বাংলাদেশে বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি, বাড়ছে ঋণের বোঝা by শফিক রহমান
বিদেশী
অর্থায়নে বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে ব্যয় বেড়ে
যাচ্ছে। এতে বাড়ছে দেশটির ঋণের বোঝা। কোন কোন ক্ষেত্রে চার বছর মেয়াদী
প্রকল্প ৮ বছর পার করেও অগ্রগতি হয়েছে দশ শতাংশেরও কম। এ প্রক্রিয়ায়
প্রকল্পগুলোর শুধু ব্যয়ই বাড়ছে না, কস্ট অব বেনিফিট কমছে বলে অভিমত নীতি
গবেষকদের। তারা এর পেছনে ব্যবস্থাপনাগত অদক্ষতাকে দায়ি করছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ এবং টঙ্গী জয়দেবপুর ডাবল ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্পটি ধিরগতির প্রকল্পগুলোর একটি অন্যতম নজির। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-১) ঋণচুক্তির আওতায় ২০১২ সালের জুনে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সাত বছর শেষে এর বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ।
২০১০ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম ১০০ কোটি ডলারের এলওসি চুক্তি হয়। পরে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। ওই এলওসি-১ এর আওতায় ২০১১ সালের জুনে হাতে নেয়া খুলনা-শাহবাজপুর রেল লাইন পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদও আগামী মাসে (জুলাই, ২০১৯) শেষ হচ্ছে। কিন্তু আট বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।
এলওসি-১ এর আওতায় প্রায় একই সময়ে হাতে নেয়া খুলনা-মংলা বন্দর রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। সে হিসেবে হাতে আছে মাত্র এক বছর। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ শতাংশ।
সংখ্যার বিচারে এলওসি-১ এর ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলেও আকারের দিক দিয়ে বড় তিনটির শিকি ভাগও শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত নয় বছরে এলওসির-১ এর ৮৬ কোটি ডলারের মাত্র ৫৫ শতাংশ অর্থ ছাড় হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বিশেষ করে এলওসি-১ এর আওতায় ২০১৩ সালে ভারত থেকে ২৯০টি দোতলা বাস, ৮০টি একতলা এসি বাস এবং ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস (জোড়া বাস) কেনা হয়। মাত্র ছয় বছরের মাথায় এসে জানা যাচ্ছে ওই ২৯০টি দোতলা বাসের মধ্যে ৭টি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, ৪টিকে মেরামতের অযোগ্য (বিইআর) ঘোষণা করা হয়েছে, ১৪টি ভারী মেরামতের জন্য কারখানায় রয়েছে। কোন মতে সচল আছে ২৬৪টি।
একতলা এসি বাসগুলোর মধ্যেও ১টিকে মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং ৯টিকে ভারী রিপেয়ারের জন্য কারখানায় পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া জোড়া বাসগুলোর আয়ু ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু দুই, তিন বছরেই নড়বড়ে হয়ে গেছে বাসগুলো। বর্তমানে ৫টি বাস ভারী মেরামতের জন্য কারখানায় রয়েছে, আন্দোলনের সময় আগুনে পোড়ানো হয়েছে ২টি এবং কোন মতে চলছে ৪৩টি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে শুনছি সড়কে ২৫/৩০ বছরের পুরনো বাস চলছে। কিন্তু কোনভাবেই সেগুলোকে সড়কে নামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ, বিআরটিসি’র ২০১৩ সালে কেনা বাসগুলো ২/৩ বছরের মাথায়ই লক্কর-ঝক্কর হয়ে গেছে।
এছাড়া এলওসি-১ এর আওতায় রেলের ইঞ্জিন ও বগি এবং মোংলা বন্দরের জন্য ড্রেজার কেনা হয়েছে। ভৈরবে মেঘনা নদীতে এবং আখাউড়ায় তিতাস নদে দ্বিতীয় রেলসেতু; আশুগঞ্জ-আখাউড়া রেলপথে সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
তবে উদ্বোধনের আগেই ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ভৈরবের মেঘনা নদীতে নির্মিত দ্বিতীয় রেল সেতুর ৮, ৯ ও ১০ নম্বর পিলারে ফাটল ধরে। এর মধ্যে ৯ নম্বর পিলারে ফাটলের পরিমাণ অনেক বেশি- এমন খবর জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও পরে সেতুর পিলার তিনটি পরিদর্শন শেষে রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চলীয়) ম্যানেজার ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই বলেন, ‘সেতুর মূল পিলারে কোনও ধরনের সমস্যা নেই। সেতুর পিলারের বাইরের বাড়তি অংশে কংক্রিটে ফাটা দাগ আছে। এগুলো কার্গো জাহাজের ধাক্কা লেগে হতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই প্রকৌশলীদের কোনও ধরনের মতামত ছাড়াই বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব খবর উদ্দেশ্যমূলক।’
২০১৩ সালে ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইরকন এবং এফকনস যৌথভাবে ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাত মিটার প্রস্থ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৩ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয় এবং ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
দ্বিতীয় এলওসি
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় ঋণচুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এ ঋণের আওতায় ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। তবে এ পর্যন্ত ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক।
এলওসি-২ এর আওতায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক চার লেনে উন্নীত করা; সৈয়দপুরে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ নির্মাণ; খুলনা-দর্শনা ডাবল রেলপথ নির্মাণ; পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলপথকে ডুয়েল গেজ করা; বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ; খুলনার মোংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারতীয় অর্থনৈতিক জোন স্থাপন; সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা, ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ; ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।
