খুলনায় মরিয়া দু’পক্ষই by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও রাশিদুল ইসলাম
ভোটের
বাকি আর মাত্র একদিন। আজ দিনের শেষে বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের
প্রচার-প্রচারণা। আর এ সময়ে শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন
প্রার্থীরা। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষে শুরু
হবে ভোটের ক্ষণ গণনা। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে খুলনা সিটি করপোরেশন
নির্বাচনকে নিজ নিজ দলের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ সিটির মেয়র পদটি নিজেদের ঘরে নিতে তাই মরিয়া তফসিল
ঘোষণার পর থেকে। যদিও শুরু থেকে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষ
থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, নির্বাচনে প্রচারণায় কম সুযোগ পাচ্ছেন তারা। একই
সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নেতাকর্মীদের অহেতুক ধরপাকড় ও হয়রানি করছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাচন কমিশনের নেয়া পদক্ষেপের প্রতি আস্থার কথা
জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। তার পক্ষে জোর
প্রচারণা চলছে নগরীজুড়ে। উন্নয়নের বিষয় সামনে এনে এ সিটির নগর পিতার হওয়ার
স্বপ্ন দেখছেন খালেক। স্থানীয় নির্বাচন হলেও জাতীয় ইস্যুকে বড় করে সামনে
আনছেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তার দলের চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার কারামুক্তি ও সামনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবির
প্রতি খুলনাবাসী ভোটের মাধ্যমে সমর্থন জানাবে বলে দাবি করে আসছেন তিনি।
প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত
নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখার চেষ্টা করছেন
তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে
দুই দল। সরকার নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় ভোটে জিতে। আর বিরোধী
জোটের প্রার্থী মঞ্জুকে জয়ী করে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থার প্রমাণ
করতে চায় ২০দলীয় জোট। নৌকা আর ধানের শীষের ভোটের লড়াইয়ে তাই বাড়তি উত্তেজনা
আর শঙ্কাও রয়েছে। স্থানীয় ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ভোট। ভোটের আগের
পরিস্থিতি দেখে অনেকে শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন।
যদিও নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে আসছে শান্তিপূর্ণ ভোটের সব আয়োজন করা
হয়েছে।
এদিকে গতকাল দিনভর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন দুই প্রার্থী। দুপুরে তালুকদার আবদুল খালেকের প্রচারণা চালানোর সময় তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। বুকের বামপাশে পাঞ্জাবির ওপর হাতের কারুকার্যে খচিত নৌকা প্রতীক। ঘাড়ের ওপর গোলাপী রঙের একটি তোয়ালে। শরীর ঘেমে পাঞ্জাবি গায়ের সঙ্গে লেপটে গেছে। মুখমণ্ডল দিয়েও টপটপ করে ঝরছে ঘাম। সেটাই মাঝে মাঝে মুছছেন তোয়ালে দিয়ে। রূপসা এলাকার ৩১ নং ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান তিনি। দিনভর একে একে ওয়ার্ডের বিভিন্ন ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিপইয়ার্ডের লবণচরা এলাকার স্লুইচগেটে গণসংযোগ করেন। এ সময় দেখা যায়, তিনি রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বস্তিতে উঁকি দিচ্ছেন। কোনো কোনো বস্তি থেকে বেরিয়ে আসছে নারী-পুরুষসহ বৃদ্ধা-শিশুরা। তিনি তাদের কারো মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, কারো বা হাতে হাত। আর একটা কথাই বলছেন- নিশ্চিন্তে থাকো। সাহস রাখো। তোমরা এখানেই থাকবে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী কেন লবণচরা বস্তিবাসীকে উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলছেন তার কারণ অবশ্য জানা গেল আরো কিছু সময় পর। তিনি দাবি করেন, বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা বস্তিবাসীদেরকে বলেছিলো, আওয়ামী লীগের মেয়র হলে উচ্ছেদ করা হবে তাদের। সেই কথার প্রেক্ষিতেই এমন কথা বলছিলেন তিনি। প্রত্যেককে একই আশ্বাস দিয়েই ভোট প্রার্থনা করছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডে সারাদিন তিনি গণসংযোগ ও ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালান। সকাল ৮টা থেকে তিনি এদিন প্রচারণায় নামেন। বেছে নেন ২৬ হাজার ১৩৮ ভোটারের ৩১ নং ওয়ার্ড। বিরামহীন প্রচারণায় তিনি ওয়ার্ডের প্রত্যেক অলিগলি, পাড়া মহল্লা এবং কল-কারখানার ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। এছাড়া সন্ধ্যায় রূপসা ব্রিজের নিচেই একটি নির্বাচনী সভায় অংশ নেন। তিনি একে একে মতিয়াখালী ব্রিজ, শিপইয়ার্ড, মোল্লাবাড়ি, জিন্নাহপাড়া, হঠাৎ বাজার, বান্দাবাজার, বোখারীপাড়া, মোক্তার হোসেন রোডে প্রচারণা চালান। একইসঙ্গে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেলের পক্ষেও প্রচারণা চালান। প্রচারণাকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, নগর জাসদের সভাপতি রফিকুল হক খোকন, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল ইসলাম মন্টু, মহিবুর রহমান পিন্টু, রফিকুল আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
