লন্ডনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, জেনেভায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
লন্ডনে
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আর জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে
বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। সমপ্রতি কাছাকাছি সময়ে বৃটেন ও সুইজারল্যান্ডে পৃথক
বৈঠকে এ আলোচনা হয়। জেনেভায় জাতিসংঘ কমিটির আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি
দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। আর লন্ডনে দুই
দেশের স্ট্যাটেজিক ডায়ালগে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, লন্ডন বৈঠকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে- ফের এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বৃটেন। দেশটির তরফে এমন নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করে যাওয়া বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকে জানিয়েছেন বৃটেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। তারও আগে ঢাকাস্থ বৃটেনের হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে এমন বার্তা দিয়েছেন। বরিস জনসনকে উদ্ধৃত করে হাইকমিশনার ব্লেক সমপ্রতি ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেছেন। বৃটেন খুব শক্ত ভাবেই বিশ্বাস করে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বড় একটি বিষয়। আর এটাই একটি দেশের সম্ভাব্য সেরা উপায়। যার মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে এমন একটি সমাজ তৈরি হয় যেখানে সবাই নিজেকে অংশীদার মনে করবে, সেই সঙ্গে সবার কথা বলার অধিকার থাকবে। আর এর মাধ্যমে সমাজ শক্তিশালী ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাৎসরিক সংলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ আসে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে সেখানে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সম-সাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, বিশ্ব-রাজনীতি, রোহিঙ্গা সংকট, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই কম-বেশি আলোচনা হয়েছে। লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে দুই দেশ পারস্পরিক আইনি সহায়তা ও আসামি প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে রাজি হলেও সরকার যে প্রক্রিয়ায় তারেক রহমনাকে ফেরাতে চায় তাতে বৃটেনের সায় নেই বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, তারেক রহমান দীর্ঘ ৯ বছর ধরে লন্ডনে থাকলেও তিনি কোনো ধরনের ভিসা বা স্ট্যাটাসে সেখানে রয়েছেন তা কখনই প্রকাশ করেনি বৃটেন। তারেক রহমান লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন মর্মে বিএনপির তরফে দাবি করা হলেও বৃটেন কিংবা বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কখনই কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সংলাপে বৃটিশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের পার্লামেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। তিনি নিজে থেকে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেন এবং আসন্ন একাদশ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে হবে বলে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। লন্ডন বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গতকাল বিকালে টেলিফোনে মানবজমিনকে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তারা (বৃটিশ প্রতিনিধি দল) অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন নির্বাচনটি ঠিকমতো হবে। আমরা বলেছি- সরকার এ নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।’
বৈঠকে তারেক রহমান প্রসঙ্গ, চুক্তি নিয়ে আলোচনা: এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বৃটেনকে নতুন করে চিঠি লিখছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত লন্ডন বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্তসহ নানা রকম আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বৃটেন অঙ্গীকার করেছে। তারেক রহমানকে ফেরানোর ব্যাপারে বৃটেনকে অনুরোধ জানানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমকে আগে জানিয়েছেন- ফেব্রুয়ারিতে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর প্রসঙ্গটি উঠেছিল। তখন বরিস জনসন ২০০৩ সালের আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় নতুন করে চিঠি লেখার পরামর্শ দেন। মূলত তার কথার সূত্র ধরে এ বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। শিগগিরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ চিঠি পাঠাবেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একাধিক মামলার পলাতক আসামি তারেক রহমানকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বৃটেনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তবে বৃটেন ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আলোকে নতুন করে বৃটেনকে চিঠি লিখলেও তারেক রহমানকে ফেরানোতে বেশ জটিলতা রয়েছে। প্রথমত এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণের কোনো চুক্তি নেই। দ্বিতীয়ত: অভিযুক্ত হলেও কোনো ব্যক্তিকে বৃটেন সরকার দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে দেশটির আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন- ভারতের আদলে বৃটেনের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা চুক্তি (এমএলএটি) সই করার চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশের। লন্ডনে কৌশলগত সংলাপে এমন চুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
