পরিবেশের কান্না শুনি আমার অন্তরে -প্রকৃতি বিনাশ by মোজাফ্ফর আহমদ
মানুষের আদি জীবন ছিল প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের এক সুন্দর চিত্র। প্রকৃতি গাছ থেকে ফল ফেলে দিয়ে আহার জুগিয়েছে, ঝরনার স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জল দিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়েছে, গাছের বাকল দিয়ে গাত্রাবরণ সৃষ্টি করেছে, গাছের ছায়ায় বা পাহাড়ের গুহায় আবাসন দিয়েছে, উত্তাপ দিয়ে শীত নিবারণ করেছে। ঝরে পড়া পাতায় পাথর ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে রান্নার ব্যবহারও শিখিয়েছে এই প্রকৃতি। মাটি দিয়ে পাত্র তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন আকারের পাথর দিয়ে সংরক্ষণের পাত্র তৈরি হয়েছে। মানুষের প্রয়োজনে প্রকৃতি ছিল উদার। নানা রকমের ফুলের সুবাস মনকে প্রফুল্ল করেছে। মানুষকে নীরবে শুধু একটি কথাই প্রকৃতি মিনতি করে বলেছে—কাজে লেগেই আমার সন্তুষ্টি, কিন্তু আমার সহনসীমার বাইরে যদি আমাকে ব্যবহার করতে যাও, তাহলে কিন্তু বিপত্তি আসবে। আজ আমরা সম্ভোগের তাড়নায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
মানুষ তার জ্ঞান ব্যবহার করে প্রকৃতি বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। মাটি কর্ষণ করে ফসল ফলাল। এক মাঠ ছেড়ে ভিন্ন মাঠে গেল। মাটিতে কান পেতে কিছু শোনা হলো না। মাটি বলে, ‘আমার জীবনকে ঊষর করে তুললে আমি মরে যাব। বর্ষার বৃষ্টি, প্লাবনের পলি, শীতের বরফ কিছু সময় তোমার কর্ষণ থেকে আমাকে মুক্তি দেয়। আমার বুক চিরে চিরে তুমি যে ফসল ফলাও, তাতে আমার প্রাণশক্তি আমি নিঃশেষ করে দিই এই আশায় যে আমার প্রকৃতির দেওয়া শক্তি কিছু সময় আকর্ষণের মাধ্যমে আবার আমি ফিরে পাব।’ মানুষের সংখ্যা বাড়ে, মানুষের খাদ্যতালিকায় নানা বৈচিত্র্যের আওতায় আসে এক ফসলের জায়গায় দুই ফসল, তিন ফসলও চাষ হয়। মানুষ মাটির প্রাণশক্তিকে না খুঁজে উর্বরতার খোঁজ করে। মানুষের তৈরি সার আসে, আসে জিন প্রজাতির বীজ, পানির চাহিদা বাড়ে, পোকা তাড়াতে আসে পোকা মারার ওষুধ। প্রকৃতির যে নিজস্ব ভারসাম্য, মানুষ সেখানে আঘাত করে। মানুষের প্রয়োজন ও ভোগবাদিতা প্রকৃতিকে বিপন্ন করে, বিপন্ন করে খরা আসে, নানা প্রজাতির গুল্মলতা হারিয়ে যায়, হারিয়ে যায় পাখি, পোকামাকড়, নানা রকমের প্রাণী। যেহেতু মানুষ তার উন্নয়নের পরিমাপ করে সম্ভোগের মাত্রা দিয়ে, কী হারালাম, কী সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলাম তা দিয়ে নয়; তাই প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের যোজক ধারণা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
নদীতে মাছ তো প্রকৃতির দান। শুধু তো মাছ থাকে না, থাকে অনেক জলজ প্রাণী, গুল্ম। সেচের জন্য যখন স্বল্প প্রবাহের পানি তুলে প্রবাহের মাত্রা কমিয়ে দিই, অথবা বাঁধের মতো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেচ ও মাছ চাষের আনন্দে বিভোর হই, তখনো ভেবে দেখি না, নদীর গতিপ্রবাহের যে ধারা তাকে বাধা দিয়ে বস্তুগত পরিবর্তন কী ক্ষতি করে। বিপন্ন করি প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের জীবন ও বৈচিত্র্য। অথচ সম্ভোগ-পণ্যের সরবরাহ বাড়লেই বিনিয়োগের সার্থকতা আমাদের আনন্দিত করে, উন্নয়ন সার্থক বলে আমরা ধারণা করি। নদীর গতি পরিবর্তন বস্তুগত ক্ষতির যে অভিঘাত সৃষ্টি করে, তাতে মানুষের জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সেটা বুঝতে আমাদের সময় লাগে। নদীর বুকে যখন রাস্তা বানাই, নদীর ধারাকে যখন স্তিমিত বা পরিবর্তিত করি, যখন চর ওঠে আর পাড় ভাঙে তখন রাস্তার সুবিধা আমাদের অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়। নদীর জীবন, নদীর পারের জীবন, নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন—এসবের ক্ষতি আমরা উন্নয়নের নামে অবনয়ন বলে স্বীকৃতি দিই না। মানবজীবনে জলধারার যে অপরিমেয় অবদান, তার হিসাব কিন্তু কখনোই করি না। নদীতে বর্জ্য ফেলি, শিল্পকে বর্জ্য ফেলতে দিই, যান্ত্রিক জলযান থেকে বর্জ্য ফেলি—পানিতে এসবের অপরিমিত ক্ষতির হিসাব না হলে কিছু লোকের জীবনে নানাবিধ বিপর্যয় নেমে আসে।
নদীর মতোই প্রকৃতির একটি সুন্দর বিকাশ পাহাড় ও বনাঞ্চল। বনে নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে আছে নানা গুল্ম, লতা, নানা রকমের পোকামাকড়, নানাবিধ ফুল, কত রকমের পাখি যে বাসা বাঁধে, তা না দেখলে অনুমান করা যায় না। বনাঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে মানুষ একবার অনুভব করেছে, তার অন্তরে সে সুন্দর একটি আর্তি সৃষ্টি না করে পারে না। বন আমাদের অনেক দেয়—বাতাসের মলিনতা শুষে নেয়, মধুর সৃষ্টি এক আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক কর্ম, ঔষধি গাছ তো আছেই; কাঠের সরবরাহ, জ্বালানির সরবরাহ, শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহ বনাঞ্চলই করে থাকে। বনের আর্তি শুধু একটিই—তার নবায়নক্ষমতার বেশি আহরণ করলে ক্রমবৃদ্ধিমান জনসংখ্যার কারণে প্রজন্মান্তরে মানুষ তার সম্পদের উত্স থেকে বঞ্চিত হবে; নরম কাঠ থেকে কাগজ তৈরিতে মণ্ড বানাও, কিন্তু সে বন উজাড় করে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে বিপন্ন কোরো না; ঘরের জন্য আসবাব বানাও, আসবাব বানাতে বন উজাড় করে ফেলো না; বনের প্রাণীরা নির্ভয়ে বিচরণ করে, শিকার করতে গিয়ে তাদের নিঃশঙ্ক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না; নানা গুল্মলতার ব্যবহারে সবার জীবন সমৃদ্ধ হয়, সে সম্ভাবনাকে মেরে ফেলো না; বনাঞ্চল দূষিত করে তোলো, বনকে ধ্বংস করে মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না। বনের মাঝে কান পেতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এমন সব কথা শুনতে পান, যা আমাদের নীতিনির্ধারক রাজনীতিকেরা শুনতে পান না। উন্নয়নের মাত্রা যাঁরা মাপেন, তেমন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদেরাও এসব অনুভব করেন না। সেই সঙ্গে যুক্ত থাকে ব্যবসায়ী মুনাফাকারী মানুষরূপী হায়েনার দল।
