ভাত না থাকে তো পোলাও খাও-বিশ্ব খাদ্য দিবস by উমর ফারুক
পৃথিবীর একশ' কোটি মানুষ প্রতিদিন একবেলা বাধ্যতামূলক অনাহারে থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখান। বাংলাদেশে গত এক দশকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচেতনতায় বিনা আহারে কেউ পরলোকবাসী হননি_ এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এ কথাও সত্য; অন্তত ত্রিশ লাখ লোককে একবেলা না খেয়ে থাকার অভ্যাসটা ধরে রাখতে হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, প্রতিদিনের সূর্যোদয়ে এক প্রচলিত অনিশ্চয়তা ভর করে প্রায় কোটি গৃহে। ইরাক যুদ্ধে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা দিয়ে
বাংলাদেশের মানুষকে পুরো একটি বছর খাওয়ানো যেত। বাংলাদেশে দুর্নীতি আর বিভাগীয় অপচয় কমানো গেলে রাতারাতি এ দেশ থেকে ক্ষুধাকে স্বর্গে পাঠানো সম্ভব। এমনই অনিশ্চয়তা আর অবহেলিত সম্ভাবনার মাঝে প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস। একটি ভালো প্রতিপাদ্য, র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার এমনি কিছু আনুষ্ঠানিকতায় আটকা পড়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা। সরকারকে নানা রকম লক্ষ্যমাত্রার পেছনে ছুটতে হয়, আর দিনমজুরকে আহারের খোঁজে। আংশিক সফলতা নিয়েই খুশি থাকতে হয় সবাইকে।
ইউরেনিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইউরেনিয়াম দিয়ে। তেমনি কেবল ক্ষুধার্তরাই যুদ্ধ করছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। আর তাই সত্যিকার অর্থে ইতিবাচক ফল পাওয়া বেশ কষ্টকর। আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার যে বাসনা তা বারবার বাধাগ্রস্ত হয় প্রাকৃতিক কিছু অসঙ্গতি আর মানুষসৃষ্ট কিছু প্রতিবন্ধকতায়। বন্যা, খরার পাশাপাশি জ্বালানি প্রস্তুত করতে খাদ্যশস্য ব্যবহার, বাজার চাঙ্গা করতে লাখ লাখ টন গম সাগরে নিক্ষেপ পৃথিবীতে ক্ষুধার্তর্ মানুষের কাতারকে দিন দিন লম্বা করছে। ২০০৭-০৮ সালে পৃথিবীতে খাদ্য সংকট আর কর্মহীনতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা ক্ষুধা প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় কত কম আন্তরিক। কারণ এ আন্তরিকতা দেখানোর ভূমিকায় যাদের অগ্রগামী হওয়ার কথা ছিল সেই আমেরিকা নিজ দেশে ১০ শতাংশ বেকারত্ব রেখেও ইরাক-আফগান-ইরান-ফিলিস্তিন-লেবানন তার মূল মাথাব্যথা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে বাংলায় মন্বন্তর প্রতিরোধে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালু হয় বেঙ্গল সিভিল সাপ্লাই বিভাগ। সময়ের বিবর্তনে আজ তা রূপ নিয়েছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে। দায় বেড়েছে; বেড়েছে দায়িত্ব। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ আমাদের নজরে এসেছে। ভিক্ষাকে নিরুৎসাহিতকরণ, ১০০ দিনের সৃজনশীল কর্মসূচি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা_ এমন অসংখ্য কর্মসূচি ইতিবাচক হলেও দিন দিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। যথেষ্ট খাদ্য মজুদ থাকার পরও মানুষের ঘুম ভাঙছে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির চিন্তা মাথায় নিয়ে।
ইউএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ৭টি দেশে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের বাস। প্রতি বছর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়। শতকরা ৪ দশমিক ৩ জন শিশু বয়সের তুলনায় কম বাড়ে এবং দৈনিক প্রয়োজনীয় ২২২২ ক্যালরি খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয় প্রায় ছয় কোটি এক লাখ লোক। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ৪৮ শতাংশ শিশু জন্মায় জন্মগত রোগে আক্রান্ত হয়ে; যার ২০ শতাংশ ডায়রিয়ায়, ১৫ শতাংশ নিউমোনিয়ায় এবং অন্যান্য রোগে ১৭ শতাংশ শিশু মারা যায়। রিপোর্টে অপুষ্টির কারণ হিসেবে খাদ্যের মূল্যকে দেখানো হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের ৪০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে যাচ্ছে, যার ৪০ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট লোক সিডর ও আইলার কারণে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ থাকে না। নিজে নিজে বাজার তার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো রকম প্রভাব বিস্তার হিতে বিপরীত হতে পারে। আর এ তত্ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে ফটকা ব্যবসায়ীরা। বিকৃত অথবা আংশিক তথ্য প্রকাশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় আন্তর্জাতিক বাজার দিয়ে। আমরা দেখেছি মজুদদারের কাছে কতটা অসহায় সরকার। হওয়ারই তো কথা। খাদ্যপণ্য সরকারের কাছে মজুদ আছে। তার চেয়ে অনেক বেশি মজুদ আছে মজুদদারদের কাছে।