এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধার দিনলিপি by ডা. মোঃ দেলোয়ার হোসেন
মুক্তিযোদ্ধা হরিপদ বাড়ৈ। যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও স্বাধীনতার ৩৭ বছরেও প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি নিজের ভাগ্যকে। পরের জমি চাষ করে চলে তার সংসার। দিন দিন চাষযোগ্য জমি কমতে থাকায় র্বতমানে তিনি করছেন দিন মজুরের কাজ । জাতিকে লাল-সবুজের পতাকা এনে দেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চাশ টাকা মজুরিতে জমির কাজ করে সংসার চালান এখন।
শরীরে বাতজ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগ হওয়ায় কাজে যেতে পারেন না প্রতিদিন। ১৯৭১ সালে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশের আরো অনেক দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার মতো হরিপদের জীবনও আজ দারিদ্রে্যর কষাঘাতে পিষ্ঠ। খুব ছোট বয়সে বাবা মারা যান। তখনো দেশে যুদ্ধ শুরু হয়নি, অভাব অনটনের সংসারে পাঠশালার গণ্ডি পেরুতে পারেননি। তখন বড় ভাইদের সঙ্গে গৃহস্থালির কাজ করতেন। ১৯৭১ সালের মে মাসে টেকেরহাট, খালিয়া রাজৈর, জলিরপাড়, সেনদিয়ায় বোল্ফি্বং ও গোলাগুলি শুরু হলে পাকসেনাদের গুলিতে মৃত্যু হয় হরিপদের মা আমদি রানী বাড়ৈর। মায়ের লাশ ছুঁয়ে হরিপদ ওইদিন শপথ নিয়েছিলেন এদেশকে আমি শত্রুমুক্ত করব, মৃত মায়ের প্রতিশোধ নেব ও দেশকে স্বাধীন করব। পাকসেনাদের হাত থেকে প্রাণরক্ষার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনিও চলে গেলেন ভারতে। সেখানে আশ্রয় নিলেন কলকাতার লবণ হ্রদ শরণার্থী ক্যামেঙ্। ৭ দিন থাকার পর রেশন অফিস থেকে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ শুরু হয়। তখন মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ও দেশ মাতৃকার টানে দেশকে পাকবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার সংকল্পে ২০ বছরের যুবক হরিপদ নাম লেখান মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে চাকুলিয়া বিহার ট্রেনিং সেন্টারে ১ মাস প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরে। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বাড়ি এসে ভিটে মাটি ছাড়া কিছুই পাননি তিনি। তবুও যুদ্ধের ময়দানের এই আকুতোভয় বীর, স্বাধীন দেশে সুখ স্বাচ্ছন্দে্য বেঁচে থাকার আশা নিয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় একটি খুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। পৈতৃক কোনো জমিজমা ছিল না। জীবন রক্ষার জন্য র্বগা চাষের কাজ শুরু করেন। স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরের জমি চাষ কর সংসার চালাতে গিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। যুদ্ধের ময়দানে একবারো মনে হয়নি দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীন দেশে এত দুঃখকষে্ট থাকতে হবে। সহজ-সরল মুক্তিযোদ্ধা হরিপদ বাড়ৈ মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা ছাড়া ৩৭ বছরে আর কিছুই পাননি। বড় অসহায় ভূমিহীন এই মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করে আকুল কণ্ঠে বলেন, সবার একটু সাহায্য সহযোগিতা পেলে ছোট ছেলেটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো নিশ্চিনেস্ন কাটিয়ে যেতে পারতাম। জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নন্ত ১১২৩, মুক্তিবার্তা নং ০১১০০৪০২৪৬, কল্যাণট্রাস্ট কর্তৃক প্রণীত তালিকা নং ৬৭৭৩ খ- নং ২৯, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্মারক নং মুঃ বিঃ মঃ সাঃ মাদারীপুর প্র/৩/০৯/২০০২/৯৫৯, মঃ ৯৪২৯৫।
নৃপেন্দ্রনাথ চক্রর্বতীকেন এই মর্মান্তিক আত্নাহুতি?
