উন্নয়নশীল কাতারে দেশ আগামীর চ্যালেঞ্জ
উন্নয়নশীল
দেশের স্বীকৃতি অর্জনে প্রাথমিক ধাপ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ
হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া সব শর্ত পূরণ করায় এ স্বীকৃতি মেলেছে।
ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক
উত্তরণ ঘটবে। তবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে
চূড়ান্তভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য নির্দিষ্ট কিছু
সূচকে অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন,
বাংলাদেশের এ অর্জন অনন্য ঘটনা। তবে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে
হবে। এই অর্জনের বড় ইতিবাচক দিক হলো আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের দর
কষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে। চ্যালেঞ্জের
মধ্যে আছে উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে বাণিজ্যে যে
অগ্রাধিকার পায় তার সবটুকু পাবে না। আবার বৈদেশিক অনুদান, কম সুদের ঋণও কমে
আসবে। যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলা করে মানুষের জীবনমানের ক্রমাগত উন্নতি করা সম্ভব বলে মনে করেন
অর্থনীতিবিদরা। এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে ও পরে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, তা
মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন
তারা। আর মসৃণ উত্তরণের জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, রাজস্ব
আয় বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হবে। এসব
উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নে নীতির ধারাবাহিকতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায়
রাখা জরুরি।
চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যারা এর আগে এলডিসি থেকে বের হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। প্রথমত, সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হতে হবে। উন্নতি করতে হবে জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষায়। বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
উচ্চ মূল্য সংযোজন হয় এমন শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে প্রবৃদ্ধির হার ও বৈদেশিক সাহায্য সূচকে পতন হতে পারে। রেমিট্যান্স কমতে পারে। কর আদায় না বাড়লে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নতুন চাপ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি একটি মাত্র পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। উন্নয়নশীল দেশ হলে বৈদেশিক ঋণে রেয়াতি সুদহার থাকবে না। বৈশ্বিক বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাও কমবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দরকার সুশাসন। সুশাসন না থাকলে যেসব প্রতিষ্ঠান দেশকে স্থিতিশীলভাবে ধরে রাখে, সেগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। এ জন্য গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশের এ অর্জন নিয়ে খুব বেশি আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এ অর্জনে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্থায়নে চাপ তৈরি হবে। কিন্তু দরকষাকষির দক্ষতা বাড়লে ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বড় চাপ হবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনেক কম সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ পায়। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঋণ দেয় আইডিএ। আরো কয়েক বছর পর হয়তো বাংলাদেশ আইডিএ ঋণ পাবে না। বাংলাদেশকে এ বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে। এছাড়া চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রথমত অবকাঠামো উন্নয়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা আরো বেগবান করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মকানুনের জটিলতা দূর করতে হবে। মানবসম্পদ বিশেষত শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো- শুল্কমুক্ত সুবিধা উঠে গেলে আমদানিকারক দেশের ভোক্তাদের ওপর তার প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশকে নতুনভাবে দরকষাকষির প্রস্তুতি নিতে হবে। সুবিধাগুলো যাতে কোনো না কোনোভাবে বজায় থাকে তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগসহ এফডিআই বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, উৎপাদন ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া রেমিট্যান্স ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এই করণীয়গুলো ঠিকঠাক না হলে শুধু স্বীকৃতিতে তেমন উপকার হবে না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মুনসুর বলেন, আমাদের এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে। এর পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আমরা মাঝখানে আটকে না যাই। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে এখানেই যেন আটকে থেকে না যাই। সামনে এগুতে হবে। তিনি বলেন, এজন্য আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে আমাদের মাঝপথেই হোঁচট খেতে হবে। এদিকে আমাদের বেশি করে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের প্রচুর কাজ করতে হবে। ব্যয় সংকোচনমুখী হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এই গবেষক।
চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যারা এর আগে এলডিসি থেকে বের হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। প্রথমত, সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হতে হবে। উন্নতি করতে হবে জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষায়। বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
উচ্চ মূল্য সংযোজন হয় এমন শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে প্রবৃদ্ধির হার ও বৈদেশিক সাহায্য সূচকে পতন হতে পারে। রেমিট্যান্স কমতে পারে। কর আদায় না বাড়লে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নতুন চাপ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি একটি মাত্র পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। উন্নয়নশীল দেশ হলে বৈদেশিক ঋণে রেয়াতি সুদহার থাকবে না। বৈশ্বিক বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাও কমবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দরকার সুশাসন। সুশাসন না থাকলে যেসব প্রতিষ্ঠান দেশকে স্থিতিশীলভাবে ধরে রাখে, সেগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। এ জন্য গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশের এ অর্জন নিয়ে খুব বেশি আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এ অর্জনে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্থায়নে চাপ তৈরি হবে। কিন্তু দরকষাকষির দক্ষতা বাড়লে ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বড় চাপ হবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনেক কম সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ পায়। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঋণ দেয় আইডিএ। আরো কয়েক বছর পর হয়তো বাংলাদেশ আইডিএ ঋণ পাবে না। বাংলাদেশকে এ বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে। এছাড়া চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রথমত অবকাঠামো উন্নয়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা আরো বেগবান করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মকানুনের জটিলতা দূর করতে হবে। মানবসম্পদ বিশেষত শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো- শুল্কমুক্ত সুবিধা উঠে গেলে আমদানিকারক দেশের ভোক্তাদের ওপর তার প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশকে নতুনভাবে দরকষাকষির প্রস্তুতি নিতে হবে। সুবিধাগুলো যাতে কোনো না কোনোভাবে বজায় থাকে তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগসহ এফডিআই বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, উৎপাদন ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া রেমিট্যান্স ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এই করণীয়গুলো ঠিকঠাক না হলে শুধু স্বীকৃতিতে তেমন উপকার হবে না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মুনসুর বলেন, আমাদের এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে। এর পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আমরা মাঝখানে আটকে না যাই। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে এখানেই যেন আটকে থেকে না যাই। সামনে এগুতে হবে। তিনি বলেন, এজন্য আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে আমাদের মাঝপথেই হোঁচট খেতে হবে। এদিকে আমাদের বেশি করে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের প্রচুর কাজ করতে হবে। ব্যয় সংকোচনমুখী হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এই গবেষক।
No comments