পাঁচ সিটির নির্বাচন
প্রধান
নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া পাঁচটি
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী জুলাই
মাসের মধ্যেই। অবশ্য ঠিক কোন মাসের কত তারিখে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে সে
ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি তিনি। উল্লেখ করা যেতে পারে- গাজীপুর,
খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল- এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত
পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে। আরও
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী আগামী একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান
করতে হবে আগামী ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের যে নির্বাচনগুলো
অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সেসব নির্বাচন বিশেষ
গুরুত্ব বহন করছে নিঃসন্দেহে। কারণ, জুলাইয়ের মধ্যেই অনুষ্ঠেয় এসব
নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস পর বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠান করতে হবে। বলা যেতে পারে, পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন এক
ধরনের এসিড টেস্টের মধ্যে ফেলবে কমিশনকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক কী
পরিবেশে এবং কতটা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে বিতর্ক চলছে দেশে।
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, সেটাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। অন্যদিকে
নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারেও বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপির অবস্থান ইতিবাচক নয়।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই যেসব কথা বলা হচ্ছে, তার বেশকিছুর
সঙ্গে বিএনপি সহমত পোষণ করছে না। অথচ আগামী নির্বাচনে বিএনপি এক বড়
স্টেকহোল্ডার। সবটা মিলিয়ে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও
গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠান করতে পারে কমিশন, তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে
অংশগ্রহণমূলক করার প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হবে বলে ধারণা করা যায়। খোদ
প্রধান নির্বাচন কমিশনারও আশা প্রকাশ করেছেন, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সংসদ
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতো আমরাও আশা প্রকাশ
করছি, সরকারি ও বিরোধীদলীয় সব রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করবে। এ জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও
গ্রহণযোগ্যতা। এটা ঠিক, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বর্তমানে কিছুটা
বেকায়দায় রয়েছে। দলটির দুই শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আদালতের
রায়ে দণ্ডিত হয়েছেন, যদিও মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
রয়েছে। খালেদা জিয়া কারাগারে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বিদেশে থাকায়
সাংগঠনিকভাবে বিএনপি কিছুটা দুর্বল হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার
ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কমতি নেই। নির্বাচন কমিশন যদি পাঁচ সিটি
কর্পোরেশনের নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে পারে, তাহলে বিএনপি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও বেশি করে আগ্রহী হবে বলে ধরে নেয়া যায়। অর্থাৎ
সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়ে উঠবে। আমরা আশা করব, পাঁচ সিটি
নির্বাচনের এসিড টেস্টে নির্বাচন কমিশন সফলভাবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে
পারবে।
No comments