এসব প্রকল্পের মধ্যে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া রেলওয়ের তিনটি প্রকল্পের বিশেষ কোন অগ্রগতির তথ্য দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আশুগঞ্জে আভ্যন্তরিন নৌবন্দর নির্মান প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি প্রি-একনেক সভায় উপস্থাপিত হয়েছে।
এছাড়া ভারত সরকারের অর্থায়নে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া আখাউড়া-আগরতলা (বাংলাদেশ অংশ) ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ২৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আখাউড়া-আগরতলা (বাংলাদেশ অংশ) ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পসহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি (২য় ব্লক) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণে ১৯৬৫ সালের আগে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদের আন্তর্দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে।’
তৃতীয় এলওসি
২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে তৃতীয় এলওসিতে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়। তৃতীয় এলওসির অর্থ দিয়ে ১৬টি প্রকল্প করার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৮-২০২২ সাল মেয়াদী ওই প্রকল্পটি হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফেসিলিটিস অবকাঠামো উন্নয়ন।
এদিকে এলওসির আওতার প্রকল্পগুলোর কেন বিলম্ব হচ্ছে তার সার্বিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন নিয়ে গত ৪ মার্চ ইআরডি ও ভারতীয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকার নেতৃত্বে বৈঠকে প্রকল্প বাছাই, অনুমোদন, কার্যাদেশ, অর্থ ছাড়ের কোথায় সমস্যা হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে জাহিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, নিজেদের হাতে থাকা প্রকল্পসংক্রান্ত কাজ শেষ করতে উভয় পক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। ফলে প্রকল্পের অনুমোদন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
ঝুলে আছে চীনের প্রকল্পও
এদিকে, পাঁচ দিনের সফরে রোববার (১ জুলাই) চীন গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি দেশের উন্নয়নে আরো বেশি করে সহায়তা চাইবেন বলে শুক্রবার (২৮ জুন) এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন জানিয়েছেন।
কিন্তু চীনের অর্থায়নে ইতোপূর্বে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়নের ‘ধীরগতি সমস্যা’ কাঠিয়ে উঠতে পারছে না।
চীনের অর্থায়নে ২০১৫ সালে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ সমাপ্তির বছরে এসে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ২৩ শতাংশ। একই সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা পানিশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধিনে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন ডেভলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক (ফেস-৩) এর অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ এবং একই বিভাগের অধীনে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ফোর টিয়ার ডাটা সেন্টারটি পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য ছয়টি জাহাজ কেনার প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা ব্রীজ রেল লিংক প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে হাতে নেয়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পটির প্রাথমিক মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সাল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। যার বর্তমান অগ্রগতি ৩২ শতাংশ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশীদ।
প্রকল্প বাস্তবায়নের এই ধীরগতির জন্য তিনটি কারণকে নির্দিষ্ট করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি পর্বেই বড় একটা সময় কেটে যায়। এরপর প্রস্তুতির জন্য যে দক্ষ জনবল দরকার সেটার ঘাটতি রয়েছে। কাজটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে সমন্বয় দরকার সেটারও ঘাটতি রয়েছে।
এর সঙ্গে ‘ম্যনেজিয়াল ইনইফিসিয়েন্সি’র কথা যুক্ত করেছেন রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক নির্বাহী পরিচালক্ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি। তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে কস্ট ওভারকাম, টাইম ওভারকাম কোনটাই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছি না। এটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
