এলডিসি থেকে উত্তরণ
লিস্ট
ডেভেলপড কান্ট্রিস- এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। একসময়
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে উপাধি পাওয়া আমাদের জন্য এটি সুখবর। মাথাপিছু আয়,
মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি- এ তিনটি খাতে বাংলাদেশের অবস্থান
বিবেচনায় নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে
প্রবেশের প্রথম ধাপ পেরোনোর সিদ্ধান্তটি শুক্রবার দিয়েছে জাতিসংঘের কমিটি
ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। বস্তুত, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের
হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ ৬ বছরের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ
সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো দেশের উত্তরণের
প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। জানা যায়, জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল
কাউন্সিল (ইকোসোক) কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হিসেবে ঘোষণার
সুপারিশের জন্য মাথাপিছু আয় ১২৪২ ডলার, মানবসম্পদ উন্নয়ন বা দেশটির মোট
জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশের উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে
(ইভিআই) দেশটির অবস্থান ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকা বিবেচনায় নেয়। আশার কথা,
সবক’টি খাতেই বাংলাদেশ সর্বনিম্ন থেকে অনেক উপরে অবস্থান করছে। বর্তমানে এ
তিনটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে মাথাপিছু আয় ১৬১০ ডলার,
জীবনযাত্রার উন্নতমান ৭২ দশমিক ৯ শতাংশের এবং ইভিআই সূচক ২৫ দশমিক ২। ২০২১
সাল পর্যন্ত আমাদের বর্তমান অবস্থান অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের শেষের দিকে
নিয়মানুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হবে। সে সময় পর্যন্ত অর্থনীতির চলমান
ধারা অব্যাহত থাকবে এবং দ্বিতীয় পর্যালোচনায় আমরা আরও ভালোভাবে উতরে যাব
বলে আশা করা যায়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার এ প্রক্রিয়া
চূড়ান্ত হবে ২০২৪ সালে। এ সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর
পর্যবেক্ষণের আলোকে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সিডিপির বৈঠকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন
তৈরি করে ইকোসোকে তোলা হবে।
সংস্থাটি তা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠানোর পর
সেখানে পাস হলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে। বাংলাদেশ
চূড়ান্তভাবে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২৪ সালে উন্নয়নীল দেশের
মর্যাদায় উত্তীর্ণ হবে বলে আমরা আশাবাদী। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের
জুলাই মাসে নিু আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে
উন্নীত হই আমরা। লক্ষণীয় বিষয়, ২০১৫ সালে নিু-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর ২০১৮
সালের শুরুতে এসে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রথম ধাপ পার করা গেছে। এর পেছনের
অন্যতম কারণ যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ থেকে
বোঝা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে যদি গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকত,
তবে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। আমাদের কাছাকাছি বা একই সময়ে
স্বাধীন হওয়া এশিয়ারই কিছু দেশের উন্নতি অন্তত তা-ই প্রমাণ করে। বিষয়টি
আমলে নিয়ে আমাদের সরকার থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দল, সর্বোপরি প্রতিটি
নাগরিক সচেতন হলে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ হওয়া কঠিন কিছু হবে
না। মাত্র কয়েকদিন আগে এক সেমিনারেও বক্তারা এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য
গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কুশলী পদক্ষেপ এবং আর্থিক ও সামাজিক
বৈষম্য দূরীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন। নীতিনির্ধারক মহল এক্ষেত্রে সচেতন হবে-
এটিই কাম্য।
No comments