বেইংজিংয়ের শক্তির খেলার প্রতীক, শ্রীলংকার পতাকা উড়িয়ে কলম্বোতে ভিড়লো চীনা ফ্রিগেট by লরা ঝাউ
চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মিকে প্রায় সিকি শতাব্দি ধরে সেবা দিয়ে আসছে এ
ধরনের একটি চীনা যুদ্ধজাহাজ গত ৮ জুলাই সোমবার কলম্বোতে নোঙর করেছে। চীন ও
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বহিপ্রকাশ হিসেবে এটাকে
দেখা হচ্ছে।
০৫৩ শ্রেণীর এই ফ্রিগেটটি পিএলএ নেভিতে কমিশনপ্রাপ্ত হয় ১৯৯৪ সালে। গত
মাসে সাংহাই ডকইয়ার্ডে জাহাজটিকে শ্রীলংকান নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
২৩০০ টনের এই জাহাজটি শ্রীলংকার আশেপাশে টহল ও অনুসন্ধানী মিশনে যোগ দেবে
বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা শ্রীলংকাকে নৌ নিরাপত্তা ও অনুসন্ধান ও উদ্ধার
অভিযানে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে শ্রীলংকা সরকার।
গত মার্চে ৯২ নাবিক ও ১৮ কর্মকর্তাকে নিয়ে ১১২ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি চীনে প্রশিক্ষণের জন্য যায়।
দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে প্রভাব বৃদ্ধির নমুনা হিসেবে এই জাহাজটি উপহার দিয়েছে
বেইজিং। শ্রীলংকার অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে, চীন একই সাথে
দেশটিতে অবকাঠামো প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অর্থায়নকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা দুই দিন আগে বলেছেন যে, তিনি
তার সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমন কোন সামরিক চুক্তি করতে দিবেন না,
যার মাধ্যমে দ্বীপে বন্দর সুবিধা পাবে যুক্তরাষ্ট্র। তার ওই মন্তব্যের দুই
দিন পরে চীনা ফ্রিগেটটি কলম্বোতে আসলো।
গত ৬ জুলাই শনিবার এক সমাবেশে সিরিসেনা বলেন, স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্টের কারণে শ্রীলংকার স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।
কলম্বো পেজ সংবাদ পোর্টাল সিরিসেনাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, তিনি বলেছেন
যে, “কিছু বিদেশী শক্তি শ্রীলংকাকে তাদের ঘাঁটিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।
কিন্তু দেশের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কোন চুক্তি আমি হতে দেবো না”। তবে
সিরিসেনা বিদেশী ওই শক্তির নাম উল্লেখ করেননি।
সিরিসেনা বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি
করতে পারে, এ ধরনের কোন বিদেশী চুক্তি আমার শাসনামলে আমি হতে দেবো না”।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে সিরিসেনার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন ও কলম্বো এখন চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা করছে। ২০০৭ সালের
অ্যাকুইজিশান অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট চুক্তির অধীনে মার্কিন
সেনা ও ঠিকাদাররা যে সুবিধা পেয়েছিল, এই চুক্তির অধীনে তার চেয়ে অনেক বেশি
বন্দর সুবিধার কথা বলা হয়েছে। শ্রীলংকার মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ
তথ্য উঠে এসেছে।
এই সব আলোচনা এবং সিরিসেনার বিবৃতির মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি উঠে এসেছে,
সেটা হলো ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যে প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে।
গত বছর, ওয়াশিংটন শ্রীলংকার নৌ নিরাপত্তার উন্নয়নের জন্য ‘ফরেন মিলিটারি
ফাইনান্সিং’ হিসেবে ৩৯ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেয়। অন্যদিকে বেল্ট অ্যান্ড
রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে দ্বীপ রাষ্ট্রটির সাথে কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়ন করে
চীন। বহু বিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের
সাথে ১২০টিরও বেশি দেশের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের অফিসের সূত্রকে উদ্ধৃত করে জেনস ডিফেন্স উইকলি
জানিয়েছে যে, মে মাসে সিরিসেনা যে বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন, সেখানে নিরাপত্তা
প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াও জঙ্গিবরোধী নজরদারি সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য
কলম্বোকে ১৪ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ২১ এপ্রিলের ইস্টার
হামলার পরে ওই সফরে যান সিরিসেনা। ওই হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়
এবং আইসিস ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
No comments