দুবাইয়ে নির্মাণশ্রমিকদের দুঃসময় -প্রবাসী শ্রমিক by নিমাই সরকার
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নির্মাণকর্মী ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ছুটে এসেছিলেন দুবাইতে। শুধু নির্মাণকর্মী কেন, শ্রমিক ও প্রকৌশলীসহ নানা পেশার মানুষ জীবিকার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইকে বেছে নেন। তাঁরা সোনার হরিণ খুঁজছিলেন, পেয়েও ছিলেন। তবে সেই সোনার হরিণ বোধ হয় তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যায় এখন।
বিশ্বমন্দার প্রভাব এসে লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সাত আরবশাহির এই সংযুক্ত দেশটির প্রধান দুই রাজ্য আবুধাবি ও দুবাই। রাজধানীর গর্ব নেই আবুধাবির, তবে আছে প্রচুর তেল। আর দুবাই গড়ে উঠেছে এর পর্যটন আর ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি দুবাই পড়েছে বিপাকে। দুবাইয়ের শিল্প-কারখানা আর চোখ ধাঁধানো বিশাল সব অবকাঠামো ও নির্মাণকাজের টাকা জোগাড় করতে পারছে না নাখিল, ইমার ও ডামাকের মতো কোম্পানিগুলো। দুবাইয়ের মুখ্য বিনিয়োগকারী সংস্থা দুবাই ওয়ার্ল্ড ঋণের দায়ে জর্জরিত।
যে যুবক তাঁর ভিটেমাটি, বিত্ত-বেসাত বিক্রি করে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তাঁর চাকরি আজ হুমকির মুখে। এতটুকু বললে বোধ হয় সবটা বলা হবে না। এরই মধ্যে অনেকে রওনা দিচ্ছেন ঢাকার পথে। ‘টাকা দেন দুবাই যাব’—বলে যে তরুণের চাপ ছিল তাঁর অভিভাবকের মস্তিষ্কে, তিনি দুবাইতে এসেছিলেন। দুর্ভাগ্য—তাঁর স্বপ্নসাধ পূরণ হওয়ার আগেই তাঁকে ফিরতে হচ্ছে দেশে। বোনের বিয়ে দেওয়া, বন্ধকী জমি উদ্ধার, সুদের টাকা পরিশোধ—এসবই একটি ফ্রেমের মধ্যে—একটু নিয়ন্ত্রণে এসেছে যে তরুণের, তিনি বোধ হয় হিসাবটা মেলাতে পারছেন না। যে যুবক তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর হারগাছি বিক্রি করে এসেছিলেন, তাঁকে এই সেদিনও শুনিয়েছেন—আর তো কটা দিন। শুধু তাঁর জন্যই নয়, প্রিয় বোনের জন্যও পাঠাবেন প্যাঁচের একটি চেইন।
মা-বাবার চিকিত্সা—এসবও বেঁধে থাকে তাঁর দুবাইওয়ালা ছেলের পাঠানো টাকার অপেক্ষায়। একজন ভাই, একজন বাবা, একজন ছেলে—সবার বেলাতেই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে আছে ভালোবাসার টান, আছে করণীয় দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা এটাই—তাঁদের এই করণীয়টুকু শেষ হচ্ছে না এ বেলায়।
কম কথা নয়! বাংলাদেশ এ বছর ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে। আর এর এক বিলিয়ন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দুবাই থেকে হবে এর অর্ধেক। অথচ সেই জায়গায় তাঁরা এখন তাঁদের চাকরি সামলাতে পারছেন না। দলে দলে ফিরে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০০৭ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকসংখ্যা ৬৪ লাখ এবং এর ৫৫ লাখই বিদেশি। আর তাঁদের মধ্যে ৩০ লাখের বেশি আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মাণকর্মী ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে নিবন্ধিত। এখানে বাংলাদেশের সংখ্যা সাত লাখ। বলা যায়, দেশের রেমিটেন্সে তাঁদের অবদান উপেক্ষার নয়।
