ব্ল্যাকবক্স কোথায় পরীক্ষা হবে সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষজ্ঞরা
নেপালের
ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ২৫ জনের লাশ
শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি, নেপালি ১০ জন ও একজন চীনা
নাগরিক। বাকিদের লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। গতকাল নেপাল ও বাংলাদেশের ফরেনসিক দল যৌথ ব্রিফিংয়ে
চিহ্নিত হওয়া লাশের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করে। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ
অনুসন্ধানে উদ্ধার হওয়ার ব্ল্যাকবক্সের তথ্য পর্যালোচনা কোথায় হবে তা
বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন বলে নেপালি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। দু’-একদিনের মধ্যে
বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল নেপাল যাবে। এরপর নেপাল এবং বিমান নির্মাতা
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে
জানিয়েছেন বিমান দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করার জন্য নেপাল সরকার কর্তৃক গঠিত
কমিটির প্রধান ইয়াগইয়া প্রসাদ গৌতম। তিনি বলেন, কানাডিয়ান ও নেপালি
তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল অংশীদারের সঙ্গে কথা
বলে ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্য উদ্ধার করা শুরু করেছেন। কানাডিয়ান
বিমান চালনা বিশেষজ্ঞরা গতকাল নেপালি তদন্ত টিমের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ১৩ই
মার্চ গৌতমের নেতৃত্বে সিভিল এভিয়েশন অফ নেপাল (সিএএন) এর একটি ৬ সদস্যের
তদন্ত টিম বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদ্ধারে তদন্ত শুরু করে। এর আগে বাংলাদেশি ও
নেপালি, উভয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ব্ল্যাকবক্সটি ডিকোড করার জন্য,
ড্যাশ-এইট সিরিজের বিমান প্রস্তুতকারক কানাডা’র বোম্বারডিয়ার ইনকর্পোরেশনের
কাছে পাঠানো হবে। শুক্রবার নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার ছেত্রি বলেন যে, ব্ল্যাক বক্সটি নেপালি তদন্ত
টিমের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে আর এটি বিমানটির প্রস্তুতকারক কোমপানি
বোম্বারডিয়ারের কাছে পাঠানো হবে। তিনি যোগ করেন, এটা বাংলাদেশেও পাঠানো হতে
পারে।
এর আগে মঙ্গলবার সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান বলেন যে, বিমানটির ব্ল্যাকবক্স পরীক্ষা করার জন্য কানাডায় ড্যাশ-এইট মডেলের বিমান প্রস্তুতকারক বোম্বারডিয়ার কোমপানির কাছে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ব্ল্যাকবক্সটি পরীক্ষা করার পর আমরা বলতে পারবো যে, দুর্ঘটনার পেছনে কোনো কারিগরি ত্রুটি দায়ী ছিল নাকি কোনো মানুষের ভুল।
আহতদের চিকিৎসায় ঢামেকে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড: নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তে আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা আহতদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ব্রিফিংয়ে এই কমিটি গঠনের কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। মেডিকেল টিমের সদস্যরা হলেন- সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. মো. আবুল কালাম, অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ হোসেন খন্দকার, অধ্যাপক এজেডএম মুস্তাক হোসেন তুহিন, অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মোজাফ্ফর হোসেন (অ্যানেসথেসিয়া), অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম, ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ (মেডিসিন), অধ্যাপক ডা. আবদুুল্লাহ আল মামুন (মেন্টাল অ্যান্ড হেলথ), ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি জহির উদ্দিন ও সাইকিয়াটিস্ট জামাল হোসেন। এ বিষয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিধ্বস্ত বিমানের আহত ১০ যাত্রীর মধ্যে চারজন এখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন। তারা হলেন- শাহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার অ্যানি। বাকি ৫ জনের মধ্য দুইজনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল।’ তাদের একজন ইমরানা কবিরকে আজ (গতকাল) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নয়া দিল্লিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হবে। অপরজন ইয়াকুবকে স্বজনদের অনুরোধে নেপালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ রাশেদ রুবায়েতকে শনিবার বাংলাদেশে আনা হয়েছে। অপর দুইজন কবির হোসেন ও শাহিন বেপারীকে আগামীকাল (আজ) দেশে আনা হবে। ইমরানা কবিরের শ্বাসনালী পুড়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের চিকিৎসকরা। আহত রিজওয়ানুল হককে নেপাল থেকেই সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেছেন তার বাবা। ডা. আজাদ জানান, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে যারা রয়েছেন, তারা আশঙ্কামুক্ত। আমরা লক্ষ্য করেছিলাম তাদের বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তবে তাদের মানসিক ট্রমা হয়েছে। তাদের সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দেয়া দরকার। তিনি বলেন, রোগীদের এখন যে ধরনের অবস্থা তাতে মেডিকেল বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোযোগ দেয়ার জন্য তা গঠন করা হয়েছে। যাকে দিল্লি নেয়া হবে তার শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক খারাপ হলেও তার জীবনাশঙ্কা নেই। আমরা নেপালে ভালোভাবে কথা বলে জেনেছি। বাংলাদেশের সাতজন চিকিৎসক এখন পর্যন্ত নেপালে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি। নেপালে যে একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার জন্য আমাদের একজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক সেখানে থাকবেন। বাকিদের হয়তো আমরা নিয়ে আসব।
২৫ জনের লাশ শনাক্ত: নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ১৪ বাংলাদেশিসহ ২৫ জনের মরদেহ শনাক্তের কথা জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে এসব মরদেহ তাদের উপস্থিত নিকট স্বজনদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার ওই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে মরদেহগুলোর নাম প্রকাশ করেন হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। এ সময় বাংলাদেশি মেডিকেল টিম এর সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয় মোট ২৫টি মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক।
লাশ শনাক্ত হওয়া ১৪ বাংলাদেশি: অনিরুদ্ধ জামান, তাহিরা তানভীন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, রাকিবুল হাসান, মতিউর রহমান, রফিক উজ জামান, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, আকতার বেগম, হাসান ইমাম, এসএম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ ও কেবিন ক্রু খাজা হুসেইন মোহাম্মদ শাফী।
ডা. সোহেল মাহমুদ ব্রিফিংয়ে জানান, নেপালি ও চীনা নাগরিকের মরদেহ স্বজনরা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশিরা মরদেহ দেখার সুযোগ পাবেন।
শনাক্ত হওয়া তালিকায় রফিকুজ্জামান ও তার ছেলে অনিরুদ্ধের নাম থাকলেও তার স্ত্রী সানজিদা হকের নাম নেই। একইভাবে বৈশাখী টেলিভিশনের রিপোর্টার আহমেদ ফয়সালের নামও পাওয়া যায়নি।
আহত রাশেদ রুবায়েতকে ঢামেকে ভর্তি: এদিকে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় অপর আহত রাশেদ রুবায়েতকে দেশে আনা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী এম্বুলেন্সটি সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়ে বেলা ৪টার দিকে পৌঁছায়। এই নিয়ে ওই ঘটনায় আহত পাঁচজনকে ঢামেকে ভর্তি করা হলো। দেশে ফিরিয়ে আনা রাশেদ রুবায়েত আহত অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, আহত যারা এ পর্যন্ত এসেছেন তাদের চেয়ে রুবায়েতের অবস্থা ভালো। তবে এখানে আনার পর প্রাথমিকভাবে আমরা যা দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে তেমন সমস্যা নেই। ল্যাংয়ে সমস্যা আছে। ডান পায়ে ইনজুরি রয়েছে। এছাড়া তেমন কোনো বার্ন নেই। আশা করছি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল (আজ) বেলা ১০টায় আমাদের ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিম পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করে তাদের সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানাবেন। আহত রুবায়েতের সহকর্মী মাইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, রুবায়েত বিমানের পাখার পাশে ছিল। তাই তেমন ইনজুরি হয়নি। নেপালের চিকিৎসকরা তার সমস্ত রিপোর্ট দেখে তাকে ভাগ্যবান বলেছেন।
