নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট নিয়ে বিমানের টেনশন বাড়ছে by আশরাফুল হক রাজীব
যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন না পাওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের টেনশন বাড়ছে। বিমান বহরে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কম্পানির তৈরি অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট যোগ হবে। তার পরের মাসে যোগ হবে আরো একটি এয়ারক্রাফট। এসব এয়ারক্রাফট সংগ্রহের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নিউ ইয়র্কসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলোতে বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালু করা।বিমানের প্রস্তুতি শেষ হলেও সিভিল এভিয়েশন এখনো হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা এখনো নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর কোনো সুরাহা করতে পারেনি।
গত মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেও দেশটির ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) কাছ থেকে কবে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালানো যাবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি মেলেনি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, কবে থেকে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু হবে তার দিনক্ষণ এখনো বলা যাচ্ছে না। এফএএ যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এয়ারক্রাফট আসার পর ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে খুব বেশি দেরি হবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
ক্রমাগত লোকসান ও এয়ারক্রাফট সংটের কারণে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুট বন্ধ করে দেয় বিমান। বিমানের একমাত্র সুপরিসর ডিসি-১০ দিয়ে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালানো লাভজনক ছিল না। ডিসি-১০ এয়ারক্রাফট পুরনো হওয়ায় এতে জ্বালানি খরচ নতুন এয়ারক্রাফটের দ্বিগুণ। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক দফা ঘোষণা দিয়েও ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে পারেনি। তার পরও যে এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই সমস্যার সমাধান হলেও বিমান এ প্রেস্টিজিয়াস রুট চালু করতে পারছে না এফএএর বাধার কারণে।
এফএএর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন দ্বিতীয় ক্যাটাগরির। প্রথম ক্যাটাগরিভুক্ত এভিয়েশনের এয়ারলাইনসই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে নামতে পারে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) দ্বিতীয় ক্যাটাগরিভুক্ত। বিমানসহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইনস সিএএবির রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। যারা সিএএবির রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে তাদের সবার একই অবস্থা। গত মে মাসে এফএএর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। তারা এয়ারপোর্ট ও এয়ারলাইনসের নিরাপত্তাসহ যেসব কারণে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে। এফএএর মতে, নিরাপত্তাসহ যেসব ক্ষেত্রে উন্নতি করার দরকার ছিল সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি প্রত্যাশামাফিক নয়। গত ৮ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত এফএএর প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের সময় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এফএএ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) নির্ধারিত আট অপরিহার্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এফএএ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন। আট অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে_এভিয়েশন আইন, এভিয়েশন বিধি, সিভিল এভিয়েশন সংগঠন, পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ লোকবল, পরিদর্শন বাস্তবায়ন গাইডলাইন, রেকর্ড সংরক্ষণ, ধরাবাহিকতা রক্ষা ও নিরাপত্তা।
এই অবস্থায় বিমানমন্ত্রী জি এম কাদেরের নেতেৃত্বে পাঁচ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যায় গত মাসে। এই দলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। এমনকি বিমান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, একজন সংসদ সদস্যও সফরকারী দলে ছিলেন। প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ), ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (আইএএসএ), বোয়িং কম্পানি, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে এফএএ-কে দ্বিতীয় ক্যাটাগরি থেকে প্রথম ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়। এ সময় এফএএ জানায়, বাংলাদেশকে এ ক্যাটাগরিতে নিতে হলে নিরাপত্তাসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ (আপ টু দ্য মার্ক) করতে হবে। সফরকারী প্রতিনিধিদল এ মুহূর্তেই বাংলাদেশকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হচ্ছে না বুঝতে পেরে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিমানকে নিউ ইয়র্কে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেন।
বিসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আশা করছি, ডিসেম্বর নাগাদ নিউ ইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট চালানোর অনুমোদন পাওয়া যাবে। সেটা স্থায়ীভাবে না হলেও অস্থায়ী ভিত্তিতে পাওয়া যাবে। কোনো কারণে ডিসেম্বরে না পাওয়া গেলে জানুয়ারি মাসে তা পাব বলে বিশ্বাস করি। তবে যত দিন বিষয়টির সুরাহা না হবে তত দিন টেনশন থাকছেই।'
বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'একসময় বিমানকে দায়ী করা হয়েছে ফ্লাইট চালাতে না পারার জন্য। আমাদের এয়ারক্রাফট না থাকায় আমরা নিউ ইয়র্কে যেতে পারিনি। এখন সেটা সিভিল এভিয়েশন বা মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা। কারণ সিভিল এভিয়েশনের মানোন্নয়ন করার দায়িত্ব বিমানের নয়।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর জাকীউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব অনিশ্চয়তা দূর করে আমরা চলতি বছরই নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালাতে পারব বলে আশা করি।'
No comments