হাতেনাতে দুর্নীতি ধরে নমুনা নিয়ে এলেন কর্মকর্তা by আশরাফুল হক রাজীব
খাদ্য বিভাগের ৯১টি গুদাম নির্মাণে অর্থ লুটপাট চলছে প্রকাশ্যে। খোদ সরকারি প্রতিবেদনেই এই নির্মাণকাজ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, 'সরকারি অর্থ তছরুপের এক মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।' প্রায় সোয়া ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গুদামগুলো অল্প দিনেই দেশের সম্পদ থেকে সমস্যায় পরিণত হবে বলে প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।অর্থ লুটপাটের অভিযোগ পেয়ে একপর্যায়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ও তদন্তে নামে এবং তাদের তদন্তেও অভিযোগগুলোর প্রমাণ মেলে। মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বলা হয়েছে, 'গুদাম নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের ইট। এসব ইট হাতে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে চার-পাঁচ টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
পরীক্ষা ছাড়াই নির্মাণকাজে রড ব্যবহার করা হচ্ছে। মেঝেতে বালুর বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি।' এই অবস্থায় তদন্ত কমিটি গাঁথুনি ভেঙে নতুন করে গাঁথুনি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সেই হিসাব মতে সরকারের ৬৫ কোটি টাকা পানিতে গেছে।
সরকারি প্রতিবেদনে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তদন্তে তার সত্যতা মিলেছে কি না জানতে চাইলে খাদ্য বিভাগের সচিব বরুন দেব মিত্র গত ২ নভেম্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারছি না।' খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে একই ধরনের মন্তব্য করেন তিনি। এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নাকি? আমার কাছে আসেনি তো!'
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খাদ্য বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল হক ৩ নভেম্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।'
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ করার গুদাম রয়েছে। এ ক্ষমতা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে তা ২২ লাখ টনে উন্নীত করার জন্য বর্তমান সরকার চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে গুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু এসব গুদাম নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরই প্রতিধ্বনী শোনা যায় খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত হুসাইনের প্রতিবেদনে। সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সিএসডি ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন খাদ্য গুদামগুলো পরিদর্শনে যান। সেখানে ২১৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯১টি গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার টন ধারণক্ষমতার ৭৭টি এবং ৫০০ টন ধারণক্ষমতার গুদাম ১৪টি। এসব গুদামে ৮৪ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ করা যাবে। গুদামগুলো ২৩টি প্যাকেজে ভাগ করে ২৩ জন ঠিকাদারকে নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে গুদামগুলোর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে কাজ হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার।
খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এনায়েত হুসাইন তাঁর প্রতিবেদনে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি হাতেনাতে ধরে দুর্নীতির কিছু নমুনা সঙ্গে করে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর এনায়েত হুসাইন হালিশহর গুদাম নির্মাণ স্থানে পেঁৗছে দেখতে পান, লাখ লাখ ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য। বিবর্ণ লালচে ইট দেখে
উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে হাতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এই ইট দিয়েই গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে। বেশির ভাগ গুদামের দেয়াল তোলা হচ্ছিল। ওই দিন কিছু গুদামের মেঝের উচ্চতার লেবেল নির্মাণের কাজও চলছিল। সব কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছিল ওই নিম্নমানের ইট। এই পর্যায়ে এনায়েত হুসাইন কিছু ইট হাতে নেন। সঙ্গে সঙ্গে ইটগুলো ঝুরঝুর করে খসে পড়ে। উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে রফিকুল ইসলাম নামে একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার এগিয়ে আসেন। তিনি এনায়েত হুসাইনকে সান্তনা দিয়ে বলেন, সামনে ১৭ নম্বর প্যাকেজের গুদামের জন্য ভালো মানের ইট রয়েছে। সেই ইট হাতে নিয়েও হতাশ হন এনায়েত হুসাইন। সেগুলোও একই রকম নিম্নমানের।
