এ ই দি নে-চোর হলেও ছিলেন কবি
মানবজীবন অসম্ভব উপভোগ্য। কিন্তু সবাই ভোগ করতে পারেন? আর কেউ পারুক আর না পারুক, একজন পেরেছিলেন। তিনি ফ্রাঙ্কোয়েস ভিলন। এই ফরাসি কবি আলোচিত কোনো কবিতা রচনা করেননি সত্য, কিন্তু বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কারণে তিনি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছেন মর্যাদার সঙ্গেই। ভিলন বিশ্বাসী ছিলেন ভবঘুরে, বাউণ্ডুলে, বোহেমিয়ান আর বাঁধনহারা জীবনযাপনে। কবি হলে কী হবে, তিনি ছিলেন চোর। চুরি করার অপরাধে তাকে
বারবার জেল খাটতে হয়েছে। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আমরা বিশ্বাস করি, কবিরা হন অন্যদের চেয়ে আলাদা, উদারমনা। অর্থনৈতিক বিষয়-আশয় তার কাছে একেবারেই গৌণ। তাই বলা যায়, চোর কখনও কবি হতে পারে না। কিন্তু জগতে ব্যতিক্রম বলে একটা কথা আছে। ফ্রাঙ্কোয়েস ভিলন ছিলেন সত্যিই ব্যতিক্রম। অল্প কিছু কাজ করেই ফরাসি সাহিত্যে কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
ভিলনের জন্ম খুবই দরিদ্র এক পরিবারে। সীমাহীন অভাব-অনটনের মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। অনটনের সংসারে বসবাস করেও তার ভেতরে জন্ম নিয়েছিল এক অসাধারণ শিল্পবোধ। পেয়ে বসেছিল লেখালেখির নেশা। তিনি লিখেছেন আজীবন। তাই তার গায়ে চোরের কলঙ্ক লেগে থাকলেও কবিতার জন্য তিনি বিখ্যাতও হয়ে আছেন ফরাসি সাহিত্যে। তিনি এতটাই ভবঘুরে ছিলেন, এক স্থানে কখনও বেশিদিন স্থির থাকেননি। এ জন্য কেউই তাকে পুরোপুরি চিনতে পারেননি। তাছাড়া জেলে কাটানোর কারণে পরিচিতরা তাকে এড়িয়ে চলতেন। তাই তার আসল নাম কী, এ নিয়েও আছে সন্দেহ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে লিখেছেন তিনি। বলা যায়, তার পুরো জীবনটাই ধোঁয়াশাপূর্ণ। তার জীবনীকাররা যেটুকু তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছেন তাতে জানা যায়, ভিলনের জন্ম ১৪৩১ সালে প্যারিসে। তরুণ বয়সেই বাবাকে হারান। ফলে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্যের অভিশাপ। মা বেঁচে ছিলেন তার ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত। দারিদ্র্যের মধ্যেও তার জীবন কেটেছে নাটকীয়ভাবে। পড়াশোনাও করেছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি শিল্পকলার ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা শুরু করেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন ১৪৪৯ সালে এবং ১৪৫২ সালে অর্জন করেন মাস্টার্স ডিগ্রি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেও তিনি ছিলেন অসম্ভব খেয়ালি। সব সময় সবার চেয়ে আলাদা থাকতে ভালোবাসতেন। ব্যবহার করতেন ব্যতিক্রমধর্মী পোশাক। ১৪৫৫ সালের ৫ জুন ভিলন জীবনের প্রথম বড় অপরাধটি করে বসেন। কয়েক খ্রিস্টান পুরোহিতের সঙ্গে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ভিলনের ছুরির আঘাতে তাদের একজন নিহত হয়। তিনি গ্রেফতার হন। চলে যান জেলে। কিন্তু রাজা সপ্তম চার্লস তাকে সম্মান করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। শুরু করেন শিক্ষকতা। কিন্তু ভবঘুরে লোকের কি আর চাকরি ভালো লাগে? তাই শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে আবারও বেছে নেন বাউণ্ডুলে জীবন। মারামারি করে বহুবার আহত হয়েছেন। ১৪৫৬ সালের বড়দিনে কলেজ ডি নাভারের সিন্দুকের তালা ভেঙে চুরি করেন পাঁচশ' স্বর্ণের মুকুট। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা জানতে পারে প্রায় এক বছর পর। এরপর তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন এবং এক সময় ডাকাত দলের সদস্য হয়ে যান। এভাবে অপরাধের বোঝা ভারি হতে হতে এক সময় তিনি আবারও ধরা পড়েন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তার শাস্তির কঠোরতা কিছুটা হ্রাস করা হয়। কিন্তু ১৪৬৩ সালের ৫ জানুয়ারি অর্থাৎ আজকের এই দিনের পর থেকে ভিলনের জীবনের কোনো কাহিনীই আর কারও জানা সম্ভব হয়নি। বেঁচে থাকতে তিনি তার লেখার কোনো মূল্য পাননি শুধু অপরাধী বলে। কিন্তু ষোড়শ শতকে তার লেখাগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সাহিত্যাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় 'ব্যালাড দেস পেনডাস' কবিতার জন্য।
