রাজধানীতে বন্ধুদের হাতে কিশোর খুন
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় কিশোরদের হাতে এক কিশোর খুন হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বন্ধুদের আড্ডায় কথা-কাটাকাটির সময় মো. সজীব মিয়া (১৪) নামের ওই কিশোরকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর গতকাল বুধবার সকালে সে মারা যায়। পুলিশ বলেছে, বন্ধুদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে সজীব খুন হয়েছে। সে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার হলি ক্রিসেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিল। এ বছর সে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও ভর্তি হয়নি। সে ভগ্নিপতি আল মাহমুদের সঙ্গে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকত। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেছেন, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সজীব বাসার ১৫-২০ গজ দূরে গলিতে পাঁচ-ছয়জন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় সজীবকে এক বন্ধু জাপটে ধরে রাখে এবং আরেক বন্ধু চাপাতি দিয়ে তার ঘাড়ে ও পিঠে কোপ দেয়। স্থানীয় লোকজন হামলাকারী সন্দেহে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। রক্তাক্ত অবস্থায় সজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর গতকাল সকাল আটটার দিকে সে মারা যায়। দুপুরে সজীবের ভগ্নিপতির বাসায় গিয়ে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। সজীবের বড় বোন সুমি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সজীব মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে নিচতলায় ঘুমানোর কথা বলে বেরিয়ে যায়। কোপানোর খবর শুনে স্বজনেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, সজীবের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি অভিযোগ করেন, সজীবকে একজন জাপটে ধরলে আরেকজন চাপাতি দিয়ে কোপায়। যে জাপটে ধরেছিল তাকে স্থানীয় লোকজন আটক করলেও যে কুপিয়েছে সে পালিয়ে গেছে। সুমি আক্তার বিলাপ করে বলেন, ‘ওরা আমার ভাইকে কুপিয়ে মেরেছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।’
নিহত সজীবের ভগ্নিপতি আল মাহমুদ ডিশ সংযোগ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, সজীবের চার মাস বয়সে তাঁর শাশুড়ি মারা গেছেন। শ্বশুর আরেকটি বিয়ে করেছেন। এ কারণে নয় বছর বয়স থেকে সজীবকে তিনি নিজের বাসায় রেখে পড়াশোনা করাতেন। সুমি ও তাঁর স্বামী বলেন, কী কারণে সজীবকে খুন করা হলো, তা তাঁরা জানেন না। যে সজীবকে কুপিয়েছে, সে এক স্বজনের সঙ্গে পশ্চিম শেওড়াপাড়ায়ই থাকত। তাকে নিয়ে স্বজনেরা সকালে বাসায় তালা মেরে পালিয়েছেন। তাঁরা ধরা পড়লে হত্যার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক প্রথম আলোকে বলেন, সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে সজীব পাঁচ-ছয়জন বন্ধুকে নিয়ে আড্ডা দিত। ঘটনার সময় তিনি খাচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখেন সজীবের সারা শরীর রক্ত মেখে গেছে। গতকাল ঘটনাস্থলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপপরিদর্শক মো. রেজাউল করিম বলেন, আটক কিশোর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তার দাবি, সে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। পুলিশ বলেছে, আটক কিশোর জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেছে, তারা একসঙ্গে আড্ডা দিত। যে কিশোর কুপিয়েছে সে কয়েক দিন আগে সজীবের ভাগনেকে গাঁজা এনে দিতে বলেছিল। এতে রাজি না হওয়ায় ওই কিশোর ভাগনেকে চড় মারে। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে সজীবের সঙ্গে ওই কিশোর ও তার সঙ্গীদের কথা-কাটাকাটির সময় কোপানোর ঘটনা ঘটে। সজীবের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দরবারপুরে। তার বাবার নাম আবদুর রশীদ। তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সজীব সবার ছোট।
No comments