যৌতুক না পেয়ে স্কুলশিক্ষক স্ত্রীকে নির্যাতন!
যৌতুক না পেয়ে স্কুলশিক্ষক স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন এক স্বামী। ছয় দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী পৌর এলাকার। নির্যাতনের শিকার বিলকিস জাহান (৩০) নাগেশ্বরীর চর বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আমজাদ হোসেন জানান, বিলকিসের বাঁ চোখের আঘাত গুরুতর। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর চোখ, নাক, কপাল ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা চলছে।’
মামলার এজাহার ও বিলকিস জাহানের পরিবারের সদস্যরা জানান, নাগেশ্বরীর পূর্ব সুখাতী গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে বিলকিসের সঙ্গে চার বছর আগে ডায়নারপাড় বাবুরহাট গ্রামের সাফাতুল্লা ব্যাপারীর ছেলে আবদুর রউফের (৩৫) বিয়ে হয়। আবদুর রউফ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে সহকারী নিরীক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিয়ের পর থেকে রউফ যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করে আসছিলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রউফ তাঁর স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেন। এতে বিলকিস রাজি না হলে রউফ তাঁকে লোহার চেইন দিয়ে মারতে থাকেন। এতে বিলকিস গুরুতর জখম হন। বাঁ চোখে প্রচণ্ড আঘাত পান। নির্যাতনের একপর্যায়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন তিনি।
জ্ঞান ফেরার পর ঘর থেকে বের হতে চাইলে স্বামী-শ্বশুর মিলে তাঁকে জোর করে ঘরে দুই দিন আটকে রাখেন। পরে এক প্রতিবেশীর ফোন পেয়ে ছুটে আসেন বিলকিসের বাবা। তিনি মেয়েকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখান থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর তাঁকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিলকিসের বাবা জামাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘মেয়ের সুখের কথা ভেবে সরকারি চাকরিজীবী জামাতা দেখে বিয়ে দেই। বিয়ের সময় টাকা দিয়েছি। এর পরও টাকার জন্য মেয়েটাকে নির্যাতন করত।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিলকিস জানান, বিয়ের পর এক বছর সুখেই কাটে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই চাপ দিত। বেতনের সমস্ত টাকা ওর (স্বামী) হাতে তুলে দিতাম। এতেও ওর মন পাওয়া যেত না। বাবার কাছে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলে। আমি এনে দিতে অস্বীকার করলে ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রচণ্ড নির্যাতন চালায়।’
স্বামী আবদুর রউফ বলেন, ‘ওর মাথা গরম। দুই-চারটা চড়-থাপ্পর মেরেছিলাম। পড়ে গিয়ে মুখের বিভিন্ন স্থান কেটে গেছে।’
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে গত ৩১ ডিসেম্বর নাগেশ্বরী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। আমরা আসামি ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
No comments