ফিরে দেখাঃ by ইমরান রহমান
মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর ৮৭ বছর বয়সে তত্কালীন বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে ইন্তেকাল করেন। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসে তিমুরীয় রাজবংশের অবসান ঘটে। তার জন্ম হয় ১৭৭৫ সালের অক্টোবরে। তিনি ছিলেন ২য় আকবর শাহ ও তার রাজপুত স্ত্রী লালাবাঈয়ের সন্তান। পিতার মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মুঘল সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জাফর শব্দের বাংলা অর্থ বিজয়।
কবি হিসেবেও জাফর ছিলেন সুবিদিত। অনেক উর্দু গজল তিনি রচনা করেন। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবেও তিনি সম্মানের পাত্র ছিলেন। তত্কালীন খবরের কাগজ দিল্লি উর্দু আখবারের মতে তিনি ছিলেন একজন সাধু। অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির জাফরের রাজকার্য বলা চলে লালাকেল্লার বাইরে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করত না। কারণ, ব্রিটিশরাই ছিল তখন ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্তা। ছোট-বড় অসংখ্য রাজ্যে ভারতবর্ষ তখন বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় ব্রিটিশরা শুধু দিল্লির সম্রাট জাফরকে কমই সমীহ করত এবং নামেমাত্র ভাতা প্রদান করত। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের অংশ হিসেবে দিল্লি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব ভারতীয় এবং ছোট-খাটো রাজন্যবর্গ জাফরকে ভারতের সম্রাট হিসেবে মেনে নেয়। তাদের ধারণা ছিল জাফরের নেতৃত্বে ছোট ছোট রাজ্যগুলো এক হয়ে চলবে যতক্ষণ না ব্রিটিশরা বিতাড়িত হয়। কিন্তু বৃদ্ধ সম্রাট জাফর শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে পেরে ওঠেননি। পরবর্তী সময়ে ইংজেরা তাকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করেন। সেখানে দীর্ঘ নিঃসঙ্গ সময় পার করে ১৮৬২ সালের এই দিনে বাহাদুর শাহ জাফর মৃত্যুবরণ করেন।
No comments