নানা অজুহাতে ঋণের সুদ কমাতে গড়িমসি
ব্যাংক
ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে চাইছে সরকার। এ চাওয়া খোদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদেরও একই চাওয়া। এর পক্ষে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার কমাতে খুব
বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে। ব্যাংকগুলোর বক্তব্য
হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে সুদের হার কমাতে তারা বাধ্য। তবে কমালে
কী কী প্রভাব পড়বে, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে কস্ট অব ফান্ড (তহবিল
ব্যবস্থাপনা ব্যয়) বেশি হওয়ায় ব্যাংক লোকসানে পড়বে। আর ব্যাংক লোকসানে
পড়লে পুঁজিবাজারসহ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে সরকারদলীয়
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে কোনো অজুহাত চলবে না। মনে রাখতে
হবে, এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। দেশের শিল্প ও বিনিয়োগের স্বার্থে ঋণের
সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার এ নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলে এবং তা
কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে
আনা সম্ভব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- পুরনো খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো, নতুন ঋণ
খেলাপিতে না পড়া, মালিকদের বেআইনি সুবিধা বন্ধ করা, ব্যাংক পরিচালনায়
অতিরিক্ত খরচ কমানো অর্থাৎ ব্যাংকারদের উচ্চ বেতন-ভাতাসহ বিলাসী সব ব্যয়ের
লাগাম টেনে ধরতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার কমে
আসবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে আরও দক্ষতা দেখাতে হবে।
তবে এর আগে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুশাসন। সম্প্রতি গণভবনে এক অনুষ্ঠানে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংক মালিকদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনারা তো
ব্যাংকের মালিক। আপনাদের তো সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়ে যাচ্ছি, আপনারা
ব্যাংকের সুদের হার কমান। ব্যাংকের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক
ডিজিটের মধ্যে আনেন।’ ওই অনুষ্ঠানে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের
সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতা ও স্ট্যান্ডার্ড
ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি
বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ
দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে অচিরেই কাজ শুরু করব।
কিভাবে এ হার সিঙ্গেল
ডিজিটে নামিয়ে আনা যায়। তিনি বলেন, এখন কিছু ক্ষেত্রে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল
ডিজিটেই রয়েছে। এর মধ্যে রফতানি ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ। এভাবে কিছু
ক্ষেত্রে এ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা যাবে। আমরা সে ব্যাপারে কাজ শুরু
করব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯টি
ব্যাংকে ঋণের সুদের গড় হার ডাবল ডিজিটে অবস্থান করেছে। এটি ফেব্র“য়ারিতে
আরও বেড়েছে। এছাড়া গড় সুদের হার ১২ শতাংশ হলেও একক ঋণে সুদের হার কোনো কোনো
ব্যাংকের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে
ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন
যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার ডাবল ডিজিটে অবস্থান করায় আমরা
উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঠিক রাখতে নতুন বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
সাধারণত নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মূলধনের জোগান প্রাথমিকভাবে
ব্যাংকগুলো দিয়ে থাকে। এদের সুদের হার বেশি হলে নতুনরা উদ্যোক্তা হিসেবে
ব্যবসা শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, এখন দায় এড়াতে এক পক্ষ আরেক
পক্ষকে দোষ দিচ্ছে। এটি তো সবার চোখের সামনে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ
মন্ত্রণালয় কি করেছিল। ব্যাংকগুলো তখন নীরব ছিল কেন? এমন পরিস্থিতি হবে
ব্যাংকগুলো কি জানত না। পরস্পরকে দোষ না দিয়ে এখন সুদের হার কমানোসহ
সুপারভিশন বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের তারল্য সংকটের
সুস্পষ্ট কারণও ব্যাংকগুলো দেখাতে পারেনি। ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ কমার
কারণে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে এটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত নয়। ব্যাংকগুলোর
ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন- অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের
চেয়ারম্যান (এবিবি) ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর
রহমান যুগান্তরকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে ব্যাংকের ঋণের
সুদহার কমাব। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাবগুলোও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন,
কস্ট অব ফান্ড বেড়ে গেছে। এখন ঋণের সুদ হার কমালে ব্যাংক লোকসানে পড়বে। আর
ব্যাংক লোকসানে পড়লে পুরো অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
No comments