ছড়া-ঝিরিতেও ঘোলা পানি, বেড়েছে দুর্ভোগ
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের তিন গ্রাম—ব্যাঙছড়ি, দিগোলছড়ি ও ঢেবাছড়ি। শুষ্ক মৌসুমে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির জন্য তিন গ্রামের মানুষের ভরসা ছড়া-ঝিরির পানি। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ছড়া-ঝিরি শুকিয়ে পানি এখন তলানিতে। বেশির ভাগ সময় পানি থাকছে ঘোলা। বাধ্য হয়ে ঘোলা পানিই ব্যবহার করছে গ্রামবাসী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৬০ সাল থেকে সদর ইউনিয়নের ব্যাঙছড়ি, দিগোলছড়ি ও ঢেবাছড়ি গ্রামে বসতি স্থাপন করা হয়। তখন থেকে ওই তিন গ্রামের মানুষ পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরির পানি ব্যবহার করে আসছেন। কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে ছড়া ও ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পানিসংকট মেটাতে দুই বছর আগে ব্যাঙছড়ি গ্রামের ব্যাঙছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি রিংওয়েল (পাতকুয়া) বসানো হলেও বর্ষার আগে সেটিতে ঠিকমতো পানি ওঠে না। এখন পানির জন্য দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। তা–ও এসব পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। কাপ্তাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, তিন গ্রামে ছয় শতাধিক পরিবারের বসবাস। উপজেলা সদর থেকে দুই–তিন কিলোমিটার দূরত্বে গ্রাম তিনটি। পানির স্তর না থাকায় রিংওয়েল বসালেও বর্ষা মৌসুমের আগে পানি পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ওই সব এলাকায় ২০ থেকে ৪০ ফুট নিচে পাথর থাকায় নলকূপও বসানো যায় না। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ছড়া ও ঝিরিতে জমে থাকা পানির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের মানুষ। এদিকে গ্রামগুলোর আশপাশে বন উজাড় হওয়ায় পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে রিংওয়েল বসানো হলেও কোনো কাজে আসছে না। সরেজমিনে ব্যাঙছড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাঙছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রিংওয়েলটিতে পানি উঠছে সামান্য। সেখানে পানি সংগ্রহের জন্য কাউকে দেখা যায়নি।
পাশের ব্যাঙছড়ি ছড়ায় জমে থাকা পানি সংগ্রহ করছেন গ্রামবাসী। ছড়ার যেখানে বেশি পানি জমে আছে, সেখানে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা গোসল ও হঁাড়ি-পাতিল ধোয়ার জন্য ভিড় করছে। ব্যাঙছড়ি গ্রামের উচ্চ মারমা ও ঢেবাছড়ি গ্রামের বিল্টু চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে ছড়া ও ঝিরিগুলো শুকিয়ে যায়। দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়েও পানি পাওয়া যায় না। অনেক সময় পানি না পেয়ে ছড়া ও ঝিরিতে জমে থাকা ময়লা পানি ব্যবহার করতে হয়। এসব পানি ব্যবহার করলে পেটের পীড়া দেখা দেয়। কাপ্তাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরা ব্যাঙছড়ি গ্রামে রিংওয়েল বসিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পানির স্তর না থাকায় শুধু বর্ষা মৌসুমে পানি পাওয়া যায়। ব্যাঙছড়িসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে গভীর নলকূপ বসানো হলে সারা বছর পানি পাওয়া যাবে। বর্তমানে আমরা যেসব রিংওয়েল বরাদ্দ পাই, সেগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুটের বেশি নয়। সেখানে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিলে পানির সমস্যা দূর হবে।’ কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় রিংওয়েল কিংবা নলকূপ বসানো যায় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু থাকে না। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা ছড়া ও ঝিরির পানি ব্যবহার করেন। এলাকার বন উজাড় হওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে ছড়া ও ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।’
No comments