পাহাড় ধসে তিন জেলায় নিহত ২০
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ তিন জেলায় পাহাড় ধসে ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ৪ জন, রাঙ্গামাটির সদর উপজেলা ও কাপ্তাইয়ে ১০ জন এবং বান্দরবানের সদরে ৬ জন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। যুগান্তর চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সোমবার ভোর ৪টায় চন্দনাইশের দুর্গম এলাকা দোপাছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড় ধসে ১ শিশু এবং ছনবনিয়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শামুকছড়ির শিশু মাহিয়া(৩), ছনবনিয়ার ২নং ওয়ার্ডের উপজাতি এলাকার সিনসাও কেয়াংয়ের স্ত্রী মোকা ইয়ং কিয়াং (৫০), কেলাও অং কেয়াংয়ের কিশোরী কন্যা মেমো কেয়াং (১৩) ও ফেলাও কেয়াংয়ের শিশু কন্যা কেওচা কেয়াং (১০)। এসময় আহত হয়েছেন ২ জন। তাদের বান্দরবান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- সানু কেয়াং (২১), শেলাও কেয়াং (২৭)। জানা গেছে, রোববার থেকে ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সোমবার রাত ২টার পর প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টি ও সঙ্গে বজ্রপাতসহ ঝড়ো হাওয়া হয়। এরপরই এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২০/৩০টি উপজাতি পরিবার ওই এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছে। বাকি পরিবারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তারা আতংকে বাড়ি-ঘরে ছেড়ে অন্যত্র সরে গেছে। স্থানীয় লোকজন স্বউদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বেলা পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো লোক বা উদ্ধারকারী দল পৌঁছেনি। আমাদের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানায়, রাঙ্গামাটি শহরে ও কাপ্তাই উপজেলায় টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে ও গাছচাপায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে জেলা শহর থেকে আটজন ও কাপ্তাই উপজেলা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- শহরের ভেদভেদি এলাকার রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। কাপ্তাই উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনুচিং মারমা ও নিকি মারমা। মৃতদেহগুলো রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মংখ্য সিং চৌধুরী মারমা। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা জানান,
উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। তাদের মৃতদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙ্গামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। যুগান্তর বান্দরবান প্রতিনিধি জানায়, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে পাঁচজন। মঙ্গলবার ভোররাত পৌনের ৪টার দিকে জেলার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কালাঘাটা এলাকার ত্রিপুরা পাড়াসহ দুর্গম কয়েকটি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চার জনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলো- শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮) এ ঘটনায় এখনো জাইল্লাপাড়ায় কামরুন্নাহার ও তার মেয়ে সুফিয়া (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছে। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- পসান ত্রিপুরা ও বীর বাহাদুর ত্রিপুরা। সদর থানার ওসি মো. রফিক উল্লাহ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
No comments