এসব স্তূপ থেকে চারটি ইট নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ঢাকায় এসে অতিরিক্ত মহাপরিচালক তাঁর প্রতিবেদনে গুদাম নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, 'হালিশহর প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় যতগুলো ঠিকাদার কাজ করছেন তাঁদের সবার সাইট পরিদর্শনে তাঁরা একই ধরনের নিকৃষ্টমানের ইটের সমারোহ ঘটিয়েছেন দেখা গেল। কোনো ঠিকাদারের খামালে উৎকৃষ্টমানের (১ম শ্রেণীর) ইট দেখা গেল না। প্রকল্প সাইট থেকে নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে আনা ইটগুলো ১১/৯/২০১১ তারিখ মহোদয়কে আপনার দপ্তরে দেখানো হয়েছে। ১২/০৯/২০১১ তারিখ পর্যন্ত ইট চারটি অক্ষুণ্ন থাকলেও ১৩/০৯/২০১১ তারিখ নিম্নস্বাক্ষরকারীর অফিসে প্লাসটিকের ব্যাগে রাখা অবস্থায় এদের মধ্যে একটি ইট ধরার সাথে সাথে আপনা-আপনি চার-পাঁচ টুকরা হয়ে ভেঙে গিয়েছে।'
প্রতিবেদনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানিয়েছেন, বড় বাজেটের কাজ হলেও প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা নিয়মিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন না। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে তদারকির অভাব রয়েছে। লোহার রডের মান যাচাইয়ের কোনো যন্ত্র না থাকায় তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারেননি। তিনি আরো জানিয়েছেন, গোডাউনগুলোর মেঝে নির্মাণের জন্য নিচের মাটি অপসারণ করে সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করার প্রয়োজন থাকলেও ঠিকাদার মাটি অপসারণ না করেই মাটির ওপরে সামান্য বালু দিয়ে মেঝে নির্মাণ করেছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে দেবে গিয়ে গোডাউনের স্বাভাবিক ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই এনায়েত হুসাইনের কাছে ছুটে আসেন প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মাহবুব আলম। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাদানুবাদ হয় বলে জানা যায়। একপর্যায়ে প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা এবং তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসাজশে প্রকল্পের কাজে পুকুরচুরির মাধ্যমে সরকারি অর্থের লুটপাট হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন এনায়েত হুসাইন। এর কিছুদিন পর প্রকল্প পরিচালক গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রতিবেদন দেওয়ার পর খাদ্য অধিদপ্তরে হৈচৈ শুরু হয়। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেওয়া হয় না। এ ধরনের প্রতিবেদন দেওয়ায় অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা এনায়েত হুসাইনকে ভর্ৎসনা করেছেন। দুর্নীতি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের পরিবর্তে তাঁকে তিরস্কার করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদনের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর পর খাদ্য বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করতে চট্টগ্রামে যাওয়ার আগেই ঠিকাদারদের কাছে বিষয়টি ফাঁস করে দেন খাদ্য অধিদপ্তরের অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তারা। এ কারণে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে নষ্ট ইটের স্তূপ দেখতে পায়নি। কিন্তু গুদাম নির্মাণে তারা নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের অভিযোগ তদন্ত কমিটির কাছেও সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদন দেওয়ার পরপরই ঠিকাদাররা ইট সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে দেয়ালে ব্যবহার করা ইট সরানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি গুদাম নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের মান পরীক্ষার জন্য ইটের কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ইটের গাঁথুনি ভেঙে উৎকৃষ্ট মানের ইট দিয়ে নতুন করে গুদাম নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরও কেন ইটের কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার সুপারিশ করা হলো জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্তদলে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন কাউকে সংযুক্ত করা হয়নি। অন্যদের পক্ষে ইটের কারিগরি বিষয়টি শতভাগ বোঝা সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে গুদামের মেঝেতে মাটির বদলে ভিটি বালু দিয়ে ভরাট করার বিষয়টিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ভিটি বালু ছাড়াই গুদামের ভেতরের মাটি ছড়িয়েই নির্মাণকাজ করার প্রমাণ পেয়েছে। অথচ অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী