অপেক্ষার দরকার নেই শপথ নিয়ে নিন -ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
বিএনপির
সন্দেহটাই এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির
সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি এতদিন যেটা সন্দেহ করে
আসছিল এখন সেটাই ঘটছে। ক্ষমতাসীনদের একজন নেতা বলে দিয়েছেন- তাদের বিজয় এখন
আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তার মানে নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন
কেবল আনুষ্ঠানিকতা। এখন কেবল গেজেট নোটিফিকেশন আর শপথ গ্রহণ হবে। ক্ষমতাসীন
দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি তাই হয় তবে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত
অপেক্ষা করার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। তো করে নেন? আপনারা শপথ নিয়ে
নিন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার সরকারি
ষড়যন্ত্র বন্ধ ও সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক
অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য,
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়নে-অর্জনে জনগণ খুশি,
নির্বাচনে বিজয় একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন
বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এতদিন আমরা যে সন্দেহ করে
আসছিলাম আজকে তারা নিজেরাই হয়তো অজ্ঞাতে বা হয়তো মনে যেটা আছে তা হঠাৎ করে
বলে ফেলেছেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেছেন। মওদুদ বলেন, সরকার চাইছে এককভাবে ভোট
করার এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যাতে কোনো দল আর নির্বাচনে না যায়।
তাহলে ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে পারবে। আর সেটি আওয়ামী লীগ
আজকে অনেকটা খোলামেলাভাবে বলেই দিয়েছে। তবে সরকার আবারো বিরোধী দল বা
মতবিহীন নির্বাচনের নীলনকশা করছে। নীলনকশাটা হচ্ছে, নির্বাচনে যেন বিরোধী
মত না থাকে। তবে বাংলাদেশের মাটিতে তা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। এই
নীলনকশা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন
হবে, আজকে মার্চ মাসে বলে দিচ্ছেন সব হয়ে গেছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা
বাকি। সুতরাং আপনারা বিরোধী দলে যারা আছেন তারা সবাই বাড়িতে চলে যান। দরকার
নেই আপনাদের। সরকারের এ রকমের মনোভাব যখন তৈরি হয় তখন সে সরকার যে কত নিচে
নেমে গেছে তা পরিষ্কার হয়। দেশের মানুষের সঙ্গে যে তাদের কোনো সম্পর্ক
নেই- সেটাই প্রমাণ করে। যারা গণতন্ত্রের কথা বলে তাদের সকালে উঠে আয়নায়
নিজের চেহারা দেখার পরামর্শ দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সত্য কথা বলবেন,
না মিথ্যা কথা বলবেন? নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন। তখনই আপনারা উত্তর পাবেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বেশি বেশি গণতন্ত্রের কথা
বলেন- এমন ৫ জন নেতা এলাকায় যান। দেখবেন প্রথমত তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত
হননি। দ্বিতীয়ত বিরোধী দলের কোনো ঘরোয়া প্রোগ্রামও করতে দেন না। এলাকায় দল
চালায় থানার ওসি। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই করতে পারেন
না। কেউ যদি এসবের একটি কথাও মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি রাজনীতি
ছেড়ে দেব। তিনি বলেন, যারা বলেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু
বাস্তবে করেন অন্যটা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা দিয়ে হয়
কারাগারে না হয় ঘরছাড়া করে রেখেছে। আমি এখন ইচ্ছা করেই খুব একটা গ্রামের
বাড়ি যাই না। গেলেই অন্তত আমার ৫০ জন ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। তারা মা-বাবার
সঙ্গে ঈদ করতে পারে না। রাতে ঘরে ঘুমোতে পারে না। বিএনপি নীতিনির্ধারক
ফোরামের সিনিয়র এ সদস্য বলেন, বিশ্বময় স্বৈরাচার সরকারগুলোর পতন যেভাবে
হয়েছে বর্তমান সরকারের পতনও একইভাবে হবে। এটা ইতিহাসের অবধারিত পরিণতি।
এখান থেকে কেউ নিস্তার পায়নি, পাবেও না। সেটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। তিনি
বলেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি যতই বিলম্বিত হবে ততই তার জনপ্রিয়তা বাড়বে।
যেদিন তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন সেদিন থেকে বাংলাদেশের মানুষ রাজপথে
নেমে আসবে। সেই জোয়ারে বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এই সরকারের
আতঙ্ক সেটাই। সেই আতঙ্ক বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের দূর করতে হবে। নাগরিক অধিকার
আন্দোলন ফোরামের উপদেষ্টা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাছির
উদ্দিন হাজারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায়
প্রতিবাদ সভায় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী
কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির
সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম
সম্পাদক আলহাজ ভিপি ইব্রাহিম ও বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আলহাজ মোশাররফ
হোসেন বক্তব্য দেন।
No comments