হ ঋতা আলম
ভিলনের জন্ম খুবই দরিদ্র এক পরিবারে। সীমাহীন অভাব-অনটনের মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। অনটনের সংসারে বসবাস করেও তার ভেতরে জন্ম নিয়েছিল এক অসাধারণ শিল্পবোধ। পেয়ে বসেছিল লেখালেখির নেশা। তিনি লিখেছেন আজীবন। তাই তার গায়ে চোরের কলঙ্ক লেগে থাকলেও কবিতার জন্য তিনি বিখ্যাতও হয়ে আছেন ফরাসি সাহিত্যে। তিনি এতটাই ভবঘুরে ছিলেন, এক স্থানে কখনও বেশিদিন স্থির থাকেননি। এ জন্য কেউই তাকে পুরোপুরি চিনতে পারেননি। তাছাড়া জেলে কাটানোর কারণে পরিচিতরা তাকে এড়িয়ে চলতেন। তাই তার আসল নাম কী, এ নিয়েও আছে সন্দেহ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে লিখেছেন তিনি। বলা যায়, তার পুরো জীবনটাই ধোঁয়াশাপূর্ণ। তার জীবনীকাররা যেটুকু তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছেন তাতে জানা যায়, ভিলনের জন্ম ১৪৩১ সালে প্যারিসে। তরুণ বয়সেই বাবাকে হারান। ফলে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্যের অভিশাপ। মা বেঁচে ছিলেন তার ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত। দারিদ্র্যের মধ্যেও তার জীবন কেটেছে নাটকীয়ভাবে। পড়াশোনাও করেছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি শিল্পকলার ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা শুরু করেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন ১৪৪৯ সালে এবং ১৪৫২ সালে অর্জন করেন মাস্টার্স ডিগ্রি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেও তিনি ছিলেন অসম্ভব খেয়ালি। সব সময় সবার চেয়ে আলাদা থাকতে ভালোবাসতেন। ব্যবহার করতেন ব্যতিক্রমধর্মী পোশাক। ১৪৫৫ সালের ৫ জুন ভিলন জীবনের প্রথম বড় অপরাধটি করে বসেন। কয়েক খ্রিস্টান পুরোহিতের সঙ্গে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ভিলনের ছুরির আঘাতে তাদের একজন নিহত হয়। তিনি গ্রেফতার হন। চলে যান জেলে। কিন্তু রাজা সপ্তম চার্লস তাকে সম্মান করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। শুরু করেন শিক্ষকতা। কিন্তু ভবঘুরে লোকের কি আর চাকরি ভালো লাগে? তাই শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে আবারও বেছে নেন বাউণ্ডুলে জীবন। মারামারি করে বহুবার আহত হয়েছেন। ১৪৫৬ সালের বড়দিনে কলেজ ডি নাভারের সিন্দুকের তালা ভেঙে চুরি করেন পাঁচশ' স্বর্ণের মুকুট। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা জানতে পারে প্রায় এক বছর পর। এরপর তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন এবং এক সময় ডাকাত দলের সদস্য হয়ে যান। এভাবে অপরাধের বোঝা ভারি হতে হতে এক সময় তিনি আবারও ধরা পড়েন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তার শাস্তির কঠোরতা কিছুটা হ্রাস করা হয়। কিন্তু ১৪৬৩ সালের ৫ জানুয়ারি অর্থাৎ আজকের এই দিনের পর থেকে ভিলনের জীবনের কোনো কাহিনীই আর কারও জানা সম্ভব হয়নি। বেঁচে থাকতে তিনি তার লেখার কোনো মূল্য পাননি শুধু অপরাধী বলে। কিন্তু ষোড়শ শতকে তার লেখাগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সাহিত্যাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় 'ব্যালাড দেস পেনডাস' কবিতার জন্য।
হ ঋতা আলম
No comments