মজার মাছ কামিলা by আবদুল কুদ্দুস
পর্যটন রাজধানীখ্যাত বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার ভ্রমণে এসে হাজার হাজার মানুষ সামুদ্রিক মাছের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাংস এড়িয়ে সামুদ্রিক মাছ রূপচাঁদা, কোরাল, চিংড়ি খেতে চায়। শত শত হোটেল-রেস্তোরাঁয় এসব মাছ খাওয়ার চলে প্রতিযোগিতা। অর্ডার করলে এনে দেয় রূপচাঁদা, কোরালসহ নানা সামুদ্রিক মাছ। চেনা-জানা থাকলে ভালো, না থাকলে রূপচাঁদার পরিবর্তে ‘হাতির কান’ নামের টেকচাঁদা, কোরালের নামে সাপের মতো লম্বা কামিলা মাছ খাওয়ানো হবে। কামিলা নাকি খেতে খুব মজা। বিশেষ করে বড় বড় হোটেলে কোরালের নামে কামিলাই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ইদানীং বিপুল পরিমাণ কামিলা ধরা পড়ছে। মাছটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অনেকে মাছের ভুুঁড়ি শুকিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে মগ, রাখাইনসহ অন্যান্য আদিবাসী এবং হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই মাছের বড় ভোক্তা।
১২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শহরের প্রধান পাইকারি মাছের বাজার নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ৪৫টির বেশি ট্রলার সাগর থেকে ইলিশ, রূপচাঁদা, টেকচাঁদা, পোপা, মাইট্যা, লইট্যা, রাঙাচকিসহ বিপুল পরিমাণ কামিলা মাছ ধরে আনে। অন্যান্য মাছের পাশাপাশি এ মাছও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ফিশারিঘাটের মাছ বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম (৩৪) শতাধিক কামিলা মাছের স্তূপ সামনে নিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে যাচ্ছেন, ‘নিয়ে যান একটা কামিলা। দামে সস্তা, খেতেও মজা।’
মনিরুল ইসলাম জানান, এখানে দুই ধরনের কামিলা বিক্রি হয় সব সময়। বিশেষ করে এই সময় সাগরে যখন ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদাসহ অন্যান্য মাছের আকাল দেখা দেয়, তখন ঝাঁকে ঝাঁকে কামিলা ধরা পড়ে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকেরা কামিলা দিয়ে কোরালের চাহিদা পূরণ করছেন। বিশেষ করে পর্যটকেরা কোরালের নামে কামিলা মাছ খাচ্ছে বেশি। কিছু হোটেল কোরালের নামে পোপা মাছ খাওয়ায়। সাগরে কোরাল মাছ সব সময় কি ধরা পড়ে? দেখা গেছে, কালো ও হলুদ রঙের দুই প্রজাতির কামিলার মধ্যে হলুদটাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মুসলমানেরা হলুদ কামিলা আর অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন কালো-হলুদ দুটোই কিনে নিচ্ছে।
স্থানীয় ট্রলারমালিক সৈয়দ উল্লাহ জানান, একসময় জালে আটকা পড়লে এই কামিলা মাছ ছেড়ে দেওয়া হতো। উপকূলে এই মাছ খাওয়ার লোক ছিল না। আর এখন কামিলা ধরা পড়লে লাখ টাকা। ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে এবং স্থানীয় মগ, রাখাইন, বড়ুয়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রচুর কামিলা খাচ্ছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে আদিবাসীদের কাছে এই মাছের কদর খুব বেশি। আদিবাসীরা এই মাছকে শুঁটকি করে খেতে বেশি পছন্দ করে।
দেখা গেছে, তিন থেকে পাঁচ ফুট লম্বা একেকটি কামিলার ওজন তিন থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি কামিলা ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার খুচরা বাজারে এই কামিলা মাছের দাম প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। প্রতিদিন এই ফিশারিঘাট থেকে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মণ কামিলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হোটেল-রেস্তোরাঁয় এই মাছ ভোক্তাদের খাওয়ানো হচ্ছে। তবে কী নামে খাওয়ানো হচ্ছে, তার উত্তর মেলে না।
জেলেরা জানান, কামিলা গভীর সাগরে (তলদেশে) মাটির নিচে গর্তে অথবা কাদামাটিতে থাকে। ইলিশ ধরার জালে কামিলা ধরা পড়ে না। মাটির নিচে লাগানো ডোবা জাল কিংবা বড়শিতে কামিলা ধরা পড়ে। কামিলা আর পোপা ধরার জন্য শহরে অন্তত দেড় হাজার ছোট-বড় ট্রলার রয়েছে।
