ইসরাইলকে রক্ষার জন্য ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' পরিকল্পনায় যা আছে: পর্ব-তিন
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য 'শতাব্দির সেরা
চুক্তি' নামের যে কথিত শান্তি প্রস্তাব বা পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন সে
সংক্রান্ত আলোচনার গত পর্বে আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমেরিকা, ইসরাইল ও
সৌদি আরবের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। মার্কিন কথিত এই শান্তি
প্রস্তাব বা পরিকল্পনার প্রধান টার্গেট হচ্ছে ফিলিস্তিনিদেরকে হটিয়ে দিয়ে
দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা।
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার ব্যাপারে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)'র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব সায়েব আরিকাত বলেছেন, "এতে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে বহু দূরে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য রাজধানী তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে যা অযৌক্তিক।"
পিএলও'র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব সায়েব আরিকাত আরো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এ পরিকল্পনায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইহুদি নতুন নতুন উপশহরগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জর্দান নদীর পশ্চিম তীর এলাকার ১৫ শতাংশ ভূমি ইসরাইলি ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১০ শতাংশ এলাকার ওপর ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতি সম্মতি দেন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর ট্রাম্প তার প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে না। বরং জর্দান, মিশর, আমেরিকাসহ আরো কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণে যৌথ বাহিনী মোতায়েন রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, পশ্চিম তীরসহ সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ইসরাইলি সেনা মোতায়েন রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনায়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার বিভিন্ন ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বায়তুল মোকাদ্দাসসহ আরো বহু এলাকা কেড়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরিচিতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা। তাই ষড়যন্ত্রমূলক এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে। এ ব্যাপারে কাতারের দৈনিক আল আরাবি আল জাদিদের সংবাদ বিশ্লেষক সালেহ আল নাআমি লিখেছেন, "এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের কোনো রাজনৈতিক দলই ট্রাম্পের দেয়া 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি কারণ তারা জানে এটা ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করার পায়তারা।"
এ কারণে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মে মাসে তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তর করার কারণে এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের দ্বারস্থ হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু অপরপক্ষে ফিলিস্তিনের জিহাদি ও সংগ্রামী দলগুলো ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং রাজধানী তেলআবিবসহ অবৈধ ইহুদি বসতি এলাকাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন করে ইন্তিফাদা গণজাগরণ শুরুর পদক্ষেপ নিয়েছে।
পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি'র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দু'টি দেশ অর্থাৎ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রধান সমর্থক। এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা মেনে নিতে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা করা ও জর্দানকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে সৌদি আরব ও আমিরাত।
গত ২৩ জুন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধি দলের কয়েকটি আরব দেশ সফরের কথা উল্লেখ করেছে। এতে লেখা হয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সৌদি আরব ও আমিরাত ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য জর্দান ও ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে যেসব ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা জর্দানে অবস্থান করছে তাদেরকে সেখানেই স্থায়ীভাবে রেখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমেরিকা মনে করে 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জর্দানের সহযোগিতা খুবই জরুরি। এ কারণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত ১৯ জুন আম্মান সফর করে সেদেশের রাজা আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। জর্দান ভূ-রাজনৈতিক কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে। জর্দানের সঙ্গে ইসরাইল ও পশ্চিম তীরের সীমান্ত রয়েছে। এ কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরব যেভাবেই হোক জর্দানকে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব জর্দানের কাছ থেকে নিয়ে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইসরাইল বিষয়ক জর্দানের লেখক আইমান দেহাজ আল হানিথি 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' ইস্যুতে বলেন, অর্থনৈতিক চাপের কারণে জর্দান সরকার এ ধরণের অন্যায্য চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিশরেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। মিশরের ইতিহাস ঐতিহ্য, বিপুল জনসংখ্যা ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে আমেরিকার কাছে ওই দেশটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মিশর আরব বিশ্বের অন্যতম একটি প্রভাবশালী দেশ এবং আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে মুসলিম বিশ্বে মিশরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে মিশরে রয়েছে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা এবং সামরিক দিক থেকেও দেশটি অনেক শক্তিশালী। ইসরাইল ও গাজার সঙ্গে সীমান্ত থাকায় ভৌগোলিক দিক থেকেও মিশরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিশরের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মিশরের একটি কূটনৈতিক সূত্র এ কথা ফাঁস করে দিয়েছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জারেড কুশনার কায়রোয় দেশটির কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি সমঝোতায় পৌঁছেন। এ সমঝোতা অনুযায়ী মিশের রাফা ও গাজা সীমান্তে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং তা গাজায় সরবরাহ করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমিরাত ৫০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে।
