একজন মায়ের অসহায়ত্ব, ডাক্তারদের অবহেলা ও একটি শিশুর মৃত্যু! by এম. সোলায়মান
লাস্ট আপডেত- ২৩ জুলাই ২০১৯: ঘটনাটি
ছিল রোববার। জাহেরা খাতুন ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে চিকিৎসার
জন্য এসেছেন মহাখালী জলাতঙ্ক হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত
ডাক্তার তার ছেলেকে ভর্তি না করিয়ে খারাপ ব্যবহার করে দূর দূর করে তাড়িয়ে
দিয়েছেন। পরে ছেলেকে নিয়ে মহাখালী কাঁচা বাজারের সামনে বসে আহাজারি
করেছিলেন ওই মহিলা, তাকে ঘিরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে তার
অসহায়ত্ব উপভোগ করছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না।
আমিও ব্যাপারটা এড়িয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে চলে যাই কিন্তু হঠাৎ মনে হলো একটু পিছনে গিয়ে দেখে আসি এখানে এত মানুষের ভিড় কেনো। একটি অসহায় মহিলা ছেলেকে নিয়ে চিৎকার করছে। পাশেই ছেলের নানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
ঘটনাটি দেখে আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে তাদের? তারা বললেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার আমার ছেলেকে ভর্তি না করিয়ে বললেন, আপনার ছেলের জলাতঙ্ক হয়েছে, আর মাত্র ২৩-২৪ ঘন্টা বাচঁতে পারে, এখানে ভর্তি না করিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে নিয়ে যান। তখন আমরা নামতে না চাইলে হাসপাতালের লোক আমারদের জোর করে বেড় করে দেয়।’
জাহেরা খাতুন আরও বলেন, আমরা এত রাতে এখন কোথায় যাব? আমার ছেলের কি হবে?
আমি তাদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। রোগী যতই সিরিয়াস হোক না কেনো একজন ডাক্তার কোনো ভাবেই রোগীর অভিভাবকের সঙ্গে এমন করে কথা বলতে পারেন না। ওই হাসপাতালটা মূলত এসব কেন্দ্রিক রোগের জন্যই সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে এভাবে হাসপাতাল থেকে অপমান করে বের করে দিতে পারেন না। ওই ডাক্তার যত সহজে একজন মায়ের সামনে বলতে পেরেছেন তার ছেলেকে আর বাচাঁনো সম্ভব নয় সেটা একজন মায়ের পক্ষে সহ্য করাও এত সহজ ব্যাপার নয়।
পরে তাদের বললাম আপনারা আমার সঙ্গে সেই হাসপাতালে চলেন দেখি কে আপনাদের ভর্তি করাবে না...! তাদের আশ্বস্থ্য করে আমার সঙ্গে ফের ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন রাত ১১.৩০ মিনিট। হাসপাতালে গিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টা তারা অন্যভাবে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে আমার হস্তক্ষেপে ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার সকালে ওই ছেলের অবস্থা আরও অবনতি হলে তাকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওহনা হন মা। কিন্তু পথিমধ্যে মায়ের কোল ছেরে চির বিদায় নিয়ে যান ছেলেটি। খবরটা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি রাতে যখন ছেলেটির পাশে ছিলাম তখন ছেলেটিকে বার বার তার মাকে বলতে শুনেছি “তোরা আমায় বাড়ি নিয়ে চল, হাসপাতালে রেখে আমায় মেরে ফেলিস না।” আর ছেলেটির মা হাউ মাউ করে কেঁদে বলেছিলেন বাবা তোরে আমি কোথাও যেতে দিব না বলে বুকে চেপে ধরেছিল। সেই দৃশ্যটির কথা আমি ভুলতে পারছি না।
আমরা জানি জলাতঙ্ক রোগ হলে মানুষকে আর বাচাঁনো সম্ভব নয় এই রোগের মৃত্যু শতভাগ নিশ্চিত কিন্তু একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক একজন অসহায় মায়ের সঙ্গে তার ছেলের মৃত্যুর কথা হঠাৎ জানালে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা বোধহয় ওই ডাক্তার আপা জানেন না।
স্বামী হারা জাহেরা খাতুনের একমাত্র ভরসা ছিল তার একমাত্র ছেলে। কিন্তু পারিবারিক অসচেতনতা ও আর্থিক সংকটের কারণে আজ তার ছেলেকে জীবন দিতে হলো। একা হয়ে গেলো সে।
গত রোজার ঈদে তার ছেলেকে কুকুরে কামড় দিয়েছিল কিন্তু তখন তারা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে কবিরাজের মাধ্যমে ঝাড়ফুক করেছিলেন, এমনকি ওই কবিরাজও বলেছিলেন তার ঝাড়ফুকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে যাবে। কিন্তু তার তিন মাস না পেরুতেই ওই ছেলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন এবং পরিশেষের দৃশ্য খুবই বেদনাদায়ক, কষ্টদায়ক। একটি মায়ের কোল ছেড়ে অকালেই ঝরে গেলো একটি শিশু।
এ জন্যই আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া খুব জরুরী কুকুর/বিড়াল দংশন, কামড় বা আঁচড় দিলেই ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হবে, বন্যপ্রাণী যে কোনো পশু হলে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। পোষ্য প্রাণী হলে সে প্রাণীর টিকা নেয়া আছে কিনা দেখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সমাজের ওই সব ভন্ড কবিরাজদের প্রতিহত করা খুব জরুরী যারা এই সব রোগীদের হাসপাতালে না পাঠিয়ে নিজেই চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
আমিও ব্যাপারটা এড়িয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে চলে যাই কিন্তু হঠাৎ মনে হলো একটু পিছনে গিয়ে দেখে আসি এখানে এত মানুষের ভিড় কেনো। একটি অসহায় মহিলা ছেলেকে নিয়ে চিৎকার করছে। পাশেই ছেলের নানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
ঘটনাটি দেখে আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে তাদের? তারা বললেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার আমার ছেলেকে ভর্তি না করিয়ে বললেন, আপনার ছেলের জলাতঙ্ক হয়েছে, আর মাত্র ২৩-২৪ ঘন্টা বাচঁতে পারে, এখানে ভর্তি না করিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে নিয়ে যান। তখন আমরা নামতে না চাইলে হাসপাতালের লোক আমারদের জোর করে বেড় করে দেয়।’
জাহেরা খাতুন আরও বলেন, আমরা এত রাতে এখন কোথায় যাব? আমার ছেলের কি হবে?
