সিভিল সার্জন বুঝতেই পারেননি তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত! by জাকিয়া আহমেদ
ডা. শাহাদাত হোসেন |
ডা.
সাহাদাত হোসেন রবিবার (২১ জুলাই) ছিলেন আগের কর্মস্থল ভাণ্ডারিয়ায়। এদিন
সেখান থেকেই আসেন হবিগঞ্জে। অফিস করেন নিজ কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়ে একটি সভায়ও অংশ নেন। কিন্তু ওই সময় অসুস্থবোধ করলে তিনি একটি
অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার বাসায় ফিরে আসেন। আসার পর বললেন, ‘শ্বাসকষ্ট হচ্ছে’।
এরপরই তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত
চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিভিল সার্জন সাহাদাত হোসেনের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে তার শ্যালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান মিথুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ তিনদিন ধরেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। জ্বর নিয়েই হবিগঞ্জের মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করেছেন। সেখানে অসুস্থ হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার বাসায় আসেন। তারপর কিছুটা ভালো থাকলেও কিছু সময় পর তিনি বলেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এরপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে সংসদ ভবনের কাছাকাছি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বোন জানিয়েছেন, সংসদ ভবনের কাছাকাছি এলেই তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়। এরপর থেকেই তিনি আর রেসপন্স করেননি।’
ডা. মিথুন বলেন, ‘তার মধ্যে ডেঙ্গুর কোনও লক্ষণ ছিল না। তবে, কয়েকদিন ধরেই তার জ্বর ছিল। এই জ্বরকেই আমরা এখন ডেঙ্গু হিসেবে ধারণা করছি। কারণ, এখন তো কারও ডেঙ্গুর কোনও শারীরিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের কিন্তু জ্বর ছাড়া আর কিছু নেই। টেস্ট না করালে বোঝা যাচ্ছে না প্ল্যাটিলেট কমছে কিনা, পিসিভি দ্রুত কমে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা। ডা. সাহাদাত হোসেন কোনও টেস্টই করাননি। তাই বুঝতেও পারেননি তার ডেঙ্গু হয়েছে।’
ডেঙ্গুর বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এবারের ডেঙ্গু হেমোরেজিক নয়, শক সিন্ড্রোম। তাই জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। অন্যদিকে, এবারের জ্বরের সঙ্গে বমি ও লুজ মোশনও ডেঙ্গুর লক্ষণ। তবে, এবারে মৃত্যুর হার বেশি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু আমাদের প্রবলভাবে আক্রমণ করেছে। সবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একরকম নয়। কারও শরীরের লিভার, কিডনি, ব্রেইন কোনও রকম কম্প্রোমাইজড থাকে, তাহলে তার মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ৭০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের জন্য ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ, তাদের ফ্লুয়িড ব্যালেন্সে সমস্যা থাকে।’
এদিকে, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশে প্রথম হানা দেয় প্রায় বিশ বছর আগে। শুরুতে আমরা একে বুঝতে পারিনি। আমরা জানতাম ডেঙ্গু হলে উচ্চমাত্রার জ্বর হয়। প্রচণ্ড গা-ব্যথা হয়। গায়ে র্যাশ হয়। চোখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দেয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরে উচ্চমাত্রার জ্বর নাও হতে পারে। বরং স্বল্পমাত্রার জ্বর বা ১০০-১০১ ডিগ্রি জ্বরও হতে পারে।’
ডেঙ্গুতে প্ল্যাটিলেট কমে যায় মন্তব্য করে ডা. গুলজার হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা প্ল্যাটিলেট কমে যাওয়াকেই ডেঙ্গুর মূল ঝুঁকি বলে জানতাম। কিন্তু এটা ছিল ভুল। প্ল্যাটিলেট কমে ঠিকই, কিছু মাত্রায় রক্তক্ষরণও হয়। কিন্তু ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ এটি নয়। ডেঙ্গুতে রোগীর রক্তনালীর ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বের হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ কমে। এই অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু-শক সিন্ড্রোম। মূলত এটাই ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. গুলজার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু ভাইরাস তার ধরন বদলেছে। আগের চেয়ে আরও বেশি দুর্ধর্ষ হয়েছে। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম করছে বেশি। আরেকটা কারণ হতে পারে বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। অনেকে হয়তো জানতেও পারেননি তিনি আগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হিয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার তারা যখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন ব্যাপারটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তাই এবারে কোনও অবহেলা নয়, জ্বর হলেই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ অবহেলার কোনও সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সিভিল সার্জন সাহাদাত হোসেনের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে তার শ্যালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান মিথুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ তিনদিন ধরেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। জ্বর নিয়েই হবিগঞ্জের মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করেছেন। সেখানে অসুস্থ হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার বাসায় আসেন। তারপর কিছুটা ভালো থাকলেও কিছু সময় পর তিনি বলেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এরপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে সংসদ ভবনের কাছাকাছি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বোন জানিয়েছেন, সংসদ ভবনের কাছাকাছি এলেই তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়। এরপর থেকেই তিনি আর রেসপন্স করেননি।’
ডা. মিথুন বলেন, ‘তার মধ্যে ডেঙ্গুর কোনও লক্ষণ ছিল না। তবে, কয়েকদিন ধরেই তার জ্বর ছিল। এই জ্বরকেই আমরা এখন ডেঙ্গু হিসেবে ধারণা করছি। কারণ, এখন তো কারও ডেঙ্গুর কোনও শারীরিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের কিন্তু জ্বর ছাড়া আর কিছু নেই। টেস্ট না করালে বোঝা যাচ্ছে না প্ল্যাটিলেট কমছে কিনা, পিসিভি দ্রুত কমে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা। ডা. সাহাদাত হোসেন কোনও টেস্টই করাননি। তাই বুঝতেও পারেননি তার ডেঙ্গু হয়েছে।’
ডেঙ্গুর বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এবারের ডেঙ্গু হেমোরেজিক নয়, শক সিন্ড্রোম। তাই জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। অন্যদিকে, এবারের জ্বরের সঙ্গে বমি ও লুজ মোশনও ডেঙ্গুর লক্ষণ। তবে, এবারে মৃত্যুর হার বেশি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু আমাদের প্রবলভাবে আক্রমণ করেছে। সবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একরকম নয়। কারও শরীরের লিভার, কিডনি, ব্রেইন কোনও রকম কম্প্রোমাইজড থাকে, তাহলে তার মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ৭০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের জন্য ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ, তাদের ফ্লুয়িড ব্যালেন্সে সমস্যা থাকে।’
এদিকে, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশে প্রথম হানা দেয় প্রায় বিশ বছর আগে। শুরুতে আমরা একে বুঝতে পারিনি। আমরা জানতাম ডেঙ্গু হলে উচ্চমাত্রার জ্বর হয়। প্রচণ্ড গা-ব্যথা হয়। গায়ে র্যাশ হয়। চোখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দেয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরে উচ্চমাত্রার জ্বর নাও হতে পারে। বরং স্বল্পমাত্রার জ্বর বা ১০০-১০১ ডিগ্রি জ্বরও হতে পারে।’
ডেঙ্গুতে প্ল্যাটিলেট কমে যায় মন্তব্য করে ডা. গুলজার হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা প্ল্যাটিলেট কমে যাওয়াকেই ডেঙ্গুর মূল ঝুঁকি বলে জানতাম। কিন্তু এটা ছিল ভুল। প্ল্যাটিলেট কমে ঠিকই, কিছু মাত্রায় রক্তক্ষরণও হয়। কিন্তু ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ এটি নয়। ডেঙ্গুতে রোগীর রক্তনালীর ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বের হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ কমে। এই অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু-শক সিন্ড্রোম। মূলত এটাই ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. গুলজার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু ভাইরাস তার ধরন বদলেছে। আগের চেয়ে আরও বেশি দুর্ধর্ষ হয়েছে। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম করছে বেশি। আরেকটা কারণ হতে পারে বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। অনেকে হয়তো জানতেও পারেননি তিনি আগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হিয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার তারা যখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন ব্যাপারটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তাই এবারে কোনও অবহেলা নয়, জ্বর হলেই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ অবহেলার কোনও সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
No comments