কান টানলে মাথা আসে—এমনি করে অর্থলগ্নিকারী থেকে শুরু করে যে ধাক্কা, তা আঘাত করে নির্মাণকর্মীকে-দেশকে-তাঁর পরিবারকে। দুবাইয়ের যে বৃহত্ প্রকল্প ‘পাম জুমেরা’ খেজুরগাছের মতো ডাল বিস্তার করে আছে, সেটা দুবাই ওয়ার্ল্ডের তৈরি। কী আকর্ষণ এর! হলিউডের তারকা ব্রাড পিট পর্যন্ত বাড়ির বায়না দিয়ে বসে আছেন। এমনিভাবে আরেক প্রকল্প—‘পাম জেবেল আলি’। এতেও ওই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ। লাখ লাখ নির্মাণকর্মীর কাজের সংস্থান করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিক, মিস্ত্রি, বিদ্যুত্কর্মী, যন্ত্রকর্মী—এদের ধরে অনেকের সমাহার। তার ওপর আছে নির্মাণ প্রকৌশলী, উপদেষ্টা প্রকৌশলী, স্থপতি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ আর হিসাববিজ্ঞানী। দুবাই ওয়ার্ল্ডেরও টাকা পেতে অসুবিধা হয়নি। মুক্তহস্তে টাকার জোগান দিয়েছে রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি এবং লয়েডস ব্যাংকিং গোষ্ঠী। দুবাই ওয়ার্ল্ডের অর্থ ও প্রভাব শেষ হওয়ার নয়—এমন ধারণাই বদ্ধমূল সেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যাঁরা এতদিন মুক্তহস্তে টাকা জুগিয়েছেন সংস্থাটিকে। এই সেদিনও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম জানিয়েছিলেন, দুবাই ওয়ার্ল্ড প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলে তার জিম্মা নেবে দুবাই সরকার। সম্প্রতি সেই দুবাইশাহিও বললেন বিনিয়োগকারীদের, দুবাই ওয়ার্ল্ডকে বেশি চাপ না দিতে। কারণটা এমন হতে পারে, কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগসাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তার করতে গিয়ে দুবাই ওয়ার্ল্ড পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি টাকার দেনায় ডুবে গেছে। আবার আবুধাবি সরকারের তরফে ঘোষণা—এ ধার মেটানোর বাধ্যবাধকতা তার নেই। যদিও বা কবে তা হবে অবস্থাবিশেষে। রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রভৃতি লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থা দাঁড়াল আরও জটিল। কারণ, সহসাই আল মাকতুম বলতে শুরু করে দিলেন—দুবাই ওয়ার্ল্ডের করা ঋণ শোধের দায়িত্ব দুবাই ওয়ার্ল্ডেরই, সরকারের নয়। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আবুধাবি সরকার দুবাই কর্তৃপক্ষকে এক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যার ৪৭০ কোটি ডলার ব্যয় হবে দুবাই ওয়ার্ল্ডের ঋণ পরিশোধে।
দুবাই প্রকল্পগুলো এখন থেমে গেছে মঞ্চে কোনো নৃত্যশিল্পীর বরফ হয়ে যাওয়া দৃশ্যের মতোই। এখনো পাম জুমেরার বেশ কিছু অংশ নির্মাণের অধীন। পাম জেবেল আলি করার জন্য কেবল পাথর ফেলা হয়েছে সমুদ্রে। অন্যদিকে সব মিলিয়ে যেসব প্রকল্পের ৫০ শতাংশেরও কাজ হয়নি, তা স্থগিত রাখতে বলেছে দুবাই কর্তৃপক্ষ। আর যেসব প্রকল্পের ৫০ শতাংশ বা তার ওপরে সম্পন্ন হয়েছে, তা চালু রাখতে বলেছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র এটাই—সেসবের অর্থও নেই হাতে এখন। নাখিল যে ইজারা নিয়েছে প্রকল্প করার জন্য, তার ওপর সমর্থন নেই কোনো লগ্নিকারের। গোড়ায় জল না দিলে যে পাতাগুলো ঝরে পড়ে শুকনো হয়ে মর্মর শব্দে, নির্মাণকর্মীদের বেলায় এমন দৃষ্টান্ত লাগসই। এরই বাস্তবতায় ফেরত আসছেন হাজার হাজার নির্মাণকর্মী তাঁর দেশে। কথা হচ্ছে, তাঁদের উপায় কী হবে এখন!