আমি তাদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। রোগী যতই সিরিয়াস হোক না কেনো একজন ডাক্তার কোনো ভাবেই রোগীর অভিভাবকের সঙ্গে এমন করে কথা বলতে পারেন না। ওই হাসপাতালটা মূলত এসব কেন্দ্রিক রোগের জন্যই সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে এভাবে হাসপাতাল থেকে অপমান করে বের করে দিতে পারেন না। ওই ডাক্তার যত সহজে একজন মায়ের সামনে বলতে পেরেছেন তার ছেলেকে আর বাচাঁনো সম্ভব নয় সেটা একজন মায়ের পক্ষে সহ্য করাও এত সহজ ব্যাপার নয়।
পরে তাদের বললাম আপনারা আমার সঙ্গে সেই হাসপাতালে চলেন দেখি কে আপনাদের ভর্তি করাবে না...! তাদের আশ্বস্থ্য করে আমার সঙ্গে ফের ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন রাত ১১.৩০ মিনিট। হাসপাতালে গিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টা তারা অন্যভাবে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে আমার হস্তক্ষেপে ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার সকালে ওই ছেলের অবস্থা আরও অবনতি হলে তাকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওহনা হন মা। কিন্তু পথিমধ্যে মায়ের কোল ছেরে চির বিদায় নিয়ে যান ছেলেটি। খবরটা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি রাতে যখন ছেলেটির পাশে ছিলাম তখন ছেলেটিকে বার বার তার মাকে বলতে শুনেছি “তোরা আমায় বাড়ি নিয়ে চল, হাসপাতালে রেখে আমায় মেরে ফেলিস না।” আর ছেলেটির মা হাউ মাউ করে কেঁদে বলেছিলেন বাবা তোরে আমি কোথাও যেতে দিব না বলে বুকে চেপে ধরেছিল। সেই দৃশ্যটির কথা আমি ভুলতে পারছি না।
আমরা জানি জলাতঙ্ক রোগ হলে মানুষকে আর বাচাঁনো সম্ভব নয় এই রোগের মৃত্যু শতভাগ নিশ্চিত কিন্তু একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক একজন অসহায় মায়ের সঙ্গে তার ছেলের মৃত্যুর কথা হঠাৎ জানালে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা বোধহয় ওই ডাক্তার আপা জানেন না।
স্বামী হারা জাহেরা খাতুনের একমাত্র ভরসা ছিল তার একমাত্র ছেলে। কিন্তু পারিবারিক অসচেতনতা ও আর্থিক সংকটের কারণে আজ তার ছেলেকে জীবন দিতে হলো। একা হয়ে গেলো সে।
গত রোজার ঈদে তার ছেলেকে কুকুরে কামড় দিয়েছিল কিন্তু তখন তারা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে কবিরাজের মাধ্যমে ঝাড়ফুক করেছিলেন, এমনকি ওই কবিরাজও বলেছিলেন তার ঝাড়ফুকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে যাবে। কিন্তু তার তিন মাস না পেরুতেই ওই ছেলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন এবং পরিশেষের দৃশ্য খুবই বেদনাদায়ক, কষ্টদায়ক। একটি মায়ের কোল ছেড়ে অকালেই ঝরে গেলো একটি শিশু।
এ জন্যই আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া খুব জরুরী কুকুর/বিড়াল দংশন, কামড় বা আঁচড় দিলেই ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হবে, বন্যপ্রাণী যে কোনো পশু হলে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। পোষ্য প্রাণী হলে সে প্রাণীর টিকা নেয়া আছে কিনা দেখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সমাজের ওই সব ভন্ড কবিরাজদের প্রতিহত করা খুব জরুরী যারা এই সব রোগীদের হাসপাতালে না পাঠিয়ে নিজেই চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
No comments