ব্যক্তির স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়ছে by শিশির মোড়ল
স্বাস্থ্য
খাতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়ছে। এই ব্যয় বৃদ্ধিকে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য
সুরক্ষা’ অর্জনে বাধা বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে পাঁচ দফা সংস্কার প্রস্তাব করে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ। ব্যবস্থাপনা, জনবল, সেবা, অর্থায়ন ও তথ্য ব্যবস্থাপনা—এই পাঁচটি বিষয়ে ধারণাপত্রকে সামনে রেখে বড় পরিসরে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের মহাপরিচালক শাহদাত হোসেন মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বিরাজমান ব্যবস্থাতেই সংস্কার এনে তা অর্জন সম্ভব। আমরা বাস্তব কিছু সংস্কার প্রস্তাব করেছি।’
এ বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য, ছিল ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা: সবার জন্য, সবখানে’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) অর্থ প্রত্যেক মানুষ প্রয়োজনের মুহূর্তে মানসম্পন্ন সেবা পাবে। সেবার জন্য মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করবে। অর্থের অভাবে মানুষ সেবাবঞ্চিত থাকবে না, ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হবে না।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়।
পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে
সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ ২০১২ সালে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের কৌশলপত্র তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নেবে সরকার। তখন ব্যক্তির নিজস্ব খরচ ছিল ৬০ শতাংশ। ২০৩২ সালে তা ৩২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কমেনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ব্যক্তির নিজের ব্যয় ৬৭ শতাংশ, আর ২৩ শতাংশ সরকারের। বাকি ১০ শতাংশ দাতা ও অন্যরা ব্যয় করে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।
২০১২ সালে ওষুধের জন্য মানুষ মোট ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ ব্যয় করত। এখন তা বেড়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাণিজ্যিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে সরকারি নজরদারি বাড়লে ব্যক্তির ব্যয় কমে আসবে।’
৫ দফা প্রস্তাব
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সংস্কার প্রস্তাবের শুরুতে বলা হয়েছে, অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবলে বিনিয়োগ থাকলেও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্কারের অগ্রাধিকার তালিকার শুরুতে আছে ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন।
ধারণাপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ক্যাডার-নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব এবং মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার দ্বন্দ্ব কয়েক দশকের পুরোনো। এই দ্বন্দ্ব সমন্বয়হীনতার বড় কারণ। এ জন্য সেবার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ কাঠামোর আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
সংস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমানো। এ জন্য সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বরাদ্দ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এর ওপর নজরদারি জোরদার করতে হবে। ৯০ শতাংশ মানুষকে সামাজিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে।
দিশারি প্রকল্প
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ২০১২ সালের কৌশলপত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) নামে একটি দিশারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এই প্রকল্প শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় এসএসকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এই তিন উপজেলার ৮০ হাজার পরিবারকে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ৭৮টি রোগের চিকিৎসা বিধি (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) তৈরি করা হয়েছে। বিধিতে প্রতিটি রোগের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধের তালিকা দেওয়া আছে।
দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে সরকার বছরে এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম দেয়। বিনিময়ে প্রতিটি পরিবার বছরে ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সুবিধা পায়। কোনো পরীক্ষা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করা হলে সেই ব্যয়ও প্রকল্প থেকে পরিশোধ করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা, প্রিমিয়ামসহ যাবতীয় ব্যয়ের হিসাব রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে। কিন্তু এ বিষয়ে ধারণাগত অস্পষ্টতাও আছে। সংসদে ও জনপরিসরে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে পাঁচ দফা সংস্কার প্রস্তাব করে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ। ব্যবস্থাপনা, জনবল, সেবা, অর্থায়ন ও তথ্য ব্যবস্থাপনা—এই পাঁচটি বিষয়ে ধারণাপত্রকে সামনে রেখে বড় পরিসরে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের মহাপরিচালক শাহদাত হোসেন মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বিরাজমান ব্যবস্থাতেই সংস্কার এনে তা অর্জন সম্ভব। আমরা বাস্তব কিছু সংস্কার প্রস্তাব করেছি।’
এ বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য, ছিল ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা: সবার জন্য, সবখানে’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) অর্থ প্রত্যেক মানুষ প্রয়োজনের মুহূর্তে মানসম্পন্ন সেবা পাবে। সেবার জন্য মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করবে। অর্থের অভাবে মানুষ সেবাবঞ্চিত থাকবে না, ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হবে না।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়।
পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে
সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ ২০১২ সালে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের কৌশলপত্র তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নেবে সরকার। তখন ব্যক্তির নিজস্ব খরচ ছিল ৬০ শতাংশ। ২০৩২ সালে তা ৩২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কমেনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ব্যক্তির নিজের ব্যয় ৬৭ শতাংশ, আর ২৩ শতাংশ সরকারের। বাকি ১০ শতাংশ দাতা ও অন্যরা ব্যয় করে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।
২০১২ সালে ওষুধের জন্য মানুষ মোট ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ ব্যয় করত। এখন তা বেড়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাণিজ্যিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে সরকারি নজরদারি বাড়লে ব্যক্তির ব্যয় কমে আসবে।’
৫ দফা প্রস্তাব
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সংস্কার প্রস্তাবের শুরুতে বলা হয়েছে, অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবলে বিনিয়োগ থাকলেও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্কারের অগ্রাধিকার তালিকার শুরুতে আছে ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন।
ধারণাপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ক্যাডার-নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব এবং মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার দ্বন্দ্ব কয়েক দশকের পুরোনো। এই দ্বন্দ্ব সমন্বয়হীনতার বড় কারণ। এ জন্য সেবার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ কাঠামোর আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
সংস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমানো। এ জন্য সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বরাদ্দ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এর ওপর নজরদারি জোরদার করতে হবে। ৯০ শতাংশ মানুষকে সামাজিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে।
দিশারি প্রকল্প
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ২০১২ সালের কৌশলপত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) নামে একটি দিশারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এই প্রকল্প শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় এসএসকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এই তিন উপজেলার ৮০ হাজার পরিবারকে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ৭৮টি রোগের চিকিৎসা বিধি (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) তৈরি করা হয়েছে। বিধিতে প্রতিটি রোগের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধের তালিকা দেওয়া আছে।
দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে সরকার বছরে এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম দেয়। বিনিময়ে প্রতিটি পরিবার বছরে ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সুবিধা পায়। কোনো পরীক্ষা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করা হলে সেই ব্যয়ও প্রকল্প থেকে পরিশোধ করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা, প্রিমিয়ামসহ যাবতীয় ব্যয়ের হিসাব রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে। কিন্তু এ বিষয়ে ধারণাগত অস্পষ্টতাও আছে। সংসদে ও জনপরিসরে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার।
No comments