'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে'_ বলে গেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন এই পৃথিবীর সযকিছুতেই তার বিতৃষষ্ণা জন্মায়, মৃত্যুকেই সয সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়; ঘটে আত্নহত্যার মতো করুণ পরিণতি। আত্নহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনের যন্ত্রণা, বঞ্চনা, হতাশা, নেতিবাচক জীবনবোধ মানুষকে এ কঠিন সিদ্ধানেস্নর পথে ঠেলে দেয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আত্নহত্যার একটি ঘটনা আমাদের সমাজকে নাড়া দিয়ে গেছে ভীষণভাবে। গত ১১ জুলাই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাসর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে একই পরিবারের ৯ সদস্য। এই 'মাস ইমপ্যাক্ট সুইসাইডের' কারণ প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে এটুকু বোঝা যায়, এ আত্নহত্যা ছিল পরিকল্কিপ্পত। গৃহকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার করা ডায়েরি ও চিরকুটের লেখা আর আগে থেকে তৈরি করা কবর সে ইঙ্গিতই বহন করে। পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়া সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই পরিবারের সদস্যরা এ পর্যন্ত দু'বার ধর্ম পরির্বতন করেছেন। সর্বশেষ ৫ বছর আগে তারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। এই ধর্ম পরির্বতন তাদের সামাজিকভাবে প্রায় বি&চ্ছিম্ন করে রেখেছিল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। এমনকি র্বতমানে তারা কোন ধর্মবিশ্বাস পালন করতেন তাও কেউ নিশ্চিত নয়। পরিবারের সদস্যরা কি কোনো ধর্মীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস আঁকড়ে ছিলেন? তারা কি বিশ্বাস করেছিলেন, বিধাতা এ পথেই তাদের মুক্তি লিখে রেখেছেন এবং পরকালে তারা পাবেন এর চেয়েও বড় কোনো উপহার? পরিবারের কর্তা বা কর্ত্রী কি মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে বা ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাসে প্রভাবিত করেছেন বাকি সবাইকে? কেনইবা তারা একাধিকবার ধর্ম পরির্বতন করেছিলেন? প্রশ্ন উঠে আসে আরো। এই যে সমাজ বি&চ্ছিম্নতা, প্রায় একঘরে হয়ে পড়া জীবনযাপন_ এতে কি তারা একাকিত্ব বোধ করছিলেন, অসহ্য হয়ে পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে জীবন সম্বল্পেব্দ, ভবিষ্যৎ সম্বল্পেব্দ নেতিবাচক কোনো ধারণার জন্ম দিয়েছিল যা তাদের এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে? বিরল হলেও তাদের সবাই কি একই সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিষণম্নতা নামক ব্যাধিতে; যা তাদের জীবনের সব মায়া-মোহ উপেক্ষা করে চলে যেতে বাধ্য করেছে? শুধু বাংলাদেশে কেন সারাবিশেষ খবই বিষণম্নতা আত্নহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা জানি না, বিরল ও মর্মান্তিক এ ঘটনার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা বোঝা যাবে কেবল সুষ্ঠু তদন্ত ও সামগ্রিক তথ্য পাওয়ার পরই কিন্তু এটুকু নিশ্চিত যে, পরিবারের এক বা একাধিক লোক কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছিলেন, সে রোগের কারণ যা-ই হোক না কেন। ভ্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাসও মানুষকে মানসিক রোগে আক্রান্ত করতে পারে এবং তা থেকে ঘটতে পারে যে কোনো ধরনের অনর্থ। কারণ যা-ই হোক, সামাজিক, মানসিক, অপরাধজনিত বা অন্য কিছু; আমরা চাই, সুষ্ঠু তদনেস্নর মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসুক। আমরা এ ধরনের মর্মসঙ্র্শী ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।
নৃপেন্দ্রনাথ চক্রর্বতীকেন এই মর্মান্তিক আত্নাহুতি?
