বক্ষব্যাধি হাসপাতাল-অনিয়ম ও অব্যবস্থা কাম্য নয়

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রোগীরা প্রত্যাশিত উন্নত সেবা পাচ্ছে না মর্মে গত শনিবার সমকালে রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, বেড সংকট, অপ্রতুল জনবল, বিদ্যুৎ সংকট, হাসপাতালের স্টাফ ও দালালদের উপরি আদায় ইত্যাদি কারণে দেশের যক্ষ্মা চিকিৎসার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ বিদেশি অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ, এনজিওর বিশেষ কার্যক্রম, এমনকি


সরকারের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশ থেকে এই ঘাতক ব্যাধি নির্মূল করার জন্য। এ কারণে এর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাব ঘটার কথা নয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই অসুখটি বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বিপদ ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ দেশগুলোর তালিকায় ছয় নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের মধ্যে এই রোগে মৃত্যুহার কমলেও এখনও আশঙ্কাজনক মাত্রা থেকে তা নেমে আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রত্যেক ১০ মিনিটে একজন করে মানুষ যক্ষ্মায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর প্রত্যেক দুই মিনিটে দেশে একজন নতুন লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এই হিসাবে বর্তমানে দেশে প্রত্যেক বছর তিন লাখ করে নতুন লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ সচেতন হলে এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগে মৃত্যুহার একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব না হলেও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। এ জন্য রোগ সচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসার উপকরণ ও ব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগকে আরও প্রসারিত ও সমন্বিত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দাতা দেশ ও সংস্থা, এনজিও এবং সরকারি কার্যক্রমকে যুগপৎ ও সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা উচিত। তবে যক্ষ্মা কোনো রোগীর বেলায় মারাত্মক রূপ নিলে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প নেই। অথচ সেখানেই এখন অব্যবস্থা ও অনিয়ম ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের যেখানে দ্রুত যথাযথ উন্নত চিকিৎসাসেবা পেঁৗছে দেওয়া জাতীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে দেশের বক্ষব্যাধি চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটির অব্যবস্থা ও অনিয়ম মর্মপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। আমরা যক্ষ্মা আক্রান্তদের শনাক্ত করা ও তাদের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পেঁৗছে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অব্যবস্থা ও অনিয়ম দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।
 

No comments

Powered by Blogger.