কোটি মানুষের আনন্দের রাত
মধ্যরাতের
পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যখন মহাকাশের দিকে ছোটে তখন বাংলাদেশের কোটি
মানুষে চোখ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাডে।
ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশের দিকে উড়ার সময় আনন্দে
ঝিলিক দিয়ে উঠে কোটি মানুষের চোখ। কেনেডি স্পেস সেন্টারে জড়ো হওয়া
বাংলাদেশিরা বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে। আগের দিন রাতে
শেষ মিনিটে ত্রুটি ধরা পড়ায় আকাশে না উড়লেও শুক্রবার রাতে প্রথম চেষ্টাতেই
মহাকাশ পানে ছুটে ১৬ কোটি মানুষের গর্বের স্যাটেলাইট। এর সঙ্গে স্যাটেলাইট
এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। মহাকাশ জয়ের রাতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়
সারা দেশে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের
ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে মহাকাশের
পথে উড়াল দেয় বঙ্গবন্ধু-১। এর মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট
মহাকাশে পাঠালো বাংলাদেশ। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর জন্য
দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছন। প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছা বাণীতে বলেছেন,
দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক যোগ করবে। এদিকে
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন,
অত্যন্ত সফলভাবে ও নির্দিষ্ট সময়েই স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ হয়েছে। এটা
আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের খবর। তিনি আরও বলেন, অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১
ডিগ্রিতে পৌঁছাতে স্যাটেলাইটটির ১০-১২দিন সময় লাগতে পারে। অরবিটাল স্লটে
সেট হওয়ার পর তা সিগন্যাল পাঠানো শুরু করবে। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া
আর কোনও কাজ নেই। এদিকে শুক্রবার রাতেও দেশের সর্বস্তরের মানুষ উৎক্ষেপণের
সরাসরি সম্প্রচার দেখতে জেগে ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বহু
বাংলাদেশিও এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার ও ওয়েবকাস্ট
প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের
নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ
করেন। ফ্লোরিডার স্বচ্ছ আকাশে প্রায় সাত মিনিট স্যাটেলাইটটি দেখা যায়।
এরপরই সজীব ওয়াজেদ জয়ের মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যায়। এ সময় জয়
মোবাইলের ভিডিওকলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে উৎক্ষেপণস্থলে উপস্থিত
বাংলাদেশিদের উচ্ছ্বাস দেখান। এ সময় কেউ কেউ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
স্লোগান দেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ আর অনেককে দেখা গেছে চোখের
জল মুছতে। সবমিলিয়ে উপস্থিত বাংলাদেশিরা ওইসময় আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন।
বাংলাদেশ থেকে কাভার করতে যাওয়া কয়েক সাংবাদিক মানবজমিনকে বলেন,
স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের পরপরই সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন
জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, মহাকাশে আজ
উড়লো বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য
হলাম। উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি স্পেসএক্সের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি সমপ্রচার করা
হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটি কোটি বাংলাদেশি নির্ঘুম চোখে তা প্রত্যক্ষ
করেন। ঘটনাস্থল কেনেডি স্পেস সেন্টারে সমবেত বাঙালিরা সমবেত কণ্ঠে ধরেন
জাতীয় সংগীত, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। উৎক্ষেপণস্থল থেকে ১৩
হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষও তখন গেয়ে ওঠেন একই সংগীত।
শুরু হয় চিৎকার, হর্ষধ্বনি ও আনন্দাশ্রুর বান। উৎক্ষেপণের পর ৩ হাজার ৭০০
কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইটটির বহনকারী রকেট ফ্যালকন-৯ সোজা আকাশে উঠে যায়।
মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে যেতে এটিকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে
হবে। উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষকারী আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক
বলেন, আমি আজকের দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে
চাই, যিনি ১৯৭৪ সালে দেশের সর্ব প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপনের
মাধ্যমে মহাকাশ যুগে প্রবেশের কার্যক্রমের সূচনা করেন। তিনি বলেন,
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
বাংলাদেশের প্রযুক্তিকেন্দ্রিক উত্তরণের দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু-১
স্যাটেলাইটে ২৬টি ?কু-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার ও ১৪টি সি-ব্যান্ড
ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এটি সক্রিয় হলে দেশের টেলিভিশন ও ব্রডব্যান্ড
যোগাযোগে উন্নতি ঘটবে। এ স্যাটেলাইটের কারণে তিন ধরনের সেবা ও ৪০ ধরনের
সুফল পাবে দেশবাসী। শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলেও
প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তা উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে নতুন
তারিখ ঠিক হয় এ বছরের ১লা মার্চ। আবারও পরিবর্তন হয় সম্ভাব্য তারিখ। নতুন
তারিখ ধরা হয় মার্চের শেষ সপ্তাহ বা ২৬-৩১ মার্চের মধ্যে যে কোনো দিন।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও মহাকাশে ওড়েনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বেশ কয়েকবার
তারিখ নির্ধারণের পরও স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করতে দেরি হচ্ছিল। সর্বশেষ গত
১০ই মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের সবকিছু চূড়ান্ত
হয়ে যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আটকে যায় উৎক্ষেপণ। কারিগরি জটিলতায় এমন
পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে জানিয়েছিল মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা
প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। বিটিআরসি জানিয়েছে, দু’টি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণে
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে ১০ দিন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ দিনের
মতো সময় লাগবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাাটির
বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনে এর সংযোগ পেতে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন হবে।
মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় থেকে উপগ্রহটি প্রাকৃতিক
দুর্যোগ মোকাবিলায় আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণে দেশের সক্ষমতা
সম্প্রসারিত করবে। উপগ্রহটি থেকে সার্ক দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া,
ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান,
তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং,
টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষিখাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের
জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা
সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরো সহজতর করবে।
যেভাবে কক্ষপথে লাল-সবুজের নিশানা
উৎক্ষেপণের পর নির্ধারিত ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পৌঁছে যায়। রকেট উৎক্ষেপণ সংস্থা স্পেসএক্স টুইটারে জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে (জিটিও) স্যাটেলাইটটির অবতরণ নিশ্চিত করে। স্যাটেলাইটটি বহন করে নিয়ে যায় স্পেসএক্স কোম্পানির সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রকেট ফ্যালকন-৯ এর ব্লক-৫ সংস্করণ। সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইট। রকেটটি মহাকাশে বাংলাদেশের ভাড়া নেয়া অরবিটাল স্লট ১১৯.১ ডিগ্রিতে নিয়ে যাবে স্যাটেলাইটটিকে। স্পেসএক্স’র দেয়া তথ্য অনুসারে, পুরো উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপটি কাউন্ট ডাউন এবং দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে লঞ্চ, ল্যান্ডিং ও স্যাটেলাইট ডেপলয়মেন্ট। প্রথম ধাপে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শুরু পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপটিতে রয়েছে উৎক্ষেপণের পর অবতরণ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়া। সংস্থাটি জানায়, উৎক্ষেপণের ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পর রকেট ম্যাক্স কিউতে পৌঁছায়। ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে প্রথম ধাপে মেইন ইঞ্জিন আলাদা হয়। ২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দ্বিতীয় ধাপে ইঞ্জিন চালু হয়। ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে ঘটে ফেয়ারিং ডেপলয়মেন্ট। ৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর প্রথম পর্বের এন্ট্রি বার্ন হয়। ৮ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর প্রথম পর্বের অবতরণ, ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর দ্বিতীয় পর্বের ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন (এসইসিও-১) হয়। ২৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে দ্বিতীয় ধাপে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন (এসইসিও-২) হয়। এরপর ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে স্যাটেলাইটটি অরবিটে বা কক্ষপথে অবতরণ করে। স্যাটেলাইটটি অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে অবস্থান করবে। এই অবস্থানে পৌঁছাতে ১২ দিন সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছে সেট হওয়ার পর সিগন্যাল পাঠাতে স্যাটেলাইটটির ১০-১২দিন সময় লাগতে পারে। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের অগ্রগতিতে একটি নতুন মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর জন্য দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক যোগ করবে। সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর গতকাল এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা মহাকাশে উড্ডয়ন করায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইন ক্লাবের গর্বিত সদস্য হিসেবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, এই নতুন স্যাটেলাইট বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তাজাকিস্তান ও কাজাকিস্তানসহ গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন যে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বজায় রাখা ছাড়া দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্যই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ তথ্য ও ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এদিকে বিশ্বের ৫৭তম রাষ্ট্র হিসেবে মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যেভাবে কক্ষপথে লাল-সবুজের নিশানা
উৎক্ষেপণের পর নির্ধারিত ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পৌঁছে যায়। রকেট উৎক্ষেপণ সংস্থা স্পেসএক্স টুইটারে জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে (জিটিও) স্যাটেলাইটটির অবতরণ নিশ্চিত করে। স্যাটেলাইটটি বহন করে নিয়ে যায় স্পেসএক্স কোম্পানির সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রকেট ফ্যালকন-৯ এর ব্লক-৫ সংস্করণ। সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইট। রকেটটি মহাকাশে বাংলাদেশের ভাড়া নেয়া অরবিটাল স্লট ১১৯.১ ডিগ্রিতে নিয়ে যাবে স্যাটেলাইটটিকে। স্পেসএক্স’র দেয়া তথ্য অনুসারে, পুরো উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপটি কাউন্ট ডাউন এবং দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে লঞ্চ, ল্যান্ডিং ও স্যাটেলাইট ডেপলয়মেন্ট। প্রথম ধাপে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শুরু পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপটিতে রয়েছে উৎক্ষেপণের পর অবতরণ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়া। সংস্থাটি জানায়, উৎক্ষেপণের ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পর রকেট ম্যাক্স কিউতে পৌঁছায়। ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে প্রথম ধাপে মেইন ইঞ্জিন আলাদা হয়। ২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দ্বিতীয় ধাপে ইঞ্জিন চালু হয়। ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে ঘটে ফেয়ারিং ডেপলয়মেন্ট। ৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর প্রথম পর্বের এন্ট্রি বার্ন হয়। ৮ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর প্রথম পর্বের অবতরণ, ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর দ্বিতীয় পর্বের ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন (এসইসিও-১) হয়। ২৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে দ্বিতীয় ধাপে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন (এসইসিও-২) হয়। এরপর ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে স্যাটেলাইটটি অরবিটে বা কক্ষপথে অবতরণ করে। স্যাটেলাইটটি অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে অবস্থান করবে। এই অবস্থানে পৌঁছাতে ১২ দিন সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছে সেট হওয়ার পর সিগন্যাল পাঠাতে স্যাটেলাইটটির ১০-১২দিন সময় লাগতে পারে। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের অগ্রগতিতে একটি নতুন মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর জন্য দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক যোগ করবে। সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর গতকাল এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা মহাকাশে উড্ডয়ন করায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইন ক্লাবের গর্বিত সদস্য হিসেবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, এই নতুন স্যাটেলাইট বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তাজাকিস্তান ও কাজাকিস্তানসহ গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন যে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বজায় রাখা ছাড়া দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্যই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ তথ্য ও ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এদিকে বিশ্বের ৫৭তম রাষ্ট্র হিসেবে মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
No comments