জেনেভায় দু’দিনের বৈঠক, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিকর একগাদা প্রশ্ন: এদিকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেনেভার বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ বিষয়ক একগাদা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। যার বেশিরভাগই ছিল অস্বস্তিকর! প্রথম দিনের বৈঠকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়া এবং সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতিই ছিল মুখ্য আলোচ্য। জাতিসংঘের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক কমিটিতে এ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়নি। তিনি দেশে চালু টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রের সংখ্যাগত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এর আগে কমিটির সভাপতি ও পর্তুগালের মিস লিবেনবার্গ আইসিটি আইন, বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন এবং ডিজিটাল আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের অবাধ মত প্রকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে হোলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা এবং উগ্রবাদের প্রসারে মাদরাসা শিক্ষার সম্পৃক্ততা থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেন, মাদরাসায় উগ্রবাদের প্রসার হয়, সরকার এমনটি মনে করে না। সে কারণেই কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ কমিটির সদস্য রাশিয়ার আসলান আবাসিদজে তার আলোচনায় বলেন- কওমি মাদরাসাগুলো জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় আসতে রাজি নয় এবং এসব মাদরাসায় উগ্রবাদ প্রসারের অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে উগ্রবাদ বিস্তারের সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা কী? জানতে চান তিনি। একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে রদবদল ঘটানোর অভিযোগের বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবাসিদজে। জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হোলি আর্টিজানে হামলাকারীরা কেউই মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল না। তারা হয় ইংরেজি মাধ্যমে নয়তো বিদেশে লেখাপড়া করেছে। সুতরাং, সব মাদরাসাকে উগ্রবাদ প্রসারের জন্য দায়ী করা যায় না। তিনি জানান, কওমি মাদরাসার পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়নে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে এবং তার কাজ শুরু করেছে। এতবড় একটি জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হেফাজতের দাবিতে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের অভিযোগ প্রতিমন্ত্রী নাকচ করে দেন। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানায় ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের আগের মাসের বেতন পরিশোধ করা হয় বলে জানান তিনি। জেনেভা বৈঠকে শ্রমিক অধিকার, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও নিবর্তনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের বিষয় নিয়ে বেশকিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও তার মন্ত্রণালয়ের দুজন মহাপরিচালক এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এসব প্রশ্নের জবাব দেন। বৈঠকে জাতিসংঘের কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশে নাগরিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সব ধরনের মানবাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আরো বাড়ল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ কমিটি। পর্যালোচনা সভার শেষদিনে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানানো হয়।
বৃটেনে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ বহাল থাকবে: ওদিকে ইইউ থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেলেও দেশটিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে লন্ডন। ঢাকা-লন্ডন কৌশলগত সংলাপে বলা হয়, লন্ডনে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্যে দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সন্ত্রাস দমন, ব্রেক্সিট, জলবায়ু পরিবর্তন, এজেন্ডা ২০৩০, বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াও অবকাঠামো, জ্বালানি, আইসিটি ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে বৃটিশ বিনিয়োগ আহ্বান করে বাংলাদেশ। সংলাপে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ড সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে বলেন, বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্যে আয়োজিত এই সংলাপে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখানে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা পাবে। এছাড়া কমনওয়েলথ সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের জন্য বৃটেন অপেক্ষা করছে বলেও তিনি জানান। সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, কৌশলগত সংলাপে উভয়পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ আগামী দিনে উদ্ভাবন, দক্ষতা, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অব্যহতি নেয়ার পরেও বৃটেনের বাজারে বাংলাদেশের কোটা ও শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশে সুবিধা দেয়ার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী এপ্রিলে বৃটেনে কমনওয়েলথ সামিটে অংশ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বৃটেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের পাশে থাকবে বৃটেন। ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) কর্মসূচির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেছে। এই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পরও বৃটেন যাতে বাংলাদেশের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বহাল রাখে সে জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে আগেই আহ্বান জানানো হয়েছিল। কৌশলগত সংলাপে বৃটেনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশিদের জন্য বৃটেনের ভিসা সহজীকরণের বিষয়টি তোলা হয়। এ বিষয়ে বৃটেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য সহজেই ভিসা সার্ভিস দেয়ার বিষয়ে বৃটেন সজাগ রয়েছে। সে কারণে ঢাকার পাশাপাশি সিলেটেও ভিসা আবেদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যলয়ে বাংলাদেশি মেয়েরাও শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বৃটেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, লন্ডন বৈঠকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে- ফের এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বৃটেন। দেশটির তরফে এমন নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করে যাওয়া বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকে জানিয়েছেন বৃটেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। তারও আগে ঢাকাস্থ বৃটেনের হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে এমন বার্তা দিয়েছেন। বরিস জনসনকে উদ্ধৃত করে হাইকমিশনার ব্লেক সমপ্রতি ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেছেন। বৃটেন খুব শক্ত ভাবেই বিশ্বাস করে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বড় একটি বিষয়। আর এটাই একটি দেশের সম্ভাব্য সেরা উপায়। যার মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে এমন একটি সমাজ তৈরি হয় যেখানে সবাই নিজেকে অংশীদার মনে করবে, সেই সঙ্গে সবার কথা বলার অধিকার থাকবে। আর এর মাধ্যমে সমাজ শক্তিশালী ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাৎসরিক সংলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ আসে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে সেখানে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সম-সাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, বিশ্ব-রাজনীতি, রোহিঙ্গা সংকট, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই কম-বেশি আলোচনা হয়েছে। লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে দুই দেশ পারস্পরিক আইনি সহায়তা ও আসামি প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে রাজি হলেও সরকার যে প্রক্রিয়ায় তারেক রহমনাকে ফেরাতে চায় তাতে বৃটেনের সায় নেই বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, তারেক রহমান দীর্ঘ ৯ বছর ধরে লন্ডনে থাকলেও তিনি কোনো ধরনের ভিসা বা স্ট্যাটাসে সেখানে রয়েছেন তা কখনই প্রকাশ করেনি বৃটেন। তারেক রহমান লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন মর্মে বিএনপির তরফে দাবি করা হলেও বৃটেন কিংবা বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কখনই কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সংলাপে বৃটিশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের পার্লামেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। তিনি নিজে থেকে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেন এবং আসন্ন একাদশ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে হবে বলে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। লন্ডন বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গতকাল বিকালে টেলিফোনে মানবজমিনকে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তারা (বৃটিশ প্রতিনিধি দল) অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন নির্বাচনটি ঠিকমতো হবে। আমরা বলেছি- সরকার এ নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।’
বৈঠকে তারেক রহমান প্রসঙ্গ, চুক্তি নিয়ে আলোচনা: এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বৃটেনকে নতুন করে চিঠি লিখছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত লন্ডন বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্তসহ নানা রকম আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বৃটেন অঙ্গীকার করেছে। তারেক রহমানকে ফেরানোর ব্যাপারে বৃটেনকে অনুরোধ জানানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমকে আগে জানিয়েছেন- ফেব্রুয়ারিতে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর প্রসঙ্গটি উঠেছিল। তখন বরিস জনসন ২০০৩ সালের আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় নতুন করে চিঠি লেখার পরামর্শ দেন। মূলত তার কথার সূত্র ধরে এ বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। শিগগিরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ চিঠি পাঠাবেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একাধিক মামলার পলাতক আসামি তারেক রহমানকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বৃটেনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তবে বৃটেন ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আলোকে নতুন করে বৃটেনকে চিঠি লিখলেও তারেক রহমানকে ফেরানোতে বেশ জটিলতা রয়েছে। প্রথমত এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণের কোনো চুক্তি নেই। দ্বিতীয়ত: অভিযুক্ত হলেও কোনো ব্যক্তিকে বৃটেন সরকার দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে দেশটির আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন- ভারতের আদলে বৃটেনের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা চুক্তি (এমএলএটি) সই করার চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশের। লন্ডনে কৌশলগত সংলাপে এমন চুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