অন্যদিকে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ধারাবাহিকভাবে দিনভর প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি মিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, শীতলাবাড়ি, মতলবের মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এই এলাকায় আড়াই ঘণ্টার মতো প্রচারণা চালান। এরপর চলে যান ১০ কিলোমিটার দূরে ৩ নং ওয়ার্ডের দৌলতপুরের শ্রমিক অধ্যুষিত স্টেশন ও ডিসি রোড এলাকায়। ১১টা ১৫ মিনিটে উত্তরা পাট সংস্থায় শ্রমিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে চলে যান খান ব্রাদার্সে। তাকে দেখে ছুটে আসেন ষাটোর্ধ্ব পাটশ্রমিক সোহরাব আলী। তিনি এই মেয়র প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, বাবা ভোট দিতে পারবো তো! উত্তরে মঞ্জু অভয় দিয়ে বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কেন্দ্রে যাবেন। সেখান থেকে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু চলে যান এফআর জুট ট্রেডিংয়ে। এখানে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি এই শহরেই মানুষ হয়েছি। আমি কোন সাহেব নয়, সাধারণ ঘরের সন্তান। বিগত দিনেও আপনাদের কাছে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমি কারো ভাই, কারো সন্তান হিসেবেই থাকতে চাই। এরপর তিনি দৌলতপুর রেলস্টেশন এলাকায় খুলনা ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইস্পাহানি মোড়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরমধ্যেই তিনি ফোনে খবর পান মহানগর শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান, ২৭ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাসুদ রেজা, জেলা বিএনপির নেতা জাহিদ হোসেন নির্বাচনী প্রচারণাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ খবর শুনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে আর লাভ কি! গণগ্রেপ্তারের কথা বারবার বললেও তাদের অভিযান তো থেমে নেই। এ সময় ওই মোড়ের বিনয় কর্মকার তাকে বলেন, স্যার আমরা নিরাপদে ভোট দিতে চাই। আমরা দা-কুড়াল বানিয়ে সংসার চালাই। রাজনীতি বুঝি না। তবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে চাই। এখান থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রচারণায় যান নগরীর মধ্যবর্তী এলাকা ১৭ নং ওয়ার্ডের সোনাডাঙ্গা, খাঁপাড়া, সুইপার কলোনি, ঈদগা মসজিদ রোড, আল ফারুক সোসাইটি মোড়ে। এখানে অবস্থানকালেই তিনি খবর পান সড়ক দুর্ঘটনায় খুলনা জলিল টাওয়ারের পূজা গার্মেন্টস-এর স্বত্বাধিকারী তরুণ দাসের মৃত্যুর খবর। তিনি তার মরদেহ দেখতে চলে যান ধর্মসভা মন্দিরে। এরপরও বিকালে আবারো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় বের হন। চলে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রচারণাকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি ভাষা সৈনিক অ্যাড. বজলুর রহমান, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. শাহ আলম, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা সভাপতি শেখ মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক নান্নু, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শেখ ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী: মঞ্জু
‘বাড়ি থেকে বেরোলেই ডিবি, বেরোলেই পুলিশ। গণগ্রেপ্তার অব্যাহত। কর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। আত্মগোপনে থেকে গণসংযোগ করতে হচ্ছে। ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরও ২১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের সার্বিক আচরণে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে’। ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী কণ্ঠে উল্লিখিত অভিযোগ তুলে ধরলেন খুলনা সিটি করপোরেশন-কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পুলিশের গণগ্রেপ্তার এবং হয়রানির প্রতিবাদে শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর মিয়াপাড়ায় নিজ বাস ভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু একটি অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন নির্বাচন দিতে কেসিসি নির্বাচনে আবারো সেনাবাহিনী নিয়োগের জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া কোনোভাবেই কেএমপি’র আওয়ামী পুলিশ দিয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারকে খুশি করতে চায়। এ কারণে বারবার সেনা বাহিনী নিয়োগের দাবি জানানো হলেও তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, খুলনার পুলিশ জঘন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রচারণার শুরুর দিকে শুধু কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলেও এখন নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত দেড়শ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরও ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরার ৩ জন এবং ২১ নং ওয়ার্ডের একজন-এ চারজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পুলিশের কাছে তাদের সন্ধান দাবি করেন। শত ঝড়-ঝাঁপটার মধ্যেও নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মনোবল একটুও কমেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, নগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, এডভোকেট বজলার রহমান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, মুসলীম লীগের এডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপি’র নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু, শামসুজ্জামান চঞ্চল, শরিফুল ইসলাম বাবুসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী প্রচাণায় বের হন।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের অঙ্গীকার খালেকের
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, খুলনা সিটি করপোরেশন অনেক এলাকার মানুষ এখনো পরিপূর্ণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ওইসব এলাকার অধিবাসীরা সব ধরনের সেবা ঠিকমত পাচ্ছে না। এসব এলাকার মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এবারের সিটি নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলে খুলনা সিটির দরিদ্র মানুষের জন্য সিডিসি’র পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। দরিদ্র বস্তিবাসীদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। একটি দল নির্বাচন এলেই কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা দীর্ঘদিন মেয়র পদে থেকেও খুলনার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি। তাদের সময়ে কেসিসিতে অস্থায়ী চাকরি পেতে হলেও ব্যাপক হারে দিতে হয়েছে ঘুষ। তিনি বলেন, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত কেসিসি গড়া এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহিতার আওতায় আনা আমার লক্ষ্য। এজন্য তিনি ১৫ই মে’র নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীর প্রত আহ্বান জানান।
শনিবার নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ৮টায় তিনি নগরীর মতিয়াখালী ব্রিজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এরপর শিপইয়ার্ড, মতিয়াখালী মৌজা, মোল্লাবাড়ী, লবণচরা, জিন্নাহ্পাড়া, হঠাৎবাজার, বান্ধাবাজার, বোখারীপাড়া, মোক্তার হোসেন রোড সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সালাম ও কুশলবিনিময় করেন। এ সময় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি নির্মাণাধীন ইসলামপাড়া মেইন রোড রোববারের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে দিতে ঠিকাদারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
গণসংযোগকালে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাসদ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও ১৪ দল নেতা রফিকুল হক খোকন, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল ইসলাম মন্টু, ৩১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো. ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাহেবুর রহমান পিটু মোল্লা, সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম, কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসাদুজ্জামান রাসেল, আওয়ামী লীগ নেতা হেমায়েত উদ্দিন, খান মো. কবির হোসেন, হিটু, জালাল আহমেদ, মোশারেফ হোসেন, আকরাম হোসেন, আজিজুল বারী বাহার, শেখ আরিদুল্লাহ, আঃ বারেক, যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেন, আসাদুজ্জামান শাহীন প্রমুখ।
এদিকে গতকাল দিনভর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন দুই প্রার্থী। দুপুরে তালুকদার আবদুল খালেকের প্রচারণা চালানোর সময় তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। বুকের বামপাশে পাঞ্জাবির ওপর হাতের কারুকার্যে খচিত নৌকা প্রতীক। ঘাড়ের ওপর গোলাপী রঙের একটি তোয়ালে। শরীর ঘেমে পাঞ্জাবি গায়ের সঙ্গে লেপটে গেছে। মুখমণ্ডল দিয়েও টপটপ করে ঝরছে ঘাম। সেটাই মাঝে মাঝে মুছছেন তোয়ালে দিয়ে। রূপসা এলাকার ৩১ নং ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান তিনি। দিনভর একে একে ওয়ার্ডের বিভিন্ন ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিপইয়ার্ডের লবণচরা এলাকার স্লুইচগেটে গণসংযোগ করেন। এ সময় দেখা যায়, তিনি রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বস্তিতে উঁকি দিচ্ছেন। কোনো কোনো বস্তি থেকে বেরিয়ে আসছে নারী-পুরুষসহ বৃদ্ধা-শিশুরা। তিনি তাদের কারো মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, কারো বা হাতে হাত। আর একটা কথাই বলছেন- নিশ্চিন্তে থাকো। সাহস রাখো। তোমরা এখানেই থাকবে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী কেন লবণচরা বস্তিবাসীকে উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলছেন তার কারণ অবশ্য জানা গেল আরো কিছু সময় পর। তিনি দাবি করেন, বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা বস্তিবাসীদেরকে বলেছিলো, আওয়ামী লীগের মেয়র হলে উচ্ছেদ করা হবে তাদের। সেই কথার প্রেক্ষিতেই এমন কথা বলছিলেন তিনি। প্রত্যেককে একই আশ্বাস দিয়েই ভোট প্রার্থনা করছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডে সারাদিন তিনি গণসংযোগ ও ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালান। সকাল ৮টা থেকে তিনি এদিন প্রচারণায় নামেন। বেছে নেন ২৬ হাজার ১৩৮ ভোটারের ৩১ নং ওয়ার্ড। বিরামহীন প্রচারণায় তিনি ওয়ার্ডের প্রত্যেক অলিগলি, পাড়া মহল্লা এবং কল-কারখানার ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। এছাড়া সন্ধ্যায় রূপসা ব্রিজের নিচেই একটি নির্বাচনী সভায় অংশ নেন। তিনি একে একে মতিয়াখালী ব্রিজ, শিপইয়ার্ড, মোল্লাবাড়ি, জিন্নাহপাড়া, হঠাৎ বাজার, বান্দাবাজার, বোখারীপাড়া, মোক্তার হোসেন রোডে প্রচারণা চালান। একইসঙ্গে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেলের পক্ষেও প্রচারণা চালান। প্রচারণাকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, নগর জাসদের সভাপতি রফিকুল হক খোকন, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল ইসলাম মন্টু, মহিবুর রহমান পিন্টু, রফিকুল আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
অন্যদিকে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ধারাবাহিকভাবে দিনভর প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি মিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, শীতলাবাড়ি, মতলবের মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এই এলাকায় আড়াই ঘণ্টার মতো প্রচারণা চালান। এরপর চলে যান ১০ কিলোমিটার দূরে ৩ নং ওয়ার্ডের দৌলতপুরের শ্রমিক অধ্যুষিত স্টেশন ও ডিসি রোড এলাকায়। ১১টা ১৫ মিনিটে উত্তরা পাট সংস্থায় শ্রমিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে চলে যান খান ব্রাদার্সে। তাকে দেখে ছুটে আসেন ষাটোর্ধ্ব পাটশ্রমিক সোহরাব আলী। তিনি এই মেয়র প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, বাবা ভোট দিতে পারবো তো! উত্তরে মঞ্জু অভয় দিয়ে বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কেন্দ্রে যাবেন। সেখান থেকে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু চলে যান এফআর জুট ট্রেডিংয়ে। এখানে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি এই শহরেই মানুষ হয়েছি। আমি কোন সাহেব নয়, সাধারণ ঘরের সন্তান। বিগত দিনেও আপনাদের কাছে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমি কারো ভাই, কারো সন্তান হিসেবেই থাকতে চাই। এরপর তিনি দৌলতপুর রেলস্টেশন এলাকায় খুলনা ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইস্পাহানি মোড়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরমধ্যেই তিনি ফোনে খবর পান মহানগর শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান, ২৭ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাসুদ রেজা, জেলা বিএনপির নেতা জাহিদ হোসেন নির্বাচনী প্রচারণাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ খবর শুনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে আর লাভ কি! গণগ্রেপ্তারের কথা বারবার বললেও তাদের অভিযান তো থেমে নেই। এ সময় ওই মোড়ের বিনয় কর্মকার তাকে বলেন, স্যার আমরা নিরাপদে ভোট দিতে চাই। আমরা দা-কুড়াল বানিয়ে সংসার চালাই। রাজনীতি বুঝি না। তবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে চাই। এখান থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রচারণায় যান নগরীর মধ্যবর্তী এলাকা ১৭ নং ওয়ার্ডের সোনাডাঙ্গা, খাঁপাড়া, সুইপার কলোনি, ঈদগা মসজিদ রোড, আল ফারুক সোসাইটি মোড়ে। এখানে অবস্থানকালেই তিনি খবর পান সড়ক দুর্ঘটনায় খুলনা জলিল টাওয়ারের পূজা গার্মেন্টস-এর স্বত্বাধিকারী তরুণ দাসের মৃত্যুর খবর। তিনি তার মরদেহ দেখতে চলে যান ধর্মসভা মন্দিরে। এরপরও বিকালে আবারো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় বের হন। চলে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রচারণাকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি ভাষা সৈনিক অ্যাড. বজলুর রহমান, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. শাহ আলম, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা সভাপতি শেখ মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক নান্নু, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শেখ ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী: মঞ্জু