জেলেরা জানান, গভীর সাগরে মা-চিংড়ি ধরায় নিয়োজিত ট্রলিং জাহাজের জালে বিপুল পরিমাণ কামিলা ধরা পড়ে। মা-চিংড়ি আর কামিলা একই জগতের প্রাণী। ট্রলিংগুলো কাদার নিচ থেকে মা-চিংড়ি ধরতে গিয়ে কামিলা ধরে আনে। পরে ট্রলিংগুলো এই কামিলা সস্তায় ফিশিং ট্রলারের জেলেদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
শহরের নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, কামিলার ভুঁড়ি (ফদনা) চড়াদামে বিক্রি হয়। মাছের পেট কেটে ভুঁড়ি বের করে রোদে শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মিয়ানমারে বিপুল পরিমাণ কামিলা ও ফদনা পাচার হয়। শহরের নুনিয়াছটা, ফদনারডেইল, সোনাদিয়া, মহেশখালী, খুরুশকুল, টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কামিলা ও পোপা মাছের ফদনা শুঁটকি করার জন্য তিন শতাধিক মহাল রয়েছে। নুনিয়াছটার উত্তরে নাজিরারটেক ও ফদনারডেইল চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ শুঁটকি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। মাছের ফদনা (ভুঁড়ি) শুকিয়ে শুঁটকি করা হয় বলে গ্রামের নামকরণ ‘ফদনারডেইল’।
এই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল (৫৭) জানান, ১০-১২টি কাঁচা ভুঁড়ি রোদে শুকালে এক কেজি ফদনা হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ফদনা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। গত ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে অন্তত সাত টন ফদনা রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। থাইল্যান্ড, হংকং, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে এই শুঁটকি ফদনার বিশাল বাজার। শোনা যায়, এই ফদনা দিয়ে সেখানে সুস্বাদু স্যুপ ও দামি ওষুধ তৈরি হয়। আর কাঁচা মাছের মাংস শহরের কয়েক শ হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ দেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে অপরিচিত লোকজন বিশেষ করে পর্যটকেরা কোরাল হিসেবে কামিলা মাছই হজম করছে। তবে এতে ক্ষতির কোনো কারণ নেই। কামিলা খেয়ে এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। শুধু অচেনা একটা মাছ খাওয়া হলো, এটুকুই।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ইদানীং বিপুল পরিমাণ কামিলা ধরা পড়ছে। মাছটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অনেকে মাছের ভুুঁড়ি শুকিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে মগ, রাখাইনসহ অন্যান্য আদিবাসী এবং হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই মাছের বড় ভোক্তা।
১২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শহরের প্রধান পাইকারি মাছের বাজার নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ৪৫টির বেশি ট্রলার সাগর থেকে ইলিশ, রূপচাঁদা, টেকচাঁদা, পোপা, মাইট্যা, লইট্যা, রাঙাচকিসহ বিপুল পরিমাণ কামিলা মাছ ধরে আনে। অন্যান্য মাছের পাশাপাশি এ মাছও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ফিশারিঘাটের মাছ বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম (৩৪) শতাধিক কামিলা মাছের স্তূপ সামনে নিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে যাচ্ছেন, ‘নিয়ে যান একটা কামিলা। দামে সস্তা, খেতেও মজা।’
মনিরুল ইসলাম জানান, এখানে দুই ধরনের কামিলা বিক্রি হয় সব সময়। বিশেষ করে এই সময় সাগরে যখন ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদাসহ অন্যান্য মাছের আকাল দেখা দেয়, তখন ঝাঁকে ঝাঁকে কামিলা ধরা পড়ে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকেরা কামিলা দিয়ে কোরালের চাহিদা পূরণ করছেন। বিশেষ করে পর্যটকেরা কোরালের নামে কামিলা মাছ খাচ্ছে বেশি। কিছু হোটেল কোরালের নামে পোপা মাছ খাওয়ায়। সাগরে কোরাল মাছ সব সময় কি ধরা পড়ে? দেখা গেছে, কালো ও হলুদ রঙের দুই প্রজাতির কামিলার মধ্যে হলুদটাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মুসলমানেরা হলুদ কামিলা আর অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন কালো-হলুদ দুটোই কিনে নিচ্ছে।