স্বদেশে ফেরত আসা নির্মাণকর্মীদের নিয়ে একটি চিত্রকল্প দাঁড় করা যায়। কেউবা দেশে ফিরে টাকা জোগাড় করে আবার ছুটবেন অন্য কোনোখানে। কিংবা এতদিনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কেউবা শুরু করবেন ছোট কোনো ব্যবসা। কিন্তু এটা সম্ভব হবে না সবার দ্বারা, সে কথা সহজেই বলা যায়। পত্রিকায় প্রকাশ, আগামী জুলাই থেকে সরকার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রমোটিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক থ্রো মাইগ্রেশন’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদেশফেরত শ্রমিকেরা মনোবল ফিরে পাবেন নিঃসন্দেহে। এ ছাড়া সরকারের আছে ৩০০ কোটি টাকার এটি প্রবাসী কল্যাণ তহবিল। এরও সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। আবার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাঁদের সামনে খুলতে পারে নতুন কোনো সম্ভাবনার দ্বার—সে আশাও নিরর্থক নয়।
নিমাই সরকার: প্রকৌশলী, আবুধাবি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে কর্মরত।
বিশ্বমন্দার প্রভাব এসে লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সাত আরবশাহির এই সংযুক্ত দেশটির প্রধান দুই রাজ্য আবুধাবি ও দুবাই। রাজধানীর গর্ব নেই আবুধাবির, তবে আছে প্রচুর তেল। আর দুবাই গড়ে উঠেছে এর পর্যটন আর ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি দুবাই পড়েছে বিপাকে। দুবাইয়ের শিল্প-কারখানা আর চোখ ধাঁধানো বিশাল সব অবকাঠামো ও নির্মাণকাজের টাকা জোগাড় করতে পারছে না নাখিল, ইমার ও ডামাকের মতো কোম্পানিগুলো। দুবাইয়ের মুখ্য বিনিয়োগকারী সংস্থা দুবাই ওয়ার্ল্ড ঋণের দায়ে জর্জরিত।
যে যুবক তাঁর ভিটেমাটি, বিত্ত-বেসাত বিক্রি করে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তাঁর চাকরি আজ হুমকির মুখে। এতটুকু বললে বোধ হয় সবটা বলা হবে না। এরই মধ্যে অনেকে রওনা দিচ্ছেন ঢাকার পথে। ‘টাকা দেন দুবাই যাব’—বলে যে তরুণের চাপ ছিল তাঁর অভিভাবকের মস্তিষ্কে, তিনি দুবাইতে এসেছিলেন। দুর্ভাগ্য—তাঁর স্বপ্নসাধ পূরণ হওয়ার আগেই তাঁকে ফিরতে হচ্ছে দেশে। বোনের বিয়ে দেওয়া, বন্ধকী জমি উদ্ধার, সুদের টাকা পরিশোধ—এসবই একটি ফ্রেমের মধ্যে—একটু নিয়ন্ত্রণে এসেছে যে তরুণের, তিনি বোধ হয় হিসাবটা মেলাতে পারছেন না। যে যুবক তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর হারগাছি বিক্রি করে এসেছিলেন, তাঁকে এই সেদিনও শুনিয়েছেন—আর তো কটা দিন। শুধু তাঁর জন্যই নয়, প্রিয় বোনের জন্যও পাঠাবেন প্যাঁচের একটি চেইন।
মা-বাবার চিকিত্সা—এসবও বেঁধে থাকে তাঁর দুবাইওয়ালা ছেলের পাঠানো টাকার অপেক্ষায়। একজন ভাই, একজন বাবা, একজন ছেলে—সবার বেলাতেই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে আছে ভালোবাসার টান, আছে করণীয় দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা এটাই—তাঁদের এই করণীয়টুকু শেষ হচ্ছে না এ বেলায়।
কম কথা নয়! বাংলাদেশ এ বছর ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে। আর এর এক বিলিয়ন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দুবাই থেকে হবে এর অর্ধেক। অথচ সেই জায়গায় তাঁরা এখন তাঁদের চাকরি সামলাতে পারছেন না। দলে দলে ফিরে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০০৭ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকসংখ্যা ৬৪ লাখ এবং এর ৫৫ লাখই বিদেশি। আর তাঁদের মধ্যে ৩০ লাখের বেশি আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মাণকর্মী ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে নিবন্ধিত। এখানে বাংলাদেশের সংখ্যা সাত লাখ। বলা যায়, দেশের রেমিটেন্সে তাঁদের অবদান উপেক্ষার নয়।