এ ছাড়া, উত্তর সিনা উপত্যকায় গাজা ও মিশরের যৌথ সমুদ্র সীমায় বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা কিনা মিশরের তত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ওই বন্দরের কার্যক্রম চালানোর জন্য যে জনশক্তির প্রয়োজন হবে তার জন্য গাজার অধিবাসীদেরকে ব্যবহার করা হবে।
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার ব্যাপারে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)'র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব সায়েব আরিকাত বলেছেন, "এতে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে বহু দূরে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য রাজধানী তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে যা অযৌক্তিক।"
পিএলও'র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব সায়েব আরিকাত আরো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এ পরিকল্পনায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইহুদি নতুন নতুন উপশহরগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জর্দান নদীর পশ্চিম তীর এলাকার ১৫ শতাংশ ভূমি ইসরাইলি ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১০ শতাংশ এলাকার ওপর ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতি সম্মতি দেন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর ট্রাম্প তার প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে না। বরং জর্দান, মিশর, আমেরিকাসহ আরো কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণে যৌথ বাহিনী মোতায়েন রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, পশ্চিম তীরসহ সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ইসরাইলি সেনা মোতায়েন রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনায়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার বিভিন্ন ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বায়তুল মোকাদ্দাসসহ আরো বহু এলাকা কেড়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরিচিতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা। তাই ষড়যন্ত্রমূলক এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে। এ ব্যাপারে কাতারের দৈনিক আল আরাবি আল জাদিদের সংবাদ বিশ্লেষক সালেহ আল নাআমি লিখেছেন, "এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের কোনো রাজনৈতিক দলই ট্রাম্পের দেয়া 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি কারণ তারা জানে এটা ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করার পায়তারা।"
এ কারণে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মে মাসে তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তর করার কারণে এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের দ্বারস্থ হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু অপরপক্ষে ফিলিস্তিনের জিহাদি ও সংগ্রামী দলগুলো ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং রাজধানী তেলআবিবসহ অবৈধ ইহুদি বসতি এলাকাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন করে ইন্তিফাদা গণজাগরণ শুরুর পদক্ষেপ নিয়েছে।
পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি'র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দু'টি দেশ অর্থাৎ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রধান সমর্থক। এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা মেনে নিতে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা করা ও জর্দানকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে সৌদি আরব ও আমিরাত।
গত ২৩ জুন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধি দলের কয়েকটি আরব দেশ সফরের কথা উল্লেখ করেছে। এতে লেখা হয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সৌদি আরব ও আমিরাত ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য জর্দান ও ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে যেসব ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা জর্দানে অবস্থান করছে তাদেরকে সেখানেই স্থায়ীভাবে রেখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমেরিকা মনে করে 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জর্দানের সহযোগিতা খুবই জরুরি। এ কারণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত ১৯ জুন আম্মান সফর করে সেদেশের রাজা আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। জর্দান ভূ-রাজনৈতিক কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে। জর্দানের সঙ্গে ইসরাইল ও পশ্চিম তীরের সীমান্ত রয়েছে। এ কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরব যেভাবেই হোক জর্দানকে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব জর্দানের কাছ থেকে নিয়ে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইসরাইল বিষয়ক জর্দানের লেখক আইমান দেহাজ আল হানিথি 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' ইস্যুতে বলেন, অর্থনৈতিক চাপের কারণে জর্দান সরকার এ ধরণের অন্যায্য চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিশরেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। মিশরের ইতিহাস ঐতিহ্য, বিপুল জনসংখ্যা ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে আমেরিকার কাছে ওই দেশটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মিশর আরব বিশ্বের অন্যতম একটি প্রভাবশালী দেশ এবং আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে মুসলিম বিশ্বে মিশরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে মিশরে রয়েছে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা এবং সামরিক দিক থেকেও দেশটি অনেক শক্তিশালী। ইসরাইল ও গাজার সঙ্গে সীমান্ত থাকায় ভৌগোলিক দিক থেকেও মিশরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিশরের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মিশরের একটি কূটনৈতিক সূত্র এ কথা ফাঁস করে দিয়েছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জারেড কুশনার কায়রোয় দেশটির কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি সমঝোতায় পৌঁছেন। এ সমঝোতা অনুযায়ী মিশের রাফা ও গাজা সীমান্তে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং তা গাজায় সরবরাহ করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমিরাত ৫০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে।
এ ছাড়া, উত্তর সিনা উপত্যকায় গাজা ও মিশরের যৌথ সমুদ্র সীমায় বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা কিনা মিশরের তত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ওই বন্দরের কার্যক্রম চালানোর জন্য যে জনশক্তির প্রয়োজন হবে তার জন্য গাজার অধিবাসীদেরকে ব্যবহার করা হবে।
No comments