গুদামগুলোর গ্রাউন্ড লেভেল থেকে মেঝে পর্যন্ত ভিটি বালু দিয়ে পূর্ণ করার কথা। কমিটি সরেজমিনে তদন্তের সময় ভিটি বালুর পরিবর্তে হলুদ আঠালো মাটি দেখতে পায়। নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কারণে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৭ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের সুষ্ঠু মনিটরিং নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প পরিচালক, উপপরিচালককে প্রকল্প এলাকায় অবস্থানেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য নেওয়া ইট, রড, বালু, সিমেন্ট ও পাথর নিয়মিত পরীক্ষা করানোর সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসবের নমুনা পাঠানোর সময় প্রকল্প পরিচালক বা উপরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে নমুনা স্বাক্ষরসহ সিলগালা করে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি গুদামে একাধিক গ্রেড বিম রয়েছে। এসব গ্রেড বিম নিচের দিকে আনুমানিক সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত নিম্নমানের ও অসম ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে ঠিকাদাররা আগের নিম্নমানের ইটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভালো মানের ইট দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করার সুযোগ দাবি করেন। কিন্তু তাঁরা নতুন করে যে ইট সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোও নিম্নমানের বলে উল্লেখ রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্ত কমিটির সামনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গুদাম নির্মাণের জন্য অন্যান্য উপকরণের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ইট কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটি মনে করে, হালিশহর সিএসডি কম্পাউন্ড এলাকায় প্রকল্পের সব গুদাম নির্মাণকাজ চলার কারণে প্রকল্পের দপ্তর ওই কম্পাউন্ডেই স্থাপন করা দরকার ছিল। অথচ প্রকল্পের অফিস ঢাকায়। প্রকল্পের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের সেখানেই অবস্থান করা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করা হয়। প্রকল্পের মনিটরিং দুর্বল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টেন্ডার শিডিউলে পাইলিং নির্মাণে ৬০ হাজার পিএসআই গ্রেডের রড ব্যবহার করার কথা রয়েছে। কিছু গুদামে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের রড ব্যবহার করা হলেও অনেক গুদামে ব্র্যান্ডবিহীন রড ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারের জন্য নির্মাণ স্থানে নেওয়া সব চালানের রড কারিগরি পরীক্ষা করা হয় না। এ ছাড়া কিছু পিলারের রড নির্ধারিত মাত্রার ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদন্তদলের সন্দেহ দেখা দেওয়ার কথা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সিমেন্ট ও পাথরের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনার সঠিকতা সম্পর্কেও সন্দেহ পোষণ করা হয়।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, একটি সিন্ডিকেট ৯১টি গুদামেই তাদের সরবরাহ করা ইট ব্যবহারে বাধ্য করছে। একজন মন্ত্রী, যাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে, তিনি এ সিন্ডিকেটের প্রধান। তাঁর লোকজনই একটি নির্দিষ্ট ইটখোলা থেকে এসব নিম্নমানের ইট সরবরাহ করছে।
একজন প্রকৌশলী তদন্ত কমিটিকে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, 'বঙ্গ নামক সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব ঠিকাদারকে ইট গ্রহণ করতে হবে মর্মে সরবরাহকারী সিন্ডিকেট জানিয়ে দিয়েছে। তাই সব ঠিকাদারের ইট একই ইটখোলার এবং একই মানের।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ড. এ এম এম শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা স্রেফ তদারকির অভাবে হচ্ছে। গুদাম নির্মাণে দুর্নীতি বর্তমান সরকারের কাছ থেকে কেউ প্রত্যাশা করে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত শক্ত হাতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা। খাদ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা এ দুর্নীতিতে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'
সরকারি প্রতিবেদনে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তদন্তে তার সত্যতা মিলেছে কি না জানতে চাইলে খাদ্য বিভাগের সচিব বরুন দেব মিত্র গত ২ নভেম্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারছি না।' খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে একই ধরনের মন্তব্য করেন তিনি। এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নাকি? আমার কাছে আসেনি তো!'