আজ নগরায়ণ উন্নয়নের এক মাত্রা বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। নগরের বিস্তৃতি ঘটেছে, নগরে আসছে শিল্প-বাণিজ্য, অর্থ, বিনিয়োগ ও দরিদ্র শ্রমিক। বস্তি যার এক পরিণতি। চাহিদা বাড়ছে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, জীবনযাত্রার মান বাড়াতে নানা ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বাড়ছে। বাড়ছে অপরিকল্পিত আবাসন। সম্ভোগের মাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে শপিং মল, ফাস্টফুডের দোকান, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হোটেল, অফিসসহ নানা স্থাপনা। প্রকৃতি কিন্তু বিপন্ন হয় নির্গত গ্যাসের কারণে। আমরা অপ্রাকৃত জীবনকেই উন্নত জীবন বলে ভাবি। বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি না, কারণ হাঁটার জায়গা নেই, বাতাসে আছে নানা পার্টিকেল ও জীবাণু। প্রকৃতির দেওয়া বিশুদ্ধ খাবার আজ নানা কারণে স্বাস্থ্যসম্মত নয়, অথচ তারই বিপণন চলে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন ও বিপণিবিতানের সহায়তায়। এ কৃত্রিম জীবন নগর ছাড়িয়ে শহরে, শহর ছাড়িয়ে শহরতলিতে, শহরতলি থেকে গ্রামে পৌঁছে যায়। সুস্থ জীবন আজ বিপন্ন।
সারা বিশ্বে আজ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রনায়কেরা বিলাসবহুল আলোচনা সভায় মিলিত হচ্ছেন। উন্নয়নের জন্য যে প্রযুক্তির উদ্ভব হয়েছিল, মানুষের সম্ভোগ মেটাতে যে কৃত্রিম সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করেছিল, তার সবই প্রকৃতিকে দীন করেছে। গত ৫০ বছরে পৃথিবীর মানুষ, বিশেষ করে উন্নত দেশের মানুষ প্রকৃতি থেকে পাওয়া সম্পদ যে পরিমাণ ব্যবহার করেছে ভোগের জন্য, উত্পাদন-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, পুঁজিপণ্য নির্মাণে; এর আগে ১০ হাজার বছরে প্রকৃতির সম্পদ এ মাত্রায় ব্যবহূত হয়নি। উন্নয়নের নামে যত উদ্বাহু নৃত্য আমরা করেছি, তত আমরা আমাদের ভবিষ্যেক বিপন্ন করেছি। বহু নবায়নযোগ্য সম্পদ হারিয়ে গেছে, বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক ফুলের সুবাস আর পাওয়া যাবে না। অনেক ফলের স্বাদ আর আমরা জানব না। অনেক মানুষ প্রকৃতির এমন বিপন্ন অবস্থার কারণে, স্বাস্থ্যগত কারণে আজ ঝুঁকির মুখে, খাদ্যনিরাপত্তা আজ নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জীবনের নিরাপত্তা সম্পদ সীমাবদ্ধ হয়ে প্রতিযোগিতার নামে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে percapita energy use intensity কে ব্যবহার করেছি, তার বাধাবন্ধনহীন নানা ব্যবহার আজ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের যে মাত্রা যোগ করেছে, তাতে ওজোনস্তর পাতলা হয়ে আসছে, ফলে নিরাপদ তাপের উত্স সূর্যালোক আর নিরাপদ নাও থাকতে পারে।
আমরা সংগত কারণে বলছি, এ পাপ তো শিল্পোন্নত দেশের। আবার উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগামীরা দাবি করছে, উন্নয়নের স্বার্থে তাদেরও কার্বন নির্গমনের মাত্রা বেঁধে দেওয়া অনুচিত হবে। আমরা যারা উন্নয়নের নিচু সীমায় আছি তারা বলছি, উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উন্নত দেশগুলো বলছে, নিম্ন কার্বন-প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনিয়োগ দরকার। সে জন্য সময়েরও দরকার। বাতাসের কার্বনের মাত্রা কমাব, কিন্তু কী হারে কত দিনে কমাব তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ডামাডোল সংগঠিত হবে জলবায়ু সম্মেলনে। ৩৫০ পিপিএমের প্রতিশ্রুতি কি পাব? ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য যথেষ্ট অর্থায়ন কি হবে? আমি সন্দিগ্ধবাদী।
