আট মাস ধরে পয়োলাইন ফাটা
বৃষ্টি হয়নি, অথচ রাস্তায় জমে আছে পানি। পথচারীরা হাঁটতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই নাকে হাতচাপা দিচ্ছে। পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকায় ওয়াসার ভূগর্ভস্থ পয়োলাইনের পাইপ ফেটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আট মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা, তারপরও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। গতকাল বুধবার সরেজমিনে এ অবস্থার কথা জানা যায়। ইতিপূর্বে প্রথম আলোয় ওয়াসার পানির লাইনে ময়লা ও দুর্গন্ধ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু কী কারণে তা জানা যায়নি। গতকাল এলাকায় গেলে বাসিন্দা ও দোকানিরা পয়োলাইন ফেটে রাস্তায় পানি জমার কথা জানান। তাঁদের ধারণা, পয়োলাইনের ফাটা পাইপে আসা ময়লা পানি খাওয়ার পানির লাইনে মিশে বাসাবাড়িতে সরবরাহ হচ্ছে। দেখা যায়, জিন্দাবাহার দ্বিতীয় গলি এলাকায় জাহাঙ্গীর স্টোরের সামনে রাস্তার নিচ থেকে ময়লা পানি বেরোচ্ছে। সেই পানি সেখানে জমে আছে, আবার বাইরেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, শীত-বর্ষা নির্বিশেষে সার্বক্ষণিকভাবেই এখানে পানি জমে থাকে। প্রায় আট মাস ধরে এই অবস্থা। সিটি করপোরেশনকে বললে ওয়াসাকে দেখায়, ওয়াসা দোষ দেয় সিটি করপোরেশনের। এই ঠেলাঠেলিতে পিষ্ট হচ্ছেন তাঁরা। জিন্দাবাহারের ফাটা পয়োলাইনের কারণে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধ শুধু সেখানে নয়, পার্শ্ববর্তী কসাইটুলী, নয়াবাজারের কিছু এলাকায়ও। জিন্দাবাহারের বিভিন্ন গলিতে ওই পানি দিয়ে রান্নাবান্না দূরে থাক, হাত ধোয়ার কাজ করাও দুস্কর বলে জানান এলাকাবাসী। দ্বিতীয় গলির বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আগেও এলাকায় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধের অভিযোগ করেছিলেন। গতকাল তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, পয়োলাইন ফেটে ময়লা পানি বেরোচ্ছে। সম্ভবত পানির লাইনও কোথাও ফাটা আছে। পয়োলাইনের তরল ময়লা খাওয়ার পানির লাইনে মিশে যাচ্ছে। কল খুললে সেই পানি আসছে। এলাকার আরও অন্তত তিনজন অভিযোগ করেন, ওয়াসার একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি কোনো সমাধান না করে বলেছেন, ফাটা লাইন খুঁজে বের করতে হলে রাস্তা কাটতে হবে। এ জন্য সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
সিটি করপোরেশনের একজন পরিদর্শককে বিষয়টি বলার পর তিনি দায় এড়িয়ে বলেছেন, এলাকার ড্রেনেজ লাইন ও পয়োলাইন সবই ওয়াসার। যা করার তারাই করবে। রাস্তা কাটা ওদের কাছে কোনো বিষয়ই না। কসাইটুলী এলাকার বাসিন্দা নয়াবাজারে একটি কাগজের পাইকারি দোকানের কর্মচারী আবদুল হাই বলেন, তাঁদের এলাকায়ও অনেক দিন থেকে ওয়াসার পানিতে গন্ধ। নয়াবাজারেও অনেক বাড়িতে দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসছে বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। এসব এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ্ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় পানিতে দুর্গন্ধ কী কারণে তিনি জানতেন না। জিন্দাবাহার এলাকায় নর্দমার পাইপ ফেটে রাস্তায় ময়লা পানি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি দেখতে তিনি শিগগির লোক পাঠাবেন। এ বিষয়ে তিনি ওয়াসার সঙ্গেও কথা বলে সমাধানের অনুরোধ করবেন বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমনিতেই বছরের বেশির ভাগ সময় এসব এলাকার পানিতে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির দুর্গন্ধ থাকে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানির দূষণ এত বেশি মাত্রার যে শোধনাগারে শোধন হয় না। চাঁদনীঘাটে পরিশোধিত হয়েও দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রথমেই যেসব এলাকায় সরবরাহ হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জিন্দাবাহার ও আশপাশের এলাকা। এখন এই পানির সঙ্গে যোগ হয়েছে পয়োবর্জ্যের তরল পানি। ওয়াসার দায়িত্বশীল সূত্রও স্বীকার করেছে যে ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি ও শোধনাগার থেকে আসা পানি একই পাইপলাইনে যুক্ত হয়ে গ্রাহকদের বাসাবাড়িতে যায়। অনেক স্থানে পাইপ ফেটে গেছে। সরবরাহ করা পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নর্দমা ও পয়োলাইনের পানি। ম্যানহোল পথেও ময়লা পানি বের হয়।
No comments