রওশনের অপেক্ষার শেষ হবে কবে by মরিয়ম চম্পা
দীর্ঘ
ছাব্বিশ বছর আইনি লড়াইয়ের পর জয়ের হাসি হাসেন রওশন আখতার। কিন্তু এ
পর্যন্তই। পেরিয়ে গেছে আরো তিন বছর। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়
কার্যকর হয়নি আজও। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় মামলা চালাতে গিয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব
এখন রওশন আখতার। এ কাহিনী ১৯৮৯ সালে শুরু। ওই বছর দৈনিক সংবাদের বার্তা
সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বাংলাদেশ বেভারেজ
ইন্ডাস্ট্রিজের একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা দুই
সন্তানসহ রওশন আখতারকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে। করে তুলে অসহায় ও
আশ্রয়হীন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চলছে রওশন আখতারের বিরামহীন পথচলা। যেন এক সাগর
পাড়ি দেয়া। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও তীরের দেখা পাননি তিনি। সাংবাদিক মন্টুর
মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলায় ২৬ বছর পর
চূড়ান্ত রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর সময়ের সাথে সাথে ঘটনা বাক নেয়
ভিন্ন পথে। দুই ছেলেকে মানুষ করা, নিয়মিত কোর্টে যাওয়া সবই পিতৃহীন
সামলেছেন এই সত্তোরর্ধো লড়াকু নারী। কিন্তু জীবনের এই পরন্ত বেলায় আজ বড্ড
ক্লান্ত তিনি। জীবনের শেষ সময়ে এসে একটাই চাওয়া, ক্ষতিপূরণের টাকাটা দিয়ে
যেন দুই ছেলের জন্য একটি মাথা গোজার ঠাই করে দিয়ে যেতে পারেন তিনি।
মানবজমিনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, সব মিলিয়ে একদমই ভালো নেই। তিন বছর আগে রায় হলেও ক্ষতিপূরণতো পাচ্ছি না। পাওয়ার কোনো লক্ষণও দেখছি না। ১৯৮৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মন্টু যখন মারা যান তখন আমি একটি সরকারি কলেজের লেকচারার ছিলাম। বড় ছেলে ইমতিয়াজ হোসেনের বয়স ৯ এবং ছোট ছেলে ইশতিয়াক হোসেনের বয়স ছিল ৫ বছর। তখন থেকেই আমার সংগ্রাম শুরু। এসময় আমার বেতন ছিল সবমিলিয়ে দেড় হাজার টাকা। ওর বাবার অফিস থেকে এককালীন কিছু টাকা পেয়েছিলাম তখন। যেটা ছিল যতসামান্য। ওই দেড় হাজার টাকা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতাম। বাবা ও ভাইরা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। যেটাকে বলে খুড়িয়ে চলা। দীর্ঘ ৩০ বছরের জীবনে কম ঘটনা ঘটেনি। মামলাটা করেছিল মূলত দৈনিক সংবাদের পক্ষ থেকে। তারা মামলা করলেও আমাকেই মূলত মামলা চালাতে হচ্ছে তখন থেকে।
তখনকার এটর্নি জেনারেল আমিনুল হকের কাছে মামলাটি ছিল। আমি তাকে বলি আমারতো খাওয়ারই পয়সা নেই। আমি মামলা নিয়মিত করতে পারবো না। তিনি আমাকে বললেন, দেশে ক্ষতিপূরণ মামলার কোনো নজির যেহেতু নাই তাই আপনার মামলাটি দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে মামলাটি আমি রেগুলার করতে চাই। মামলাটি নিয়মিত করলেও কিছুদিন পরই তিনি মারা যান। এরপর থেকে পুরোটাই আমাকে দেখতে হয়। পরবর্তীতে মামলাটি বর্তমান আইনজীবী খলিলুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করি। তিনিই মামলাটি চালিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু মামলাটি চালাতে গিয়ে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। নিন্ম আদালতে ১৪ বছর লেগেছে মামলার রায় পেতে।
তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হয় বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে। পরে ক্ষতিপূরণ কমিয়ে আনা হয় দুই কোটি এক লাখ টাকায়। পরে শুনানিতে আবার ৩২ লাখ টাকা কমানো হয়। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল দেয়া রায় হওয়ার প্রায় তিন বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি প্রয়াত মন্টুর স্ত্রী রওশন আখতার। তিনি বলেন, ২৬ বছর আইনি লড়াই শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে ক্ষতিপূরণের রায় পেয়েছি। কিন্তু টাকা পাইনি এখনও। সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান টাকা না দেয়ায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাদের পাঁচ কাঠা সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামের জন্য পত্রিকায় দুবার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ তাতে অংশ নেয়নি। উল্টো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া বাবদ ব্যক্তিগত লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
মামলার রায় পেতে নিজের পেনশন থেকে শুরু করে সর্বস্ব হারিয়ে আজ প্রায় নিস্ব। প্রত্যেক মাসে দুই হাজার টাকা দিয়ে নিলামের তারিখ পরিবর্তন করে নিলামটি জীবন্ত রাখছি। অন্যথায় নিলাম বাতিল হয়ে যাবে। বড় ছেলে ম্যানেজম্যান্টে মাস্টার্স করলেও সম্প্রতি চাকরি হারিয়ে এখন বেকার। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিক্ষক ছোট ছেলে ইশতিয়াকের চাকরির টাকায় এখন চলছে মামলার খরচ। ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে ৭০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে গেলে আমার ব্যাচমেট এবং ক্লাসমেট ছিলেন। ্তুঅপেক্ষায় থেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি বিবাদীপক্ষকে আদেশ দেন বা অনুরোধ করেন, তা হলে হয়তো টাকাটা পেতে পারি। অনেক ঋণ হয়ে আছে। মৃত্যুর আগে এসব ঋণ শোধ করতে চাই।
জীবনের ৩০টি বছর কি যে নির্মম সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেটা কেবল আমিই জানি। আর্থিক, সামাজিক, মানসিকসহ সবক্ষেত্রেই একটি বিপদগ্রস্থ সময় পার করেছি। অথচ আমার স্বামী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিটি মূহুর্তের কষ্ট এবং দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদান অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিবেন। দশ বছরের বিবাহিত জীবন যোগ করলে দাড়াবে ১০ মাস। ওদের বাবা আমার জন্য সম্পদ হিসেবে রেখে গেছেন দুটি ছেলে আর ব্যক্তিগত ৭০ হাজার টাকার ঋণ। এই টাকাটা পেলে অন্তত আমার এতোদিনের কষ্টটা লাঘব হতো। আমার একটাই প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শুধু আমার কষ্টটা বলে যাবো। দুটি বাচ্চাকে পড়ালেখা করাতে কতো যে যুদ্ধ আমাকে করতে হয়েছে সেটা কেবল আমিই জানি।
মানবজমিনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, সব মিলিয়ে একদমই ভালো নেই। তিন বছর আগে রায় হলেও ক্ষতিপূরণতো পাচ্ছি না। পাওয়ার কোনো লক্ষণও দেখছি না। ১৯৮৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মন্টু যখন মারা যান তখন আমি একটি সরকারি কলেজের লেকচারার ছিলাম। বড় ছেলে ইমতিয়াজ হোসেনের বয়স ৯ এবং ছোট ছেলে ইশতিয়াক হোসেনের বয়স ছিল ৫ বছর। তখন থেকেই আমার সংগ্রাম শুরু। এসময় আমার বেতন ছিল সবমিলিয়ে দেড় হাজার টাকা। ওর বাবার অফিস থেকে এককালীন কিছু টাকা পেয়েছিলাম তখন। যেটা ছিল যতসামান্য। ওই দেড় হাজার টাকা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতাম। বাবা ও ভাইরা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। যেটাকে বলে খুড়িয়ে চলা। দীর্ঘ ৩০ বছরের জীবনে কম ঘটনা ঘটেনি। মামলাটা করেছিল মূলত দৈনিক সংবাদের পক্ষ থেকে। তারা মামলা করলেও আমাকেই মূলত মামলা চালাতে হচ্ছে তখন থেকে।
