গাইবান্ধার পাঁচ উপজেলা-ইটভাটায় যাচ্ছে আবাদি জমির মাটি

গাইবান্ধায় আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ইট তৈরির জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মাটির স্তূপ। একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে নির্মাণ করা ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করছেন। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জমির উর্বরাশক্তিও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, ১০ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত আবাদি জমির মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাসসহ গাছের সব


রকম খাদ্য থাকে। কিন্তু সেই পরিমাণ মাটির উর্বর অংশ তুলে ফেলা হচ্ছে। ফলে মাটি কাটা জমিতে ফসল ফলালে গাছ হলুদ ও লালচে হয়ে মরে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে গোবর সার দিয়ে ফলন কিছুটা বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব প্রশাসনের। তার পরও জেলায় কী পরিমাণ জমির মাটি কেটে ফেলা হয়েছে, তা জরিপ করে দেখা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি জমির মালিকেরা এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। জমি থেকে মাটি কেটে ভাটা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটিতে শ্রমিক ও পরিবহনখরচ লাগছে পাঁচ হাজার টাকা। প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি কিনতে ভাটামালিকের খরচ পড়ছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার খোলাহাটি, ঠাকুরেরদীঘি, মধুপুর, হাসেমবাজার, ত্রিমোহনী, বালুয়া; পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা, সাকোয়া, ঢোলভাঙ্গা; সাঘাটা উপজেলার হাঁপানিয়া, পদুমশহর; সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচারশহর এলাকায় মাটি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ঠাকুরেরদীঘি গ্রামের কৃষক মকসুদ মিয়া (৪২) বলেন, উপরিভাগের এক ফুট পরিমাণ মাটি কেটে ফেলায় জমি নিচু হয়ে গেছে। সেই জমিতে ফসল উৎপাদন দূরের কথা, আশপাশের আবাদি জমির মাটিও ধসে যাচ্ছে। এ কারণে মাটি বিক্রি না করেও দুই বিঘা জমি নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
খোলাহাটি গ্রামের প্রবীণ স্কুলশিক্ষক মহির মিয়া বলেন, খোলাহাটি ইউনিয়নের কুমারপাড়া থেকে ঠাকুরেরদীঘি পর্যন্ত গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কের পাশে আধাকিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ইটভাড়া হয়েছে। প্রায় দুই যুগ ধরে এসব ভাটা চলছে। এ কারণে ভাটামালিকদের নিজস্ব জমির মাটি ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা আশপাশের জমি থেকে মাটি কিনছেন। এ ছাড়া চারদিকে কোনো ধরনের ফলগাছে ফল ধরছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ভাটামালিক বলেন, নিজস্ব জমি ও ভাটার আশপাশে মাটি না পাওয়ায় দূর থেকে মাটি কেনা হচ্ছে। মাটি কাটা জমিতে প্রথম দু-এক বছর ফসল ভালো না হলেও পরে ঠিক হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, কেবল জমির ক্ষতিই নয়, জমি থেকে ট্রাকযোগে মাটি পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কেটে ঢালু করা হয়েছে। এ ছাড়া পাকা সড়কে মাটি পড়ে কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কটি এখন হুমকির মুখে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের কাঁচা সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান বলেন, এমনিতেই ভাটাগুলো পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে, উপরন্তু জমির মাটি বেচাকেনা হওয়ায় খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষকে হাত করেই ভাটামালিকেরা মাটির ব্যবসা চালাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাদি জমির মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। তাই মাটি কাটা রোধ করা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.