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষককে সহায়তা প্রদান তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা রকম ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু আছে আমাদের দেশে, যার অনেক সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের কৃষকরা। ডিজেলের দাম কমালে সুবিধা হয় ডিজেলচালিত গাড়িচালকদের। ঋণ সুবিধা চলে যায় ছদ্মবেশী কৃষকের হাতে। সার পেরিয়ে যায় সীমানার বাইরে। কৃষিতে ভর্তুকি সম্পর্কে আমার একটি প্রস্তাবনা আছে। প্রস্তাবনাটা যদিও ধনতন্ত্রবিরোধী, তবু আমি বিশ্বাস করি, ক্ষুধার চেয়ে ধনতন্ত্র বড় হতে পারে না। প্রস্তাবনাটা হলো, সরকার কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেবে না। যে যার সাধ্যমতো খাদ্যশস্য উৎপাদন করবে। কিন্তু বিক্রয় ও বণ্টন ব্যবস্থা থাকবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার চড়া দামে কৃষকের কাছ থেকে খাদ্যপণ্য ক্রয় করবে। তারপর তা বিক্রি করবে ডিলারদের কাছে কম দামে এবং খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে। কৃষককে চড়া দাম দেওয়ায় ভর্তুকি চলে যাবে কৃষকের হাতে আর কম দামে ডিলারকে দেওয়ায় বাজার থাকবে নিয়ন্ত্রিত। কার্যক্রমটি কঠিন হলেও ভর্তুকির টাকা বেহাত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
প্রচলিত ছোট্ট একটি গল্প। শাহবাগ সিগনালে দাঁড়ানো একটি দামি গাড়ি। একটি ছোট্ট বাচ্চা কাঁদছে আর ভিক্ষে চাইছে। গাড়ির ভেতরে থাকা বাচ্চাটা তার মাকে বলল, মম, বাবুটা কাঁদছে কেন? মা বললেন, ক্ষুধা লেগেছে তো, তাই। ক্ষুধা লেগেছে তো ভাত খাক। মা বললেন, ভাত নেই। বাচ্চাটির সরল উক্তি, ভাত নেই তো পোলাও খাক। সারাবিশ্ব তথা আমাদের দেশে যারা ক্ষুধা হ্রাসের নীতি নির্ধারণ করেন তারা পোলাওয়ে অভ্যস্ত। পৃথিবীতে এই একটি মাত্র যন্ত্রণা, যা অন্যকে দেখানোর কোনো উপায় নেই। এই কষ্ট অন্যের সঙ্গে ভাগ করেও নেওয়া যায় না। কাঁদতে হয় ডুকরে ডুকরে। ক্ষুধা যেমন কষ্ট তেমনি লজ্জার। আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত_ ক্ষুধাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিতাড়িত করা। একটি সুন্দর ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব হোক আমাদের আজকের আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবসের শপথ। আমাদের অনেক সমস্যার মাঝে ভরে উঠুক আমাদের পেট। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে কোনো খাদ্য সংকট নেই। আছে ক্রয়ক্ষমতার সংকট। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারের সময়োপযোগী বাস্তব পদক্ষেপই পারে জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করতে।
উমর ফারুক : শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
faruque1712@gmail.com
ইউরেনিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইউরেনিয়াম দিয়ে। তেমনি কেবল ক্ষুধার্তরাই যুদ্ধ করছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। আর তাই সত্যিকার অর্থে ইতিবাচক ফল পাওয়া বেশ কষ্টকর। আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার যে বাসনা তা বারবার বাধাগ্রস্ত হয় প্রাকৃতিক কিছু অসঙ্গতি আর মানুষসৃষ্ট কিছু প্রতিবন্ধকতায়। বন্যা, খরার পাশাপাশি জ্বালানি প্রস্তুত করতে খাদ্যশস্য ব্যবহার, বাজার চাঙ্গা করতে লাখ লাখ টন গম সাগরে নিক্ষেপ পৃথিবীতে ক্ষুধার্তর্ মানুষের কাতারকে দিন দিন লম্বা করছে। ২০০৭-০৮ সালে পৃথিবীতে খাদ্য সংকট আর কর্মহীনতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা ক্ষুধা প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় কত কম আন্তরিক। কারণ এ আন্তরিকতা দেখানোর ভূমিকায় যাদের অগ্রগামী হওয়ার কথা ছিল সেই আমেরিকা নিজ দেশে ১০ শতাংশ বেকারত্ব রেখেও ইরাক-আফগান-ইরান-ফিলিস্তিন-লেবানন তার মূল মাথাব্যথা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে বাংলায় মন্বন্তর প্রতিরোধে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালু হয় বেঙ্গল সিভিল সাপ্লাই বিভাগ। সময়ের বিবর্তনে আজ তা রূপ নিয়েছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে। দায় বেড়েছে; বেড়েছে দায়িত্ব। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ আমাদের নজরে এসেছে। ভিক্ষাকে নিরুৎসাহিতকরণ, ১০০ দিনের সৃজনশীল কর্মসূচি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা_ এমন অসংখ্য কর্মসূচি ইতিবাচক হলেও দিন দিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। যথেষ্ট খাদ্য মজুদ থাকার পরও মানুষের ঘুম ভাঙছে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির চিন্তা মাথায় নিয়ে।
ইউএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ৭টি দেশে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের বাস। প্রতি বছর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়। শতকরা ৪ দশমিক ৩ জন শিশু বয়সের তুলনায় কম বাড়ে এবং দৈনিক প্রয়োজনীয় ২২২২ ক্যালরি খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয় প্রায় ছয় কোটি এক লাখ লোক। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ৪৮ শতাংশ শিশু জন্মায় জন্মগত রোগে আক্রান্ত হয়ে; যার ২০ শতাংশ ডায়রিয়ায়, ১৫ শতাংশ নিউমোনিয়ায় এবং অন্যান্য রোগে ১৭ শতাংশ শিশু মারা যায়। রিপোর্টে অপুষ্টির কারণ হিসেবে খাদ্যের মূল্যকে দেখানো হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের ৪০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে যাচ্ছে, যার ৪০ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট লোক সিডর ও আইলার কারণে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ থাকে না। নিজে নিজে বাজার তার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো রকম প্রভাব বিস্তার হিতে বিপরীত হতে পারে। আর এ তত্ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে ফটকা ব্যবসায়ীরা। বিকৃত অথবা আংশিক তথ্য প্রকাশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় আন্তর্জাতিক বাজার দিয়ে। আমরা দেখেছি মজুদদারের কাছে কতটা অসহায় সরকার। হওয়ারই তো কথা। খাদ্যপণ্য সরকারের কাছে মজুদ আছে। তার চেয়ে অনেক বেশি মজুদ আছে মজুদদারদের কাছে।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষককে সহায়তা প্রদান তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা রকম ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু আছে আমাদের দেশে, যার অনেক সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের কৃষকরা। ডিজেলের দাম কমালে সুবিধা হয় ডিজেলচালিত গাড়িচালকদের। ঋণ সুবিধা চলে যায় ছদ্মবেশী কৃষকের হাতে। সার পেরিয়ে যায় সীমানার বাইরে। কৃষিতে ভর্তুকি সম্পর্কে আমার একটি প্রস্তাবনা আছে। প্রস্তাবনাটা যদিও ধনতন্ত্রবিরোধী, তবু আমি বিশ্বাস করি, ক্ষুধার চেয়ে ধনতন্ত্র বড় হতে পারে না। প্রস্তাবনাটা হলো, সরকার কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেবে না। যে যার সাধ্যমতো খাদ্যশস্য উৎপাদন করবে। কিন্তু বিক্রয় ও বণ্টন ব্যবস্থা থাকবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার চড়া দামে কৃষকের কাছ থেকে খাদ্যপণ্য ক্রয় করবে। তারপর তা বিক্রি করবে ডিলারদের কাছে কম দামে এবং খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে। কৃষককে চড়া দাম দেওয়ায় ভর্তুকি চলে যাবে কৃষকের হাতে আর কম দামে ডিলারকে দেওয়ায় বাজার থাকবে নিয়ন্ত্রিত। কার্যক্রমটি কঠিন হলেও ভর্তুকির টাকা বেহাত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
প্রচলিত ছোট্ট একটি গল্প। শাহবাগ সিগনালে দাঁড়ানো একটি দামি গাড়ি। একটি ছোট্ট বাচ্চা কাঁদছে আর ভিক্ষে চাইছে। গাড়ির ভেতরে থাকা বাচ্চাটা তার মাকে বলল, মম, বাবুটা কাঁদছে কেন? মা বললেন, ক্ষুধা লেগেছে তো, তাই। ক্ষুধা লেগেছে তো ভাত খাক। মা বললেন, ভাত নেই। বাচ্চাটির সরল উক্তি, ভাত নেই তো পোলাও খাক। সারাবিশ্ব তথা আমাদের দেশে যারা ক্ষুধা হ্রাসের নীতি নির্ধারণ করেন তারা পোলাওয়ে অভ্যস্ত। পৃথিবীতে এই একটি মাত্র যন্ত্রণা, যা অন্যকে দেখানোর কোনো উপায় নেই। এই কষ্ট অন্যের সঙ্গে ভাগ করেও নেওয়া যায় না। কাঁদতে হয় ডুকরে ডুকরে। ক্ষুধা যেমন কষ্ট তেমনি লজ্জার। আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত_ ক্ষুধাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিতাড়িত করা। একটি সুন্দর ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব হোক আমাদের আজকের আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবসের শপথ। আমাদের অনেক সমস্যার মাঝে ভরে উঠুক আমাদের পেট। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে কোনো খাদ্য সংকট নেই। আছে ক্রয়ক্ষমতার সংকট। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারের সময়োপযোগী বাস্তব পদক্ষেপই পারে জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করতে।
উমর ফারুক : শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
faruque1712@gmail.com
No comments