জেনেভায় দু’দিনের বৈঠক, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিকর একগাদা প্রশ্ন: এদিকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেনেভার বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ বিষয়ক একগাদা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। যার বেশিরভাগই ছিল অস্বস্তিকর! প্রথম দিনের বৈঠকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়া এবং সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতিই ছিল মুখ্য আলোচ্য। জাতিসংঘের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক কমিটিতে এ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়নি। তিনি দেশে চালু টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রের সংখ্যাগত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এর আগে কমিটির সভাপতি ও পর্তুগালের মিস লিবেনবার্গ আইসিটি আইন, বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন এবং ডিজিটাল আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের অবাধ মত প্রকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে হোলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা এবং উগ্রবাদের প্রসারে মাদরাসা শিক্ষার সম্পৃক্ততা থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেন, মাদরাসায় উগ্রবাদের প্রসার হয়, সরকার এমনটি মনে করে না। সে কারণেই কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ কমিটির সদস্য রাশিয়ার আসলান আবাসিদজে তার আলোচনায় বলেন- কওমি মাদরাসাগুলো জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় আসতে রাজি নয় এবং এসব মাদরাসায় উগ্রবাদ প্রসারের অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে উগ্রবাদ বিস্তারের সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা কী? জানতে চান তিনি। একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে রদবদল ঘটানোর অভিযোগের বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবাসিদজে। জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হোলি আর্টিজানে হামলাকারীরা কেউই মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল না। তারা হয় ইংরেজি মাধ্যমে নয়তো বিদেশে লেখাপড়া করেছে। সুতরাং, সব মাদরাসাকে উগ্রবাদ প্রসারের জন্য দায়ী করা যায় না। তিনি জানান, কওমি মাদরাসার পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়নে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে এবং তার কাজ শুরু করেছে। এতবড় একটি জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হেফাজতের দাবিতে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের অভিযোগ প্রতিমন্ত্রী নাকচ করে দেন। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানায় ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের আগের মাসের বেতন পরিশোধ করা হয় বলে জানান তিনি। জেনেভা বৈঠকে শ্রমিক অধিকার, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও নিবর্তনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের বিষয় নিয়ে বেশকিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও তার মন্ত্রণালয়ের দুজন মহাপরিচালক এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এসব প্রশ্নের জবাব দেন। বৈঠকে জাতিসংঘের কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশে নাগরিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সব ধরনের মানবাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আরো বাড়ল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ কমিটি। পর্যালোচনা সভার শেষদিনে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানানো হয়।
বৃটেনে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ বহাল থাকবে: ওদিকে ইইউ থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেলেও দেশটিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে লন্ডন। ঢাকা-লন্ডন কৌশলগত সংলাপে বলা হয়, লন্ডনে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্যে দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সন্ত্রাস দমন, ব্রেক্সিট, জলবায়ু পরিবর্তন, এজেন্ডা ২০৩০, বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াও অবকাঠামো, জ্বালানি, আইসিটি ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে বৃটিশ বিনিয়োগ আহ্বান করে বাংলাদেশ। সংলাপে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ড সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে বলেন, বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্যে আয়োজিত এই সংলাপে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখানে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা পাবে। এছাড়া কমনওয়েলথ সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের জন্য বৃটেন অপেক্ষা করছে বলেও তিনি জানান। সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, কৌশলগত সংলাপে উভয়পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ আগামী দিনে উদ্ভাবন, দক্ষতা, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অব্যহতি নেয়ার পরেও বৃটেনের বাজারে বাংলাদেশের কোটা ও শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশে সুবিধা দেয়ার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী এপ্রিলে বৃটেনে কমনওয়েলথ সামিটে অংশ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বৃটেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের পাশে থাকবে বৃটেন। ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) কর্মসূচির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেছে। এই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পরও বৃটেন যাতে বাংলাদেশের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বহাল রাখে সে জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে আগেই আহ্বান জানানো হয়েছিল। কৌশলগত সংলাপে বৃটেনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশিদের জন্য বৃটেনের ভিসা সহজীকরণের বিষয়টি তোলা হয়। এ বিষয়ে বৃটেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য সহজেই ভিসা সার্ভিস দেয়ার বিষয়ে বৃটেন সজাগ রয়েছে। সে কারণে ঢাকার পাশাপাশি সিলেটেও ভিসা আবেদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যলয়ে বাংলাদেশি মেয়েরাও শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বৃটেন।
No comments