রায়পুরে এক জুতা কারখানায় ১৩শ’ নারীর কর্মসংস্থান
জুতা তৈরিতে প্রতিদিন ব্যস্ত সময় কাটান প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক। সূর্যোদয়ের পর হেঁটে অথবা অটোরিকশা বা রিকশায় চড়ে তারা লম্বা লাইনে কারখানার পথে ছুটে চলেন। এ অঞ্চলের সাধারণ নারীদের হাতে উৎপাদিত শতভাগ রফতানিমুখী চামড়াজাত জুতা তৈরির কারখানা এটি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৫শ’ শ্রমিক কাজ করেন, যার বেশির ভাগই স্থানীয় নারী শ্রমিক। কারখানায় কাজ করে বদলে যাচ্ছে পুরুষের পাশাপাশি স্থানীয় হাজারও নারীর ভাগ্য। লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে প্রায় ১৫ দশমিক ৭৩ একর জায়গা জুড়ে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামে জুতা কারখানাটির অবস্থান। অধিকাংশ নারী নিয়ে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি পরিদর্শনে যান লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক হোমায়ারা বেগম। কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেই প্রথম চালান রফতানি করা হয় বিদেশে। প্রতি মাসে দেড় লাখ জোড়া জুতা তৈরির ক্ষমতা রয়েছে এ কারখানাতে। কারখানার শ্রমিক ঝুমু আক্তার, পপি ও আসমা আক্তারসহ কয়েকজন জানান, স্থানীয় পর্যায়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠান থাকায় এ অঞ্চলের পুরুষের পাশাপাশি অনেক অসহায় নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মাস শেষে নিয়মিত বেতন, দুপুরের খাবার ফ্রি, চিকিৎসা ফ্রি ও আবাসন ব্যবস্থা পাচ্ছেন তারা। নিজ বাড়িতে থেকেই কাজ করতে পারছেন অনেক নারী। এতে করে পরিবার থেকে যেমন দূরে থাকতে হচ্ছে না, তেমনি বসবাসের পেছনে বাড়তি কোনো অর্থও ব্যয় হয় না। ফলে মাসের পুরো বেতনটাকে পরিবারের কাজে ভালোভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি সংসারের ভালোমন্দ দেখভাল করতেও পারছেন। কারখানার ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এক কাভার্ডভ্যান জুতা ইউরোপে রফতানির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। এই বিশাল শিল্প কারখানাটি থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার জুতা (ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান) রফতানি হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি বেশির ভাগ নারী শ্রমিক (প্রায় তেরোশ’) নিয়ে সুন্দরভাবে জুতা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক টিপু সুলতান জানান, পরিবারের ইচ্ছায় নিজ জন্মস্থানে এ কারখানাটি সরকারের কাছ থেকে কিনে নিয়ে আবার সচল করি। এ কারখানায় স্থানীয় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। কারখানার পণ্য নিয়মিতভাবে ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, কানাডা ও জাপানে রফতানি হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রতিষ্ঠানের পেছনে থাকা সরকারের সাড়ে ৯ শতাংশ জমি পেলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বৃদ্ধিসহ আরও বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, বেসরকারিকরণ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে কারখানাটি দায়দেনাসহ প্রায় চার কোটি টাকায় ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ওই স্থানে ১৯৭৮ সালে সরকারি উদ্যোগে নোয়াখালী টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যেটির উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। নব্বইয়ের দশকে এসে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যায় পড়ে এটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে কারখানাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
No comments