বিশ্ব শরণার্থী দিবসে ঘরে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের

বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ, নির্যাতন ও সংঘাতের কারণে এসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর বাস্তুচ্যুত মানুষের বহরে রোহিঙ্গা যুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই বদলে দিয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প। মিয়ানমারের দীর্ঘ কৌশলের অংশ হিসেবে মাতৃভূমি ছাড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
সংকটের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় জনগণ। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন স্থানীয়দের অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রোহিঙ্গারা। তাই ক্যাম্পে সীমানা দেয়াল নির্মাণ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি স্থানীয়দের।
এদিকে দুই বছরের মাথায় এসেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কোন ইতিবাচক সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বরং মিয়ানমারে প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ।
এমন এক পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত কিভাবে স্থানীয় জনগণের সাথে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা যায় সেদিকে নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এরকম নানা কারণে এবারের বিশ্ব শরণার্থী দিবস বাংলাদেশের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দিবসটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে মূল আলোচনায়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ কুতুপালং মেগা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। কেবল এই একটি ক্যাম্প নয়; কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট থেকে প্রায় দুই বছর ধরে এই বিশাল শরণার্থীর বোঝা টানছে বাংলাদেশ। এরও আগে সেই ১৯৭৮ সাল থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। মূলত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের দেশ ছাড়া করার মিয়ানমারের ষড়যন্ত্রের কূফল ভোগ করছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের জনবহুল দেশের তালিকায় এক নাম্বারে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বিশ্বের গড় মানুষ বসবাসের হার যেখানে মাত্র ১৫ জন। সেখানে বাংলাদেশে ১,১০০ জনেরও বেশি। অথচ যেখান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে সেই মিয়ানমারেও প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষ বসবাস করে মাত্র ৭৬ জন। আর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের যেই স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় জনসংখ্যার দ্বিগুনেরও বেশি রোহিঙ্গা। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থান হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যায় এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে।
যেখানে উন্নত অনেক রাষ্ট্রও শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন, সেখানে এতো সীমাবদ্ধতার পরও বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে মানবিক রাষ্ট্রের কাতারে। অথচ জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের আন্তর্জাতিক প্রটোকলেও স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। এরপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে মর্যাদাবান করেছে বাংলাদেশকে। মূলতঃ রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচাতেই বাংলাদেশ মানবিক হয়েছে বলে মনে করেন মানবতাকর্মীরা।
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে যারাই বিনিয়োগ করুক না কেন তা কখনো নিরাপদ হতে পারে না বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের। রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত এর সমাধান করা না গেলে কেবল মিয়ানমার আর বাংলাদেশের সমস্যা নয়; পুরো পৃথিবীর জন্য এটি বড় সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবেন, ঘরে ফিরবেন বিশ্বের সকল উদ্বাস্তু আর নতুন করে উদ্বাস্তু হবে না কোন মানুষ; এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।




No comments

Powered by Blogger.