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খাদ্য বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল হক ৩ নভেম্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।'
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ করার গুদাম রয়েছে। এ ক্ষমতা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে তা ২২ লাখ টনে উন্নীত করার জন্য বর্তমান সরকার চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে গুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু এসব গুদাম নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরই প্রতিধ্বনী শোনা যায় খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত হুসাইনের প্রতিবেদনে। সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সিএসডি ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন খাদ্য গুদামগুলো পরিদর্শনে যান। সেখানে ২১৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯১টি গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার টন ধারণক্ষমতার ৭৭টি এবং ৫০০ টন ধারণক্ষমতার গুদাম ১৪টি। এসব গুদামে ৮৪ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ করা যাবে। গুদামগুলো ২৩টি প্যাকেজে ভাগ করে ২৩ জন ঠিকাদারকে নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে গুদামগুলোর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে কাজ হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার।
খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এনায়েত হুসাইন তাঁর প্রতিবেদনে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি হাতেনাতে ধরে দুর্নীতির কিছু নমুনা সঙ্গে করে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর এনায়েত হুসাইন হালিশহর গুদাম নির্মাণ স্থানে পেঁৗছে দেখতে পান, লাখ লাখ ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য। বিবর্ণ লালচে ইট দেখে
উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে হাতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এই ইট দিয়েই গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে। বেশির ভাগ গুদামের দেয়াল তোলা হচ্ছিল। ওই দিন কিছু গুদামের মেঝের উচ্চতার লেবেল নির্মাণের কাজও চলছিল। সব কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছিল ওই নিম্নমানের ইট। এই পর্যায়ে এনায়েত হুসাইন কিছু ইট হাতে নেন। সঙ্গে সঙ্গে ইটগুলো ঝুরঝুর করে খসে পড়ে। উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে রফিকুল ইসলাম নামে একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার এগিয়ে আসেন। তিনি এনায়েত হুসাইনকে সান্তনা দিয়ে বলেন, সামনে ১৭ নম্বর প্যাকেজের গুদামের জন্য ভালো মানের ইট রয়েছে। সেই ইট হাতে নিয়েও হতাশ হন এনায়েত হুসাইন। সেগুলোও একই রকম নিম্নমানের।
এসব স্তূপ থেকে চারটি ইট নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ঢাকায় এসে অতিরিক্ত মহাপরিচালক তাঁর প্রতিবেদনে গুদাম নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, 'হালিশহর প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় যতগুলো ঠিকাদার কাজ করছেন তাঁদের সবার সাইট পরিদর্শনে তাঁরা একই ধরনের নিকৃষ্টমানের ইটের সমারোহ ঘটিয়েছেন দেখা গেল। কোনো ঠিকাদারের খামালে উৎকৃষ্টমানের (১ম শ্রেণীর) ইট দেখা গেল না। প্রকল্প সাইট থেকে নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে আনা ইটগুলো ১১/৯/২০১১ তারিখ মহোদয়কে আপনার দপ্তরে দেখানো হয়েছে। ১২/০৯/২০১১ তারিখ পর্যন্ত ইট চারটি অক্ষুণ্ন থাকলেও ১৩/০৯/২০১১ তারিখ নিম্নস্বাক্ষরকারীর অফিসে প্লাসটিকের ব্যাগে রাখা অবস্থায় এদের মধ্যে একটি ইট ধরার সাথে সাথে আপনা-আপনি চার-পাঁচ টুকরা হয়ে ভেঙে গিয়েছে।'
প্রতিবেদনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানিয়েছেন, বড় বাজেটের কাজ হলেও প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা নিয়মিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন না। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে তদারকির অভাব রয়েছে। লোহার রডের মান যাচাইয়ের কোনো যন্ত্র না থাকায় তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারেননি। তিনি আরো জানিয়েছেন, গোডাউনগুলোর মেঝে নির্মাণের জন্য নিচের মাটি অপসারণ করে সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করার প্রয়োজন থাকলেও ঠিকাদার মাটি অপসারণ না করেই মাটির ওপরে সামান্য বালু দিয়ে মেঝে নির্মাণ করেছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে দেবে গিয়ে গোডাউনের স্বাভাবিক ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই এনায়েত হুসাইনের কাছে ছুটে আসেন প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মাহবুব আলম। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাদানুবাদ হয় বলে জানা যায়। একপর্যায়ে প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা এবং তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসাজশে প্রকল্পের কাজে পুকুরচুরির মাধ্যমে সরকারি অর্থের লুটপাট হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন এনায়েত হুসাইন। এর কিছুদিন পর প্রকল্প পরিচালক গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রতিবেদন দেওয়ার পর খাদ্য অধিদপ্তরে হৈচৈ শুরু হয়। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেওয়া হয় না। এ ধরনের প্রতিবেদন দেওয়ায় অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা এনায়েত হুসাইনকে ভর্ৎসনা করেছেন। দুর্নীতি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের পরিবর্তে তাঁকে তিরস্কার করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদনের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর পর খাদ্য বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করতে চট্টগ্রামে যাওয়ার আগেই ঠিকাদারদের কাছে বিষয়টি ফাঁস করে দেন খাদ্য অধিদপ্তরের অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তারা। এ কারণে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে নষ্ট ইটের স্তূপ দেখতে পায়নি। কিন্তু গুদাম নির্মাণে তারা নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের অভিযোগ তদন্ত কমিটির কাছেও সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদন দেওয়ার পরপরই ঠিকাদাররা ইট সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে দেয়ালে ব্যবহার করা ইট সরানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি গুদাম নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের মান পরীক্ষার জন্য ইটের কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ইটের গাঁথুনি ভেঙে উৎকৃষ্ট মানের ইট দিয়ে নতুন করে গুদাম নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরও কেন ইটের কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার সুপারিশ করা হলো জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্তদলে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন কাউকে সংযুক্ত করা হয়নি। অন্যদের পক্ষে ইটের কারিগরি বিষয়টি শতভাগ বোঝা সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে গুদামের মেঝেতে মাটির বদলে ভিটি বালু দিয়ে ভরাট করার বিষয়টিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ভিটি বালু ছাড়াই গুদামের ভেতরের মাটি ছড়িয়েই নির্মাণকাজ করার প্রমাণ পেয়েছে। অথচ অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী গুদামগুলোর গ্রাউন্ড লেভেল থেকে মেঝে পর্যন্ত ভিটি বালু দিয়ে পূর্ণ করার কথা। কমিটি সরেজমিনে তদন্তের সময় ভিটি বালুর পরিবর্তে হলুদ আঠালো মাটি দেখতে পায়। নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কারণে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৭ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের সুষ্ঠু মনিটরিং নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প পরিচালক, উপপরিচালককে প্রকল্প এলাকায় অবস্থানেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য নেওয়া ইট, রড, বালু, সিমেন্ট ও পাথর নিয়মিত পরীক্ষা করানোর সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসবের নমুনা পাঠানোর সময় প্রকল্প পরিচালক বা উপরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে নমুনা স্বাক্ষরসহ সিলগালা করে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি গুদামে একাধিক গ্রেড বিম রয়েছে। এসব গ্রেড বিম নিচের দিকে আনুমানিক সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত নিম্নমানের ও অসম ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে ঠিকাদাররা আগের নিম্নমানের ইটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভালো মানের ইট দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করার সুযোগ দাবি করেন। কিন্তু তাঁরা নতুন করে যে ইট সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোও নিম্নমানের বলে উল্লেখ রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্ত কমিটির সামনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গুদাম নির্মাণের জন্য অন্যান্য উপকরণের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ইট কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটি মনে করে, হালিশহর সিএসডি কম্পাউন্ড এলাকায় প্রকল্পের সব গুদাম নির্মাণকাজ চলার কারণে প্রকল্পের দপ্তর ওই কম্পাউন্ডেই স্থাপন করা দরকার ছিল। অথচ প্রকল্পের অফিস ঢাকায়। প্রকল্পের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের সেখানেই অবস্থান করা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করা হয়। প্রকল্পের মনিটরিং দুর্বল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টেন্ডার শিডিউলে পাইলিং নির্মাণে ৬০ হাজার পিএসআই গ্রেডের রড ব্যবহার করার কথা রয়েছে। কিছু গুদামে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের রড ব্যবহার করা হলেও অনেক গুদামে ব্র্যান্ডবিহীন রড ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারের জন্য নির্মাণ স্থানে নেওয়া সব চালানের রড কারিগরি পরীক্ষা করা হয় না। এ ছাড়া কিছু পিলারের রড নির্ধারিত মাত্রার ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদন্তদলের সন্দেহ দেখা দেওয়ার কথা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সিমেন্ট ও পাথরের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনার সঠিকতা সম্পর্কেও সন্দেহ পোষণ করা হয়।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, একটি সিন্ডিকেট ৯১টি গুদামেই তাদের সরবরাহ করা ইট ব্যবহারে বাধ্য করছে। একজন মন্ত্রী, যাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে, তিনি এ সিন্ডিকেটের প্রধান। তাঁর লোকজনই একটি নির্দিষ্ট ইটখোলা থেকে এসব নিম্নমানের ইট সরবরাহ করছে।
একজন প্রকৌশলী তদন্ত কমিটিকে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, 'বঙ্গ নামক সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব ঠিকাদারকে ইট গ্রহণ করতে হবে মর্মে সরবরাহকারী সিন্ডিকেট জানিয়ে দিয়েছে। তাই সব ঠিকাদারের ইট একই ইটখোলার এবং একই মানের।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ড. এ এম এম শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা স্রেফ তদারকির অভাবে হচ্ছে। গুদাম নির্মাণে দুর্নীতি বর্তমান সরকারের কাছ থেকে কেউ প্রত্যাশা করে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত শক্ত হাতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা। খাদ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা এ দুর্নীতিতে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'
No comments