আমি আস্থা রাখতে চাই নিয়মিত উদ্বাহু উচ্চারণে। আমি আস্থা রাখতে চাই আমাদের নিজেদের কর্মে। আমরা যেন নদী, খাল-বিল, জলাশয় রক্ষা করি। পানির পরিমাণ ও প্রবাহ বাড়াতে চেষ্টা করি। দূষণমুক্ত জলাশয়কে সম্ভব করে তুলি। এখানে আঞ্চলিক সহায়তা প্রয়োজন। সেখানে যেন টিপাইমুখের মতো স্তুতিময় অবস্থান না নিই। আমরা যেন বনাঞ্চল রক্ষা করি, বনায়ন বৃদ্ধি করি, বনদস্যুদের প্রতিহত করি। ভূমিদস্যুরা আজ তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আমাদের পরিবেশগত যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তা প্রতিহত করে নদীর জমি, জলাশয়ের জমি, প্লাবনভূমি, বনাঞ্চলের জমি, কৃষিজমি রক্ষা করেই পরিকল্পিত নগরায়ণকে সম্ভব করে তুলি। জলাশয়ের মতো মাঠের ওপর ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন ঠেকাতে হবে। মুক্ত ভূমি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। চাষাবাদে পরিবেশবান্ধব কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রযুক্তিবান্ধব-জীববান্ধব প্রযুক্তিকে নয়। সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করে আমাদের উপকূল বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব জীবপ্রকৃতির সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আজ যে লবণাক্ততা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লক্ষণীয়, জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে এনে সেখানে পানিপ্রবাহের প্রকৃতি বদলে দিতে হবে। আর এক ফারাক্কা যেন আমাদের কোনো অঞ্চলকে হুমকিতে না ফেলে, সে জন্য সচেতন হতে হবে। সরকারের গোপন কূটনীতি ও চুক্তি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মরুময়তা রাজশাহী অঞ্চলে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, প্রযুক্তিগতভাবে পরিবেশ উজ্জীবনী কৃষির মাধ্যমে এখানে প্রাকৃতিক পরিবর্তন আনতে হবে। নদীতীর ও মোহনায় ভাঙনের জন্য মানুষের সৃষ্ট কর্মগুলো যেমন ঠেকাতে হবে, তেমনি ভূমিক্ষয় রোধে নদীক্ষয় সম্পর্কে কার্যকরভাবে অগ্রসর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ অঞ্চলের সম্পদ হলো জমি, জল, বন ও জীববৈচিত্র্য। এগুলোকে নিয়েই এখানকার মানুষের জীবন সমৃদ্ধ হয়। উন্নয়নে তাই এসব সম্পদ সংরক্ষণসূচক হিসেবে ব্যবহূত হোক, আর আমাদের নীতিনির্ধারকেরা সচেতন মানুষের উচ্চারণে প্রকৃতি ও পরিবেশবিনাশী যে কর্ম, তা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন, পরিবেশবাদীদের সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
পাখির কলকাকলিতে আর ঘুম ভাঙে না। ভোরের কুয়াশায় নেই স্নিগ্ধ বাতাসের পরশ, আছে ধোঁয়াশায় জীবাণুর ছড়াছড়ি। সারা দিন বসতবাড়িতে জমে ধূলির আস্তরণ। সন্ধ্যায় জ্বলে না জোনাকি, শুনি না ঝিঁঝির ডাক। নদীতে নেই কলতান, স্বচ্ছ প্রবাহ, নৌকার পাল। নদী আজ কলুষিত, নিকষ কালো দূষিত পানিতে মাছ যায় মরে, গুল্ম হয় তিরোহিত: অক্সিজেন নেই পানিতে। জলাধার, জলাশয়ে নেই প্রকৃতির স্বচ্ছ প্রচ্ছায়া, যেখানে পা ডুবিয়ে বউ-ঝিয়ারি নর-নারী পেত প্রশান্তি। আবাসনে নেই প্রকৃতির ছোঁয়া। শিউলি ফোটে না রাতে, শিশিরের শব্দে ছিল তার শয়ান। হাসনাহেনার সৌরভ ভরায় না মন। বনে নেই নানা প্রজাতির