‘চার দিন সাগরে ড্রামের মধ্যে ছিলাম’
তিউনিসিয়া
থেকে গত শুক্রবার বিকেলে ১৭ জন বাংলাদেশি কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে
করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁদের মধ্যে চারজনের বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়।
তাঁরা হলেন আখাউড়া ছতুরাশরীফ গ্রামের সাহাজুল খন্দকার ও ইদ্রিস জমাদার এবং হিরাপুর বড়কুড়ি গ্রামের নেয়ামত শিকদার ও উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক।
গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছতুরাশরীফ গ্রামের বাড়িতে কথা হয় সাহাজুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের ৮ জুন আখাউড়া উপজেলার উজানিরসার গ্রামের দালাল স্বপন মিয়ার মধ্যস্থতায় তিনি লিবিয়ায় যান। দালালের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে নামার পর সেখানকার বাংলাদেশের আরেক দালাল রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম তাঁর পাসপোর্ট রেখে একটি শিবিরে নিয়ে যান। পৌঁছার তিন থেকে চার দিন পর লিবিয়ায় পৌঁছেছেন এবং ভালো আছেন বলে বাড়িতে ফোন দিতে বলেন দালালেরা। ফোন না দিলে নির্যাতন বাড়বে এবং খাবার পাবেন না বলে তাঁদের ভয় দেখানো হয়। এরপর সাহাজুল বাড়িতে ফোন দেন। বাড়ির লোকজন দেশের দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দেন। পরে সেখান থেকে নোয়াখালীর দাদা বলে পরিচিত আরেক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হলেও রাস্তায় আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দেড় লাখ টাকায় ছাড়া পান সাহাজুল।
সাহাজুল বলেন, ‘পরে নোয়াখালীর দাদা একটি রেস্তোরাঁয় কাজ জোগাড় করে দেন। সেখানে এক মাসের বেশি সময় কাজ করি। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করেছি। কিন্তু মাস শেষে ১ হাজার ২০০ দিনারের পরিবর্তে বেতন পেয়েছিলাম মাত্র ৩০০ দিনার। কাজ করার সময় তাঁরা অনেক নির্যাতন করেছেন। পরে রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম দালালের শরণাপন্ন হন। এ সময় তিনি শিপের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে নিয়ে যান। পরে একটি গেম ঘরে নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাস আটকে রাখেন। ১৫-২০ দিন আগে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে একটি নৌকায় করে রওনা হন। ৩০-৩৫ জনের একটি স্পিডবোটে আমরা ৭৫ জন উঠেছিলাম। একপর্যায়ে জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তা ছাড়া স্পিডবোটটি ফুটো হয়ে যায়। জীবন বাঁচানোর জন্য তখন আমি তিউনিসিয়ার সাগরে ঝাঁপ দিই। চার দিন অনাহারে সাগরে একটি ড্রামের মধ্যে ছিলাম। কখন আমাকে তিউনিসিয়ার জাহাজ ওঠানো হয়েছে, কিছু মনে নেই।’
একই গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস জমাদার আখাউড়া উপজেলার তুল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও তন্তর বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া নামের ‘এক দালালের’ মাধ্যমে গত বছরের ২২ মে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে লিবিয়ায় যান। ইদ্রিস ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ইদ্রিস বলেন, ‘লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দর থেকে রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম নামের এক দালালের শরণাপন্ন হই। পরে লিবিয়ার জামিয়ার আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়-সাত মাস ক্লিনারের কাজ করি। সেলিম দালাল জাহাজ ও ট্রলারের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখান। পরে ত্রিপোলি থেকে বোরকা পরিয়ে জোয়ারায় নিয়ে যান দালাল সেলিম। সেখানে আমাকে একটি গেম ঘরে নিয়ে রাখেন। বিনিময়ে তাঁকে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখ টাকা দিতে হয়। পাঁচ-ছয় মাস বন্দী ছিলাম। এক বেলা খাবার দিত। সম্প্রতি লিবিয়ার একটি জায়গা থেকে ছোট একটি স্পিডবোটে করে আমাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। তিউনিসিয়া ও ইতালির সাগরের শূন্যরেখা বরাবর যাওয়ার পর স্পিডবোটের তেল শেষ হয়ে যায়। এ সময় সাগরে ১৫-২০ ফুট উঁচু ঢেউ ছিল। সবাই কান্না করছিলেন। একপর্যায়ে স্পিডবোট থেকে ১০-১৫ জন লাফ দিয়ে সাগরে পড়ে যান। সে সময় সাগরে থাকা ড্রামে তাঁরা আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে চার-পাঁচ দিন পর তিউনিসিয়ার জাহাজ এসে আমাদের উদ্ধার করে। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।’
