়েছে।
ডাক বিভাগ কর্তৃক ইলেকট্রনিক মানিঅর্ডার চালু হয়েছে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও জমাদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছি।
উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে অনলাইন ও মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে।
এখন বিদ্যুত্, পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবার বিল অনলাইন ও মোবাইল ফোনে দেওয়া যায়।
সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতি বৃদ্ধির জন্য ই-টেন্ডার চালু করেছি।
মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক অফিসের ভিডিও কনফারেন্সিং ও ই-সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
সকল জেলায় জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বই ই-বুকে রূপান্তর করা হচ্ছে।
পরীক্ষার ফল ও নিয়োগ পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইট, এসএমএস ও ই-মেইলে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে সম্পাদন হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে আইসিটি আইন ও আইসিটি নীতি প্রণয়ন করেছি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণ ও ৯৫ শতাংশ এলাকা টেলিকম সার্ভিস ও নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
আইপি ফোনের জন্য ৩৯টি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।
তরুন প্রজন্মের ক্রীড়ানৈপূণ্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আন্ত্মঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন স্টেডিয়ামগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের ক্রীড়া অবকাঠামোগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, জিমনাষ্টিকস, এ্যাথলেটিক, টেনিস, কাবাডিসহ বিভিন্ন ক্রীড়ায় আমাদের খেলোয়াড়রা দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসছেন।
আমাদের মেয়েরা ক্রিকেটে ওয়ান-ডে স্ট্যাটাস অর্জন করেছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমাদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা এথেন্সে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্পেশাল অলিম্পিকস ২০১১ এ অংশ নিয়ে ২৯টি স্বর্ণ, ১২টি রৌপ্য ও ৩টি ব্রোঞ্জসহ ৪৪টি পদক জয় করেছে। তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের খেলোয়াড়রা আরো সাফল্য নিয়ে আসবে।
ভাই ও বোনেরা আমার,
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্রই হচ্ছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়’।
এই নীতির আলোকে সকল রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বে শান্তি ও সমপ্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা জাতিসংঘ সহ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।
জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দেশ হিসেবে, মানবাধিকার রক্ষাকারী দেশ হিসবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। নেতিবাচক পরিচয় ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ অগ্রসরমান, গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক ও মানবাধিকার রক্ষাকারী দেশ হিসেবে পরিচিত।
সেপ্টেম্বর ২০১১ এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে আমি বিশ্বের জন্য একটি ‘শান্ত্মির মডেল’ উপস্থাপন করি যার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন”। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন এই মডেলকে রেজুলুশন হিসাবে গ্রহণ করেছে।
আমরা প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছি।
তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। ভারতের সাথে সীমানা চিহ্নিতকরণ, বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ অমীমাংসিত সমস্যাসমূহের সমাধান করেছি।
চীনের সাথে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর, কাজিরটেক সেতু নির্মাণে পত্র বিনিময় এবং তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
আমার মিয়ানমার সফরকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত অনথিভুক্ত শরণার্থীদের তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে।
সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতে স্থায়ী সালিস ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা দাখিল করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ৩২টি সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
তিন বছরে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ১৪ লক্ষ ৩৩ হাজার জন।
বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও তিন বছরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পাঁচ বছরের থেকে বেশী জনশক্তি রফতানি ও বেশি রেমিটেন্স অর্জন হয়েছে।
নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে পোল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, এ্যাঙ্গোলা ও কঙ্গোয় জনশক্তি প্রেরণ শুরু হয়েছে।
বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে অগ্রগতি হয়েছে। সেদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত প্রায় ৩ লক্ষ বাংলাদেশীকে বৈধকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পথে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন, অনলাইনে আবেদনের সুযোগ ও যুগোপযোগী হজ্জ নীতির কারণে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫ হাজার ৬১৭ জন হজ্জ পালন করেছেন। আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ায় হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গণতন্ত্রকামী দেশবাসী,
জাতীয় সংসদকে আমরা দেশ পরিচালনার মূলকেন্দ্র হিসাবে গ্রহণ করেছি।
নবম জাতীয় সংসদে ১৫৩ টি আইন পাশ হয়েছে।
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সবগুলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারী দলের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল থেকে দুই জন এবং মহাজোটের শরীকসহ অন্যান্য দলের ৫ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ চালু করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতা পর আমরা চল্লিশ বছর অতিক্রম করেছি। বিজয়ের সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা হারিয়েছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তারপর একুশ বছর চলেছে স্বৈরশাসন। জনসেবা নয় দুর্নীতিই ছিল ক্ষমতাসীনদের একমাত্র নীতি। তারপর ১৯৯৬ সালে দেশে আবার ফিরে আসে শান্তি, গণতন্ত্র উন্নয়নের সুবাতাস।
২০০১ সালে দেশ আবারও চলে যায় এক অন্ধকার সময়ে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, দমন-পীড়ন, নির্যাতন, জঙ্গীবাদের উত্থান, বোমা-গ্রেনেড হামলা আর লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে তার মর্যাদা হারায়।
বাংলাদেশকে আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি শান্তি, উন্নয়ন আর প্রগতির ধারায়। দারিদ্র বিমোচন, পল্লী উন্নয়ন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে একটি অনুকরণীয় মডেল যা জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্ব নেতারা স্বীকার করেছেন।
২০২১ সাল-আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই যে দেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলা। যে দেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ - ডিজিটাল বাংলাদেশ।
বিরোধীদলের প্রতি আমার অনুরোধ, সংঘাতের রাজনীতির পথ পরিহার করুন। আসুন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
আমি বিশ্বাস করি, যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনতে পারে, সে জাতির উন্নয়ন কেউ রুখতে পারবে না।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমাদের বিজয় হবেই, ইনশাআল্লাহ। সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং দেশবাসী আপনাদের কাছে আমি দোওয়া চাচ্ছি, আপনারা সবাই ভাল থাকুন।
খোদা হাফেজ।
জয়বাংলা। জয়বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
No comments