একই সঙ্গে প্রকল্পের শর্তগুলোকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ভারত ও চীনের প্রায় সবগুলো প্রকল্পেরই কেনা-কাটা এবং জনবল নিয়োগ সবকিছুই ওই দেশদুটি থেকে নিতে হয়। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতা যখন থাকেনা তখন গ্রহীতা দেশের স্বার্থও সুরক্ষা হয় না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা আন্দোলন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রথমত কথা হচ্ছে প্রকল্পগুলো অস্বচ্ছতায় ভরা। তারপর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। দেরি হলেতো ভারত বা চীনের কোন ক্ষতি নেই। তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে, ঋণ এবং সুদের পরিমাণ বাড়ছে। বিপরীতে ঋণের বোঝা বাড়ছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ এবং টঙ্গী জয়দেবপুর ডাবল ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্পটি ধিরগতির প্রকল্পগুলোর একটি অন্যতম নজির। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-১) ঋণচুক্তির আওতায় ২০১২ সালের জুনে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সাত বছর শেষে এর বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ।
২০১০ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম ১০০ কোটি ডলারের এলওসি চুক্তি হয়। পরে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। ওই এলওসি-১ এর আওতায় ২০১১ সালের জুনে হাতে নেয়া খুলনা-শাহবাজপুর রেল লাইন পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদও আগামী মাসে (জুলাই, ২০১৯) শেষ হচ্ছে। কিন্তু আট বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।
এলওসি-১ এর আওতায় প্রায় একই সময়ে হাতে নেয়া খুলনা-মংলা বন্দর রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। সে হিসেবে হাতে আছে মাত্র এক বছর। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ শতাংশ।
সংখ্যার বিচারে এলওসি-১ এর ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলেও আকারের দিক দিয়ে বড় তিনটির শিকি ভাগও শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত নয় বছরে এলওসির-১ এর ৮৬ কোটি ডলারের মাত্র ৫৫ শতাংশ অর্থ ছাড় হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বিশেষ করে এলওসি-১ এর আওতায় ২০১৩ সালে ভারত থেকে ২৯০টি দোতলা বাস, ৮০টি একতলা এসি বাস এবং ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস (জোড়া বাস) কেনা হয়। মাত্র ছয় বছরের মাথায় এসে জানা যাচ্ছে ওই ২৯০টি দোতলা বাসের মধ্যে ৭টি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, ৪টিকে মেরামতের অযোগ্য (বিইআর) ঘোষণা করা হয়েছে, ১৪টি ভারী মেরামতের জন্য কারখানায় রয়েছে। কোন মতে সচল আছে ২৬৪টি।
একতলা এসি বাসগুলোর মধ্যেও ১টিকে মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং ৯টিকে ভারী রিপেয়ারের জন্য কারখানায় পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া জোড়া বাসগুলোর আয়ু ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু দুই, তিন বছরেই নড়বড়ে হয়ে গেছে বাসগুলো। বর্তমানে ৫টি বাস ভারী মেরামতের জন্য কারখানায় রয়েছে, আন্দোলনের সময় আগুনে পোড়ানো হয়েছে ২টি এবং কোন মতে চলছে ৪৩টি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে শুনছি সড়কে ২৫/৩০ বছরের পুরনো বাস চলছে। কিন্তু কোনভাবেই সেগুলোকে সড়কে নামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ, বিআরটিসি’র ২০১৩ সালে কেনা বাসগুলো ২/৩ বছরের মাথায়ই লক্কর-ঝক্কর হয়ে গেছে।
এছাড়া এলওসি-১ এর আওতায় রেলের ইঞ্জিন ও বগি এবং মোংলা বন্দরের জন্য ড্রেজার কেনা হয়েছে। ভৈরবে মেঘনা নদীতে এবং আখাউড়ায় তিতাস নদে দ্বিতীয় রেলসেতু; আশুগঞ্জ-আখাউড়া রেলপথে সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
তবে উদ্বোধনের আগেই ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ভৈরবের মেঘনা নদীতে নির্মিত দ্বিতীয় রেল সেতুর ৮, ৯ ও ১০ নম্বর পিলারে ফাটল ধরে। এর মধ্যে ৯ নম্বর পিলারে ফাটলের পরিমাণ অনেক বেশি- এমন খবর জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও পরে সেতুর পিলার তিনটি পরিদর্শন শেষে রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চলীয়) ম্যানেজার ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই বলেন, ‘সেতুর মূল পিলারে কোনও ধরনের সমস্যা নেই। সেতুর পিলারের বাইরের বাড়তি অংশে কংক্রিটে ফাটা দাগ আছে। এগুলো কার্গো জাহাজের ধাক্কা লেগে হতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই প্রকৌশলীদের কোনও ধরনের মতামত ছাড়াই বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব খবর উদ্দেশ্যমূলক।’
২০১৩ সালে ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইরকন এবং এফকনস যৌথভাবে ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাত মিটার প্রস্থ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৩ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয় এবং ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
দ্বিতীয় এলওসি
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় ঋণচুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এ ঋণের আওতায় ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। তবে এ পর্যন্ত ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক।
এলওসি-২ এর আওতায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক চার লেনে উন্নীত করা; সৈয়দপুরে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ নির্মাণ; খুলনা-দর্শনা ডাবল রেলপথ নির্মাণ; পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলপথকে ডুয়েল গেজ করা; বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ; খুলনার মোংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারতীয় অর্থনৈতিক জোন স্থাপন; সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা, ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ; ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।