গাছ, ফুল, গুল্ম, জীব। সবখানে হায়েনাদের হাত। লোভ-লালসা প্রীতিময় প্রকৃতিকে নিয়ত করেছে বিনাশ। ভাঙনে, প্লাবনে, দূষণে জীবন আজ বিপর্যস্ত/ তাই আমার অঙ্গীকার সৃষ্টিকর্তার নামে/ যারা মানুষ হয়ে মানুষের অধিকার হরণ করে/তাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম/ আমার অঙ্গীকার বিশ্ব নিয়ন্তার নামে/ যারা প্রকৃতির সুন্দর-সুশৃঙ্খল পরম্পরাকে ধ্বংস করে/ সে সমস্ত প্রকৃতিবিনাশী মানুষের সকল কর্মের বিরুদ্ধে/ আমাদের সংগ্রাম চলবে।
মোজাফ্ফর আহমদ: অর্থনীতিবিদ। সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
মানুষ তার জ্ঞান ব্যবহার করে প্রকৃতি বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। মাটি কর্ষণ করে ফসল ফলাল। এক মাঠ ছেড়ে ভিন্ন মাঠে গেল। মাটিতে কান পেতে কিছু শোনা হলো না। মাটি বলে, ‘আমার জীবনকে ঊষর করে তুললে আমি মরে যাব। বর্ষার বৃষ্টি, প্লাবনের পলি, শীতের বরফ কিছু সময় তোমার কর্ষণ থেকে আমাকে মুক্তি দেয়। আমার বুক চিরে চিরে তুমি যে ফসল ফলাও, তাতে আমার প্রাণশক্তি আমি নিঃশেষ করে দিই এই আশায় যে আমার প্রকৃতির দেওয়া শক্তি কিছু সময় আকর্ষণের মাধ্যমে আবার আমি ফিরে পাব।’ মানুষের সংখ্যা বাড়ে, মানুষের খাদ্যতালিকায় নানা বৈচিত্র্যের আওতায় আসে এক ফসলের জায়গায় দুই ফসল, তিন ফসলও চাষ হয়। মানুষ মাটির প্রাণশক্তিকে না খুঁজে উর্বরতার খোঁজ করে। মানুষের তৈরি সার আসে, আসে জিন প্রজাতির বীজ, পানির চাহিদা বাড়ে, পোকা তাড়াতে আসে পোকা মারার ওষুধ। প্রকৃতির যে নিজস্ব ভারসাম্য, মানুষ সেখানে আঘাত করে। মানুষের প্রয়োজন ও ভোগবাদিতা প্রকৃতিকে বিপন্ন করে, বিপন্ন করে খরা আসে, নানা প্রজাতির গুল্মলতা হারিয়ে যায়, হারিয়ে যায় পাখি, পোকামাকড়, নানা রকমের প্রাণী। যেহেতু মানুষ তার উন্নয়নের পরিমাপ করে সম্ভোগের মাত্রা দিয়ে, কী হারালাম, কী সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলাম তা দিয়ে নয়; তাই প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের যোজক ধারণা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
নদীতে মাছ তো প্রকৃতির দান। শুধু তো মাছ থাকে না, থাকে অনেক জলজ প্রাণী, গুল্ম। সেচের জন্য যখন স্বল্প প্রবাহের পানি তুলে প্রবাহের মাত্রা কমিয়ে দিই, অথবা বাঁধের মতো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেচ ও মাছ চাষের আনন্দে বিভোর হই, তখনো ভেবে দেখি না, নদীর গতিপ্রবাহের যে ধারা তাকে বাধা দিয়ে বস্তুগত পরিবর্তন কী ক্ষতি করে। বিপন্ন করি প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের জীবন ও বৈচিত্র্য। অথচ সম্ভোগ-পণ্যের সরবরাহ বাড়লেই বিনিয়োগের সার্থকতা আমাদের আনন্দিত করে, উন্নয়ন সার্থক বলে আমরা ধারণা করি। নদীর গতি পরিবর্তন বস্তুগত ক্ষতির যে অভিঘাত সৃষ্টি করে, তাতে মানুষের জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সেটা বুঝতে আমাদের সময় লাগে। নদীর বুকে যখন রাস্তা বানাই, নদীর ধারাকে যখন স্তিমিত বা পরিবর্তিত করি, যখন চর ওঠে আর পাড় ভাঙে তখন রাস্তার সুবিধা আমাদের অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়। নদীর জীবন, নদীর পারের জীবন, নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন—এসবের ক্ষতি আমরা উন্নয়নের নামে অবনয়ন বলে স্বীকৃতি দিই না। মানবজীবনে জলধারার যে অপরিমেয় অবদান, তার হিসাব কিন্তু কখনোই করি না। নদীতে বর্জ্য ফেলি, শিল্পকে বর্জ্য ফেলতে দিই, যান্ত্রিক জলযান থেকে বর্জ্য ফেলি—পানিতে এসবের অপরিমিত ক্ষতির হিসাব না হলে কিছু লোকের জীবনে নানাবিধ বিপর্যয় নেমে আসে।