স্থানীয় ট্রলারমালিক সৈয়দ উল্লাহ জানান, একসময় জালে আটকা পড়লে এই কামিলা মাছ ছেড়ে দেওয়া হতো। উপকূলে এই মাছ খাওয়ার লোক ছিল না। আর এখন কামিলা ধরা পড়লে লাখ টাকা। ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে এবং স্থানীয় মগ, রাখাইন, বড়ুয়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রচুর কামিলা খাচ্ছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে আদিবাসীদের কাছে এই মাছের কদর খুব বেশি। আদিবাসীরা এই মাছকে শুঁটকি করে খেতে বেশি পছন্দ করে।
দেখা গেছে, তিন থেকে পাঁচ ফুট লম্বা একেকটি কামিলার ওজন তিন থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি কামিলা ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার খুচরা বাজারে এই কামিলা মাছের দাম প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। প্রতিদিন এই ফিশারিঘাট থেকে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মণ কামিলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হোটেল-রেস্তোরাঁয় এই মাছ ভোক্তাদের খাওয়ানো হচ্ছে। তবে কী নামে খাওয়ানো হচ্ছে, তার উত্তর মেলে না।
জেলেরা জানান, কামিলা গভীর সাগরে (তলদেশে) মাটির নিচে গর্তে অথবা কাদামাটিতে থাকে। ইলিশ ধরার জালে কামিলা ধরা পড়ে না। মাটির নিচে লাগানো ডোবা জাল কিংবা বড়শিতে কামিলা ধরা পড়ে। কামিলা আর পোপা ধরার জন্য শহরে অন্তত দেড় হাজার ছোট-বড় ট্রলার রয়েছে।
জেলেরা জানান, গভীর সাগরে মা-চিংড়ি ধরায় নিয়োজিত ট্রলিং জাহাজের জালে বিপুল পরিমাণ কামিলা ধরা পড়ে। মা-চিংড়ি আর কামিলা একই জগতের প্রাণী। ট্রলিংগুলো কাদার নিচ থেকে মা-চিংড়ি ধরতে গিয়ে কামিলা ধরে আনে। পরে ট্রলিংগুলো এই কামিলা সস্তায় ফিশিং ট্রলারের জেলেদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
শহরের নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, কামিলার ভুঁড়ি (ফদনা) চড়াদামে বিক্রি হয়। মাছের পেট কেটে ভুঁড়ি বের করে রোদে শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মিয়ানমারে বিপুল পরিমাণ কামিলা ও ফদনা পাচার হয়। শহরের নুনিয়াছটা, ফদনারডেইল, সোনাদিয়া, মহেশখালী, খুরুশকুল, টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কামিলা ও পোপা মাছের ফদনা শুঁটকি করার জন্য তিন শতাধিক মহাল রয়েছে। নুনিয়াছটার উত্তরে নাজিরারটেক ও ফদনারডেইল চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ শুঁটকি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। মাছের ফদনা (ভুঁড়ি) শুকিয়ে শুঁটকি করা হয় বলে গ্রামের নামকরণ ‘ফদনারডেইল’।
এই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল (৫৭) জানান, ১০-১২টি কাঁচা ভুঁড়ি রোদে শুকালে এক কেজি ফদনা হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ফদনা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। গত ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে অন্তত সাত টন ফদনা রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। থাইল্যান্ড, হংকং, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে এই শুঁটকি ফদনার বিশাল বাজার। শোনা যায়, এই ফদনা দিয়ে সেখানে সুস্বাদু স্যুপ ও দামি ওষুধ তৈরি হয়। আর কাঁচা মাছের মাংস শহরের কয়েক শ হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ দেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে অপরিচিত লোকজন বিশেষ করে পর্যটকেরা কোরাল হিসেবে কামিলা মাছই হজম করছে। তবে এতে ক্ষতির কোনো কারণ নেই। কামিলা খেয়ে এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। শুধু অচেনা একটা মাছ খাওয়া হলো, এটুকুই।
No comments