ডিবি পরিচয়ে অপহরণ
গত
রোববার ১৫-১৬ জনের একটি সশস্ত্র দল নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে রাজধানীর
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে
গিয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহেও এই অপহরণ ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না,
কারণ অপহরণকারীরা বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীকে জিম্মি করে সিসি ক্যামেরার
ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর বক্স নিয়ে গেছে। উপরের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে অপরাধ
জগতের এক নতুন মাত্রা। বোঝাই যাচ্ছে, অপরাধী শনাক্তকরণের কৌশল ও প্রযুক্তির
উন্নতি ঘটছে যেমন একদিকে, অন্যদিকে অপরাধীরাও নতুন নতুন কৌশলে নিজেদের
আইনের বাইরে রাখার কূটবুদ্ধি প্রয়োগ করছে। সিসি ক্যামেরা চালু করার পেছনের
উদ্দেশ্যই ছিল ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করা। অথচ অপহরণকারীরা অপহরণের সময়
খোদ ফুটেজগুলোও সঙ্গে করে নিয়ে গেছে! অর্থাৎ বলা যায়, কৌশলের প্রশ্নে তারা
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আমরা লক্ষ করছি, ডিবি পরিচয়ে
অপহরণ এক স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগেও ডিবি পরিচয়ে অপহরণের
বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। অপহরণকারীরা যদি সত্যি সত্যি ডিবির সদস্য হয়ে থাকে,
তাহলে অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ার কথা। দ্বিতীয়ত, তার বিরুদ্ধে মামলা
দায়েরের মতো অভিযোগ থাকলে মামলা রুজু হবে, অন্যথায় তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অপহৃত ব্যক্তিদের অনেকেই ফিরে আসছেন না, এলেও অপহৃত
হওয়ার পর তাকে কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছিল, সে ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। এ
প্রসঙ্গে দুটি কথা থাকে। প্রথমত, ডিবি পরিচয় প্রদানকারীরা যদি সত্যি সত্যি
ডিবির সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে তা উদ্বেগজনক। দ্বিতীয় কথা, ডিবির পরিচয় ভুয়া
হয়ে থাকলে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা যায় না কেন? ১৫-১৬ জনের একটি গ্র“প
প্রকাশ্যে কাউকে তুলে নিয়ে যাবে, অথচ তাদের শনাক্ত করার কোনো ক্লু থাকবে
না, তা হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এক ভয়ানক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে
দেশে। কিছু লোক সংঘবদ্ধ হতে পারলেই তারা যা-তা কাণ্ড ঘটাতে পারছেন। সবচেয়ে
বড় কথা, গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে ডিবির ভাবমূর্তি এখন মারাত্মক হুমকির
সম্মুখীন। কিছুদিন আগে প্রেস ক্লাবে ঢুকে এ সংস্থার সদস্যরা অস্ত্র উঁচিয়ে
যেভাবে বিরোধীদলীয় এক নেতাকে আটক করতে মহড়া দেখিয়েছে, তা সংস্থাটির
ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট করেছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল কি এসব ঘটনা দেখছে না?
নাকি দেখেও না দেখার ভান করছে? বর্তমানে অবস্থা যা, তা চলতে থাকলে দেশে
আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু থাকবে না। আমরা সব ধরনের অপহরণ, গুম, হত্যার তীব্র
নিন্দা জানাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতেই হবে এবং তা যতটা সম্ভব
দ্রুতই।
No comments