৬ দিন বিচ্ছিন্ন সিলেট: যাত্রী নামিয়ে সেতু পেরোতে পারবে বাস, ট্রেনে চাপ by ওয়েছ খছরু ও জাবেদ রহিম বিজন
ঢাকা-সিলেট
মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুর সেতুতে বেইলি ব্রিজ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
আজ সোমবার বিকালে বা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বাস চলাচল করতে পারবে এই
সেতুর উপর দিয়ে। জেলার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল
মামুন জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে যাত্রী নামিয়ে শুধু খালি বাস সেতুর উপর দিয়ে
চলাচল করতে দেয়া হবে। তবে মাল বোঝাই ট্রাকগুলোকে বিকল্প সড়ক দিয়েই চলতে হবে
বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আরেকটি বিকল্প হিসেবে তিতাস নদীতে ফেরি দিয়ে যান
পারাপারের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের এই কর্মকর্তা। তবে এ
জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ্রোচ সড়ক ও ঘাট না থাকায় সহসা ফেরি চালু হচ্ছে না।
বেইলি ব্রিজ স্থাপনের পাশাপাশি অ্যাপ্রোচ সড়ক ও ঘাট বানানোর কাজও করা
হচ্ছে। এতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে বলে জানান সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
পুরাতন সেতুটির পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এটি আগামী মাসের ৩ তারিখে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ৫৯ কোটি টাকা খরচে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেতুটি চালু হলে এর উপর দিয়ে সব ধরনের যান চলতে পারবে। এদিকে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের পর ৩ দিন বিভিন্ন বিকল্প পথে বাস-ট্রাক চলাচল করলেও এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। শাহবাজপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ১৩৭ কিলোমিটার পথের অর্ধেকাংশ জুড়েই মহাসড়কে অবস্থান করছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। গতকাল সরজমিন বিকল্প সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী কোনো বাস চলাচল করছে না। বিকল্প পথে ভোগান্তির কারণে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একই কারণে বিকল্প সড়কে ট্রাকও চলাচল করছে না। কাঁচামাল আর বিভিন্ন পণ্যভর্তি ট্রাক মহাসড়কের উপরই অবস্থান করছে। ট্রাকেই পচে নষ্ট হচ্ছে অনেক কাঁচামাল। নানা ভোগান্তির শিকার ট্রাকচালকরাও। মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই কাটছে তাদের দিনরাত। গত ১৮ই জুন বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাথসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরনের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই সেতুর উপর দিয়ে। সড়ক বিভাগ বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের এবং সরাইল-নাসিরনগর হয়ে লাখাই এবং রতনপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের যানবাহন চলাচল করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব পথে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে নানা সমস্যায়। মহাসড়কের গাড়ির স্রোতে ২/১ দিনই বিপজ্জনক হয়ে পড়ে বিকল্প সড়ক। চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের কয়েকটি স্থানে পণ্য বোঝাই ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে আর সেই পথে না গিয়ে গাড়ি চলাচলই বন্ধ করে দিয়েছেন বাস-ট্রাকের চালকরা। গত ৬ দিন ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে সরাসরি যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ট্রেনের ভেতরে যাত্রী ঠাসা। পা ফেলার জায়গা নেই। আসনের তুলনায় তিনগুণ যাত্রী ট্রেনে। কিছুই করার নেই। ঢাকা-সিলেট সড়ক পথ বন্ধ। যে যেভাবে পারছেন ট্রেনে গন্তব্য ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। কিন্তু রাত ১০ টার ট্রেন ১২ টায় ছাড়ছে না। ট্রেনের কর্মকর্তাদের দৌড়াদৌড়ি। ‘প্রেসার’ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসার না পেলে ট্রেন ছাড়া যাবে না। কিন্তু ত্রুটি কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি বগির ইলেকট্রনিক সংযোগ চেক করা হয়েছে। কোথাও ত্রুটি ধরা পড়েনি। ট্রেনের চালক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ‘প্রেসার না পেলে অতিরিক্ত বোঝাই করা যাত্রী নিয়ে তিনি রওনা দেবেন না।’ আরো এক ঘণ্টা বিলম্ব। অবশেষে ১০ ভাগের মধ্যে ৭ ভাগ ‘প্রেসার’ পাওয়া গেলো। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চালক ট্রেন ছাড়লেন। শুক্রবার রাতের ঘটনা এটি। সেই ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে পৌঁছলো পরের দিন সকাল ৯টার দিকে। শনিবার রাতের দৃশ্য আরো সূচনীয়। মধ্যরাত পেরিয়ে গভীর রাতে রওনা দিলো ঢাকাগামী উপবন ট্রেন। ঢাকার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। গত ৬ দিন ধরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে গাড়ির চাকা ঘুরছে না। এই অবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়েছে ট্রেনের উপর। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সিলেটে ট্রেনের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি ছাড়া সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সিডিউল এলোমেলো হয়ে হয়েছে। সংশ্লিষ্টরাও এ নিয়ে নির্বিকার। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না। এই অবস্থায় দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশু যাত্রীদের অবস্থা গলদগর্ম। একে তো তীব্র গরম তার উপর রেল স্টেশনে বসতে বসতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক যাত্রী। গতকাল বিকেলে ট্রেনের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী ম্যানেজার সজিব মালাকার। তিনি বলেন- ‘সিডিউল দু’এক ঘণ্টা এলোমেলো হয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। তবে- কোনোটি বাতিল হয়নি। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে।’ শনিবার রাতেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। গভীর রাতে সিলেট রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ঢাকাগামী উপবন ও চট্টগ্রামগামী উদয়ন ট্রেন। এ দুটি ট্রেনও যাত্রীতে ঠাসা। ট্রেনের আসনের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সিলেট রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেন দুটি। শুধু সিলেট থেকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামগামী নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী ট্রেনগুলোতেও একই অবস্থা। শনিবার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও বিলম্বে ট্রেন ছাড়ার ঘটনা ঘটে। তবে- এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ছিলো উপবন ট্রেন। নির্ধারিত সময়ের একটু পর রাত সোয়া ১০ টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। তবে- এই ট্রেনে যাত্রী ছিলো দ্বিগুণ। বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে এই যাত্রী তিনগুণ হয়ে হয়ে যায়। ট্রেনের ভেতরে নির্ধারিত আসনে যত যাত্রী বসা ছিলেন তার দ্বিগুণের বেশি যাত্রী ছিলেন দাঁড়িয়ে। পুলিশ বারবার চেষ্টা করে প্রথম শ্রেণীর বগিগুলোতেও লোড কমাতে পারেনি। নাসরিন নামে এক কর্মজীবী নারী শনিবার রাতে দাঁড়িয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরেন। বলেন- ‘কিছু করার নেই। রোববার থেকে অফিস খোলা। এই অবস্থায় যেভাবে হোক সিলেট পৌঁছতে হবে। জরুরি কাজে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানান।’ সালাহউদ্দিন নামের এক ব্যাংকার জানান- ‘তার পরিবার ঢাকাতে থাকেন। তিনি অনেক দিন ধরে শুক্র কিংবা শনিবার সিলেট থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া করেন। ইজতেমার সময়ও তিনি দাঁড়িয়ে কখনো সিলেট যাননি। কিন্তু এবার স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে সিলেট যাচ্ছেন।’ শনিবার রাতের সিলেটগামী উপবন ট্রেনে প্রথম শ্রেণী ও নরমাল চেয়ার কোচের বগির ভেতরে ৫০ জনের মতো মহিলা যাত্রী কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে সিলেটে ফিরেন। সকাল ৬টার দিকে যখন সিলেট রেল স্টেশনে এসে পৌঁছেন তখন তারা যাত্রা পথের সব ক্লান্তি ভুলে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু সবার ক্ষোভ রয়েছে ট্রেনের সিডিউলে। যাত্রীরা জানিয়েছেন- ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করে ঢাকা-সিলেট সড়ক রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে জরুরি কাজে যাতায়াতের জন্য এখন অন্যতম বাহন হচ্ছে ট্রেনপথ। কিন্তু ওই ট্রেনপথে চলছে সিডিউল বিপর্যয়। এই বিপর্যয় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এ কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেকায়দা পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রীরা। আব্দুর রহমান নামের মধ্যপ্রাচ্য গামী এক যাত্রী শনিবার রাতে জানিয়েছেন- তিনি সকাল ৮টার আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু টিকিট না পেয়ে শেষ ট্রেনে ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। এই ট্রেন বিলম্বে পৌঁছলে তার বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এদিকে- সড়ক পথ বন্ধ থাকায় সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে সকল বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ই জুন থেকে পরিবহন মালিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছ। প্রথম দুদিন সিলেটের পরিবহন মালিকরা চালকরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে দু’একটি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেছিলো। এখন সেই রুটে যানজট তীব্র। পাশাপাশি গ্রামীণ ওই রাস্তাও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে এখন বাস সার্ভিস পুরো বন্ধ। সিলেট বিভাগীয় পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ৬ দিন ধরে তারা গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। গতকাল তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে আরো ১ সপ্তাহ সময় লাগবে বিকল্প পথ তৈরী করতে। এদিকে- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির ভেঙে যাওয়া অংশের মেরামত কাজ গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। এ কাজ শেষ হতে অন্তত ১০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তাই এই ১০ দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে না। তবে, এ সমস্যা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে তিতাস নদীতে ফেরি চালু করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