নদীর মতোই প্রকৃতির একটি সুন্দর বিকাশ পাহাড় ও বনাঞ্চল। বনে নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে আছে নানা গুল্ম, লতা, নানা রকমের পোকামাকড়, নানাবিধ ফুল, কত রকমের পাখি যে বাসা বাঁধে, তা না দেখলে অনুমান করা যায় না। বনাঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে মানুষ একবার অনুভব করেছে, তার অন্তরে সে সুন্দর একটি আর্তি সৃষ্টি না করে পারে না। বন আমাদের অনেক দেয়—বাতাসের মলিনতা শুষে নেয়, মধুর সৃষ্টি এক আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক কর্ম, ঔষধি গাছ তো আছেই; কাঠের সরবরাহ, জ্বালানির সরবরাহ, শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহ বনাঞ্চলই করে থাকে। বনের আর্তি শুধু একটিই—তার নবায়নক্ষমতার বেশি আহরণ করলে ক্রমবৃদ্ধিমান জনসংখ্যার কারণে প্রজন্মান্তরে মানুষ তার সম্পদের উত্স থেকে বঞ্চিত হবে; নরম কাঠ থেকে কাগজ তৈরিতে মণ্ড বানাও, কিন্তু সে বন উজাড় করে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে বিপন্ন কোরো না; ঘরের জন্য আসবাব বানাও, আসবাব বানাতে বন উজাড় করে ফেলো না; বনের প্রাণীরা নির্ভয়ে বিচরণ করে, শিকার করতে গিয়ে তাদের নিঃশঙ্ক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না; নানা গুল্মলতার ব্যবহারে সবার জীবন সমৃদ্ধ হয়, সে সম্ভাবনাকে মেরে ফেলো না; বনাঞ্চল দূষিত করে তোলো, বনকে ধ্বংস করে মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না। বনের মাঝে কান পেতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এমন সব কথা শুনতে পান, যা আমাদের নীতিনির্ধারক রাজনীতিকেরা শুনতে পান না। উন্নয়নের মাত্রা যাঁরা মাপেন, তেমন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদেরাও এসব অনুভব করেন না। সেই সঙ্গে যুক্ত থাকে ব্যবসায়ী মুনাফাকারী মানুষরূপী হায়েনার দল।
আজ নগরায়ণ উন্নয়নের এক মাত্রা বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। নগরের বিস্তৃতি ঘটেছে, নগরে আসছে শিল্প-বাণিজ্য, অর্থ, বিনিয়োগ ও দরিদ্র শ্রমিক। বস্তি যার এক পরিণতি। চাহিদা বাড়ছে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, জীবনযাত্রার মান বাড়াতে নানা ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বাড়ছে। বাড়ছে অপরিকল্পিত আবাসন। সম্ভোগের মাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে শপিং মল, ফাস্টফুডের দোকান, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হোটেল, অফিসসহ নানা স্থাপনা। প্রকৃতি কিন্তু বিপন্ন হয় নির্গত গ্যাসের কারণে। আমরা অপ্রাকৃত জীবনকেই উন্নত জীবন বলে ভাবি। বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি না, কারণ হাঁটার জায়গা নেই, বাতাসে আছে নানা পার্টিকেল ও জীবাণু। প্রকৃতির দেওয়া বিশুদ্ধ খাবার আজ নানা কারণে স্বাস্থ্যসম্মত নয়, অথচ তারই বিপণন চলে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন ও বিপণিবিতানের সহায়তায়। এ কৃত্রিম জীবন নগর ছাড়িয়ে শহরে, শহর ছাড়িয়ে শহরতলিতে, শহরতলি থেকে গ্রামে পৌঁছে যায়। সুস্থ জীবন আজ বিপন্ন।