‘বাড়ি থেকে বেরোলেই ডিবি, বেরোলেই পুলিশ। গণগ্রেপ্তার অব্যাহত। কর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। আত্মগোপনে থেকে গণসংযোগ করতে হচ্ছে। ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরও ২১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের সার্বিক আচরণে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে’। ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী কণ্ঠে উল্লিখিত অভিযোগ তুলে ধরলেন খুলনা সিটি করপোরেশন-কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পুলিশের গণগ্রেপ্তার এবং হয়রানির প্রতিবাদে শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর মিয়াপাড়ায় নিজ বাস ভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু একটি অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন নির্বাচন দিতে কেসিসি নির্বাচনে আবারো সেনাবাহিনী নিয়োগের জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া কোনোভাবেই কেএমপি’র আওয়ামী পুলিশ দিয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারকে খুশি করতে চায়। এ কারণে বারবার সেনা বাহিনী নিয়োগের দাবি জানানো হলেও তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, খুলনার পুলিশ জঘন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রচারণার শুরুর দিকে শুধু কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলেও এখন নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত দেড়শ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরও ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরার ৩ জন এবং ২১ নং ওয়ার্ডের একজন-এ চারজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পুলিশের কাছে তাদের সন্ধান দাবি করেন। শত ঝড়-ঝাঁপটার মধ্যেও নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মনোবল একটুও কমেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, নগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, এডভোকেট বজলার রহমান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, মুসলীম লীগের এডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপি’র নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু, শামসুজ্জামান চঞ্চল, শরিফুল ইসলাম বাবুসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী প্রচাণায় বের হন।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের অঙ্গীকার খালেকের
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, খুলনা সিটি করপোরেশন অনেক এলাকার মানুষ এখনো পরিপূর্ণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ওইসব এলাকার অধিবাসীরা সব ধরনের সেবা ঠিকমত পাচ্ছে না। এসব এলাকার মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এবারের সিটি নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলে খুলনা সিটির দরিদ্র মানুষের জন্য সিডিসি’র পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। দরিদ্র বস্তিবাসীদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। একটি দল নির্বাচন এলেই কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা দীর্ঘদিন মেয়র পদে থেকেও খুলনার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি। তাদের সময়ে কেসিসিতে অস্থায়ী চাকরি পেতে হলেও ব্যাপক হারে দিতে হয়েছে ঘুষ। তিনি বলেন, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত কেসিসি গড়া এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহিতার আওতায় আনা আমার লক্ষ্য। এজন্য তিনি ১৫ই মে’র নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীর প্রত আহ্বান জানান।
শনিবার নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ৮টায় তিনি নগরীর মতিয়াখালী ব্রিজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এরপর শিপইয়ার্ড, মতিয়াখালী মৌজা, মোল্লাবাড়ী, লবণচরা, জিন্নাহ্পাড়া, হঠাৎবাজার, বান্ধাবাজার, বোখারীপাড়া, মোক্তার হোসেন রোড সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সালাম ও কুশলবিনিময় করেন। এ সময় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি নির্মাণাধীন ইসলামপাড়া মেইন রোড রোববারের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে দিতে ঠিকাদারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
গণসংযোগকালে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাসদ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও ১৪ দল নেতা রফিকুল হক খোকন, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল ইসলাম মন্টু, ৩১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো. ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাহেবুর রহমান পিটু মোল্লা, সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম, কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসাদুজ্জামান রাসেল, আওয়ামী লীগ নেতা হেমায়েত উদ্দিন, খান মো. কবির হোসেন, হিটু, জালাল আহমেদ, মোশারেফ হোসেন, আকরাম হোসেন, আজিজুল বারী বাহার, শেখ আরিদুল্লাহ, আঃ বারেক, যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেন, আসাদুজ্জামান শাহীন প্রমুখ।
No comments