পুরাতন সেতুটির পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এটি আগামী মাসের ৩ তারিখে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ৫৯ কোটি টাকা খরচে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেতুটি চালু হলে এর উপর দিয়ে সব ধরনের যান চলতে পারবে। এদিকে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের পর ৩ দিন বিভিন্ন বিকল্প পথে বাস-ট্রাক চলাচল করলেও এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। শাহবাজপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ১৩৭ কিলোমিটার পথের অর্ধেকাংশ জুড়েই মহাসড়কে অবস্থান করছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। গতকাল সরজমিন বিকল্প সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী কোনো বাস চলাচল করছে না। বিকল্প পথে ভোগান্তির কারণে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একই কারণে বিকল্প সড়কে ট্রাকও চলাচল করছে না। কাঁচামাল আর বিভিন্ন পণ্যভর্তি ট্রাক মহাসড়কের উপরই অবস্থান করছে। ট্রাকেই পচে নষ্ট হচ্ছে অনেক কাঁচামাল। নানা ভোগান্তির শিকার ট্রাকচালকরাও। মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই কাটছে তাদের দিনরাত। গত ১৮ই জুন বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাথসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরনের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই সেতুর উপর দিয়ে। সড়ক বিভাগ বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের এবং সরাইল-নাসিরনগর হয়ে লাখাই এবং রতনপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের যানবাহন চলাচল করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব পথে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে নানা সমস্যায়। মহাসড়কের গাড়ির স্রোতে ২/১ দিনই বিপজ্জনক হয়ে পড়ে বিকল্প সড়ক। চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের কয়েকটি স্থানে পণ্য বোঝাই ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে আর সেই পথে না গিয়ে গাড়ি চলাচলই বন্ধ করে দিয়েছেন বাস-ট্রাকের চালকরা। গত ৬ দিন ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে সরাসরি যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ট্রেনের ভেতরে যাত্রী ঠাসা। পা ফেলার জায়গা নেই। আসনের তুলনায় তিনগুণ যাত্রী ট্রেনে। কিছুই করার নেই। ঢাকা-সিলেট সড়ক পথ বন্ধ। যে যেভাবে পারছেন ট্রেনে গন্তব্য ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। কিন্তু রাত ১০ টার ট্রেন ১২ টায় ছাড়ছে না। ট্রেনের কর্মকর্তাদের দৌড়াদৌড়ি। ‘প্রেসার’ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসার না পেলে ট্রেন ছাড়া যাবে না। কিন্তু ত্রুটি কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি বগির ইলেকট্রনিক সংযোগ চেক করা হয়েছে। কোথাও ত্রুটি ধরা পড়েনি। ট্রেনের চালক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ‘প্রেসার না পেলে অতিরিক্ত বোঝাই করা যাত্রী নিয়ে তিনি রওনা দেবেন না।’ আরো এক ঘণ্টা বিলম্ব। অবশেষে ১০ ভাগের মধ্যে ৭ ভাগ ‘প্রেসার’ পাওয়া গেলো। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চালক ট্রেন ছাড়লেন। শুক্রবার রাতের ঘটনা এটি। সেই ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে পৌঁছলো পরের দিন সকাল ৯টার দিকে। শনিবার রাতের দৃশ্য আরো সূচনীয়। মধ্যরাত পেরিয়ে গভীর রাতে রওনা দিলো ঢাকাগামী উপবন ট্রেন। ঢাকার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। গত ৬ দিন ধরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে গাড়ির চাকা ঘুরছে না। এই অবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়েছে ট্রেনের উপর। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সিলেটে ট্রেনের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি ছাড়া সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সিডিউল এলোমেলো হয়ে হয়েছে। সংশ্লিষ্টরাও এ নিয়ে নির্বিকার। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না। এই অবস্থায় দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশু যাত্রীদের অবস্থা গলদগর্ম। একে তো তীব্র গরম তার উপর রেল স্টেশনে বসতে বসতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক যাত্রী। গতকাল বিকেলে ট্রেনের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী ম্যানেজার সজিব মালাকার। তিনি বলেন- ‘সিডিউল দু’এক ঘণ্টা এলোমেলো হয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। তবে- কোনোটি বাতিল হয়নি। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে।’ শনিবার রাতেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। গভীর রাতে সিলেট রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ঢাকাগামী উপবন ও চট্টগ্রামগামী উদয়ন ট্রেন। এ দুটি ট্রেনও যাত্রীতে ঠাসা। ট্রেনের আসনের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সিলেট রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেন দুটি। শুধু সিলেট থেকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামগামী নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী ট্রেনগুলোতেও একই অবস্থা। শনিবার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও বিলম্বে ট্রেন ছাড়ার ঘটনা ঘটে। তবে- এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ছিলো উপবন ট্রেন। নির্ধারিত সময়ের একটু পর রাত সোয়া ১০ টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। তবে- এই ট্রেনে যাত্রী ছিলো দ্বিগুণ। বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে এই যাত্রী তিনগুণ হয়ে হয়ে যায়। ট্রেনের ভেতরে নির্ধারিত আসনে যত যাত্রী বসা ছিলেন তার দ্বিগুণের বেশি যাত্রী ছিলেন দাঁড়িয়ে। পুলিশ বারবার চেষ্টা করে প্রথম শ্রেণীর বগিগুলোতেও লোড কমাতে পারেনি। নাসরিন নামে এক কর্মজীবী নারী শনিবার রাতে দাঁড়িয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরেন। বলেন- ‘কিছু করার নেই। রোববার থেকে অফিস খোলা। এই অবস্থায় যেভাবে হোক সিলেট পৌঁছতে হবে। জরুরি কাজে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানান।’ সালাহউদ্দিন নামের এক ব্যাংকার জানান- ‘তার পরিবার ঢাকাতে থাকেন। তিনি অনেক দিন ধরে শুক্র কিংবা শনিবার সিলেট থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া করেন। ইজতেমার সময়ও তিনি দাঁড়িয়ে কখনো সিলেট যাননি। কিন্তু এবার স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে সিলেট যাচ্ছেন।’ শনিবার রাতের সিলেটগামী উপবন ট্রেনে প্রথম শ্রেণী ও নরমাল চেয়ার কোচের বগির ভেতরে ৫০ জনের মতো মহিলা যাত্রী কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে সিলেটে ফিরেন। সকাল ৬টার দিকে যখন সিলেট রেল স্টেশনে এসে পৌঁছেন তখন তারা যাত্রা পথের সব ক্লান্তি ভুলে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু সবার ক্ষোভ রয়েছে ট্রেনের সিডিউলে। যাত্রীরা জানিয়েছেন- ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করে ঢাকা-সিলেট সড়ক রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে জরুরি কাজে যাতায়াতের জন্য এখন অন্যতম বাহন হচ্ছে ট্রেনপথ। কিন্তু ওই ট্রেনপথে চলছে সিডিউল বিপর্যয়। এই বিপর্যয় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এ কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেকায়দা পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রীরা। আব্দুর রহমান নামের মধ্যপ্রাচ্য গামী এক যাত্রী শনিবার রাতে জানিয়েছেন- তিনি সকাল ৮টার আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু টিকিট না পেয়ে শেষ ট্রেনে ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। এই ট্রেন বিলম্বে পৌঁছলে তার বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এদিকে- সড়ক পথ বন্ধ থাকায় সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে সকল বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ই জুন থেকে পরিবহন মালিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছ। প্রথম দুদিন সিলেটের পরিবহন মালিকরা চালকরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে দু’একটি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেছিলো। এখন সেই রুটে যানজট তীব্র। পাশাপাশি গ্রামীণ ওই রাস্তাও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে এখন বাস সার্ভিস পুরো বন্ধ। সিলেট বিভাগীয় পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ৬ দিন ধরে তারা গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। গতকাল তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে আরো ১ সপ্তাহ সময় লাগবে বিকল্প পথ তৈরী করতে। এদিকে- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির ভেঙে যাওয়া অংশের মেরামত কাজ গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। এ কাজ শেষ হতে অন্তত ১০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তাই এই ১০ দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে না। তবে, এ সমস্যা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে তিতাস নদীতে ফেরি চালু করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
No comments