সারা বিশ্বে আজ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রনায়কেরা বিলাসবহুল আলোচনা সভায় মিলিত হচ্ছেন। উন্নয়নের জন্য যে প্রযুক্তির উদ্ভব হয়েছিল, মানুষের সম্ভোগ মেটাতে যে কৃত্রিম সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করেছিল, তার সবই প্রকৃতিকে দীন করেছে। গত ৫০ বছরে পৃথিবীর মানুষ, বিশেষ করে উন্নত দেশের মানুষ প্রকৃতি থেকে পাওয়া সম্পদ যে পরিমাণ ব্যবহার করেছে ভোগের জন্য, উত্পাদন-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, পুঁজিপণ্য নির্মাণে; এর আগে ১০ হাজার বছরে প্রকৃতির সম্পদ এ মাত্রায় ব্যবহূত হয়নি। উন্নয়নের নামে যত উদ্বাহু নৃত্য আমরা করেছি, তত আমরা আমাদের ভবিষ্যেক বিপন্ন করেছি। বহু নবায়নযোগ্য সম্পদ হারিয়ে গেছে, বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক ফুলের সুবাস আর পাওয়া যাবে না। অনেক ফলের স্বাদ আর আমরা জানব না। অনেক মানুষ প্রকৃতির এমন বিপন্ন অবস্থার কারণে, স্বাস্থ্যগত কারণে আজ ঝুঁকির মুখে, খাদ্যনিরাপত্তা আজ নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জীবনের নিরাপত্তা সম্পদ সীমাবদ্ধ হয়ে প্রতিযোগিতার নামে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে percapita energy use intensity কে ব্যবহার করেছি, তার বাধাবন্ধনহীন নানা ব্যবহার আজ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের যে মাত্রা যোগ করেছে, তাতে ওজোনস্তর পাতলা হয়ে আসছে, ফলে নিরাপদ তাপের উত্স সূর্যালোক আর নিরাপদ নাও থাকতে পারে।
আমরা সংগত কারণে বলছি, এ পাপ তো শিল্পোন্নত দেশের। আবার উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগামীরা দাবি করছে, উন্নয়নের স্বার্থে তাদেরও কার্বন নির্গমনের মাত্রা বেঁধে দেওয়া অনুচিত হবে। আমরা যারা উন্নয়নের নিচু সীমায় আছি তারা বলছি, উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উন্নত দেশগুলো বলছে, নিম্ন কার্বন-প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনিয়োগ দরকার। সে জন্য সময়েরও দরকার। বাতাসের কার্বনের মাত্রা কমাব, কিন্তু কী হারে কত দিনে কমাব তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ডামাডোল সংগঠিত হবে জলবায়ু সম্মেলনে। ৩৫০ পিপিএমের প্রতিশ্রুতি কি পাব? ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য যথেষ্ট অর্থায়ন কি হবে? আমি সন্দিগ্ধবাদী।
আমি আস্থা রাখতে চাই নিয়মিত উদ্বাহু উচ্চারণে। আমি আস্থা রাখতে চাই আমাদের নিজেদের কর্মে। আমরা যেন নদী, খাল-বিল, জলাশয় রক্ষা করি। পানির পরিমাণ ও প্রবাহ বাড়াতে চেষ্টা করি। দূষণমুক্ত জলাশয়কে সম্ভব করে তুলি। এখানে আঞ্চলিক সহায়তা প্রয়োজন। সেখানে যেন টিপাইমুখের মতো স্তুতিময় অবস্থান না নিই। আমরা যেন বনাঞ্চল রক্ষা করি, বনায়ন বৃদ্ধি করি, বনদস্যুদের প্রতিহত করি। ভূমিদস্যুরা আজ তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আমাদের পরিবেশগত যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তা প্রতিহত করে