এসব প্রকল্পের মধ্যে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া রেলওয়ের তিনটি প্রকল্পের বিশেষ কোন অগ্রগতির তথ্য দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আশুগঞ্জে আভ্যন্তরিন নৌবন্দর নির্মান প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি প্রি-একনেক সভায় উপস্থাপিত হয়েছে।
এছাড়া ভারত সরকারের অর্থায়নে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া আখাউড়া-আগরতলা (বাংলাদেশ অংশ) ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ২৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আখাউড়া-আগরতলা (বাংলাদেশ অংশ) ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পসহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি (২য় ব্লক) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণে ১৯৬৫ সালের আগে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদের আন্তর্দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে।’
তৃতীয় এলওসি
২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে তৃতীয় এলওসিতে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়। তৃতীয় এলওসির অর্থ দিয়ে ১৬টি প্রকল্প করার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৮-২০২২ সাল মেয়াদী ওই প্রকল্পটি হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফেসিলিটিস অবকাঠামো উন্নয়ন।
এদিকে এলওসির আওতার প্রকল্পগুলোর কেন বিলম্ব হচ্ছে তার সার্বিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন নিয়ে গত ৪ মার্চ ইআরডি ও ভারতীয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকার নেতৃত্বে বৈঠকে প্রকল্প বাছাই, অনুমোদন, কার্যাদেশ, অর্থ ছাড়ের কোথায় সমস্যা হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে জাহিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, নিজেদের হাতে থাকা প্রকল্পসংক্রান্ত কাজ শেষ করতে উভয় পক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। ফলে প্রকল্পের অনুমোদন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
ঝুলে আছে চীনের প্রকল্পও
এদিকে, পাঁচ দিনের সফরে রোববার (১ জুলাই) চীন গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি দেশের উন্নয়নে আরো বেশি করে সহায়তা চাইবেন বলে শুক্রবার (২৮ জুন) এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন জানিয়েছেন।
কিন্তু চীনের অর্থায়নে ইতোপূর্বে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়নের ‘ধীরগতি সমস্যা’ কাঠিয়ে উঠতে পারছে না।
চীনের অর্থায়নে ২০১৫ সালে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ সমাপ্তির বছরে এসে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ২৩ শতাংশ। একই সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা পানিশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধিনে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন ডেভলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক (ফেস-৩) এর অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ এবং একই বিভাগের অধীনে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ফোর টিয়ার ডাটা সেন্টারটি পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য ছয়টি জাহাজ কেনার প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা ব্রীজ রেল লিংক প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে হাতে নেয়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পটির প্রাথমিক মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সাল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। যার বর্তমান অগ্রগতি ৩২ শতাংশ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশীদ।
প্রকল্প বাস্তবায়নের এই ধীরগতির জন্য তিনটি কারণকে নির্দিষ্ট করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি পর্বেই বড় একটা সময় কেটে যায়। এরপর প্রস্তুতির জন্য যে দক্ষ জনবল দরকার সেটার ঘাটতি রয়েছে। কাজটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে সমন্বয় দরকার সেটারও ঘাটতি রয়েছে।
এর সঙ্গে ‘ম্যনেজিয়াল ইনইফিসিয়েন্সি’র কথা যুক্ত করেছেন রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক নির্বাহী পরিচালক্ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি। তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে কস্ট ওভারকাম, টাইম ওভারকাম কোনটাই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছি না। এটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
একই সঙ্গে প্রকল্পের শর্তগুলোকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ভারত ও চীনের প্রায় সবগুলো প্রকল্পেরই কেনা-কাটা এবং জনবল নিয়োগ সবকিছুই ওই দেশদুটি থেকে নিতে হয়। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতা যখন থাকেনা তখন গ্রহীতা দেশের স্বার্থও সুরক্ষা হয় না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা আন্দোলন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রথমত কথা হচ্ছে প্রকল্পগুলো অস্বচ্ছতায় ভরা। তারপর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। দেরি হলেতো ভারত বা চীনের কোন ক্ষতি নেই। তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে, ঋণ এবং সুদের পরিমাণ বাড়ছে। বিপরীতে ঋণের বোঝা বাড়ছে বাংলাদেশের।
No comments