কান টানলে মাথা আসে—এমনি করে অর্থলগ্নিকারী থেকে শুরু করে যে ধাক্কা, তা আঘাত করে নির্মাণকর্মীকে-দেশকে-তাঁর পরিবারকে। দুবাইয়ের যে বৃহত্ প্রকল্প ‘পাম জুমেরা’ খেজুরগাছের মতো ডাল বিস্তার করে আছে, সেটা দুবাই ওয়ার্ল্ডের তৈরি। কী আকর্ষণ এর! হলিউডের তারকা ব্রাড পিট পর্যন্ত বাড়ির বায়না দিয়ে বসে আছেন। এমনিভাবে আরেক প্রকল্প—‘পাম জেবেল আলি’। এতেও ওই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ। লাখ লাখ নির্মাণকর্মীর কাজের সংস্থান করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিক, মিস্ত্রি, বিদ্যুত্কর্মী, যন্ত্রকর্মী—এদের ধরে অনেকের সমাহার। তার ওপর আছে নির্মাণ প্রকৌশলী, উপদেষ্টা প্রকৌশলী, স্থপতি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ আর হিসাববিজ্ঞানী। দুবাই ওয়ার্ল্ডেরও টাকা পেতে অসুবিধা হয়নি। মুক্তহস্তে টাকার জোগান দিয়েছে রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি এবং লয়েডস ব্যাংকিং গোষ্ঠী। দুবাই ওয়ার্ল্ডের অর্থ ও প্রভাব শেষ হওয়ার নয়—এমন ধারণাই বদ্ধমূল সেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যাঁরা এতদিন মুক্তহস্তে টাকা জুগিয়েছেন সংস্থাটিকে। এই সেদিনও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম জানিয়েছিলেন, দুবাই ওয়ার্ল্ড প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলে তার জিম্মা নেবে দুবাই সরকার। সম্প্রতি সেই দুবাইশাহিও বললেন বিনিয়োগকারীদের, দুবাই ওয়ার্ল্ডকে বেশি চাপ না দিতে। কারণটা এমন হতে পারে, কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগসাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তার করতে গিয়ে দুবাই ওয়ার্ল্ড পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি টাকার দেনায় ডুবে গেছে। আবার আবুধাবি সরকারের তরফে ঘোষণা—এ ধার মেটানোর বাধ্যবাধকতা তার নেই। যদিও বা কবে তা হবে অবস্থাবিশেষে। রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রভৃতি লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থা দাঁড়াল আরও জটিল। কারণ, সহসাই আল মাকতুম বলতে শুরু করে দিলেন—দুবাই ওয়ার্ল্ডের করা ঋণ শোধের দায়িত্ব দুবাই ওয়ার্ল্ডেরই, সরকারের নয়। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আবুধাবি সরকার দুবাই কর্তৃপক্ষকে এক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যার ৪৭০ কোটি ডলার ব্যয় হবে দুবাই ওয়ার্ল্ডের ঋণ পরিশোধে।
দুবাই প্রকল্পগুলো এখন থেমে গেছে মঞ্চে কোনো নৃত্যশিল্পীর বরফ হয়ে যাওয়া দৃশ্যের মতোই। এখনো পাম জুমেরার বেশ কিছু অংশ নির্মাণের অধীন। পাম জেবেল আলি করার জন্য কেবল পাথর ফেলা হয়েছে সমুদ্রে। অন্যদিকে সব মিলিয়ে যেসব প্রকল্পের ৫০ শতাংশেরও কাজ হয়নি, তা স্থগিত রাখতে বলেছে দুবাই কর্তৃপক্ষ। আর যেসব প্রকল্পের ৫০ শতাংশ বা তার ওপরে সম্পন্ন হয়েছে, তা চালু রাখতে বলেছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র এটাই—সেসবের অর্থও নেই হাতে এখন। নাখিল যে ইজারা নিয়েছে প্রকল্প করার জন্য, তার ওপর সমর্থন নেই কোনো লগ্নিকারের। গোড়ায় জল না দিলে যে পাতাগুলো ঝরে পড়ে শুকনো হয়ে মর্মর শব্দে, নির্মাণকর্মীদের বেলায় এমন দৃষ্টান্ত লাগসই। এরই বাস্তবতায় ফেরত আসছেন হাজার হাজার নির্মাণকর্মী তাঁর দেশে। কথা হচ্ছে, তাঁদের উপায় কী হবে এখন!
স্বদেশে ফেরত আসা নির্মাণকর্মীদের নিয়ে একটি চিত্রকল্প দাঁড় করা যায়। কেউবা দেশে ফিরে টাকা জোগাড় করে আবার ছুটবেন অন্য কোনোখানে। কিংবা এতদিনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কেউবা শুরু করবেন ছোট কোনো ব্যবসা। কিন্তু এটা সম্ভব হবে না সবার দ্বারা, সে কথা সহজেই বলা যায়। পত্রিকায় প্রকাশ, আগামী জুলাই থেকে সরকার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রমোটিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক থ্রো মাইগ্রেশন’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদেশফেরত শ্রমিকেরা মনোবল ফিরে পাবেন নিঃসন্দেহে। এ ছাড়া সরকারের আছে ৩০০ কোটি টাকার এটি প্রবাসী কল্যাণ তহবিল। এরও সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। আবার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাঁদের সামনে খুলতে পারে নতুন কোনো সম্ভাবনার দ্বার—সে আশাও নিরর্থক নয়।
নিমাই সরকার: প্রকৌশলী, আবুধাবি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে কর্মরত।
No comments