পরিসংখ্যান ব্যুরো সংস্কার-বিলম্বিত উদ্যোগও স্বাগত
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়ার খবর এমন সময় এলো যখন সংস্থাটির তথ্য ও সেবার মান নিয়ে হতাশা চরমে উঠেছে। আমাদের মনে আছে, গত বছর বোরো উৎপাদন সংক্রান্ত 'মনগড়া তথ্য' দিয়ে খোদ কৃষিমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েছিলেন বিবিএস কর্মকর্তারা। ব্যুরোর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আদমশুমারি নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান তো বটেই, পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী ও কার্যকর করে তোলার দাবি বিভিন্ন
পেশাজীবী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী, দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে উঠছিল। আমরা জানি, জাতীয় নীতি নির্ধারণে যাতে জনসংখ্যা, কৃষি, আয়, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিল্প, শ্রম সংক্রান্ত সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় সে জন্য স্বাধীনতার দুই বছরের মাথায়ই জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল। পরে তা উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কতটা অর্জিত হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। এমন অভিযোগও রয়েছে, তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয় মাঠে না গিয়েই। অস্বীকার করা যাবে না যে সংস্থাটিতে লোকবলের অভাব রয়েছে। প্রয়োজন আধুনিকায়নও। এটা সাধুবাদযোগ্য যে কিছুদিন আগে বিবিএস একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। আমরা আশা করব, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটের নেতিবাচক নজির অনুসরণ না করে কর্তৃপক্ষ এটি হালনাগাদ রাখবে। একই সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতিতেও প্রযুক্তির ছোঁয়া জরুরি। আমরা জানি, তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত একটি সংস্থার এমন উন্নয়ন সহজ নয়। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নের বিকল্প নেই। আর সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া না গেলে তা কী করে সম্ভব? এই পরিস্থিতিতে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ আমাদের নিঃসন্দেহে আশান্বিত করে। তবে উদ্যোগটি যেন নিছক কাগুজে তৎপরতায় পরিণত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে বলব আমরা। বিলম্বে হলেও পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রয়োজন ও জনআকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছে, তা স্বাগত; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকর করে তোলার ক্ষেত্রে সতর্কও থাকতে হবে।
No comments