'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে'_ বলে গেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন এই পৃথিবীর সযকিছুতেই তার বিতৃষষ্ণা জন্মায়, মৃত্যুকেই সয সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়; ঘটে আত্নহত্যার মতো করুণ পরিণতি। আত্নহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনের যন্ত্রণা, বঞ্চনা, হতাশা, নেতিবাচক জীবনবোধ মানুষকে এ কঠিন সিদ্ধানেস্নর পথে ঠেলে দেয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আত্নহত্যার একটি ঘটনা আমাদের সমাজকে নাড়া দিয়ে গেছে ভীষণভাবে। গত ১১ জুলাই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাসর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে একই পরিবারের ৯ সদস্য। এই 'মাস ইমপ্যাক্ট সুইসাইডের' কারণ প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে এটুকু বোঝা যায়, এ আত্নহত্যা ছিল পরিকল্কিপ্পত। গৃহকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার করা ডায়েরি ও চিরকুটের লেখা আর আগে থেকে তৈরি করা কবর সে ইঙ্গিতই বহন করে। পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়া সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই পরিবারের সদস্যরা এ পর্যন্ত দু'বার ধর্ম পরির্বতন করেছেন। সর্বশেষ ৫ বছর আগে তারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। এই ধর্ম পরির্বতন তাদের সামাজিকভাবে প্রায় বি&চ্ছিম্ন করে রেখেছিল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। এমনকি র্বতমানে তারা কোন ধর্মবিশ্বাস পালন করতেন তাও কেউ নিশ্চিত নয়। পরিবারের সদস্যরা কি কোনো ধর্মীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস আঁকড়ে ছিলেন? তারা কি বিশ্বাস করেছিলেন, বিধাতা এ পথেই তাদের মুক্তি লিখে রেখেছেন এবং পরকালে তারা পাবেন এর চেয়েও বড় কোনো উপহার? পরিবারের কর্তা বা কর্ত্রী কি মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে বা ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাসে প্রভাবিত করেছেন বাকি সবাইকে? কেনইবা তারা একাধিকবার ধর্ম পরির্বতন করেছিলেন? প্রশ্ন উঠে আসে আরো। এই যে সমাজ বি&চ্ছিম্নতা, প্রায় একঘরে হয়ে পড়া জীবনযাপন_ এতে কি তারা একাকিত্ব বোধ করছিলেন, অসহ্য হয়ে পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে জীবন সম্বল্পেব্দ, ভবিষ্যৎ সম্বল্পেব্দ নেতিবাচক কোনো ধারণার জন্ম দিয়েছিল যা তাদের এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে? বিরল হলেও তাদের সবাই কি একই সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিষণম্নতা নামক ব্যাধিতে; যা তাদের জীবনের সব মায়া-মোহ উপেক্ষা করে চলে যেতে বাধ্য করেছে? শুধু বাংলাদেশে কেন সারাবিশেষ খবই বিষণম্নতা আত্নহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা জানি না, বিরল ও মর্মান্তিক এ ঘটনার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা বোঝা যাবে কেবল সুষ্ঠু তদন্ত ও সামগ্রিক তথ্য পাওয়ার পরই কিন্তু এটুকু নিশ্চিত যে, পরিবারের এক বা একাধিক লোক কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছিলেন, সে রোগের কারণ যা-ই হোক না কেন। ভ্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাসও মানুষকে মানসিক রোগে আক্রান্ত করতে পারে এবং তা থেকে ঘটতে পারে যে কোনো ধরনের অনর্থ। কারণ যা-ই হোক, সামাজিক, মানসিক, অপরাধজনিত বা অন্য কিছু; আমরা চাই, সুষ্ঠু তদনেস্নর মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসুক। আমরা এ ধরনের মর্মসঙ্র্শী ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।
No comments