রাজসাক্ষী হতে চায় জঙ্গি আশফাক
রাজসাক্ষী হতে চায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটি) আইটি শাখার প্রধান আশফাক-উর-রহমান ওরফে অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিক। পাঁচ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন সে এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি সে জঙ্গি কার্মকাণ্ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বলে, ‘স্যার আমি ভুল করেছি। আমাকে মারধর করবেন না। আমার কাছে যা জানতে চান সবই বলব। আমার জানা মতে, কোনো কিছুই গোপন করব না। আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিন। এখনও পড়ালেখা শেষ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পলাতক জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার প্ররোচনায় ভুল পথে এসেছি। যখন বুঝতে পেরেছি, তখন সময় ছিল না। তাই গ্রেফতার এড়াতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সিলেট থেকে ঢাকা এসে আত্মগোপন করেছি।’ এরপর আশফাক তার সংগঠনের বর্তমান অবস্থা, কর্মী সংগ্রহের পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ, ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে থাকে। সিটিটিসির জিজ্ঞাসাবাদে আশফাক তার ১১ ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম বলেছে। এরা হল- সালমান, সাদমান, ইব্রাহিম, নাহিদ, ইউনুস, ওসমান, আকিব, ফারুক, আবদুর রহমান ও আবদুল আজিজ। আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) সিটিটিসি যুগান্তরকে জানালেও তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে নামটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সিটিটিসি সূত্র জানায়, আশফাকের সঙ্গে আরও কারা জঙ্গিবাদে জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। প্রথম দিনেই যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা সত্য হলে এবিটির নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আশফাক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গ্রেফতারের ভয়ে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ৫ মাস আগে সে সিলেট থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসে। নর্দ্দার একটি বাসায় অবস্থান করে গোপনে কর্মী সংগ্রহ এবং সংগঠনের শক্তি বাড়াতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। আশফাক জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে মেজর জিয়ার সঙ্গে উত্তরায় বৈঠক করে সে। পরে দুই দফায় তার কাছ থেকে ট্রেনিং নেয়। ট্রেনিং শেষে সে সিলেটে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে মেজর জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। সে নিজে কখনও মেজর জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত না। মেজর জিয়াই তার সঙ্গে যোগাযোগ করত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ইন্টারনেট। কয়েক মাস ধরে মেজর জিয়া তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। জানতে চাইলে সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, রিমান্ডের প্রথম দিনে আশফাককে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা সেলিম ওরফে হাদীসহ ৭ জনের ছবি দেখানো হয়েছে। বেশির ভাগের নাম ছদ্ম হওয়ায় তাদের সে চিনতে পারেনি। তবে ছবি দেখে ২-৩ জনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্য মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি তার কাছ থেকে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে মহিবুল ইসলাম খান বলেন, কর্মী সংগ্রহের জন্য এ মুহূর্তে এবিটি অনলাইন প্রচারণাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। কর্মী সংগ্রহের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পর বড় ধরনের হামলার টার্গেট রয়েছে এবিটির। ডিসি মহিবুল ইসলাম খান বলেন, মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মাইনুল ইসলাম মুসা, বাশারুজ্জামান, হাতকাটা মাসুম, সাগর এবং ছোট মিজানসহ অন্যদের সঙ্গে আশফাকের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা বের করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে অপারেশন চালানোর মতো সক্ষমতা এবিটির নেই। মেজর জিয়ার কাছ থেকে গত ২-৩ মাসে কোনো ধরনের নির্দেশনা পায়নি আশফাক। মেজর জিয়ার সঙ্গে কর্মীরা নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করতেও পারে না।’ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর ভাটারা থানার নর্দ্দা এলাকা থেকে আশফাক-উর-রহমান ওরফে অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিককে গ্রেফতার করা হয়। পরে ভাটারা থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়। মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিটিটিসির পরিদর্শক এসএম শাহরিয়ার হাসানকে। মঙ্গলবার বিকালে আশফাককে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় সিটিটিসি। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রণব কুমার হুই তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন। বুধবার রিমান্ডের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। জানতে চাইলে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসএম শাহরিয়ার হাসান যুগান্তরকে বলেন, রিমান্ডে আশফাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।
No comments