তাঁরা হলেন আখাউড়া ছতুরাশরীফ গ্রামের সাহাজুল খন্দকার ও ইদ্রিস জমাদার এবং হিরাপুর বড়কুড়ি গ্রামের নেয়ামত শিকদার ও উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক।
গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছতুরাশরীফ গ্রামের বাড়িতে কথা হয় সাহাজুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের ৮ জুন আখাউড়া উপজেলার উজানিরসার গ্রামের দালাল স্বপন মিয়ার মধ্যস্থতায় তিনি লিবিয়ায় যান। দালালের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে নামার পর সেখানকার বাংলাদেশের আরেক দালাল রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম তাঁর পাসপোর্ট রেখে একটি শিবিরে নিয়ে যান। পৌঁছার তিন থেকে চার দিন পর লিবিয়ায় পৌঁছেছেন এবং ভালো আছেন বলে বাড়িতে ফোন দিতে বলেন দালালেরা। ফোন না দিলে নির্যাতন বাড়বে এবং খাবার পাবেন না বলে তাঁদের ভয় দেখানো হয়। এরপর সাহাজুল বাড়িতে ফোন দেন। বাড়ির লোকজন দেশের দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দেন। পরে সেখান থেকে নোয়াখালীর দাদা বলে পরিচিত আরেক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হলেও রাস্তায় আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দেড় লাখ টাকায় ছাড়া পান সাহাজুল।
সাহাজুল বলেন, ‘পরে নোয়াখালীর দাদা একটি রেস্তোরাঁয় কাজ জোগাড় করে দেন। সেখানে এক মাসের বেশি সময় কাজ করি। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করেছি। কিন্তু মাস শেষে ১ হাজার ২০০ দিনারের পরিবর্তে বেতন পেয়েছিলাম মাত্র ৩০০ দিনার। কাজ করার সময় তাঁরা অনেক নির্যাতন করেছেন। পরে রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম দালালের শরণাপন্ন হন। এ সময় তিনি শিপের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে নিয়ে যান। পরে একটি গেম ঘরে নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাস আটকে রাখেন। ১৫-২০ দিন আগে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে একটি নৌকায় করে রওনা হন। ৩০-৩৫ জনের একটি স্পিডবোটে আমরা ৭৫ জন উঠেছিলাম। একপর্যায়ে জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তা ছাড়া স্পিডবোটটি ফুটো হয়ে যায়। জীবন বাঁচানোর জন্য তখন আমি তিউনিসিয়ার সাগরে ঝাঁপ দিই। চার দিন অনাহারে সাগরে একটি ড্রামের মধ্যে ছিলাম। কখন আমাকে তিউনিসিয়ার জাহাজ ওঠানো হয়েছে, কিছু মনে নেই।’
একই গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস জমাদার আখাউড়া উপজেলার তুল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও তন্তর বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া নামের ‘এক দালালের’ মাধ্যমে গত বছরের ২২ মে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে লিবিয়ায় যান। ইদ্রিস ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ইদ্রিস বলেন, ‘লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দর থেকে রফিকুল ইসলাম ওরফে সেলিম নামের এক দালালের শরণাপন্ন হই। পরে লিবিয়ার জামিয়ার আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়-সাত মাস ক্লিনারের কাজ করি। সেলিম দালাল জাহাজ ও ট্রলারের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখান। পরে ত্রিপোলি থেকে বোরকা পরিয়ে জোয়ারায় নিয়ে যান দালাল সেলিম। সেখানে আমাকে একটি গেম ঘরে নিয়ে রাখেন। বিনিময়ে তাঁকে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখ টাকা দিতে হয়। পাঁচ-ছয় মাস বন্দী ছিলাম। এক বেলা খাবার দিত। সম্প্রতি লিবিয়ার একটি জায়গা থেকে ছোট একটি স্পিডবোটে করে আমাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। তিউনিসিয়া ও ইতালির সাগরের শূন্যরেখা বরাবর যাওয়ার পর স্পিডবোটের তেল শেষ হয়ে যায়। এ সময় সাগরে ১৫-২০ ফুট উঁচু ঢেউ ছিল। সবাই কান্না করছিলেন। একপর্যায়ে স্পিডবোট থেকে ১০-১৫ জন লাফ দিয়ে সাগরে পড়ে যান। সে সময় সাগরে থাকা ড্রামে তাঁরা আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে চার-পাঁচ দিন পর তিউনিসিয়ার জাহাজ এসে আমাদের উদ্ধার করে। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।’
No comments