কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে সৌদি কী জিততে পারবে
উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী দেশ সৌদি আরব ছোট্ট প্রতিবেশী দেশ কাতারের সঙ্গে সর্বাত্মক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তবে কাতার সংকটে যদি সৌদি আরব জয়ীও হয়, তারপরও তার অনেক কিছুর হারাতে হবে। আঞ্চলিক অন্যান্য সংঘর্ষের মতো বহিঃশক্তিগুলোকে উপসাগরীয় অঞ্চলের এ ফ্যাসাদে ডেকে আনা হচ্ছে, যে শক্তিগুলোর সবাই রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের পক্ষে নয়। কাতারের সঙ্গে সৌদির দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যে চলমান কাতার সংকট একেবারেই আনকোরা।সিরিয়ায় গত ছয় বছর ধরে ও ইয়েমেনে প্রায় দুই বছর ধরে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে সৌদি আরব। এখন সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলো নিয়ে সৌদি অপর প্রতিবেশী কাতারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। বৈরুতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের একজন জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ইয়েজিদ সেইগ বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সেই একই ভুল করতে পারে, যে ভুল ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সৌদি নেতৃত্ব করেছে। তাদের স্পষ্ট কোনো রাজনৈতিক কৌশল নেই। শুধু ভুল অনমানের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নিয়েছে। সূচনা করেছে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং এখন সম্ভবত নিজেদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বাজে অবস্থায় রয়েছে তারা।’ কাতার সংকট যেকোনো সময় যুদ্ধে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আঞ্চলিক অন্যান্য সংঘাতের মতো, উপসাগরীয় এ দ্বন্দ্বে বহিঃশক্তিগুলোও জড়িয়ে পড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে তাদের সবাই সৌদির পক্ষে নাও থাকতে পারে। কাতারে নিজেদের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে কাতার সংকটে সৌদিকে সমর্থন করে টুইট করেছেন, যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংকটে অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এদিকে কাতার সংকটে সর্বাত্মক নিরাপত্তা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তুরস্ক দেশটিতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে এ সংকটকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। কাতারকে ইরান তার আকাশপথ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং খাদ্য সরবরাহ শুরু করেছে। কাতারের প্রয়োজনীয় খাদ্যে বেশিরভাগ এতদিন সৌদি আরব থেকেই আমদানি করা হতো। তুরস্ক ও ইরানসহ অন্যান্য দেশের এ সমর্থন ও সহযোগিতা সৌদির দ্রুত বিজয়ের সুযোগ নিশ্চিতভাবেই কমিয়ে দিচ্ছে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পল সুলিভান বলেন, ‘তুরস্কের রয়েছে বিশাল এক সামরিক শক্তি। ইরান পাঠাচ্ছে খাদ্য ও পানীয়। তার মানে এই মুহূর্তে কাতারের সমর্থনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ শক্তি কাজ করছে।’ সৌদি, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে কাতারের ওপর সার্বিক অবরোধ আরোপ করেছে। এছাড়া সৌদি ও আরব আমিরাত আরও বড় ধরনের আর্থিক অবরোধের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এ অবরোধ মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ কাতারের রয়েছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন থেকে শুরু করে ব্রিটিশ বারক্লেস পর্যন্ত বিশ্বের বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে দেশটির ৩৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। লন্ডনের চাথাম হাউসের মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো সানাম ভাকিল বলেন, সৌদির এ পদক্ষেপে কাতার এ ভাবনা দিয়ে তাড়িত হবে যে, সৌদি আসলে তার দেশের সরকার পরিবর্তন চাচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখান, সৌদির এ সব দাবির কাছে কাতারের আত্মসমর্পণের মানে হচ্ছে তার সার্বভৌমত্বের প্রতিই চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ কাতারের ক্ষমতাসীন পরিবারের বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ। ভাকিল বলেন, আমার পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন, তারা এটা মেনে নেবে।’
No comments