ট্রমায় ভুগছেন মেহেদী, স্বর্ণা ও অ্যানি: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও মেহেদীর ভাবী আলমুন নাহার অ্যানি ট্রমায় ভুগছেন। তাদের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শুক্রবার যে তিনজনকে আনা হয়েছে তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের প্রত্যেকে সাইকোলজিক্যাল ট্রমায় ভুগছেন। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাদের কারও তেমন একটা বার্ন হয়নি। তবে ফিজিক্যালি ফ্র্যাকচার হয়েছে। এগুলো সেরে উঠতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি বলেন, যাদের আনা হয়েছে তাদের নিঃশ্বাসে এখনো ধোঁয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে অ্যানির কালো কালো ধোঁয়ার শ্বাস হচ্ছে কাশির সঙ্গে। তাই এখনই তাদের শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ডা. সেন বলেন, অ্যানির ডান পায়ে ফ্র্যাকচার আছে, সঙ্গে ইনজুরিও আছে। স্বর্ণার শরীরের বামদিকে ব্যথা আছে, ইনজুরি আছে এবং শ্বাসনালীতে বার্ন আছে। মেহেদীর হাতে কাটা দাগ আছে এবং ঘাড়ে ও পায়ে ইনজুরি আছে, ফ্র্যাকচার আছে। ঢামেক হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন-১ মেহেদী ও স্বর্ণাকে এবং ভিআইপি ৪-এ অ্যানিকে রাখা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান বলেন যে, বিমানটির ব্ল্যাকবক্স পরীক্ষা করার জন্য কানাডায় ড্যাশ-এইট মডেলের বিমান প্রস্তুতকারক বোম্বারডিয়ার কোমপানির কাছে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ব্ল্যাকবক্সটি পরীক্ষা করার পর আমরা বলতে পারবো যে, দুর্ঘটনার পেছনে কোনো কারিগরি ত্রুটি দায়ী ছিল নাকি কোনো মানুষের ভুল।
আহতদের চিকিৎসায় ঢামেকে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড: নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তে আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা আহতদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ব্রিফিংয়ে এই কমিটি গঠনের কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। মেডিকেল টিমের সদস্যরা হলেন- সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. মো. আবুল কালাম, অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ হোসেন খন্দকার, অধ্যাপক এজেডএম মুস্তাক হোসেন তুহিন, অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মোজাফ্ফর হোসেন (অ্যানেসথেসিয়া), অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম, ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ (মেডিসিন), অধ্যাপক ডা. আবদুুল্লাহ আল মামুন (মেন্টাল অ্যান্ড হেলথ), ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি জহির উদ্দিন ও সাইকিয়াটিস্ট জামাল হোসেন। এ বিষয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিধ্বস্ত বিমানের আহত ১০ যাত্রীর মধ্যে চারজন এখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন। তারা হলেন- শাহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার অ্যানি। বাকি ৫ জনের মধ্য দুইজনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল।’ তাদের একজন ইমরানা কবিরকে আজ (গতকাল) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নয়া দিল্লিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হবে। অপরজন ইয়াকুবকে স্বজনদের অনুরোধে নেপালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ রাশেদ রুবায়েতকে শনিবার বাংলাদেশে আনা হয়েছে। অপর দুইজন কবির হোসেন ও শাহিন বেপারীকে আগামীকাল (আজ) দেশে আনা হবে। ইমরানা কবিরের শ্বাসনালী পুড়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের চিকিৎসকরা। আহত রিজওয়ানুল হককে নেপাল থেকেই সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেছেন তার বাবা। ডা. আজাদ জানান, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে যারা রয়েছেন, তারা আশঙ্কামুক্ত। আমরা লক্ষ্য করেছিলাম তাদের বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তবে তাদের মানসিক ট্রমা হয়েছে। তাদের সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দেয়া দরকার। তিনি বলেন, রোগীদের এখন যে ধরনের অবস্থা তাতে মেডিকেল বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোযোগ দেয়ার জন্য তা গঠন করা হয়েছে। যাকে দিল্লি নেয়া হবে তার শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক খারাপ হলেও তার জীবনাশঙ্কা নেই। আমরা নেপালে ভালোভাবে কথা বলে জেনেছি। বাংলাদেশের সাতজন চিকিৎসক এখন পর্যন্ত নেপালে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি। নেপালে যে একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার জন্য আমাদের একজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক সেখানে থাকবেন। বাকিদের হয়তো আমরা নিয়ে আসব।