নদীর জমি, জলাশয়ের জমি, প্লাবনভূমি, বনাঞ্চলের জমি, কৃষিজমি রক্ষা করেই পরিকল্পিত নগরায়ণকে সম্ভব করে তুলি। জলাশয়ের মতো মাঠের ওপর ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন ঠেকাতে হবে। মুক্ত ভূমি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। চাষাবাদে পরিবেশবান্ধব কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রযুক্তিবান্ধব-জীববান্ধব প্রযুক্তিকে নয়। সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করে আমাদের উপকূল বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব জীবপ্রকৃতির সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আজ যে লবণাক্ততা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লক্ষণীয়, জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে এনে সেখানে পানিপ্রবাহের প্রকৃতি বদলে দিতে হবে। আর এক ফারাক্কা যেন আমাদের কোনো অঞ্চলকে হুমকিতে না ফেলে, সে জন্য সচেতন হতে হবে। সরকারের গোপন কূটনীতি ও চুক্তি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মরুময়তা রাজশাহী অঞ্চলে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, প্রযুক্তিগতভাবে পরিবেশ উজ্জীবনী কৃষির মাধ্যমে এখানে প্রাকৃতিক পরিবর্তন আনতে হবে। নদীতীর ও মোহনায় ভাঙনের জন্য মানুষের সৃষ্ট কর্মগুলো যেমন ঠেকাতে হবে, তেমনি ভূমিক্ষয় রোধে নদীক্ষয় সম্পর্কে কার্যকরভাবে অগ্রসর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ অঞ্চলের সম্পদ হলো জমি, জল, বন ও জীববৈচিত্র্য। এগুলোকে নিয়েই এখানকার মানুষের জীবন সমৃদ্ধ হয়। উন্নয়নে তাই এসব সম্পদ সংরক্ষণসূচক হিসেবে ব্যবহূত হোক, আর আমাদের নীতিনির্ধারকেরা সচেতন মানুষের উচ্চারণে প্রকৃতি ও পরিবেশবিনাশী যে কর্ম, তা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন, পরিবেশবাদীদের সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
পাখির কলকাকলিতে আর ঘুম ভাঙে না। ভোরের কুয়াশায় নেই স্নিগ্ধ বাতাসের পরশ, আছে ধোঁয়াশায় জীবাণুর ছড়াছড়ি। সারা দিন বসতবাড়িতে জমে ধূলির আস্তরণ। সন্ধ্যায় জ্বলে না জোনাকি, শুনি না ঝিঁঝির ডাক। নদীতে নেই কলতান, স্বচ্ছ প্রবাহ, নৌকার পাল। নদী আজ কলুষিত, নিকষ কালো দূষিত পানিতে মাছ যায় মরে, গুল্ম হয় তিরোহিত: অক্সিজেন নেই পানিতে। জলাধার, জলাশয়ে নেই প্রকৃতির স্বচ্ছ প্রচ্ছায়া, যেখানে পা ডুবিয়ে বউ-ঝিয়ারি নর-নারী পেত প্রশান্তি। আবাসনে নেই প্রকৃতির ছোঁয়া। শিউলি ফোটে না রাতে, শিশিরের শব্দে ছিল তার শয়ান। হাসনাহেনার সৌরভ ভরায় না মন। বনে নেই নানা প্রজাতির গাছ, ফুল, গুল্ম, জীব। সবখানে হায়েনাদের হাত। লোভ-লালসা প্রীতিময় প্রকৃতিকে নিয়ত করেছে বিনাশ। ভাঙনে, প্লাবনে, দূষণে জীবন আজ বিপর্যস্ত/ তাই আমার অঙ্গীকার সৃষ্টিকর্তার নামে/ যারা মানুষ হয়ে মানুষের অধিকার হরণ করে/তাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম/ আমার অঙ্গীকার বিশ্ব নিয়ন্তার নামে/ যারা প্রকৃতির সুন্দর-সুশৃঙ্খল পরম্পরাকে ধ্বংস করে/ সে সমস্ত প্রকৃতিবিনাশী মানুষের সকল কর্মের বিরুদ্ধে/ আমাদের সংগ্রাম চলবে।
মোজাফ্ফর আহমদ: অর্থনীতিবিদ। সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
No comments