তখনকার এটর্নি জেনারেল আমিনুল হকের কাছে মামলাটি ছিল। আমি তাকে বলি আমারতো খাওয়ারই পয়সা নেই। আমি মামলা নিয়মিত করতে পারবো না। তিনি আমাকে বললেন, দেশে ক্ষতিপূরণ মামলার কোনো নজির যেহেতু নাই তাই আপনার মামলাটি দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে মামলাটি আমি রেগুলার করতে চাই। মামলাটি নিয়মিত করলেও কিছুদিন পরই তিনি মারা যান। এরপর থেকে পুরোটাই আমাকে দেখতে হয়। পরবর্তীতে মামলাটি বর্তমান আইনজীবী খলিলুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করি। তিনিই মামলাটি চালিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু মামলাটি চালাতে গিয়ে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। নিন্ম আদালতে ১৪ বছর লেগেছে মামলার রায় পেতে।
তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হয় বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে। পরে ক্ষতিপূরণ কমিয়ে আনা হয় দুই কোটি এক লাখ টাকায়। পরে শুনানিতে আবার ৩২ লাখ টাকা কমানো হয়। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল দেয়া রায় হওয়ার প্রায় তিন বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি প্রয়াত মন্টুর স্ত্রী রওশন আখতার। তিনি বলেন, ২৬ বছর আইনি লড়াই শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে ক্ষতিপূরণের রায় পেয়েছি। কিন্তু টাকা পাইনি এখনও। সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান টাকা না দেয়ায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাদের পাঁচ কাঠা সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামের জন্য পত্রিকায় দুবার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ তাতে অংশ নেয়নি। উল্টো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া বাবদ ব্যক্তিগত লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
মামলার রায় পেতে নিজের পেনশন থেকে শুরু করে সর্বস্ব হারিয়ে আজ প্রায় নিস্ব। প্রত্যেক মাসে দুই হাজার টাকা দিয়ে নিলামের তারিখ পরিবর্তন করে নিলামটি জীবন্ত রাখছি। অন্যথায় নিলাম বাতিল হয়ে যাবে। বড় ছেলে ম্যানেজম্যান্টে মাস্টার্স করলেও সম্প্রতি চাকরি হারিয়ে এখন বেকার। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিক্ষক ছোট ছেলে ইশতিয়াকের চাকরির টাকায় এখন চলছে মামলার খরচ। ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে ৭০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে গেলে আমার ব্যাচমেট এবং ক্লাসমেট ছিলেন। ্তুঅপেক্ষায় থেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি বিবাদীপক্ষকে আদেশ দেন বা অনুরোধ করেন, তা হলে হয়তো টাকাটা পেতে পারি। অনেক ঋণ হয়ে আছে। মৃত্যুর আগে এসব ঋণ শোধ করতে চাই।
জীবনের ৩০টি বছর কি যে নির্মম সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেটা কেবল আমিই জানি। আর্থিক, সামাজিক, মানসিকসহ সবক্ষেত্রেই একটি বিপদগ্রস্থ সময় পার করেছি। অথচ আমার স্বামী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিটি মূহুর্তের কষ্ট এবং দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদান অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিবেন। দশ বছরের বিবাহিত জীবন যোগ করলে দাড়াবে ১০ মাস। ওদের বাবা আমার জন্য সম্পদ হিসেবে রেখে গেছেন দুটি ছেলে আর ব্যক্তিগত ৭০ হাজার টাকার ঋণ। এই টাকাটা পেলে অন্তত আমার এতোদিনের কষ্টটা লাঘব হতো। আমার একটাই প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শুধু আমার কষ্টটা বলে যাবো। দুটি বাচ্চাকে পড়ালেখা করাতে কতো যে যুদ্ধ আমাকে করতে হয়েছে সেটা কেবল আমিই জানি।
No comments