২৫ জনের লাশ শনাক্ত: নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ১৪ বাংলাদেশিসহ ২৫ জনের মরদেহ শনাক্তের কথা জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে এসব মরদেহ তাদের উপস্থিত নিকট স্বজনদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার ওই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে মরদেহগুলোর নাম প্রকাশ করেন হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। এ সময় বাংলাদেশি মেডিকেল টিম এর সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয় মোট ২৫টি মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক।
লাশ শনাক্ত হওয়া ১৪ বাংলাদেশি: অনিরুদ্ধ জামান, তাহিরা তানভীন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, রাকিবুল হাসান, মতিউর রহমান, রফিক উজ জামান, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, আকতার বেগম, হাসান ইমাম, এসএম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ ও কেবিন ক্রু খাজা হুসেইন মোহাম্মদ শাফী।
ডা. সোহেল মাহমুদ ব্রিফিংয়ে জানান, নেপালি ও চীনা নাগরিকের মরদেহ স্বজনরা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশিরা মরদেহ দেখার সুযোগ পাবেন।
শনাক্ত হওয়া তালিকায় রফিকুজ্জামান ও তার ছেলে অনিরুদ্ধের নাম থাকলেও তার স্ত্রী সানজিদা হকের নাম নেই। একইভাবে বৈশাখী টেলিভিশনের রিপোর্টার আহমেদ ফয়সালের নামও পাওয়া যায়নি।
আহত রাশেদ রুবায়েতকে ঢামেকে ভর্তি: এদিকে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় অপর আহত রাশেদ রুবায়েতকে দেশে আনা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী এম্বুলেন্সটি সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়ে বেলা ৪টার দিকে পৌঁছায়। এই নিয়ে ওই ঘটনায় আহত পাঁচজনকে ঢামেকে ভর্তি করা হলো। দেশে ফিরিয়ে আনা রাশেদ রুবায়েত আহত অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, আহত যারা এ পর্যন্ত এসেছেন তাদের চেয়ে রুবায়েতের অবস্থা ভালো। তবে এখানে আনার পর প্রাথমিকভাবে আমরা যা দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে তেমন সমস্যা নেই। ল্যাংয়ে সমস্যা আছে। ডান পায়ে ইনজুরি রয়েছে। এছাড়া তেমন কোনো বার্ন নেই। আশা করছি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল (আজ) বেলা ১০টায় আমাদের ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিম পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করে তাদের সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানাবেন। আহত রুবায়েতের সহকর্মী মাইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, রুবায়েত বিমানের পাখার পাশে ছিল। তাই তেমন ইনজুরি হয়নি। নেপালের চিকিৎসকরা তার সমস্ত রিপোর্ট দেখে তাকে ভাগ্যবান বলেছেন।
ট্রমায় ভুগছেন মেহেদী, স্বর্ণা ও অ্যানি: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও মেহেদীর ভাবী আলমুন নাহার অ্যানি ট্রমায় ভুগছেন। তাদের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শুক্রবার যে তিনজনকে আনা হয়েছে তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের প্রত্যেকে সাইকোলজিক্যাল ট্রমায় ভুগছেন। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাদের কারও তেমন একটা বার্ন হয়নি। তবে ফিজিক্যালি ফ্র্যাকচার হয়েছে। এগুলো সেরে উঠতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি বলেন, যাদের আনা হয়েছে তাদের নিঃশ্বাসে এখনো ধোঁয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে অ্যানির কালো কালো ধোঁয়ার শ্বাস হচ্ছে কাশির সঙ্গে। তাই এখনই তাদের শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ডা. সেন বলেন, অ্যানির ডান পায়ে ফ্র্যাকচার আছে, সঙ্গে ইনজুরিও আছে। স্বর্ণার শরীরের বামদিকে ব্যথা আছে, ইনজুরি আছে এবং শ্বাসনালীতে বার্ন আছে। মেহেদীর হাতে কাটা দাগ আছে এবং ঘাড়ে ও পায়ে ইনজুরি আছে, ফ্র্যাকচার আছে। ঢামেক হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন-১ মেহেদী ও স্বর্ণাকে এবং ভিআইপি ৪-এ অ্যানিকে রাখা হয়েছে।
No comments