বিপজ্জনক ত্রিভুবন
বিশ্বের
সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমান অবতরণ চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০টিরও
বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫০ জনেরও বেশি। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত
হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এখানে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে পাহাড় আর ঘন
কুয়াশাকে দায়ী করা হয়। চারপাশ উঁচু পাহাড়ে ঘেরা বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের
সময় তী দৃষ্টি রাখতে হয় চালকদের। অটোমেটিক ল্যান্ডিং সিস্টেমও নেই।
দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি লেগেই আছে এ বিমানবন্দরটিতে। এখানে প্রথম দুর্ঘটনা
ঘটে ১৯৭২ সালের ১০ মে। থাই এয়ারওয়েজের ডগলাস ডিসি-৮ বিমানটি অবতরণের সময়
রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। বিমানটিতে ১০০ জনের মতো যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন।
দুর্ঘটনায় একজন প্রাণ হারালেও অনেকেই আহত হয়। ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের
একটি এয়ারবাস অবতরণের সময় পাহাড়ে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন ১১৩
যাত্রীর সবাই। ওই বছর সেপ্টেম্বরে আরও একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয়। পিআইএর
বিমান বিধ্বস্ত হলে ১৬৭ জনের সবাই প্রাণ হারান। ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি
নেপাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আরএ-১৩৩ এ বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে দু’জন
নিহত হন। ১৯৯৯ সালের ৭ জুলাই লুফথানসার কার্গো বোয়িং ৭২৭ আকাশে ওড়ার ৫
মিনিট পর চম্পাদেবী পর্বতে বিধ্বস্ত হয়। ৫ ক্রুর সবাই মারা যান। ৫
সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ নিকন এয়ার ফ্লাইট ১২৮ পোখারা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার সময়
বিধ্বস্ত হয়। ১০ যাত্রী এবং ৫ ক্রুর সবাই প্রাণ হারান। এ বিমানবন্দরটিতে
ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ১৯৯৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স
ফ্লাইট ৮১৪ কাঠমান্ডু থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ছিনতাই হয়। বিমানটিকে পরে
নিয়ে যাওয়া হয় আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে। ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর নেপাল
এয়ারলাইন্সের একটি বিমান উড্ডয়নের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তবে এতে
কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার
কবলে পড়লে ১৯ আরোহীর মধ্যে একজন শুরুতে প্রাণে বেঁচে যান। পরে হাসপাতালে
নেয়ার পথে তিনিও মারা যান। বলা হয় খারাপ আবহাওয়া ও নিচুতে থাকা মেঘের কারণে
ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১২ সালে সিতা এয়ারের একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই
সম্ভবত একটি শকুনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ আরোহীর
সবাই মারা যান। ২০১৫ সালের ৪ মার্চ তুর্কি এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ-৩৩০ ঘন
কুয়াশার জন্য দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চালক নিরাপদ অবতরণের জন্য বিমানবন্দরের
ওপরে ৩০ মিনিট চক্কর দেন। দ্বিতীয় চেষ্টায় অবতরণ করতে পারলেও বিমানটি পিছলে
ঘাসের ওপর চলে যায়। বিমানের সামনের চাকা ভেঙে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ২২৭ যাত্রী
এবং ১১ ক্রু সবাই বিমান থেকে নিরাপদে বের হন। এ ঘটনার পর সাময়িকভাবে
বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানের জন্য বন্ধ করা হয়। সামিট এয়ারলাইন্সের
একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে ২০১৭ সালের মে মাসে । সর্বশেষ এ বছর ১২ মার্চ
দুপুরে ত্রিভুবনে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১। দুর্ঘটনায় পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানসহ ৫০
জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলেদেশি।
No comments